Monday 26 July 2021

বিশেষ সংখ্যা ~অরিজিৎ চক্রবর্তী

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  অরিজিৎ চক্রবর্তী

আপনাকে অনেক ভালোবাসা... 
শুভ জন্মদিন দাদা



পুষ্প বনে পুষ্প নাহি


প্রেম

কষ্ট বাড়িতে এসেছে। কুশলবিনিময় করতে। আমি কষ্টকে ভেতরে ডাকিনি। বলেছি ব্যস্ত আছি। পরে এসো একদিন।

এখন লেখার টেবিলে একটা দুঃখের কবিতা লিখছি। আর নিজেকে আবিষ্কার করছি।

কবির জন্য কষ্ট কত প্রাসঙ্গিক

তোমার জন্য দুঃখ কতটা প্রশ্নবোধক


অ্যালবাম

আমার সঙ্গে তোমার কবিতার সম্পর্ক নেই

আমার সঙ্গে তোমার প্রেমের সম্পর্ক নেই

শুধু উড়ে যাওয়া পাখির ছেড়ে যাওয়া টুকু আছে


আলো

আমার ভেতরে তুমি নেই। তোমার ভেতরে আমি নেই। মেঘ করলেই বৃষ্টি হয় না। হাওয়া উঠলেই ঝড় আসে না। দর্পণে সমর্পণ নেই। 

এই যে তুমি মিথ্যে বললে, তাতে একটা ফড়িংও উড়লো না! কেউ হাত ধরে বললো না, আছি তো! মনখারাপ হলে প্রান্তরে চোখ রাখি। কত পাখি উড়ে যায়। চোখ আর পাখি, পাখি আর চোখ! 

চোখ তো পাখির মতোই সমবৃত্তীয়


চলন

ইকোটোন অঞ্চলে আমার জন্মদিন তোমাকে দিলাম। 

আর মোমবাতি জ্বালিয়ে ভাবলাম 
জাতিস্মর হওয়াটাই সমীচীন

নিজস্ব কুয়াশা ছাড়া মানুষের কোনো 
                                            প্রজাপতি নেই 

বহুকালের নীরবতায় একটা দেশলাই রাখা আছে।


ঈপ্সা

কয়েক মাস কবিতা লিখতে না পারার পর 
আজ আবার তোমাকে লিখলাম! 

আয়নার সামনে দাঁড়ানোর মুহূর্তে 
ডানহাত বাম হয়ে গেল। 

প্রলম্বিত পদ্মের কাছে মন্দ্রিত স্রোত, 
দংশন প্রবণতা, হাহাকার...

বলো কীভাবে অনন্ত হবো পরাজয়?

লীনতাপ

সকালের বাজারে রুই মাছের মাথা থেকে পিটুইটারি সংগ্ৰহ করে যে লোকটি, আমি তার আঁশটে গন্ধ আবিষ্ট মহিমা

জানিনা কোনো স্খলন থেকে এই শ্রম আবিষ্কৃত হল কিনা


চাতক

প্রেম সম্পর্কে কি আর বলবো

বহু বিকল্পের মধ্যে ইউনানী চিকিৎসায়

ভাদ্র এসে দরজায় কড়া নেড়ে যায়




Sunday 25 July 2021

বিশেষ সংখ্যা~দেবলীনা

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || বিশেষ সংখ্যা ||


কৃষ্ণ
দেবলীনা

১)

কোন এক খরানি দুপুরের পঙ্ ক্তি তর্জমা করছিলাম বিষাদ নির্জন কোণে 
হঠাৎ রোদ্দুরের ছেঁড়া দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লো 
বেশরম বাতাস...  উড়ে গেলো
পাখিঘরের - ছন, পালক, ঘ্রাণ। 
এই আক্ষেপে —
অবচেতনেই প্রশ্ন করি,
 বিষণ্ণ এ্যামপ্লিফায়ারে বাজে এ কোন সুর!!

