Friday 29 May 2020

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ২৯-৫-২০২০

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ 
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি... 

                                      হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়                                                        


পাখি রঙের আকাশ ---- ৭৭

আজকের পাহাড়গুলো নামেই। কত সহজেই উঠে পড়া যায়। তিল তিল করে পাথর জমে তবেই না পাহাড়। রোদ পড়তে দেখলাম কোথাও কিছু নেই। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমার জানলার পাশেই পাহাড়। কখন তৈরি হল আর কারাই বা তার নাম দিল পাহাড়! এক একসময় মনে হয় এরা কি কোনোদিন পাহাড় দেখে নি! নাকি এরা পাহাড়ের নতুন সংজ্ঞা তুলে ধরতে চায়। সে যাই হোক, পাহাড় নিয়ে ছেলেখেলা করাটা আমাদের মতো সমতলবাসীদের মানায় না।


                                            প্রনব রুদ্র 


স্পর্শ

তোমার আমার মাঝে, স্পর্শ
আজ সেতু নয়; অন্তরায়

তবু, ভালোবাসা ছিল,
আছে         থাকবেও


 মনস্তত্ত্ব

  প্রেম ঢেকে যায় প্রেমে
    জল ডুবে যায় জলে
      মন মজে যায় মনে
 আজ চলে যায় কালে।


কোয়ারেন্টাইন

নড়ে নড়ে সরে যাওয়া
সরে সরে দূরে যাওয়া
দূরে দূরে বাড়ি ঘর 
ঘরে ঘরে আপন পর।


শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়


উপহার

'তা ধরুন এইট্টি থ্রি কি ফোর হবে। আমার বন্ধুর এক জামাইবাবু নেভিতে কাজ করার সুবাদে জাপান থেকে ওটা এনে দিয়েছিলেন। তখন এ জিনিস এদেশে যতটা দুষ্প্রাপ্য ছিল, আজ তো বিস্মৃতপ্রায় অতীত।'
' এমন অতীতকেই যে ধরে রাখতে চাই। দয়া করে ফেলে দেবেন না..।'
অণুকুলের কথার উত্তরে ভারী উৎসাহের সঙ্গে বললেন প্রতিবেশী কমল দা।
ভদ্রলোকের এই এক শখ! যত পুরনো, আদ্দিকালের জিনিস কোথা থেকে সংগ্রহ করে বাড়িতে স্বযত্নে সাজিয়ে রেখে দেন। একটা ছোটো মিউজিয়াম যেন ঘরখানা। সেদিন গিয়েছিল অনুকুল দেখতে।
অচল হয়ে যাওয়া,ঘরের বাঙ্কে পড়ে থাকা বহু স্মৃতিবিজরিত টেপ রেকর্ডারটা 
আর একটু হলে হয়তো বেচেই দিত কিলো দরে। শেষমেশ কমল দাই নিয়ে চলে গেলেন। সাথে খান তিনেক ফিতে জড়ানো ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেট অবশিষ্ট ছিল। তখনকার কেনা। সেগুলোও দিয়ে দিল।
দিন তিনেক বাদে কমল দা এলেন আবার, অনুকূলের বাড়ি। সাথে একগাল হাসি।' মশাই দিয়েছেন বটে একটা অ্যাসেট! গ্রামোফোন কোম্পানির নুটু মুখুজ্জে আমার বাল্যবন্ধু। সেদিন এয়েচিল আমার বাড়ি। জিনিস দেখে সে কি তারিফ! উঁহু, আপনাকেও বঞ্চিত করবো না। একটা উপহার আছে।'
ভদ্রলোক মুখে কিছু না বলে ব্যাগ থেকে তার ফিট করা একটা কি মেশিন বের করলেন।
'বুঝলেন না তো? এ হলো ক্যাসেট ডিজিটাইজ করার যন্তর। আপনার  ঐ বাকি দুটো ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেট কিছু আর করা গেল না। ফিতে জড়িয়ে অনেক আগেই পঞ্চত্ত প্রাপ্তি ঘটে গিয়েছে। যেটা পেরেছি সেটা আমি আজ আপনার জন্যেই..।'
মেশিনে ক্যাসেট সেট করা হলো। ভেসে আসছে আওয়াজ। বহুযুগ আগে হারিয়ে যাওয়া বাবা মৃগাঙ্কশেখরের স্বকন্ঠে আবৃত্তি....  কিছুটা করে গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গানের কলি...। 
সুদূর সোনালী দিগন্তরেখার ওপাড়ে দাঁড়িয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছে কে যেন! অশ্রুবাষ্পের মতো জমে থাকা থাকা রুদ্ধ আবেগকে সংযত করতে পারে না অনুকুল। 
জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে ফিরে পাওয়া দুর্মূল্য উপহারখানা হারাতে চায় না সে কিছুতেই..।


Thursday 28 May 2020

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ২৮-৫-২০২০

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ আসুন। সকলে ভালো থাকি।সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...
১৪৯ তম প্রয়াস
                     হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


