Saturday 29 February 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ











পাখি রঙের আকাশ ----- ৩৮  হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

সে যে কেউ, যখন তখন রাস্তাঘাটে তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। অনেকের মাঝে কিছুতেই তাকে চোখে পড়ে না। খেতে গিয়ে হাত নোংরা হয়ে গেলে খুব সহজেই তার জামায় মুছে ফেলা যায়। জামায় পড়ে যাওয়া আটকে থাকা চা তার দিকে ছুঁড়ে দেওয়া যায়। পায়ের ছেটকানো কাদাজল গায়ে লাগলে তার দিকে তাকিয়ে মুখ শুকনো করতে হয় না। শুধু দিনের শেষে তার দিকে নজর দিলে দেখতে পাওয়া যায়, তার সারা গায়ে ফুটে আছে অজস্র ফুল। যেহেতু সে নিয়ে আমরা বিশেষ কেউ মাথা ঘামাই না তাই সে আড়ালে একটু একটু করে বাড়ে। একসঙ্গে অনেকখানি বেড়ে গেলেও আটকানোর কেউ থাকে না। বাড়তে বাড়তে যখন জায়গা ধরে না তখন আমাদের চোখে চিরকালের জন্যে ঘুমিয়ে থাকা সে নিজের জায়গা নিজেই করে নেয়। সকালের কাগজে আসে ভূমিকম্প। আড়ালেই থেকে যায় নিয়ন্ত্রক সে।


শম্পা মনিমা

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ









বেদনার গায় হেমন্ত কুয়াশা  শম্পা মনিমা




ঘুম, শর্তহীন বিবেক ললাটে চুমোয়,
করিনি তাকে সিন্দুকে বন্দি, ব‍্যাকুল হৃদয় শোঁকে
লবণের গন্ধ, বলিনি, ক্লান্ত তুই–
ঘুমো, একটু ঘুমো ।

ভনিতা কিযে জানেনা পৃথিবী,
সততা বলে কাকে, সব– রেখেছি অমরাবতীর
শত পাঁজরের নীচে, সত‍্যের কুঠুরিতে
হেমন্তপথ বেদনা আজ কঠিন, যন্ত্রণাময় অসুস্থ–
বলিনি- ঘুমো, নির্ভাবনায় একটু ঘুমো।

অপরাধ নিরবধি শর্তহীন রাতে,
বেদনাকে রেখেছি ভালোবাসাহীন
যুগলবন্দী হয়ে হিয়া খুলে ধ্রুপদী পিপাসা নিয়ে
ব‍্যার্থ আয়োজন আজীবন –
রাত্রি জাগা ক্লান্তি চোখের পাতায়
তবুও বলিনি ঘুমো, এখন ঘুমিয়ে যা...

রঞ্জনা ভট্টাচার্য্য

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ









নন এনটিটি   রঞ্জনা ভট্টাচার্য্য



কার ডাকে ফিরেছিলাম মনে নেই;
পর্দার গায়ে নির্জন মানুষের মিছিল,
পর্দা সরালেই হ্রদ,পাইনের বন, ফাঁক
দিয়ে গলে যাওয়া তরল সূর্য_
পর্দার সুইচ অন সুইচ অফ 
করতে করতে ভুলে গেছি

সোনালী দাস সরকার

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










নিষিদ্ধ যজ্ঞ   সোনালী দাস সরকার


নীলাজ্ঞনা এক রাতের পরী ----
নিঃসঙ্গতাইই তার আত্মার যাপন,,
সঙ্গীর সন্ধান হয় তবে নীলাম্বরী বেশ ধারণে!

আর্তনাদ করে প্রতিরাত আত্মা
অসহায়তারর কবলে দুশ্চরিত্র ক্ষুধার্তকে ক্ষান্ত করে নিজে বহ্নিশিখায়য় জ্বলে!

প্রভাত কেবল তার বন্ধনমুক্ত
প্রস্ফুটিত ফুলের আখড়া
পূজার ধূপে জিইয়ে রাখে জীবন মরণের গভীর সতীত্ব।

গ্রহের আবর্তন ফের রাতের সন্ধিক্ষণ
আকর্ষণ আর প্রলভন
নিত্য নতুন সাজের যবনিকার উত্তোলন।

প্রতি রাতের শাড়ী অলঙ্কার কত বৈচিত্র্যময়
কিন্তু সব রঙ ডাগর নীল!
ন্যায্য প্রাপ্তি আর লুকোচুরি চলছে সহজেই অহরহ।

ছিঁড়ে ফেলছে ক্ষুদ্র সম্বল সম্মান-
অভিমান অসম্মানিত  সহবাসে
চিতারোহণ।

এই সহবাস চায় সহমরণ
আত্মা আর দেহের
আর সহেনা আহুতি দেওয়া বিবেক মনের।

আকুতি করে প্রাণ বায়ুদ্বয় বাহির পানে যেতে
তবু দুর্যোগে নির্লিপ্ত নীলাঞ্জনা বিষাক্ত নীল জীবন নিক্ষেপে করে নিশ্বাসকে নিষিদ্ধ যজ্ঞে!!