জমাট মেঘেদের ভিড়ে খিল খিল করে হেসে উঠলে তুমি - কৃষ্ণ 
তুমি এলে আকাশের কয়েক আউন্স নীল মেখে 
তোমার মোহন বাঁশির উচাটন স্বর আমি এখন বুঁদ হয়ে শুনছি ... 
না এ কোন স্বপ্ন নয় , ঘুম নয় এ যেন এক
 গোপন ইশারা 
 গড়িয়ে পরছে নাচের মুদ্রায় শরীর থেকে মনে,আঁকছে স্বস্তিক চিহ্ন দ্রিমি দ্রিমি ছন্দে!

 
২)

 আজ সবকিছু কেমন পালটে যাচ্ছে ,
চারপাশ হয়ে উঠছে যেন উজ্জ্বল পূর্ণিমার চাঁদ 
রামধনু থেকে ছড়িয়ে পড়ছে উন্মাদের মতো রং
বাতাসে ভাসছে এক আশ্চর্য্য নেশা 
আর আমার ব্যাকুল ভাব শুধু ছুঁয়ে যেতে চাইছে 
সেই ললিত সুর..
নীরব, মূক , চলচ্ছক্তিহীন আমি যেন বিনোদিনী - রাই
ডুবে যাচ্ছি ক্রমশ তোমার ঐ গাঢ় নীল কৃষ্ণগহ্বরে...


৩)

তোমাকে পড়তে আসে প্রতিবেশী মেঘ
তাদের দীঘল কাঁচুলি ভরে নিয়ে আসা মরসুমী হাওয়ায়
দুলে ওঠে তোমার ময়ূর পালক
তবু যেন এক অবিচ্ছেদ্য নূপুরের বোল 
তোমায় টেনে নিয়ে যায়
কবেকার সেই বকুলের ছায়ায়,তিরিতিরি নদীর পাড়


৪) 

এ কৃষ্ণ নাম অবিরাম , শাশ্বত,পরিণামহীন
যে নামের এত প্রেম সেই নাম শুনে আলুথালু 
রাই অঝোরে কাঁদে
অভিসার না জেনে মাথুর কপালে লিখে পদাবলী গায়।
আর তখনই তমালবনে ঝিরিঝিরি হাওয়া দেয় মিলনের
 সন্ধ্যার অলৌকিক আলোয়
 মাধবের শ্রী মুখে চেয়ে বিরহি চকোর জ্যোৎস্নায় কণ্ঠ ভেজায়।



Saturday 24 July 2021

আমন্ত্রিত সংখ্যা~সম্পাদকীয় নয় কিন্তু

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || আমন্ত্রিত সংখ্যা ||



সম্পাদকীয় নয় কিন্তু 


মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা~জুলাই'২১ সংখ্যা আমন্ত্রিত সংখ্যা করে প্রকাশ করলাম।এই সংখ্যায় অনেক নতুন কবিদের কবিতা নিয়ে প্রকাশ করতে পারায়,আমিও বেশ আনন্দিত।

আপনারা সকলে জানেন আমার পত্রিকা বলে আমি দাবী করি না,এই প্রয়াস সকলের একত্রিত প্রয়াস।তাই পত্রিকাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনারাও তৎপর, তাও পরিস্কার। 

******************************************************************
সম্পূর্ণ সূচী

সম্পাদকীয় নয় কিন্তু~অভিজিৎ দাসকর্মকার। দিশারী মুখোপাধ্যায়। মোস্তফা মঈন অমিত সরকার। মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়। চন্দ্রদীপা সেনশর্মা।অরণ্যা সরকার।বিভাবসু।সুজিত রেজ।মন্দিরা ঘোষ।রিতা মিত্র। পৌলমী ভট্টাচার্য্য।কার্তিক ঢক্।শ্রীপর্ণা গঙ্গোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দীপিতা চ্যাটার্জি।অমৃতা ভট্টাচার্য। সুজল সাহা। ইউসুফ মুহম্মদ।  চঞ্চল নাঈম।সুপ্তোত্থিতা সাথী। ইন্দ্রজিৎ নন্দী


আমন্ত্রিত সংখ্যা~দিশারী মুখোপাধ্যায়

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || আমন্ত্রিত সংখ্যা ||



কিছু রতি আর কিছু ক্ষতি

১)