পাখি রঙের আকাশ ------ ৭৬

প্রতিটা কথা এক একটা দাগ। একপ্রান্ত থেকে শুরু করে আর এক প্রান্ত কোথায় সেই দাগ কতদূর চলে গেছে কেউ জানে না। দাগ চলছে। দাগ চলছে। সকাল থেকে শুরু করে দুপুর বিকেল সন্ধে ------ চলেই যাচ্ছে। কোনো থামা নেই। কোন রাস্তা দিয়ে দাগ যায় ? যে রঙ তুলি দিয়ে আঁচড় দেয় সেও জানে না দাগ কোথায় কতদূর যাবে। মনের আনন্দে দাগ যায় মেঠো পথ ধরে। তারপর মাথায় যেন কি একটা নড়ে ওঠে। ধুলোপথের পা ধুয়ে দাগ এখন পিচে। যায় যায়, নাক মুখ শুকিয়ে আসে। তবুও উচ্ছ্বাসে হাত তোলে। তারপর হাত দাগের মতলব ধরে ফেললে দাগ আবার বাউল গানে রাঙামাটি। সারা দিনরাত ক্যানভাস জুড়ে দাগ পড়ে যায়। দাগের মিছিল। কিন্তু একটাও রাস্তা নয়। তবুও দিনেরবেলায় সকলের চোখের সামনে পাঁচমাথার মোড়ে মড়ার মতো পড়ে থাকে।

                                                                      
                                                                  রুমা ঢ্যাং অধিকারী

পরিখান্তর

নির্বাপণটুকু মুছে যাবে বলে 
ভায়োলেট ফুল 
বিকেলের নিমন্ত্রণ সারে... ফুলেল পরিখা দেখে
ভেঙে ফেললাম দুখুরামের বিন্দু পরিষদ
  
ততটুকুই জাঁকড়
ফিতের রাশ টেনে যতটা তাবড় লেখা যায়

ধোঁয়ার বাসরে
স্মৃতির কাঁসরে

স্লাইস্ড প্রসঙ্গে আর কোন করাতের কথা
আজ না হয় থাক... 

ডার্ক ফ্যান্টাসিজম

নির্জন ছাপিয়ে আসা কোন উদগার
যেন ভারহীন এক জানলা   

এই পরিমাণ ও পরিণামের তীব্রতা
                পাখিজন্ম বোঝেনি

প্রবাল গিলে খেয়েছে 
সিন্ধুগামী অন্ধকার...

তারার দূরত্বে ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে 
ডার্ক ফ্যান্টাসিজম


পরিযায়ী আবেগ

কখনও দুপুরের গল্পগুলো
ঘেমোটে বাতিকের নামাঙ্কিত এক আগুনের 

এ শোধমূলক নয়
পাঁপড় সেঁকারও নয় 

পরিযায়ী আবেগ পুড়ে যাওয়া 
একেকটি আশ্লেষমাত্র

ছুঁচের হোল বিনিময়ে উঠে আসা 
বটের স্থাপত্যকীর্তি... এখন আর অজানা নয়

ঘড়ির সচেতন গা চেটেপুটে 
পেরিয়ে যাওয়া তবু অবিচল

চাঁদ ও মঙ্গল 
আপনি যেভাবে দেখবেন! 

শিকার

নির্মেঘের ঘনত্বে ভাসমান গুটিকয়েক ফাতনার চেয়ে
পাঠের জীবনানন্দ ঢের ভালো 

সান্ত্রীরা উন্মুখ 
বিনাশের ডজনখানেক উপসংহার নিয়ে
তবু প্রহারকের হাতে মাস কেটে যায় 
প্লুটোর দূরত্বটুকু মুছে

সাইরেনের প্রোটোকল ভেঙে প্রতিটা নাগরিক 
পাখি শরীর ফেলে রাখে দাওয়ায়

আর, লয়বাহকের কাঁধে বিশালতার 
ঘুম ভাঙলো... শিকারের সন্ধানে


নিরাপদেষু 

খেরো খাতার অবসর প্রসঙ্গে কথা চলছিল
সন্ধের লিড নিয়ে 

দূরে জেগে উঠলো স্বজনপাড়া

এভাবেই লতাপাতায় পুষ্ট খোঁজটুকু সারা হলে
কোডেড ঠোঁটে ফুটে ওঠে 
সহস্র নীরবতা 

কিন্তু, রাতের পাঁজরে 
সমানে বেজে চলে বিষণ্ণ ভায়োলিন...

এটুকুই নিরাপদ, ধোঁয়ার অভিমুখ থেকে
কিছুটা সরে এসে 


                                             সুষ্মিতা রায়চৌধুরী

উপলব্ধি ডট প্যানডেমি

এভাবে আর পারা যায় বলতো,লক হওয়া কলকাতায় তো আমার শরীর ডাউন হয়ে যাচ্ছে”-মিনুদি কাছে থাকলেও কাজেআসছেনা।মায়ের কড়া নির্দেশ,কে বললেও যেনো লুকিয়েও কারোর বাড়ি কাজ না করতে যায়।এব্যাপারে জ্ঞান টনটনে পয়ষট্টিরলতিকাদেবীর।কিন্তু হাঁটুর ব্যথা আর জেনারেসন বার্ধক্য তাকে পরাস্ত করে ফেলছে প্রায়।সত্তরের সমীরবাবু ডায়ালেসিসেরপেশেন্ট হওয়ায় এখন বাজারের কাজটুকুও লতিকাদেবীর দ্বায়িত্ব।প্রতিরোধ ক্ষমতা কার যে বেশী তা নিয়ে নিউজার্সিতে থাকাচিন্তিত-বিহ্বল কুহু শুধু আশ্বাস দেয় তারা ভালো আছে,ওঁরা ভালো থাকলেই।