Wednesday 19 February 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৭ তম প্রয়াস












পাখি রঙের আকাশ ------- ৩৭ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মাঝে মাঝেই আমাদের বাড়িতে একটা হাওয়া ঢুকে পড়ত। কোথা দিয়ে ঢুকতো, কেনই বা ঢুকতো কিছুই বুঝতে পারতাম না। তবে হাওয়া এলে অনেকটা করে সকাল আমাদের সারা বাড়ি ঘিরে থাকত। জানলা দরজা আপনা থেকেই সব খুলে যেত। চোখে পড়ত না চারদেওয়াল। চারপাশে আমরা যেন কেমন ছড়িয়ে যেতাম। জানলার কাছে গেলেই আকাশের দিকে তাকিয়ে গুনগুন করতে ইচ্ছা করতো। বাড়িতে কেউ এলে সংখ্যাগুলো হঠাৎ করে কেমন যেন কমে যেত। খিদের কথা ভুলে যেতাম। বাবা বলতো গান এসেছে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে শুনতে পেতাম, বাবা ছাদে বসে গান গাইছে।

তনিমা হাজরা

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৭ তম প্রয়াস










মাছকাটা ছেলে    তনিমা হাজরা 

মাছ বাজারের এককোণে তীব্র শীতের দাপট দাঁতে কেটে ফেলে যে ছেলেটা সারাদিন ছাড়ায় মাছের আঁশ, 
এই শীতে শ্বেত প্রবালদ্বীপের আকার 
জমেছে পরতে পরতে তার হাতের তালুতে,
 বাদামী রোদের ক্ষিধে লুকোচুরি খেলে যায় তার ছেঁড়া সোয়েটার ছুঁয়ে ছুঁয়ে। 
 অতিরিক্ত বিরক্তিবোধ তাকে মা তুলে গালাগালি দেবার নির্বিকল্প সুখ শিখিয়েছে। 
বহুব্যবহৃত দশটাকার নোটের মতো মলিন তার মুখ, 
কোন বেল্লিক তার সাদা ময়দান জায়গায় 
"আই লাভ ইউ" লিখেছিলো যেন কোনকালে, চোখের সামনের মাঠে সেই প্রহসন দেখে গান্ধিবুড়ো এখনো তেমনি ভঙ্গিমায় হাসে।
হাড়কাটা হাওয়া ঘুরে ঘুরে দশ টাকা করে দামে বাঁধা পড়ে  মাছকাটা ছেলেটার ক্ষিধের কানাগলির  আশেপাশে।।

রুনা দত্ত

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৭ তম প্রয়াস











শূন্যতা     রুনা দত্ত


একটা দাঁড়ি কমা হীন 
স্থির বিন্দুর মতো
জীবনটা মাঝে মাঝে
 স্তব্ধ হয়ে পড়ে।

নিঃশব্দ নাড়াচাড়া হীন
বিষাদ আর শূন্যতার 
 আনাগোনা তখন
 মনের কুঠুরী জুড়ে।

 একটা গুটিয়ে যাওয়া 
 মানুষের বিষণ্নতার দহনে 
  অনুভূতিগুলো শুধু 
   একে একে পোড়ে।










পৃথা চট্টোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৭ তম প্রয়াস









চলো যাই অবিরল হাঁটি     পৃথা চট্টোপাধ্যায়


চলো যাই পাশাপাশি হাঁটি হাত ধরে 
অবিরল, শালবনি পথে বহুদূরে...
অন্ধকার নেমে আসা সন্ধ্যায় কোনো,
স্তব্ধ নদীতীরে,
মুখরিত গমগমে পথে নিবিড় বিকেলে 
                                 একটু সময় পেলে 
ব্যস্ত মন একান্তে কখন 
কতো কথা  অথবা থাক না শুধু নীরবতা 
আদিম জাহাজ হয়ে কুয়াশায় ভাসি,
বৃষ্টি জলে ধুয়ে যাই বানভাসি 

পৃথিবীর সীমান্ত আকাশে 
একা কোনো নক্ষত্র ফ্যাকাসে 
অবিরল হেঁটে যাই একাকার হয়ে ...

শ্যামল অধিকারী

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৭ তম প্রয়াস









১৪-ই ফেব্রুয়ারি     শ্যামল অধিকারী


প্রতিবাদের রঙ পেনসিলে আঁকি বিদ্রোহী বার্তা,
গোলা বারুদের আঁতুড়ঘরে‌ শিহরিত অগ্নুৎপাত।
দস্যুরা আসে নির্মম পদাঘাতে,
প্রবল সুনামীর নিষ্ঠুর উচ্ছ্বাসে মত্ত।
বর্ডার থেকে বাংলা‌‌ চারিদিকে পোড়া বারুদের গন্ধ,
শত শত ভারত বীরের পোড়া চামড়ার দৃশ্য।
রক্ত নিকোটিনের চরম বিভীষিকা।
এ যেন দুঃস্বপ্নের ফিকে হয়ে যাওয়া রঙ।।
আবার নব চেতনার বিদ্রোহী বার্তা আনে ভারত   জওয়ান,
এ যেন সবুজ রঙে মিশে যাওয়া;সবুজ ফুলের দৃষ্টি।
বলে ওঠে নররাক্ষস দস্যু তুই;তোর আচরন ন্যাক্কারজনক।
বিদ্রোহী আমি হয়েছি নর রুপী কৃষ্ণ,
চক্র নয় নিয়েছি হাতে এ কে- ৪৭.
বাঁশি নয়;নিয়েছি হাতে ভারত বাঁচাতে বিধ্বংসী কামাল,
করেছি আজ সমূলে নাশ শয়তান দস্যুদের।
সেদিন ছিল ১৪-ই ফেব্রুয়ারি -
দিতে হয়েছিল কত বীর আর্মির প্রান !
পুনরায় ভারত মায়ের বীর সন্তান রেখেছে ভারতের মান।।
এসো জওয়ান;এসো ভারত বীর;এসো বঙ্গ আর্মি।
আমার বিবেকের শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করি,
লাল রঙে রাঙিয়ে তুলি ১৪-ই ফেব্রুয়ারি।।