মশা তার দংশনের নিষ্ঠা অক্ষুণ্ন রেখেছে 
বল্মীক সবকিছু মাটি করে দেয় আজও
শুধু মানুষ আজও দ্বিধায় আছে 
বয়স ও তারুণ্যের ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রায় 
প্রেম এবং উদাসীনতা 
কেউই বুঝে উঠতে পারেনি তাকে 

রাতের মধ্যখানে যে গভীরতাটুকুর গর্জন 
তার নৈঃশব্দ্য নিয়ে আমি বিপন্ন 

মেয়েটির ভেতরে একশো শতাংশ মেয়ে 
মেয়েটির ভেতরে একশো শতাংশ পাথর 
দুটো শব্দই ডাস্টারে মুছে যায় 

২)

কাদা জানে 
তাকে ছেঁকে তুলে নিয়েছে বলে 
আঙুলের কাছে কৃতজ্ঞ আছে স্বচ্ছতা 

বালির দানার আছে যে ভার 
স্রোতের একেবারে নিচে থেকে সে 
তরমুজকে তরজমা করে 

অন্য সকলের মতো কাদাও জানে 
জল  না থাকলে ঘড়ি চলত না, তবু 
আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে সংশয় 

৩)

আমাকে দেখলেই পংক্তি দূরে চলে যায় 

অনুমতি ছাড়াই যখন অভিমান সক্রিয় হয়ে ওঠে
নিম্নচাপ সৃষ্টি করে তরল পাষাণে 
তুফানের সামনে যার চ্যালেঞ্জ হওয়ার কথা 
সে কোনো পংক্তিতে প্রথম আসনটির জন্য লোলুপ 

কেবল আমারই অযোগ্যতার কারণে 
রাত্রি তার যাবতীয় অলংকার হারায় কিস্কিন্ধ্যাপর্বতে 

একটি মথের রেণু মাখার স্বপ্নে জাগে প্রেম-উচ্চারণ 

৪)

হাত থেকে পিছলে বেরিয়ে গেছে শিঙি 
যাবার সময় কাঁটা পরিপাটি 
এখন চোখের সামনে 
জলের সঙ্গে তার ঢলাঢলি

রোদের ঝকমকে চিঠি গাছের পাতায় ,আর 
সব উন্মুক্ত গোপনেরা 
পরস্পরের রূপ দেখে নিচ্ছে পরম আদরে 

সারা পৃথিবী থেকে প্রত্যাখ্যাত বঞ্চনা 
কেবল আমার কাছে আশ্রয় নিয়েছে 
আমি তাকে নিয়ে জড়িয়ে-মড়িয়ে শুয়ে 



আমন্ত্রিত সংখ্যা~মোস্তফা মঈন

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || আমন্ত্রিত সংখ্যা ||


দার্শনিক

 
এটা কোনো গোলগাল কথা নয়— কবিতা।
ধর্ম বা রাজনৈতিক ভাষ্য দিয়ে কবিতার কুলকিনারা পাবেন না।
বরং নিজেকে দেখার
একটা দার্শনিক আয়না মেনে নিতে পারেন
এসব বাংলা কবিতা।


উত্তরাধিকার

 
এটাই প্রথম ও সর্বশেষ সুযোগ।
দ্বিতীয়বার এখানে কেউ-ই গ্রহনযোগ্য নয়।
অতএব
উত্তরাধিকারের জন্যে
যেকেউ এ মাটিতে ফুলবাগান করে যেতে পারে।


অলকানন্দা
 
যারা চোখের জল পান করেন নি
এ যাত্রায় ফিরে যান
আবার যখন আসবেন— ঠোঁটে কড়কড়া হাসি নিয়ে
আসতে ভুলবেন না যেন।
আর যিনি জলের স্বাদ জানেন
তার জন্য অলকানন্দা
কারণ
এ স্বাদ কেবল কপাল খোয়ালেই মেলে।


আমন্ত্রিত সংখ্যা~অমিত সরকার

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || আমন্ত্রিত সংখ্যা ||


চিলেকোঠা



পুরনো দেয়ালের ক্ষত থেকে প্রতিদিন রক্তপাত হয়

ডানার বেহালা থেকে করাতেরা কেটে আনে সুর

এ ঘরে ঝোলানো কোন ছবি নেই 

উই ধরা তাকে রাখা শুধু ধুলো ভর্তি গান   

 