আজও নির্দিষ্ট সময় কল করতেই রাগ আর কান্নায় ভেঙে পড়লো মা।কাল বাবার ডায়ালেসিসের তারিখ এদিকে কোনো গাড়ীপাওয়া যাচ্ছেনা।যার থেকে গাড়ী নেয় সে গাড়ী বার করছেনা আর চেনাশোনার মধ্যে কারোর নিজের গাড়ী নেই।ডায়ালেসিসেরপর বাবা একদম দাঁড়াতে পারেনা।গাড়ী ছাড়া কি করবে এই নিয়ে নাজেহাল মা।এদিকে কালই মিনুদি আসতে চায় একমাসেরটাকা নিতে।বাচ্চাটাকে একগ্রাস ভাত দেওয়ার জন্য চাল কেনা টাকা নেই।মা ভয়ে কাঁপছে,যদি থাবা বসায় অসুখ।এতদিন কুহুরকথামতন শুধু কার্ড দিয়ে বাজার করেছে।ব্যাঙ্কে যাবে কখন আর বাবাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ীর ব্যবস্থা করবে কখন।মিনুদিএমন করতে পারলো!কুহু স্তব্ধ,অসহায়।

পরের দিন সকালে মাকে ফোন করতেই কেঁদে ফেলে মা।মিনুদির বর রিক্সা করে নিয়ে এসেছে বাবাকে ডায়ালেসিসের জন্য।বাইরেদাঁড়িয়ে আছে সে,আবার বাড়ি নিয়ে তবে ফিরবে।
কুহু ফোন করে মিনুদিকে।ওপাড়ে শ্বাসের গলায় মিনুদি বলে,”আরে দিদিভাই তারিখটা তো আমার মাথায় আছে নাকি”!
বাবা বাড়ি ফিরতেই কুহুকে বলে,”মা ব্যাঙ্ক থেকে এসে ভালো করে রিস্কার হয়েছে।অপরাধবোধ না শিক্ষা নি চল আমরা এটারথেকে।
দুজনেই গেয়ে ওঠে,”হাল ছেড়ো না বন্ধুবরং কন্ঠ ছাড়ো জোরে/দেখা হবে তোমায় আমায় অন্য গানের ভোরে”!






Sunday 24 May 2020

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ২৪-০৫-২০২০

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...

                                                            হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


পাখি রঙের আকাশ   ------- ৭৪

অনেকদিন আমাদের কোনো কথা নেই। কথা ফুরোয় নি। কথা আছে। অনেক অনেক কথা। আমাদের যা দেখা ছিল তা সব কথা হয়ে গেছে। নতুন করে আমাদের আর দেখা হয়ে ওঠে নি। আসলে নতুন করে দেখার জন্য যে মাটি চাই সেই মাটি এখনও আমাদের পায়ের নিচে গজায় নি। কথা বলার সময়টুকু এখন আমাদের বলে ফেলা কথাদের শরীর দেখে কাটে। হয়ত একদিন ভোরবেলা থেকে খুব বৃষ্টি শুরু হবে। আমি একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। পাশেই আর একটা গাছ। মনে হবে ওই গাছটার কথা তো তোমাকে বলা হয় নি। দারুণ বৃষ্টিদুপুরে একটা পাতা এখনও ভেজে নি। একটা দুটো ডাল হাঁটতে হাঁটতে একেবারে পুকুরের ওপারে। একটা একটা করে আমাদের আবার কথা জমা হবে। আবার আমরা আঁকাআঁকি শুরু করবো।


আফজল আলি



তোমাদের জন্য কবিতা 

বন্ধুগণ , তোমরা স্বপ্নগুলোকে হত্যা করো না 
বরং নিজেদের তৈরি করো নতুন স্বপ্নের ভোরের জন্য 
ওরা প্রতিদিন-ই তোমাদের ঈর্ষা করবে , অবজ্ঞা করবে
তবু নতুন সময়ের চারটে থাপ্পড় সযত্নে রেখো 
ওদের জন্য ওদের জন্য 
জেনে রাখো নতুন সূর্য তোমাদের হাত ধরেই উঠবে
আগেও উঠেছে বারবার 
কমলার সন্ধিগুলো ছুঁড়ে ফেলে দাও
সময় ঘুরছে , তোমাদের কোমরে অচেনা জাদুকরের হাত
অন্ধকার বড়ো দুর্গম , সে হোক 
তোমরা তো অতিক্রম করেছো যুগে যুগে 
একটি শব্দকে আমি ফিস ফ্রাই খাওয়ালাম 
বাকিটা তোমাদের হেফাজতে 
কৃষক শ্রমিক জনতা এদের উপেক্ষা করো না 
আর শব্দ নিয়ে খেলে যাও খেলে যাও যত ইচ্ছা 
একটা আকাশ তোমাদের রয়েছে 
সমস্ত কিছু মুক্ত করলাম তোমাদের-ই জন্য 
তোমরা সেই আকাশের দিকে তাকাও , উদ্বিগ্ন হয়ো না