অমৃতা বিশ্বাস সরকার

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৭ তম প্রয়াস










অগ্নিস্রোত   অমৃতা বিশ্বাস সরকার 


ধরণী বড়ই সহনশীলা ,শত কলঙ্ক বুকে নিয়ে নির্বিকারে গেঁথে চলে ইতিহাস ।
সামাজিক অবক্ষয়ে মানবতার প্রহসন ।
মিশকালো পিচ পথে বয়ে চলে 
ফুরিয়ে যাওয়া মোমবাতির নিঃশ্বাস ।
দুনিয়াদারির কালোবাজারিতে বারবার ব্যর্থ হয় 
মুষ্টিমেয় প্রতিবাদী কণ্ঠের প্রতিধ্বনি ।
যে যার স্বার্থে বাঁচে ।
বৃথা যায় শান্তির ললিতবাণী ॥
সোজা মেরুদণ্ডী কেউ কেউ দাঁড়ায় রুখে ,
হতাশ যারা ছিলাম ভাবি দেবদূত ।
আসলে তো তার বুকে বয়ে চলে অগ্নিস্রোত ॥ 

Thursday 13 February 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৪-তম প্রয়াস













পাখি রঙের আকাশ ----- ৩৬    হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

কান্না শেষে পাল্টে গেল আমার সংজ্ঞা।  তোমার জন্যে কান্না সেই কখন থেকে আমাকে ভাঙতে শুরু করেছে। হাঁটতে হাঁটতে কত হোঁচট দিয়েছে আমাকে। এই তো গতকালও আঙুলের গাঁট পেরোনো হোঁচট। শত গলিপথ বাঁক মোড় পেরিয়ে এখন আমি তোমার স্টেশনে। অনেক বেশি বেশি আমি এখন আমার মধ্যে। সে সব কিছু এখন তোমাতে ডুবে। তারা সবাই এখন তোমাকে চাইছে। এত কাছ থেকে এত আলোয় তোমাকে কোনোদিন দেখিই নি। এখন নিজেকে বেশ মানুষ মানুষ মনে হচ্ছে। কোনোদিন এত স্থির চোখের দৃষ্টি আমার চোখে আসে নি। আমি স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছি।

সুবল দত্ত

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৪-তম প্রয়াস












সুবল দত্তের কবিতা


অচেনা পথ ও ঘুমের আবেশ
ও মেয়ে এখন আর স্বপ্নে এসো না
অবচেতনায় এই আমি যৌনতা পুড়িয়ে ফেললাম
হায় আমার অজানা ইচ্ছে আর দেহ ঘড়ি
এজন্মের মতো আর যৌনতায় দৃঢ় হবো না 
ও মেয়ে তোমায় এবার মা বরে নিতে ভীষণ ইচ্ছে করে
তুমি ঝুমঝুম নুপুর পায়ে পায়ে আমার বদ্ধ উদোম আগুন ঘরে এলে
আমার মহাজাগতিক অংক কষতে ইচ্ছে করবে
এবার শরীরে প্রাণীজ আগুন নয়
আমি সত্যি সত্যি খাওয়া পরা যৌনতা ও শূন্যতা ভুলেছি  

জারা সোমা

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৪-তম প্রয়াস












ভিক্ষাপাত্র   জারা সোমা

আমাদের কথা হয়না রোজ
মুঠোফোনে যান্ত্রিক টুংটাং 
আপোষ বিছানায় লেপ কম্বল সহবাস

 অভিধান জানে পোষাকি সংলাপ 
 দুতরফের নিস্তব্ধতা হারিয়েছে আহ্বান-ভাষা
ধূসর শীতে সম্পর্ক কেবল পলিসি মেকার 

প্রণয় যখন প্রলাপ,তখন
  ভিক্ষাপাত্র খুচরো কয়েন বিপণন।।

দেবযানী ভট্টাচার্য

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৪-তম প্রয়াস












পুনরাবৃত্তি        দেবযানী ভট্টাচার্য

পৌনঃপুনিক ভাবে হেঁটে যাই স্রোতের বিরুদ্ধে,
পুনঃপুনঃ ফিরেও আসি,
পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনায় বসি বিষাদের সাথে,অমলতাস দুঃখ গুলো সাজিয়ে রাখি চেতনায়, ব্যথা গুলো আর আঁচড় কাটে না,
পীড়ন গুলো কেমন বিবর্ণ ফ্যাকাশে লাগে,
নির্জনতাকে বুকে লাগিয়ে বলি," স্রোতের সাথে বন্ধুত্ব হলো না এ জীবনে,তাই প্রতিবাদ কে আঁকড়ে বেঁচে থাকি,ব্যথা আমার নিত্য সঙ্গী।"

অর্পিতা ঘোষ

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৪-তম প্রয়াস












ভালোবাসার চশমা   অর্পিতা ঘোষ

হাতটা ছুঁয়ে একদিন  করেছিল অঙ্গীকার
বিশ্বাসের স্তম্ভ গড়েছিল তার ওপরে
নদী হয়ে মিশেছিল বুকে,
কলঙ্কের জ্যোৎস্না মেখেছিল গায়ে
বোঝেনি সেদিন–
ভালোবাসার চশমা ছিল তার চোখে।

গোলাপী লাল বেলুনটা ফেটে গেছে কবে,
স্বয়ম্বরার কাছে কত প্রেমিক আসে
পয়সা আর গয়না দিয়ে সাজাই সন্ন্যাসিনীকে,
সমাজ পদবি দিয়েছে পতিতা
নদী শুকিয়ে আজ হয়েছে মরুভূমি
ভালোবাসা বেচে এখন প্রতি রাতে...