চিলেকোঠাকবে যেন শেষ সরগম শুনেছিলে   

শায়ার দড়ির গিঁট কিছুতেই খোলা যাচ্ছিল না মনিদির 

আলগোছে ভিনদেশ জেগে

উনুনের আলো লেগে সব রাস্তা অনন্তে মিশেছে

ক্ষেতভরা চোরকাঁটা আজও লেগে আছে স্নেহের গভীরে  

 


কোনায় গুছিয়ে রাখা সিপিয়া ডায়েরিহারমোনিয়াম     

লোমশ পর্দার কাপড়ে ছোপ দাগমরা শীত 

হাঁসফাঁস অন্ধকার, ‘হুকটা ছিঁড়ল তোএভাবে হামলায় কেউ       

গ্যাস সিম করা নেইসুক্তোটা ধরে গেলে সর্বনাশ হবে

নীচে কড়া নাড়ছে ভরা সংসার, ‘ভাত বাড়োদেরী হয়ে যাবে’    

 


যত্নে লুকিয়ে রাখা সমস্ত অলক্ষীপনা

পুরনো কাঁথার স্তূপবাতিল ঠাকুরের বাসনভাঙা মনিটার

রাঙাপিসি বিষ খেয়ে শুয়েছিল জানলার ওইপাশটায়   

এখন হাওয়াদের ফটোফ্রেম ফুটে উঠছে ডিজিট্যালে                

 


সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে উঠে আসছে স্মৃতির মুখোশ  

না পারার গুহামুখে একচিলতে পরিযায়ী আলো 

মনখারাপ মানুষদের প্রচ্ছদে এখনো লেখা আছে  

অনন্ত লকডাউন নিয়ে শুয়ে একা চিলেকোঠা…    




আমন্ত্রিত সংখ্যা~মোনালিসা চট্টোপাধ্যায়

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || আমন্ত্রিত সংখ্যা || 


কৃষ্ণ সিরিজ

১০ 

শ্রীরাগ শয়নে শুনি পূর্ণিমার চাঁদে রাধা তার
মুখশশী আজ এই শোভায় মধুর বৃন্দাবন ! 
কার্তিকে হিমের জন্ম বলে হিমালয় ছুঁয়ে অধিক সন্ন্যাসধর্ম নয়; সুখের যতনে সুখ কুঙ্কুমে চন্দনে ।
গুণমণি জানে এক দোতরায় অষ্টসখী কাঁদলে আমিও ধরি ভজন মীরার এত আলো আসে মর্ত্যে
কেউ অঙ্গ পরিমলে পূর্ণিমায় উপবাস প্রেমে ।

প্রাণনাথ সখা ; পুষ্পমধু যদি বিরহ সাগর ভাঙে 
আমি রুইতনে খেলি সংকীর্তন প্রেমের বাতাস 
মনে দৃঢ় ভাগ্য চলতে চলতে পথআটকায় 
কিছু না পেলেও যদি শ্যামধনে ধনী রাধা হয়
কেউ জুড়ায় জ্বালায় ক্রোধে ত্রস্ত ! 

অভিপ্রায় অমৃত কেলিকা যার অতুল সহিতে 
পারে সেই ছোঁয় হাস পরিহাস মায়া আর 
সজল রাধার আঁখি ; শ্রীকৃষ্ণকে আলিঙ্গন করে কার সাধ্য আছে বলো ?

১৪ 
 
আকাশ নীলেই  জ্বলে 
কেউ এসে পড়ে মাঝরাতে কেউ দিনে 
কেউ জলে কেউ ডাঙায়  
শক্তিতে ব্রহ্মময়ী সেই নিবিড় আঁধারে 
কৃষ্ণের বিবিধ ছল নিরজনে হাসে অপ্সরা কিন্নরী
তবু অতল অপার প্রেমবিন্দু জমে 
ময়ূর পাখের চূড়া ---তৃণ জমা হিম তবুও সাহস 
বৈষম্যের গালে অপমানের জবাব আর কে পেরেছে ?