মস্তিষ্কে জ্যামার লাগিয়ে রেখেছো কেন 

পেয়ারা গাছের গদ্যরূপ করতে গিয়ে দেখি 
আমার হাতের নোটগুলো উড়ে গেল
কী ব্যাপার , এত রাতে আওয়াজ হচ্ছে কোথায় 
রাজাদের অনুশাসন নাই , হাতিশালার চিহ্ন উধাও
একমাত্র যে রূপক কোটেশন,তাও পদ্মাপারে গেছে 
মানুষের কথা
শতাব্দীর ফুটো ব্লাডার
যে যত বেশি চোর , সেই তত ছিদ্র-সন্ধানী 
বাইরে বেপরোয়া ক্ষিদে উড়ছে 
চাঁদ নিয়ে পচা কবিতাগুলো আর সহ্য হচ্ছে না 
এবার কিছু তো করো 
মস্তিষ্কে জ্যামার লাগিয়ে রেখেছো কেন 
বুকে ধৃতরাষ্ট্রের মতো অন্ধ চোখ , ও আমার সোহাগের মরদ রে 
বাস গাড়ি বন্ধ আর উনি চাঁদ দেখছেন গাছে 
প্রতিষ্ঠানে বসে যারা চুল্লু খায় 
আর ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েদের দেখে
তাদের জন্য প্রতি রাতে ভেড়ার চিৎকার , থুতকার সহ
গাছে গাছে কত ফুল ফুটেছে নতুন , কত সুগন্ধ আসছে 
বানচোদ দেখতে পাচ্ছো না ? রবার্ট ক্লাইভ রবার্ট ক্লাইভ বলে চেঁচাচ্ছো


মার্জনা করবেন প্লিজ 

একটা মিথ্যের জন্য আজ কতো-ই না হামাগুড়ি দিলাম
আরে কী বলছো , দেখো পেচ্ছাবের গন্ধ আসছে
গতকাল ২৫ শে বৈশাখ গেল 
আর আজ-ই এরকম কবিতা লিখছো 
শ্রেষ্ঠ পথের অমরত্ব বুঝি শান্তি দিচ্ছে না পোঁদে
বোকাচোদা হাংরি দেখাচ্ছো , ছিনাল কোথাকার 
ওহ sorry , মাথাটা একটু গরম হয়ে গিয়েছিল 
মম চাঁদ গেছে ঘৃত অন্বেষণে
আমিও নিখোঁজ প্রেম পলান্নে 
নিখিল বিশ্ব দমকা হাওয়া
খুলে গেছে গিঁট গরম তাওয়া
প্রিয় অডিয়েন্স , মানকচু সম্পর্কে গা-জ্বালা কথাগুলো 
এমন-ই বিকলাঙ্গ যে আবহাওয়া অফিস পরিশ্রম করেই চলেছে 
আপনি আদা খাবেন , না গাঁট খাবেন তা আপ কা মর্জি 
জ্যোৎস্নায় ঘুমপাড়ানি গানের কানমুলে দিলে শুক্রানু প্রগাঢ় হবে
তখন মহেঞ্জোদাড়ো থেকে শোনা যাবে গ্রামোফোনের গান
" ও নদীরে একটা কথা শুধাই শুধু তোমারে " 
রাত ১ টা বাজছে , সিঙ্গাপুরি মডেলের ফ্লাই ওভারগুলো আলো নিভিয়ে দিয়েছে
চলো একটু মন পরিস্কার করি , 
সামনের মাসে এই পৃথিবী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কে জানে


ইহজন্মের হালচাল 

কিছু শুক্রবার এরকম স্বপ্ন দেখায় , ফুল চাষের
বৃহস্পতিবার নিয়ে কখনো শীত উপভোগ করেছি কিনা জানি না 
গোড়ালির অবসরে বাঁকা চিহ্নগুলো যেন ব্যর্থ বৈষ্ণব 
তাহলে জামা খুলে কেন চাঁদ দেখছিলাম কালো
ভীষণ কষ্টের কবিতা না লিখে আমি কষ্ট উৎপাদন করছি 
যেমন শিরীষগাছ শুধু নালিশ করে 
এবং বহু বিবাহের বৈষম্য নিয়ে গতকাল উঠোনে স্থিতাবস্থা ছিল 
আমাকে গদ্য-কবিতা লিখতে মানা করছিল যাবতীয় কবরস্থান 
কারণ আমাদের গ্রামে ইলেকট্রিক চলে এসেছে অনেকদিন 
পাড়ার মেয়েগুলো ছেলেদের চেয়ে পড়াশোনা করছে ভালো
তাই নির্বাসনের গভীরে একটু লিকার চা খেয়ে চামচে টোকা দিলাম
ইহজন্মের এমন-ই হালচাল 
নতুন কিছু বললে কোতল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি 
তা বলে কি লোকে মদ খাচ্ছে না , আলবত খাচ্ছে 
কোচবিহারের রাস্তায় বাঘ দেখা গেছে , মাধবী ছবি post করেছে 
কত কী ঘটছে এই লকডাউনে 
আচ্ছা , আমি কি টিনের চালের কথা কম বললাম কিছু 
Sorry মার্জনা করবেন প্লিজ , 45° মানে আমাদের হাড়ে ঘুণ


ধ্বনির প্রাবল্যে

এভাবে আমি ঘুমগুলোকে নিবিষ্ট করলাম 
আমার ডান হাতে আছে একটি ম্যাজিক ঘড়ি 
যা দিয়ে আমি চলে যাই 500 কিংবা 1000 বছর 
রাত ঘুরে বেড়ায় জোনাকির শহরে
অস্পষ্ট আলো পাতার দরজায় 
এখানে হয়তো খবর আছে , তবে প্রচার নাই
ওরা ডাকে 
ওরা ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ধবধবে জ্যোৎস্নায়
এখন যেকোনো দিকেই চলে যাওয়া যায় 
শোকের উঠোনে অথবা বালিহাঁসের নিশানে
প্রচন্ড শব্দ-কাতর , ধ্বনির প্রাবল্যে 
ভেঙে যাচ্ছে 
আমার হাতের মুঠোয় দীর্ঘ একটা জীবনের অন্ধকার 
এত ফাঁকা চারপাশ এত শুনশান 
হাওয়ায় ঘুম আসে না , বাঁ হাতের আঙ্গুল যেন