অনসূয়া চন্দ্র

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৪-তম প্রয়াস












মরা   অনসূয়া চন্দ্র
এ বাড়িতে যত মরা ওই রোয়াকেই শোয়ানো হয়েছে।যার সামনে দুটো ঢ‍্যাঙা নারকোল গাছ।পিছনে এক্কা দোক্কার একফালি বাগান।মৃতদেহের সাথে ফুল,চন্দন,ধূপকাঠি,তুলসিপাতা;মৃতদেহের পাশে আত্মীয়বর্গ।ঝাঁকে ঝাঁকে লোক ভিড় করেছে সরু গলিটায়।অভিপ্রেত-অনভিপ্রেত-আকস্মিক মৃত্যু অনুসারে কান্নার স্বর ওঠা নামা করেছে।মৃতদেহ সৎকারে  চলে গেলে রামু সারা বাড়ি ধুয়ে ফেলেছে।নিমপাতা,গুড় প্লেটে সাজিয়ে রেখেছে।সঙ্গে রেখেছে লোহা,আগুন।
   তবু সন্ধ‍্যা হলে আজও ওই বাগানের দিকে কেউ ঘেঁষেনা।

Wednesday 12 February 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৩-তম প্রয়াস












পাখি রঙের আকাশ ------ ৩৫   হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

বিষন্ন হাতের দিকে চেয়ে আছে একলা ফড়িং। তার ডানায় রোদ্দুরের রঙ দেখে পা থামায় পথিক। চিরচেনা এক বটের ছন্দে মন ভাসিয়ে পথিকের মনে পড়ে যায় আলোকিত এক ঝর্নার সন্তরণ গীতি। অচেনা এক রঙের গন্ধে সারা বট আলো জ্বেলে দেয়। আলোর দৃষ্টি নিয়ে পথিক সেই গন্ধে পা ডোবায়। ধরা পড়ে যায়, কোনো এক রোদ্দুর সকালের অহংকারে তার স্ফীত হয়ে ওঠা। যদিও সে অতীত তবুও মাঝে মাঝে পথ পেয়ে যায় আগামীর মনে। আজ সে তো অন্য পথিক। ধরে বসে থাকে রোদ্দুর দিন। কোথায় স্বতন্ত্রতা ? এ তো আলোর ধর্মে নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়া। শাসক নয়, পিতা সে ------ উষ্ণতার হাতিয়ারে মুছে দেবে যাবতীয় কোষের আন্তরিক শীতলতা।


সন্দীপ ভট্টাচার্য

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৩-তম প্রয়াস












নোনতা বসন্ত    সন্দীপ ভট্টাচার্য

শুধু একটুকরো আকাশ রেখো আমার জন্যে
তারাদের বর্ণমালায় সাজানো,
আমি দিগন্ত ছোঁয়ার কথা দিয়ে রাখলাম।
হঠাৎ ভিজে গেলে আগুন শিশিরে,
হৈমন্তী নিঃশ্বাসে না হয়
লিখবো কোনো হলদে ধানের কবিতা।

তবে তুমি বিদ্যুতের ভয় পেওনা
আমার বুক চিরে জেনো, শুধুই নীলচে আকাশগঙ্গা
অবসাদের শহরে প্যাঁচানো গলির মোড়ে
যে কুচকাওয়াজে মিশে থাকে ভয়ানক জ্বর
আমার জলীয় ঢাকনা সরে গেলে পরে
খুঁজে পাবে সেখানে নিশ্চিত ,নির্জন রোদ।

ভুল করে আবার স্মৃতির ট্রামে বোসোনা
সে পথে শুধু দূর্বার করুণ আর্তনাদ
তাই ধূসর ইতিহাস আঁকতে পারেনি কোনো অজন্তা চিত্র
ঝরে পড়া চুন সুরকির বুকে,
বাজে যে সারেঙ্গি সুর
তার কথা মিশে থাকুক নোনতা বসন্তে।

অনির্বাণ মন্ডল

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৩-তম প্রয়াস












একটি স্বপ্নের মৃত্যু    অনির্বাণ মন্ডল

সেদিন বোধহয় মেঘলা ছিল;
তবু বৃষ্টি আসেনি!
আর আমরা সবাই বেরিয়ে পড়েছিলাম
রাস্তায় রাস্তায়।
বজ্রপাতহীন বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছিলাম
নামহীন এক বিকেলে;
তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলাম
একটা সারাদিন।

বৃষ্টি আসেনি!
শুষ্ক মেঘের বজ্রপাতে সবাই মারা গেছে!
মারা গেছি আমি তুমি আর গনতন্ত্র।
আসলে গনতন্ত্র কোনোদিন বেঁচে ছিলনা;
আর আমি আর তুমি বেঁচে থাকার অভিনয় করে গেছি।
তবু আমার আর তোমার মৃতদেহের ছাইয়ের মধ্যে
আজও ঘুরে বেড়ায় ফিনিক্স পাখির আত্মা।