ভালোবাসা চিরন্তন স্বপ্ন নীলপদ্মদলে
প্রতিবিম্বিত যমুনা লাবণ্যে সমুজ্জ্বল তুমি 
এও এক লীলাখেলা আশ্রয়ে আমাকে রেখে 
কখন নিজের কাছে মন--কে প্রবোধ দেয় 
নিরুদ্দেশের বিরহজ্বালা -- 
শ্রীরাধার বক্ষে হাত রাখলে অনন্ত টের পায় 
কেলিকলানিধি কান ।
এও যদি আনন্দবিহার বলো 
বিরহেই রাই দিনেরাতে পূর্ণচন্দ্র
 আলোন্ধকারেই --- রসরঙ্গে সহচরি ।

১৬

চলনে গমনে  থামে হাতে হাত ; ফুল ধরাধরি
দুই মন একত্রিত ভুবন মোহন সাজে ---
 মধুরাধিপতে অখিলাম মধুরম এও সৃষ্টি তার;  অভিমুখ যেদিকে নাছোড় তার সৌন্দর্য বাজাতে পারে কোনো সৃষ্ট ইষ্ট মধুরম ; জীবন যে বোঝে তার কাছে সমপর্ণ এক বাদ্যি ; তুমি প্রাণ সেই 
সঙ্গীতে বাঁশির রাধা জানে তার প্রেম কার কাছে লীন ; যেভাবে রাধায় যেথা ; সেভাবেই কৃষ্ণ সেথা 
 থাকে ---সাধনায় ভালোবাসা পুলকিত , 
 পরমাত্মার --  স্পর্শে যদি চেনা হয় সঙ্গীত শিখর নয়নক জলে ছায়া ভাঙে করতলে ।
বাদলের জলে ভাসে পত্রবিহার মন তো তার অঙ্গ 
কে বলে কার সে ; কে চায় কাকে সে এও যে সঙ্গীত ও আরাধনা --- বাঁশির সুরেই বোল
ভেসে যায় হেরি হেরি সহচরি হাসি হাসি রূপ 
এ রাধার পুলক পত্রে ভাব  সুবলিত রসময় অঙ্গ ।

সময়ের মেয়ে তুমি নৌকোয় টাঙাও সূর্য কৃষ্ণ কিম্বা পুরুষের সেই মুখ অসহ্য সুন্দর যার আলোকেই পদ্ম ফোটে ছলনা বিহীন --
অনুচ্চ গাছের ছায়া তার আলিঙ্গনে প্রতি অঙ্গে 
ক্ষমা ক্ষীণে এই প্রেমের স্মরণ বুঝি !


আমন্ত্রিত সংখ্যা~চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || আমন্ত্রিত সংখ্যা ||




আলোর গল্প


'I'll be come again, oh babe I hate to go...'
                         ---John Denver

লেখা গল্পগুলো ছিঁড়ে যায়। কিংবা ভরে ওঠে
কাটাকুটিতে। অগুনতি রেখার ভিতরে
হারিয়ে যায় মূল কথাটি, যেটি ঘিরে অন্য শব্দরা প্রাসঙ্গিক বা পূর্বাপর, মুছে যায় কালো কালির তমিস্রায়। আমেরিকানো কফির তিতকুটে বিনিদ্রা,
যৌথ বাসভূমি। গভীর কিন্তু সংক্ষিপ্ত অজ্ঞাতবাস
গূঢ় আঁধারে ঝেঁপে আসে একচোখে তৃষ্ণা হয়ে।
অন্যচোখে জ্বলন্ত অঙ্গার, তীব্র আঁচ। এই
বৈপরীত্য নিয়ে তাকিয়ে থাকা রাত্রি সমাপনের দিকে, স্তব্ধবাক। জানলার পর্দা আলোময়, অস্ফুট
আলোর মৈথুন ভেঙে কথা বলে পাখিযুগল
উড়ে যায় অমল আলোয়...