                                                                        তথাগত দত্ত 


তুমি একবার হাসলেই 

আঘাতের পর আঘাত পেয়ে আমার বুকের ভিতরটা 
কীভাবে যেন পাথর হয়ে গেল ...
এখন আমার শরীর অনেক ভারী  
সহজে হাঁটতে পারি না আর আগের মতো 
তাও খুব কষ্ট করে যেটুকু হাঁটি 
আমার এই ভারী  শরীরের পায়ের আঘাতে মাটি কেঁপে ওঠে , কেঁপে ওঠে 
এখনও শহরের মতো করে সেজে উঠতে  না পারা গ্রামের 
প্রাত্যহিক অনিশ্চয়তা...
তবু আমি চন্দনের গন্ধ পাইনি কোনওদিন 
শুধু দেখেছি রক্ত চন্দনের স্রোত তোমার শিরায় শিরায় ---
                                                    আঘাতে আঘাতে ভেঙে যায় উপকূল ! 
আমার জন্ম যায় , তোমার  ও-ঠোঁটের হাসি দেখিনি কতদিন ! 
চোখে চোখ রাখো আজ , 
তুমি একবার হাসলেই 
আমার বুকের পাথর সব পালক হয়ে ঝরে যাবে ...


ক্ষত  

তারপর বাঘের ডাক ঘুমিয়ে পড়ে গাছের ছায়ায়, জলে 
অথবা মনে হয় যেন বাতাস বয়ে যাচ্ছে খুব শব্দ করে 
জল আর জলবায়ুর মধ্যে তফাৎ বোঝার মতো 
                                                              ভূগোলের জ্ঞান আমার নেই 
তবুও তো খনি মনে করে বুকের ভিতর এই খনন... 
আচ্ছা, সত্যিই কী বাঘ ডেকেছিল? 
পালে বাঘ পড়েছিল? 
নাকি পালে বাতাস লেগেছে আজ 
চেতনার এমন গতি তাই !
জড় চাহিদার জন্য পিছন ফিরে তাকানোর কোনও মানে হয় না এখন 
আসলে সমস্ত ক্ষতই ক্ষতিকারক নয়... 


পরশ পাথর 
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিবেদিত )

শুনেছি সেখানে ছয়মাস দিন 
কিন্তু তারপর ছয়মাস রাত থাকে একটানা 
আপনি যার মনের ভিতরে আছেন,  তার মনে 
রবি কখনোই অস্ত যাওয়ার নয়... 
শুধু সত্য আজ অস্তমিত, মৃত 
অস্ত্র সব অন্যায়ের হাতে 
তবু আপনার কবিতায় এই পৃথিবীকে এখনও সুন্দর মনে হয় 
আপনার কবিতায় ফুল ফোটে 
গোরস্থানে জন্মায় শ্মশানচাঁপা... 
তবুও তো সমস্ত বসন্ত গ্রীষ্মেই পুড়ে গেল 
তাই আপনার কাছে আসা 
একটা আষাঢ়ে গল্প আশার সঞ্চার করে যায় আমার ভিতর 
বাঁশির সুর ভেসে আসে 
ভেসে আসে আপনার গান 
পরশ পাথর যেন 
ছোঁয়ালেই মূল্যহীন সোনা উর্বর মাটি হয়ে যাবে... 


কত দূরে যাব? 

অবস্থা ভালো নয়, ভাই 
তাই তালপাতার সেপাইয়ের সব কথাতেও তাল দিয়ে যাচ্ছি 
তালে আর তেলে কিছু ভিন্ন নেই... 
এইবার মনে হচ্ছে পুরোনো দেওয়ালটা ভেঙে পড়বে 
দূরে গিয়ে দাঁড়ানোই ভালো 
কিন্তু কত দূরে যাব? 
কত দূরে গেলে নিজের ছায়াটিও আর নিজের কাছে  থাকবে না !
কত দূরে গেলে নিজেই পালানো যাবে  নিজের কাছ থেকে !


মৃত্যু? 

বিবর আর বিবর্তন 
চিবুক থেকে বুক 
সুখের খোঁজে তারা 
গান গেয়েছিল 
গোলায় তুলেছিল ধান 
তারপর? দেশত্যাগ নাকি 
বন্যা এলো? 
জলের গজল? 
মৃত্যু? 
জুয়ার আসরে 
যে তাস খেলে হতাশ হতে হয়... 
নষ্ট? নাকি 
বিয়োগের মধ্যে দিয়ে 
যোগের সূচনা!





Tuesday 19 May 2020

অরিজিৎ চক্রবর্তী

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ 
১৪০-তম প্রয়াস, ১৯শে মে


ভাষা আমার মা   অরিজিৎ চক্রবর্তী

সূর্যাস্তের বিপরীতে আমাদের 
ভাষাচক্র শব্দকে ব্রক্ষ্ম ভেবেই অপেক্ষা করছে

আর আমি সন্ধ্যামালতীর বনে, এসেছি গাছের কাছে বৃষ্টি ও পাখির ঠোঁটে
মা নিষাদ' লিখবো ভেবে

শিলচর রেলস্টেশনের ঘড়িতে 
অধিকন্তু কথা ও শূন্যতা...

মনে পড়ে তাকে? 
আমাদের ভাষা-শহিদ ষোড়শী কমলাকে?

