Monday 25 July 2022

জন্মদিন সংখ্য়া ~ দেবলীনা

 || মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  দেবলীনা 

শুভ জন্মদিন দেবলীনা , মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা এবং আমার তরফ থেকে তোমাকে আগামীর শুভেচ্ছা 

কৃষ্ণ

১)

কোন এক খরানি দুপুরের পঙ্ ক্তি তর্জমা করছিলাম বিষাদ নির্জন কোণে 
হঠাৎ রোদ্দুরের ছেঁড়া দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লো 
বেশরম বাতাস...  উড়ে গেলো
পাখিঘরের - ছন, পালক, ঘ্রাণ। 
এই আক্ষেপে —
অবচেতনেই প্রশ্ন করি,
 বিষণ্ণ এ্যামপ্লিফায়ারে বাজে এ কোন সুর!!

জমাট মেঘেদের ভিড়ে খিল খিল করে হেসে উঠলে তুমি - কৃষ্ণ 
তুমি এলে আকাশের কয়েক আউন্স নীল মেখে 
তোমার মোহন বাঁশির উচাটন স্বর আমি এখন বুঁদ হয়ে শুনছি ... 
না এ কোন স্বপ্ন নয় , ঘুম নয় এ যেন এক
 গোপন ইশারা 
 গড়িয়ে পরছে নাচের মুদ্রায় শরীর থেকে মনে,আঁকছে স্বস্তিক চিহ্ন দ্রিমি দ্রিমি ছন্দে!

 
২)

 আজ সবকিছু কেমন পালটে যাচ্ছে ,
চারপাশ হয়ে উঠছে যেন উজ্জ্বল পূর্ণিমার চাঁদ 
রামধনু থেকে ছড়িয়ে পড়ছে উন্মাদের মতো রং
বাতাসে ভাসছে এক আশ্চর্য্য নেশা 
আর আমার ব্যাকুল ভাব শুধু ছুঁয়ে যেতে চাইছে 
সেই ললিত সুর..
নীরব, মূক , চলচ্ছক্তিহীন আমি যেন বিনোদিনী - রাই
ডুবে যাচ্ছি ক্রমশ তোমার ঐ গাঢ় নীল কৃষ্ণগহ্বরে...


৩)

তোমাকে পড়তে আসে প্রতিবেশী মেঘ
তাদের দীঘল কাঁচুলি ভরে নিয়ে আসা মরসুমী হাওয়ায়
দুলে ওঠে তোমার ময়ূর পালক
তবু যেন এক অবিচ্ছেদ্য নূপুরের বোল 
তোমায় টেনে নিয়ে যায়
কবেকার সেই বকুলের ছায়ায়,তিরিতিরি নদীর পাড়


৪) 

এ কৃষ্ণ নাম অবিরাম , শাশ্বত,পরিণামহীন
যে নামের এত প্রেম সেই নাম শুনে আলুথালু 
রাই অঝোরে কাঁদে
অভিসার না জেনে মাথুর কপালে লিখে পদাবলী গায়।
আর তখনই তমালবনে ঝিরিঝিরি হাওয়া দেয় মিলনের
 সন্ধ্যার অলৌকিক আলোয়
 মাধবের শ্রী মুখে চেয়ে বিরহি চকোর জ্যোৎস্নায় কণ্ঠ ভেজায়।

স্কেচ ....       

এক একটা দিন কেমন উল্লাসের পর্দা উড়িয়ে চলে যায় !

ওপাশে যেমন এক চকমকে আলোর ঝালোর,
 কিচিমিচি বোলতান
 আর এদিকে ছায়া ছায়া মেঘ!

তারপর সব ফেড আউট --

আবছায়া - নৈঃশব্দ্য !

হাইকু 

১)

ঘন কৃষ্ণাভ
মেঘ রূপ দর্শনে
ময়ূর নাচে।

২)

আলোর কথা
লেখা হয়নি বলে
ঘনালো রাত।

৩)

আকাশ আজ 
বালিশ ছেঁড়া তুলো,
বেড়ায় ভেসে।

৪)

চাঁদ'ই জানে 
কলঙ্কদাগ তার 
নিরব ব্যাথা!