২১ অগাস্ট, ২০২০, রাত ৩.২৯


মেঘ, বাতাস


মেঘের শরীরে বাতাসের স্পর্শ। বৃষ্টি
সামনে নারকেল গাছ ভিজছে
ফুল লাইব্রেরি ঘর
শ্মশান চিতাসহ জন্মান্তর

আবেগ সামলাতে না পারলে প্রতিটি মৃত্যু
হত্যাকারী হয়ে ওঠে
সব পথ সরলরেখায় জড়ো হয়
আগুনের কাছে। দাহ

দাহ দ্রোহ প্রেম মৃত্যু--
অবিরাম বৃষ্টি। ধুয়ে যায় জন্ম
চন্দন জবার গায়ে দোল খায় জন্মান্তর...


১৬ জুলাই, ২০২১, সকাল ১০.৩১


প্রতিভাস


অন্তরালবর্তিনী আলপথের সুরম্য গোপনে
লুকিয়েছিল যত আর্তস্বর, কান্নাপ্রবাহে
মিলে গিয়েছিল সঙ্গমেচ্ছু।

রাতের পরিদর্শন চলছিল নাগরিক চাঁদ ঘিরে।
অস্তি নাস্তির বিহ্বল অসহায়

শিশিরে প্রতিভাস শ্রীময়ীর। শূন্যতা নিয়ে
বিমূঢ় দেবীবেদি, মঙ্গলদীপ

করতল ভিজে ওঠে ঘামে করুণায়
দর্পণের বিসর্জনে টুকরো টুকরো হয়ে যায়
শ্রীময়ীর প্রতিভাস...


১৪ মে, ২০২১, রাত ১২.১৩

আমন্ত্রিত সংখ্যা~অরণ্যা সরকার

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || আমন্ত্রিত সংখ্যা ||


সাদায় কালোয়


এক


কে কাকে  শুষে নেয় হে আরাধ্য সাদা!

লালাবমি রিপুর তাড়না রঙিন নক্সায়  গুলে

ঢেলেছি ধবধবে শূন্যতায়   

খরখরে তেষ্টায় তুমিও তো তুমুল গিলেছ

এই ব্রীড়াঅভিমানজানালায় নামিয়ে রাখা চোখ

ময়ূর আর নির্জন জোনাকি হয়ে  

তোমারই বুকের  বাতিতে মোক্ষ খুঁজেছে 

ইঙ্গিত দাওনি কি স্তবকে রাখোনি ছায়া ?

বারবার রক্তচাপে পরব ফুটেছেতক্ষক ডাকা দেহে

কত যে  গহন হয়েছে অপেক্ষা সিরিজ  

কি শান্ত কি মেঠো প্রশ্রয় ধূধূ চোখে

নিয়েছ নিয়েছ যা সেকি শুধু  পেয়েছ বলেই ?

এত কিন্তুতবুযদির সংকেতে

রাখিনি কি আমাদের মধু ও কটুঘ্রাণ ?

একার গল্প মানে  তো অর্ধেক ভোরের ব্যাকরণ  

যৌথ  বিষাদ ছাড়া কি পুরনো চিঠিরা জ্যোৎস্না হয়ে ওঠে ?  

 

দুই


পার্শ্বচরিত্ররা ঘিরে ধরে

নুপুরে বদলে যাওয়া  শেকলগানের গন্ধে জুড়ে যায়

তুমি জানো,  অক্ষর কুয়োয় ভিজিয়ে রাখি সব

জিওল মাছের মত অপুষ্টির পথ্য হয়ে প্রতিদিন মরে

মরে শোকস্পর্শ,  নির্বোধ গৃহতাপ

প্রোটিনকণায় জমে ধ্বংসপ্রবণ পারিজাত  

আমার আমার বলে আঁকড়ে রাখিজল দিইসূর্য দিই  

থিতু হলে সাদা জমিনে

তুমি তাকে কল্পতরু বলে ডেকে ওঠো

 

তিন


তালপাতাপ্যাপিরাসে খেলেছে যে হাওয়া

অচিন ঠোঁটে রহস্য নিয়ে আসে

গহীন গহীন সব আসক্তি ভোর আনে

উন্মুখ তুলোটে লেখা  চলাচল  থিতু হয়

কত জন্মকথাকত শকটযাত্রার  মায়া

ফিরে যাবার কথা ভুলে যায়

অহেতুক মনে হয়মনে হয় ওইসব ফিসফিস

কি সঙ্গ দেবেপ্রতিরোধ দেবে রাজসিক ধ্বসে ?  