অনন্ত সূর্যাস্তের বিপরীতে
ঊনিশের শহিদের মতো আজও কেউ পথ হাঁটে...

মনে পড়ে তাকে?


২.

আমার ভাষার মাকে কত 
যে রক্তদাগ সহ্য করতে হলো।

তুমি বলো শব্দের গুঞ্জনে 
পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ কেন এ্যাতো!

আমাদের সমবেত 
রাগ দুঃখ ও অভিমান... 
যেন কতদিন পর আমি হাত রাখলাম ওই মৃত্যুর ওপর...

তারপর দেখি মায়ের আঁচলে কেউ ঢেকে রাখে প্রসূতির
ভোর

হাজার বছর ধরে তুমি 
যাকে লালন করেছো 
অজস্র বন্ধুকের নল আর কার্তুজ উপেক্ষা করে

ভাষা আমার মা, ভাষা ছাড়া বাঁচবো কি করে?

Monday 18 May 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ 
 ১৩৯-তম প্রয়াস


পাখি রঙের আকাশ  ------ ৭৩

নিশ্চয়ই তোমাকে পাওয়ার ইচ্ছে ছিল। তা না হলে ওই ভাবে বাড়ি বাড়ি খুঁজবো কেন ! প্রায় প্রতিটা বাড়ির ছাদ বারান্দায় তোমাকে খুঁজতাম। তারপর একদিন খুঁজতে খুঁজতে নদীর পাড়ায় এসে হাজির। দেখি তুমি হেঁটে চলে বেড়াচ্ছ। কোথায় তোমার বাড়ি ! ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়ি। মাঝরাতে ঘুম ভাঙতে বারান্দায় এসে দাঁড়াই। মন একটু নড়ে উঠতেই কত কত তুমি। কিন্তু এ তো আরও গভীর। এখন মনে হয় তোমাকে দেখতে পাচ্ছি এটাই তো অনেক !






শুভ্র নীল চক্রবর্তী

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ 
 ১৩৯-তম প্রয়াস


যৌবসুধা    শুভ্র নীল চক্রবর্তী

গাছের পাতা বরাবর ঝরে পড়ছে অগ্নিকুণ্ড
সাঁওতাল নন্দিনীর বাঁকা সখের মৌচাকে
অসমসত্ত প্রতিনিধিদের কুঞ্চিত ব্যঞ্জনার ফলকের মত 
ঝরে পড়ছে স্নায়ু তমালির  নিটোল শরীর বরাবর 
যেমন ভাবে সিগারেটের ধোঁয়া মিশে যায় 
ফুটপাথের সাদা আলোয় ।

যুদ্ধের জরায়ু 

পিরীত উপোষীর জন্য এক গ্লাস শরবত রেখে যাও
একফোঁটা রক্তে মিশিয়ে দিও অস্ত্র 
অম্লান বদনে জিভে কেটে নেবে ডোরা সাপের বিষ

জরায়ুর শেকড় ছিড়ে যাওয়া অবধি পা জোড়া এক করোনা নিষিক্তের সংশোধনে  

ঘুম ভাঙলে দেখবে বিপ্লব দাড়িয়ে আছে তোমার চোখের পাতায় 


প্রকৃতি ও পুরুষ 

প্রকৃতিকে অগোছালো করতে আমি আসিনি 
শুধু উপনয়ন চেয়েছিলাম প্রতীক্ষার , তোমার জন্য 
বিষ কাধে নিয়ে বেড়ানো সাপের ছোবলে জর্জরিত স্পর্শ , এক সমাহার বিষন্নতা অলি গলি দিয়ে বেয়ে যাচ্ছে প্রত্যুত্তরের ঠিকানায় 
বিষাদে বিবর্ণ আত্মহত্যা ঢাকা দেওয়ার এত সমাগম
ঠিকানা বলে দেবে ঠিক
সাজানো অর্বুদে নিন্দুকের বিছানো মৃত্যু অপেরা ।

দ্রাঘিমা বরাবর রক্তদোষ

একটি মিলনের আদরে পড়ে থাকা রোদ্দুর 
একটি নিভে যাওয়া সভ্যতার বুকে সমৃদ্ধির আলাপন সেরে 
নোনা জলের ক্ষেতে রাগ করা আশ্বিনে
কুমারীর নিশাচর স্বপ্ন বলিদান ।
শৃঙ্গ রসের মোহনায় বজ্র নিনাদের আভা দেখা যাচ্ছে ক্রীতদাসের অনুষ্টুপ আলজিভে 
এখনো না জেগে থাকলে জাগো প্রহরী 
ঐ দেখো কারা আসছে কনিষ্কের কাটা মাথা পড়ে ।

 বেঁচে থাকা শুধু মৃত্যুর ভয়ে

অমীমাংসিত ছায়াপথ বরাবর হেঁটে যাই 
গোপন কান্ডারীর আবেশে
এক শলাই আলোয় গোটা বৃত্ত মোহময় 
সৃষ্টি যতটা শীর্ণ হয় নারীর  উদ্দেশ্যে ।

শোকজরে বিমোহিত পর্ণমোচী
যারা ভালোবেসেছিল শুধু আবেগের আশ্রয়ে
আজও কি বাতাস তাদের নিভৃতে বলে যায় -
বেঁচে থাকা শুধু মৃত্যুর ভয়ে ।