৫)

 রঙিন ফুলে
 জলমুক্তোর সাজ
 শ্রাবণ দিনে।



Monday 18 July 2022

জন্মদিন সংখ্য়া ~ শ্রাবণী

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  শ্রাবণী


জল

সাওয়ারের নীচে ধুয়ে যায় অজস্র কান্না 
গুড়ো গুড়ো লবনাক্ত শোক  

অথচ 
তুমি বিন্দু বিন্দু দিয়ে সিন্ধু গড়ার কথা বলো

তুমি কি জানো না
জল কেবলই যন্ত্রণার কথা বলে.....




নদীবৃত্তান্ত

কথাটা ধুলোর উপর লুটিয়ে দিলেও পারতাম
কিন্তু 
আজন্ম নদী হতে চেয়েছে যে মেয়ে
সে কী করে আঁজলা ভরে দুঃখ ছড়িয়ে দেয় 
বলো?

তুমি অভিমানের কথা বলবে, আর
আমি বুকের ভেতর মন্থকূপ আঁকব না!

তার চেয়ে তুমি আনন্দের কথা বলো, 

জানো না
অভিমান মানুষকে বড় অন্ধ করে দেয়!




সিরিয়ার প্রেম

অতঃপর
আর নেই প্রেম,
জিজীবিষা যাও ছিল, 
তাও ধুলোর গহ্বরে গেল মিশে,
জিয়ন্ত ছিলাম আমি, জোঁকের মতন প্রেমিকার ঠোঁট থেকে শুষে নেওয়া প্রেম ছিল যতদিন আঠালো অধরে।

কোন জিয়নকাঠির আঁচড়েও আর প্রেম ফিরবে না জানি,
আমারও জিয়ারত হবে না প্রেমিকার চোখের তারায়,
ধ্বংসস্তূপে আমি কুড়িয়ে ফিরব হারানো ঘরের স্তম্ভ,
তোমরা দূর থেকে দেখে নেবে সব।

একে তোমরা জেহাদ বলো?
আমি বলি ঘেন্না,
একে তোমরা আনন্দ বলো?
আমি বলি কান্না,

তোমরা কারা, যারা প্রতিটা মুহূর্তে প্রিয়তমর বুক থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছ প্রেয়সীর নিষ্কলুষ দেহ?
তোমরা কারা, যারা প্রেমের বদলে প্রেম পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিচ্ছ বেয়নেটের জোরে?

অতঃপর
শেষ হবে সব,
আমারও নগ্ন দেহ পড়ে থাকবে তোমার রাইফেলের তলায়,
বারুদে বারুদে মিশে যাবে আঠালো সেই ঠোঁট,
যে ঠোঁটে প্রতি রাতে চুমু আঁকত আমার শেষ প্রিয়তমা...




যে চিঠিরা কথা বলে

প্রিয় চিঠি, 
তোমাকে খুলে বসলেই হারানো প্রেম আমার ঠোঁটে এসে কথা বলে,
আমার কল্পনায় প্রিয়ার সে অনাবিষ্কৃত শরীর,
নির্ভার দেহভার, কোমল অথচ দৃঢ় কপোতির মতো বুকেদের কম্পন
আমি আজও খুঁজে ফিরি সাদাকালো অক্ষরে
কেউ জানে না কত রাত স্বপ্ন দেখিনি আমি
বাস্তবের নির্মম আবহে আমার স্বপ্নেরা সুর তোলা ভুলে গেছে, 
প্রিয় চিঠি 
আমার দেরাজে তুমি তুলে রাখা আঘ্রাণ
দমবন্ধ রাতের বাধ্যকতামূলক রতিক্রিয়ায় তোমারইতো সৌরভ আমায় জিতে যাওয়া শেখায়
তুমি নিশ্চয় ভুলে যাওনি প্রিয়ার অনুরোধ,
"এক রাত্রির অমাবস্যার পর যখন একফালি চাঁদ উঠবে, তুমি সে আলোকেই জড়িয়ে নিও প্রিয়"
প্রিয় চিঠি, 
চিন্তা কোরো না, আমি জানি একদিন না একদিন
আমার নিভৃতে, আমার আমিতে ঠিক মিশে যাবে প্রিয়ার সে প্রেমের অক্ষর
তুমিও তো সেদিনই ছাই হবে যেদিন আমিও নগ্ন পুড়ব উষ্ণ পোড়া কাঠে।



অলংকরণ- শ্রী মহাদেব