বর্ণজিৎ বর্মন

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৩-তম প্রয়াস
 

কারিগর   বর্ণজিৎ বর্মন

শীতে মাথা ঢাকবার পলিটিকস্ খন্ড নেই
প্রভাতের লাকে জোটে না নিয়মের আলুসেদ্ধ
তৃতীয় বিশ্বের ঘর জামাই
ফরেনে্ রাখে উৎবৃত্ত
এ যুগের কারিগর
লোকাল ট্রেনের ভীড়ের ফেরিওয়ালা
চা চাই ...বাদাম ...লজেন্স
- ছেলেটা স্বপ্ন দেখে বাবু ..
আমার স্বপ্ন ভ্রুনে  নষ্ট হয়
ও র স্বপ্ন যেন নষ্ট না হয়
আতুর ঘরে ,,,..'
ঝালমুড়ি চাই ....
দু পা আলপথ আর নুন ভাত চাই
ফরেন্ মানে বুঝিনা ,
জানি না কালোটাকা কি ,
স্বপ্ন দক্ষ কারিগর হবে
মারবেন না ফরেনে্ টাকা পুতে ।


শ্যামল অধিকারী

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৩-তম প্রয়াস












হৃদয়ে লোডশেডিং   শ্যামল অধিকারী

ভালোবাসার ইলোকট্রনে লেগেছে তড়িৎ প্রবাহ,
প্রেমের প্রোটনে ও চলছে আলো আঁধারের কারবার।
কিন্তু সবশেষে প্রেম ভালোবাসা নিউট্রনে নিউট্রাল হয়ে থেকে যায়,
যবনিকা হয় আলোর পথচলা।
ভালোবাসার তারে যোগ বিয়োগের সমস্যা,
হৃদয় প্রেমের আলোর বাতি গেছে নিভে।
মায়া মমতায় হয়েছে লোডশেডিং,
স্বপ্নটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে আঁধারেই আছে পড়ে।।

চিরঞ্জিৎ বৈরাগী

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪৩-তম প্রয়াস












মরণের পার থেকে         চিরঞ্জিৎ বৈরাগী

আমি বেঁচে থেকে নয় মরণের পার থেকে একটি চিঠি লিখতে চাই
মায়ালোক ভেদ করে মনের কারখানায় যার রঙ বড্ড ফ্যাকাশে
অহংকার কৃষ মলিনতার অভাবে সেখানটা হালকা লাগে
ভাবনাগুলোর একান্ত প্রকাশ নিলাম হলে বেশ ভালো লাগতো
বাস্তব সংসারের হাড়হিমে প্রভাত শুধু ঘুরিয়ে মারে
বিবেকবোধকে বারে বারে জাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা লেগে থাকে
আশেপাশে পাহাড়প্রমান দুঃখের খবর রীতিমতো অসুখ বোধে
দুঃসাহসিক হতে মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে অবাক লাগে পৃথিবীটাকে
অন্ধকারের সাপ দিনের আলোর শাপে ম্লান হয়ে যায়
আকাশের তারা হয়ে বাঁচার স্বপ্ন সার্থক বাসে।

Tuesday 11 February 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪২-তম প্রয়াস













পাখি রঙের আকাশ ------ ৩৪        হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

তোমার আমার মেলামেশাগুলোর মধ্যে বেঁচে আছে এখনও কিছু বটগাছ। তাদের গতিপ্রকৃতি বলে দেয় তারা এখনও কিছু যৌবনের অথবা বয়সকে যারা বর্ষণমুখর দুপুরে কোন নির্জন স্টেশনের বুকের ভেতর ঢুকে উড়িয়ে দিতে পারে তাদের স্বপ্নে উঁকি দেবে বলে আরও অনেক বছর দাঁড়িয়ে থাকবে। হাঁটতে হাঁটতে আমরা যখন নদীকে মাঝখানে রেখেছি, গাছের সবুজের দিকে তাকিয়ে আমাদের যখন কোনো কিছু ছেড়ে আসার জন্যে দুঃখ হয়েছে তখন কিছু কিছু জায়গায় পড়েছে আমাদের বীজ। আমাদের কথার উত্তাপে কথা বলেছে বীজ। আজকের বটগাছ তাই অনেক অনেক দুপুরের দগ্ধ ইতিহাস। ক্যানভাসে ছড়ানো রঙের মতো যে ছায়া ছড়িয়েছে বট সেই ছায়ায় উপ্ত হোক কিছু সম্পর্কের বাসন্তী সংলাপ।

বিকাশ চন্দ

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪২-তম প্রয়াস












চাঁদের ফসল     বিকাশ চন্দ

কৃষ্ণ কালের গহ্বর দেখেনি এই নশ্বর মহিমা---
ভেতরে ভেতরে সীমাহীন বিষাদ অন্ধকার, 
অজস্র মুখের অবয়ব বোঝেনা ঘর ফেরতা কথা----
ভেতরে বাইরে নির্দয় ভাঙচুর নির্মাণের অকথিত কৃপা
প্রতিদিনই গিলে খায় মরমি কথার ভেতরে কথা, 
ঠেলে ঠুলে ঘাড় ধরে বসে রাত খেকো সংসার জনপদ। 

জলের জাত কি জানে না মাটির কি দায় ঘিরে রাখে মায়া স্রোত---
প্রিয় সময় ও বোঝেনি বিনম্র আখর বুনোট শুধু হাহাকার, 
সমস্ত মায়াঘর নিরুত্তর কেটে যায় সব ঋতু কল্লোলে---
ক্ষণজন্মা মানুষেরা কোথায় ছিল থিতু হীন বিনীত মুদ্রায়,
পরিযায়ী মানুষই জানে সমস্ত স্বপ্ন হারায় রিক্ত হাহাকারে। 