অরূপ সরকার

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ 
 ১৩৯-তম প্রয়াস

নীল রঙের সন্ধ্যে

সন্ধ্যা  তখন নামছে সবে,আঁধার করে রাস্তাঘাট ।
লিটমাসের নেশা লাগিয়ে চোখে আরোহী পেরোয় ফুটপাত
চৌমাথার সেই রেস্তরাঁ টা দাঁড়ি য়ে আছে জ্বালিয়ে আলো,

মুখোমুখি বসা মানুষেরা ঝিমোনো সময় কাটিয়ে গেলো;

দিব্যি আজ মিথ্যে ভীষণ,মুখোশ পরা সভ্যতাতে;ডিপ্রেশনে আবদ্ধ এ মন 
আটকে আছে কফির কাপে,
তোমার ঠোঁটের আদ্র চুমু,উষ্ণ ছোঁয়া শিরদাঁড়া তে।
এসব ভেবেই সন্ধ্যা খরচ শেষ চুমুক তাই জলের গ্লাসে;
চিনতে এখোনো ভুল হয়ে যায় মুখ মুখোশের হিসেবে খাতে।


টুকরো হওয়া লেখা 


মানুষের পায়ের নীচে মরে যাচ্ছে পিঁপড়ে 
দাম্ভিক পায়ের কি প্রয়োজন নীচের দিকে দেখার,
সে শুধু জানল ধ্বংসের বানান
সৃষ্টি চিরকাল নিখুঁত যেমন করে রং দেন বিধাতা
পৃথিবীর ক্যানভাসে, বিধবা রঙের চাঁদে 
আলোর ধারা স্নানে চকচকে হয়ে    ওঠে  মানুষের মাথা।

যেখানে  চলতে থাকে নানা ষড়যন্ত্রের বিক্রিয়া,
উৎপন্ন করে আধুনিক হত্যার সূত্র
মানুষ আজও শেখেনি প্রান  প্রতিষ্ঠার শীল্প ।


অনিশ্চয়তা

হাওয়ায় ভাসে খবর বিচার হয়না সত্যতা,
হাতে তুলে নাও অস্ত্র সহিষ্ণুতা তোমার পথ না,
রাতের খাবারে ছিল রুটি আর বাঁটি ভরতি রক্ত;
প্রতিশোধর তামাটে আগুনে ঝলসে তোমার চোয়াল হল শক্ত,

জীবনের গ্রাফ স্বীকার করেছে বশ্যতা
চকচকে প্রতিশোধ বালিশে শোয়ানো।
তুমি মৃত্যুদূত  ফেরা করো অস্ত্র সামগ্রী 
তোমার মুখ আদতে শাইলকের প্রতিচ্ছবি ।

Sunday 17 May 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ  
১৩৮- তম প্রয়াস


পাখি রঙের আকাশ  ------ ৭২   হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ ট্রেন ছেড়ে গেলে মাথা উঁচু করে কিছু ঘাস। তাদের বুকের মাঝে ভেসে ওঠে কিছু জলজ বিকেল। একদিন অনেক কথা হয়েছিল। কথার মানুষেরা কেউ কেউ ভেবেছিল কথা চলে যাবে ধারাবাহিকের মতো। যারা চারপাশ চেয়ে দেখেছিল তারা শুধু ভেবেছিল যতটুকু হোক কথা তারা যেন কথার গন্ধে ধনী থাকে। ট্রেন এলে ছিঁড়ে ছিঁড়ে যায় কথা। মনে হয় কথা সব গলে গেছে পুরোনো বিকেলে। রাতের অন্ধকার নেমে এলে কিছু হাত উঠে দাঁড়ায়। শেষ নৌকা এসে তীরে থামলে হাতেরা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। জানলা দিয়ে সেখানেও দেখা যায় হাত। যারা ভেবেছিল কথা মজে থাক কথার গন্ধে তারা শুধু জেগে আছে এখনও

সিদ্ধার্থ সিংহ

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ 
 ১৩৮- তম প্রয়াস


জানালা     সিদ্ধার্থ সিংহ

ঘর বানাচ্ছ, বানাও
মনে করে দুটো জানালা বানাতে ভুলো না।
একটা জানালা দিয়ে ছেলে যাতে উড়ে যেতে পারে
রামধনুর রং মাখতে পারে সারা গায়ে
মেঘের ভেলায় চেপে ভেসে যেতে পারে যেখানে খুশি,
আর অন্য জানালা দিয়ে পা টিপে টিপে এসে
যাতে শুয়ে পড়তে পারে বিছানায়।
ঘর বানাচ্ছ, বানাও
মনে করে দুটো জানালা বানিও।
একটা জানালা দিয়ে এসে
ছেলেকে যাতে বকাঝকা করতে পারো
কষাতে পারো দু'-একটা চড়চাপড়,
আর অন্য জানালা দিয়ে এসে
ঘুমন্ত ছেলের কপালে যাতে চুমু খেতে পারো।
ঘর বানাচ্ছ, বানাও
মনে করে দুটো জানালা বানাতে ভুলো না
আর হ্যাঁ, সেই জানালায় যেন গরাদের কোনও
                                                ছায়া না থাকে...
একই