বিনীত প্রভাত আর কোমল প্রার্থনা একই সাথে ঘর বার, 
সকল আর্তি বোঝে না চন্দ্র কলা মুখি অরব ভাষা কথা---
জীবনের ভেতর  যা কিছু অন্তরীণ চুপ কথা বুনো পাখিদের গানে, 
যদিও চান্দ্র মাস জানে অর্ধ শরীর শুধু দিন গোনা মরণ প্রহর----
তবুও আড়ালে উষ্ণতা এপার ওপার  পূর্ণিমা অমাবস্যা কাল, 
ঘিরে আছে নম্র সুখ চিরায়ত বিনির্মাণ এক জোড়া চাঁদের ফসল।

সোনালী দাস সরকার

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪২-তম প্রয়াস












কোথায় মুক্ত    সোনালী দাস সরকার
প্রশ্ন বাণ সহজ হলেও উত্তর
                           সে হবেই বিষাক্ত
নোনা সাগরে চিনির পাহাড়
                       স্বাদে তবু লবনাক্ত।
অহল্যার দেবীর কেটেছে তাঁর পাপ
                   বদনাম আজো অভিশপ্ত
সীতা ত্যাগী রাম প্রজার প্ররোচনায়
                     রাজা সেও অসমাপ্ত।
রামধনু আঁকো সাতরঙার পাহাড়
                      মিথ্যা তাকেও লাগে
দেশের দৈন্যদশায় করি হাহাকার
                      সৃষ্টি পরে বা আগে!
চলা আর চলার মাঝে নিত্য বেড়ী
                        আঁকড়ে যত ধরা
হারা না হারা উভয় সংকটে প্রাণী
                   দুশ্চিন্তা ধরলেই জড়া!

মুস্তাফিজ রহমান

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪২-তম প্রয়াস












আমার চু–কিত–কিত খেলা     মুস্তাফিজ রহমান  

শালা হারামি যেন আর না আসে এ তল্লাটে
আমিও এরকম ভাবি, কিন্তু, বলি না মুখ ফুটে। 

এই কুযোগে তার  পোষা তোতার 
কথাই  শুধু শুনি 
আর এক, দুই, তিন গুনি। 

এই অবস্থায় অবিকল্প উপায় 
তার ফিরে আসার  পথকে দেখাই কানাগলি 
আর ফাঁকতালে সময়ের সাথে চু–কিত–কিত খেলি।   

মুন রায় চৌধুরী

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪২-তম প্রয়াস












গাও সাম্যবাদের গান       মুন রায় চৌধুরী

আকাশে  মুক্তির মেলা মাটিতে অবজ্ঞা,
ছেলেবেলা মিশে যায় ইঁটের পাঁজরে।
মুক্তির গান ডাক দিয়ে যায় নিষ্ঠুর শৈশব কে।
শৈশব নাগাল পায় না, মুক্ত আকাশের।
ফুটপাতে বেড়ে ওঠে অভুক্ত শৈশব।
কে দেখাবে মুক্তির পথ ,দিশেহারা শৈশব কে ?
অথচ দেখ সাগরের পার ভাঙে মুক্তির আনন্দে,
ঝোড়োবক পাড়ি দেয় সাদা পাখনা মেলে,
সবুজের হোলি খেলা গাছেদের সাথে,
মুক্তির জয় গান গাবে তারা কোন আনন্দে !

আনন্দ আজ হার মেনেছে নিঠুর শৈশবের কাছে।
মুক্তির বাণী শোনাবে কোন অশান্ত পথিক !
মানুষের সম্প্রীতির জয় গান গায় লালন ফকির।
চারিদিক অশান্ত , ভুখা পেট, তারই মাঝে চলে মৌলবাদীদের হুঙ্কার।
এসো নুতন যুগের নুতন পথিক ,গাও সাম্যবাদের জয় গান, 
নুতন যুগ, নুতন দিশা গর্ভেই অপেক্ষমান, ধাত্রী তুমি  এসো।

ভাস্কর পাল

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৪২-তম প্রয়াস












হে প্রেম !      ভাস্কর পাল  

হে প্রেম; তোমা ছাড়া এ জগতে,
নিঃস্ব প্রতিটি প্রাণ!

হে প্রেম; তুমি আছো যতদিন!
এ বসুধা নীলিমাচ্ছন্ন,
মাধুর্যময় সৌন্দর্য আছে ততো দিন।

হে প্রেম! তুমি সেই বসন্তের কলধ্বনি!
তোমার স্পর্শে অন্তর হয় মধুময়,
তুমি পলায়ন;
তুমি ভেসে বেড়াও পালতোলা নাওয়ে,
উজান বেলায়।।

হে প্রেম!
তুমি এ জগতের বুকে অমূল্য রতন ।
গায় আল্হাদের গান,
সুর মধুময়, ভেঙে শৃঙ্খল।
হে প্রেম তুমি এক অম্লান আশা
তুমি প্রেমীর মুখের অন্তরিত ভাষা !

তুমি সত্য, তুমি দৃঢ় !
তুমি নও দুর্বল; হে প্রেম, তুমি
ভালোবাসার ওপর নাম, স্নিগ্ধতার টান।

হে প্রেম;
তুমি অনুভূতি ঘেরা হৃদয়ের প্রলেপ,
তুমি গগনের সেই নীল শোভিত মেঘ !

ঘৃণা করে যারা তোমারে,
কলঙ্ক এনেছে যারা তোমার বুকে !
রক্তাক্ত লাল বর্ণে ওঠো ফুঁটে,
তুমি নিষ্পাপ, হে প্রেম তুমি নিষ্পাপ !!

তুমি অনুভূতি ঘেরা, অন্তরেতে করো বাস
মিলিত করো এক বন্ধনে দুটি প্রাণ।
হে প্রেম ! তোমা ছাড়া এ ধরাতল,
শ্বাস-হীন এক মায়াজাল !!




Wednesday 5 February 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৩৬-তম প্রয়াস














পাখি রঙের আকাশ ------ ৩৩          হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

তুমি কে সত্যিই যদি আমি জানতাম তাহলে আজকের অবস্থার কি এমন পরিবর্তন হত ? আজ যেখানে তুমি দাঁড়িয়ে তার থেকে আরও কাছে ? তোমাকে জেনেছি একটু একটু করে আমার ক্ষমতা অনুযায়ী। তাই আজকের তুমিই আমার তুমি। নিজেকে যতটা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব আজকের তুমি তারই ফসল। তাই তুমি কে নয় তুমি কেন ? তুমি কে ----- অনেকটাই সাজানো। আগে থেকেই যেন তৈরি করে আনা। অনেকাংশেই আমার আবহাওয়ার সঙ্গে যেন ঠিক মিল খায় না। অথবা মেলাতেই হবে এমন একটা লক্ষ্য সামনে রেখে যেন এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু তুমি কেন ------ তুমি আমাকে অনেকটাই দেখতে পাও। তুমি যেন তখন আমার বল ভরসা। আমি যেন তোমার নিরুপদ্রব কোলে নিজেকে ছেড়ে দিতে পারি।

অভিজিৎ দাসকর্মকার

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৩৬-তম প্রয়াস












আমাদের সাংসারিক জীবনকে রক্কে কোরো রঘুবীর...
অভিজিৎ দাসকর্মকার 


একটি সুন্দর দৃশ্যায়ন সুরু হচ্ছে, সারাশহর জুড়ে বড়ো বড়ো হোডিং। কি দেখছি? ওইটি powered by একটি দাদের মলম... ভাবা যায়। 

    মহরৎ, তারপর ভূমিকা পর্ব। তারপরই দেখা যাচ্ছে একটি মহিলা হেব্বি। ঝিকঝাক, সেজেগুজে চলছে, ফিরছে, উঠছে, রান্না করছে, সংসার সামলাচ্ছে, ছেলে মেয়েদের home task, শ্বউর ঠাকুরের গাঁটের ব্যাথায় গরম তেল মালিস, মানে দু-হাতে ak-47 আর দশভুজার মতো সংসারকে সাজিয়ে গুজিয়ে রেখেছে। আবার বাড়িতে বিবাহিত ননদ, তার স্বামী, নিজেরাই গুজুর গুজুর,ফুসুর ফুসুর পরিকল্পনায় বাবার সম্পত্তিতে একটু বেশি অংশ যাতে পায় তাই সুন্দরী বৌমাটির নামে বাবা-মায়ের কানে আর্সেনিক ঢালছে। গঞ্জনা সহ্য করার পরও, মন খারাপ থাকার পরও স্বামীকে নো নালিশ! ভাবতে পারেন? আবার ওই সুন্দর সাজে সারাদিনের কাজের পর কোন কমতি নাই, ওই সাজটি নিয়েই শুতে যায়।রক্কে করো রঘুবীর... এরাই পারে। কারণ এদের পারতেই হয়। এদের ভগবান যে পরিচালক মহাশয়।রূপসজ্জার লোক,পিছন ছাড়ে না।   

          আরে ভুল বকছি না! দাঁড়ান বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয় টা হলো আমাদের টিভি বাবুর দৌলতে বাংলা ও হিন্দি সিরিয়াল। কি ভীষণ প্রভাব বিস্তার করেছে,ভাবায় যায় না... আর আমাদের বাড়ির মহিলা মহল।অমুকের সাথে তমুকের বিয়েটা হবে? চিন্তামণির ভর... মাছের ঝোলে এন্তার নুন। কিছু বলতে যান, একটু ভাতে মেখে খেয়ে নাও দিকি। তোমার সংসারের জোয়াল টেনেই তো এই অবস্থা, আমার তো সব গ্যালো। নিজে সারাদিন বাইরে থাকে...আমি কি নিয়ে থাকবো?...ব্লা...ব্লা... 

বাব্বা কি দাপট!...

      দ্যাখো। কিন্তু এদের বোঝানো যায় না কেনো, ভালো জিনিষ দ্যাখো। এই সিরিয়াল যে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে কালোছায়া। অশান্তির মুল কারণ। আমরা পিছিয়ে পড়ছি।বাইরের দেশের মানুষজন টিভি রাখে বাড়ি সাজানোর জন্য। আর আমাদের টিভি রাখা হয় প্রতি দেড় বছর অন্তর পিকচার টিউব বদলানোর জন্য। সারাদিন এতো টিভি চলে। 

       হাসি না! দেখবেন। এই যো ক্রাইম পেট্রোল গুলো দেখায়। সচেতনতা। বাঃ দারণ কাজ।অন্য দিকে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেওয়াও হচ্ছে। কেনো? আমাদের পরিচিতির পরিসর আমরা নিজেরাই কমিয়ে নিচ্ছি। আত্মিয়তাও সৌজন্যে বা মিডিয়ায় ভর করে বয়ে নিয়ে চলেছি। এমনকি আমরা আজকাল খুব চেনা মানুষ ছাড়া বিশ্বাস করতে পারি? পারি না।সামনে যাকে সন্দেহ করছি তাকে বছর বছর দেখার পরও বলছি কোন অভিপ্রায় তো আছেই। পরবর্তীতে ক্ষমা চাওয়া... দিজ্... দ্যাট... কিন্তু সচেতনতার জন্য কোন precaution?... ক'জন বাবা-মা ছেলে-মেয়েকে ক্যারাটে শেখান?যোগা শেখান? 