বাবার কাছে কোনও দিন সাদা শাড়ি
কোনও দিন জংলা ছাপা
আবার কোনও দিন হাওয়ায় ওড়া আঁচল আসত।
ওরা আসার আগেই আমাকে আর দিদিকে
বাবা বসিয়ে দিয়ে আসতেন গলির মুখে, একটা রকে।
বলতেন, যে-গাড়িগুলো যাবে সেগুলোর নম্বর লিখে রাখ তো দেখি।
আমরা লিখতাম।
পরে নিজেরাই মিলিয়ে মিলিয়ে দেখতাম কার ক'টা বাদ গেছে
বাদ গেলেই কানমলা
আর যে লিখত, সে পেত কখনও কাগজের উড়োজাহাজ
কখনও ঘটি চানাচুর।
আমি রোজ রোজ কানমলা খেতাম।
সতর্ক হতে হতে যখন বুঝলাম
দিদি আসলে ওগুলো পাওয়ার জন্য মিথ্যে মিথ্যে নম্বর টুকে রাখে
বাবাকে বললাম।
বাবা চালু করলেন নতুন খেলা।
বললেন, বসে বসে লোক দ্যাখ,
দেখবি, এত মানুষ, তার ওইটুকু একটা মুখ
তবু কী অদ্ভুত! কারও সঙ্গে কারও মিল নেই।
যদি কখনও একই রকম দুটো মুখ দেখতে পাস
দ্বিতীয় জনের নাম-ঠিকানা লিখে রাখিস
বকুলের দানা দিয়ে শিস-বাঁশি বানিয়ে দেব।
বাবার কাছে কোনও দিন সাদা শাড়ি
কোনও দিন জংলা ছাপা
আবার কোনও দিন হাওয়ায় ওড়া আঁচল আসত,
মা তাই চলে গিয়েছিলেন মামার বাড়ি।
আমরা একই রকমের আর একটা মুখ খুঁজতাম।
তখন মেলাতে পারিনি
এখন বুঝতে পারি, সাদা শাড়ি, জংলা ছাপা
আর হাওয়ায় ওড়া আঁচলের মুখগুলো আসলে একই
হুবহু এক। 

সতর্কীকরণ

বয়স্কদের থেকে একটু সাবধানে থাকবেন।
দেখবেন, ছেলেদের দিকে তেমন ভিড় না থাকলেও
লেডিজ সিটের সামনে মেয়েদের ঠিক পিছনে
                      কিংবা গাঁ ঘেষে দাঁড়ানোর জন্য
বাবা-জ্যাঠা-মামাদের সে কী প্রাণপণ লড়াই
কয়েক দিন খেয়াল করলেই টের পাবেন
গভীর রাতে উঠে শাশুড়ি কান পাতছেন
                                ছেলের ঘরের দরজায়
না না, ছিঃ, ও সব শোনার জন্য নয়,
কান পাতছেন, বউ তাঁর ছেলের কানে কোন মন্ত্র দিচ্ছেন,
                                            তা শোনার জন্য
বয়স হলে মানুষেরা ফুটপাতের এত ধার ঘেঁষে হাঁটেন যে, নোংরা তাঁরা পাড়াবেনই।
বয়স্কদের থেকে একটু সাবধানে থাকবেন।
এমনকী, যখন আমার বয়স হবে, তখন আমার থেকেও
অবশ্য আমার বয়স কি আর বাড়বে! 

কৃষ্ণ 

জানালায় চোখ পড়তেই দেখি খাটে শুয়ে আছেন কৃষ্ণ
এত নীল!
ছেলে তখন ক্লাস টু-য়ে
গরমের ছুটির আগের দিন ছিল ‘যেমন খুশি সাজো’
ও কৃষ্ণ সেজেছিল
জরির কাজ করা ঝলমলে পোশাক, হাতে বাঁশি
মোবাইলে তোলা সেই ছবি দেখে ওর দিদুন বলেছিলেন—
‘এই তো আমার গোপাল’
সেই ছবি এখনও দেয়ালে ঝুলছে। 
জানালায় চোখ পড়তেই দেখি খাটে শুয়ে আছেন কৃষ্ণ
তবে কি সাধু-সন্তদের পথ দেখিয়ে দেখিয়ে
এই গোয়ালে নিয়ে আসছে কোনও উজ্জ্বল তারা!
ওরা আসার আগেই আমি একটু ভাল করে দেখে নিই…
ঘরে ঢুকতেই দেখি
কৃষ্ণের মুখ বেয়ে নেমে কখন থমকে গেছে সমুদ্রের ফেনা। 

কী করে বলি

হাইকম্যান্ডকে কী করে বলি!
ও রকম দু'-চারটে খুন সবাই করতে পারে
কিন্তু এক কোপে কারও মাথা নামিয়ে
সেই মুণ্ডু নিয়ে কখনও কি ফুটবল খেলেছেন প্রকাশ্য রাস্তায়?
তবে?
ও রকম দশ-বিশটা ধর্ষণ সবাই করতে পারে
কিন্তু আপনার নাম শুনলেই
মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যাবে মেয়েদের স্কুল, পাপড়ি গুটিয়ে নেবে ফুল
সে রকম বিভীষিকা কি ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন চারিদিকে?
তবে?
আপনাকে আসতে দেখলে
আশপাশের বাজার, চৌরাস্তার মোড়
কিংবা অফিসপাড়া
খরগোশ হয়ে যেতেই পারে
কিন্তু ওদের ভিতরের বাঘটাও যে মাথা নুইয়ে কোণে গিয়ে লুকোবে
সে রকম কুচকুচে কালো মেঘে কি ঢেকে দিতে পেরেছেন গোটা আকাশ?
তবে?
হাইকম্যান্ডকে আমি কী করে বলি
এ বার অন্তত ভোটে দাঁড়ানোর জন্য আপনাকে একটা টিকিট দিক!