     আস্তে। যারা শেখান তারা রাগ করবেন না।ভালো করেন।  কিন্তু এসব শিখে আসার পর এত্তো ক্যালেরিওয়ালা খাবার দেবেন না।Strength কমবে।নধর হয়ে পড়বে।আপনার পরিশ্রম পণ্ডশ্রমের পথে চলবে। আমি আমার মনে হওয়াটা বলছি।ভাবুন যখন কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আমাদের ৪০জনের অধিক সৈন্য শহিদ হলো।আমরা কি নিজেরা শোক জ্ঞাপন কোরে সিরিয়াল দ্যাখা সেদিনের জন্য বন্ধ রেখেছি?...না।বাদ দিন। টিভি চ্যানেলগুলো নির্লজ্জের মতো কি করে সেদিন সিরিয়াল সম্প্রসারণ করলো? বিবেকহীন। আমাদের সুরক্ষার জন্য সারাক্ষণ যারা সীমানা আগলে থাকছে!আমাদের হাতে তাদের শোকে একটা দিন সিরিয়াল না দেখার অঙ্গিকার নেই। অথচ সব আরাম নেবার পর চায়ের ঠেকে বসে এমন লেকচার ঝাড়ি,যেন নিজেকে হোয়াইট হাউসের যোগ্য বাসিন্দা মনে হয়। ধিক্কার বাংলা আর হিন্দি সিরিয়ালের পরিচালক সহ সমস্ত পরিচালন মন্ডলিকে।

         সিরিয়াল চালান। কিন্তু শিক্ষা মুলক। যা আমাদের উত্তরসূরিদের ভবিষ্যৎ কে সুরক্ষিত করতে পারে।

        রাগ করবেন না সিরিয়াল প্রিয়রা।একটু ভাববেন। ভবিষ্যৎ কে আমরাই ক্ষাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছি নাকি?...

      ভালো থাকবেন।পারলে এসব সিরিয়ালের ভুত ছেড়ে কবিতা বা উপন্যাসের পাতায় থাকুন।নাটক দেখুন। গান শুনুন। নিজেদের অন্যভাবে খুঁজুন।কবিতাই জীবনের উৎসব... 

শম্পা মনিমা

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৩৬-তম প্রয়াস












আদ্র চোখের কবিতা    শম্পা মনিমা

স্তবক থেকে স্তবকে যেতে সময় লাগলো
একটা করে তুমি নিঃশ্বাসে,
অবুঝ কান্না ঝরছে লগ্নের কাছে।

পার্থিব ইতিকথা সংসারের দিনরাতে থাকে
বয়সী ব‍্যাঞ্জনা থেকে রাতদিন আয়ু আহার রাখে,
প্রতিদিন জন্ম আপ্লুত করছ বেদনা যাপনে
পুনরবার মিলনের পিপাসায়
স্মৃতি সব অগতিরনাথ।

যত মোহনকাম আকশকুসুম উচ্চারণ
সবটুকু স্তবকের গঙ্গাধারা নীলকন্ঠের
তুমি শোনো শুধু উজান সুরের ।

ইঙ্গিত ওমে স্তবক লিখেছে প্রনাম
শিলাবৃষ্টি পতনের মতো জীবন লুটে
কী লাভ ভালোবেসে পঙতি রচনা করে?

মধুমিতা বসু সরকার

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৩৬-তম প্রয়াস












বাউল মন  শর্ত বোঝে না...     মধুমিতা বসু সরকার

বৈভব হীন বিকেলের ঘরে জাতপাত উহ্য,,
তবু গাভীরা গোধুলি এনে দেয়,
অস্তাচল গামী সূর্যের আলোতে কোমল ধৈবত
তার সুর বেঁধে নেয়,,
বাউল তার একতারার সুরে বলে
মন দিয়ে খুঁজি মনের মানুষ,
মন না দিলে কিছু কি পাওয়া যায়?
জীবন ত শর্তে ই চলে,
চাওয়া পাওয়া, যতটুকু যেটুকু সব  শ্রাবণমাসের রোদের মতো,
বড় আবেগী,, বড় কাঙ্খিত অথচ দুর্লভ,
ধরে বেঁধে রাখাও যায় না,,
মুঠি আলগা করুন বা না করুন কখন যেন হাত ফস্কে বেরিয়ে যায়,,
তবু বাউলের মনের মানুষ খোঁজার বিরাম নেই,,
পাবে কি না পাবে জানেও না,
বাউল ত সম্পর্কের জটিলতা বোঝেনা
শর্ত, সাপেক্ষ,,,তুমি মন দিলে আমি দেব
নতুবা হিসাবের খাতা শুন্য।
এসব বুঝলে বাউল একতারা বাজাত না
, তা যদি হোত আমার মন টিও বাউলা হোতনা।