তবু তারার সংসার থেকে খসে গেলে পরাজয়

পার্চমেন্টে লেপটে দিই সব

কাঙালের স্বপ্ন মেখে তুমিও ফলন্ত আলো হয়ে যাও



আমন্ত্রিত সংখ্যা~বিভাবসু

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || আমন্ত্রিত সংখ্যা ||


আয়ুধ

ডুবে ডুবে জল খাই 
ডুবে ডুবে প্রেম খাই 
মেঘ খাই 
মেঘবতী স্বপ্ন খাই 
বীজ খাই
বীজতলা খাই
বিষও খাই

তবু তো মরি না আমি
তবু মৃত্যু নেই আমার 

যতোদূর তুই 
আমার আয়ুরেখা ততোদূর ছড়ানো

২০.০৩.২১

পারানাপারার ছায়াবৃত্ত

আমার গল্পগুলো মেঘ হতে পারতো
আমার  স্বপ্নগুলো হতে পারতো ডানাকাটাপরি 
আমার প্রেম ছুঁয়ে দিতে পারতো মহাকাল 

হয়তো পারতো 
কিন্তু পারেনি 
আসলে পারে না 

আমার গল্পগুলো জঞ্জাল হয়ে উঠেছে 
ঘেঁটেঘুঁটেও তার থেকে কোনো বৃষ্টিকথা পাইনা 

আমার স্বপ্নগুলো ডানা হীন 
ডানা পালকহীন 
সম্ভাব্য সমস্ত উড়ান তাই পরিত্যক্ত 
 
আমি এখন ছিন্নভিন্ন হয়ে থাকা একটা বধ্যভূমি

১০.০৬.২১


১১মাত্রিক 

তুরীয় এক প্রকাশ 
বা অস্তিত্ববিভ্রম 
বা অনস্তিত্বের স্থানাঙ্ক জুড়ে সমান্তরাল উপস্থিতি 
প্রেম প্রেম খেলা 

কে ডাকছো অমন করে?
কে বসে আছো আমার রূপগন্ধের ওপারে?
স্তব্ধতা পাঠাও হে
পাঠাও তন্তুময় অনৃত তরঙ্গ 

এখন সুখ ও অসুখের ক্যানপাই জুড়ে 
হেঁটে আসছ আমার এগারমাত্রিক অযৌনজন্ম

১৮.০৬.২১


আমন্ত্রিত সংখ্যা~সুজিত রেজ

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || আমন্ত্রিত সংখ্যা ||


যুবশ্রী

আমি সেই যুবক ---যার শক্তি আসুরিক।
পাথর ছেনা কাঠামোয় ডালিম শোভা।
কটিবন্ধে সিংহের ঋজুতা ও আপেক্ষিক নমনীয়তা।
তার লালিমায় বিচ্ছুরিত হয় 
                      ঘষা সূর্যের জ্যোতির্প্রবাহ।
ঘন ঘোর বরিষায় 
বজ্রবিদ্যুতের সমান্তরাল পদক্ষেপে,
যে পৌঁছে যেতে পারে কাঙ্ক্ষিত পাদপীঠে।
তবে মৃত্যুর শমন নিয়ে নয়  
               মৃত্তিকা লালিত প্রাণবায়ু সঞ্চারে।


আমিই সেই যুবক ---যে তর্জনী তুলে বলতে পারে 
এই দেশ কোনও রাজার নয়।
এই মাটি কোনও রানির মৌরসিপাট্টা নয়।
এই দেশ---এই মাটি শত শত শিক্ষিত সন্তানের।
এই দেশ--- এই মাটি কর্মঠ আদিম তান্ত্রিক কৌম মনের।
এই দেশ---এই পোড়ো মাটি শিল্পিত প্রাণের।
যার রূপচ্ছায়া অজন্তার সৌকর্ষে,
খাজুরাহোর হেমাঙ্গিনী যৌনতায়,
যার ধূপচ্ছায়া ভীমবেটকার চৌখুপিতে,
তাজমহলের শীর্ষ চতুর্গম্বুজে।

আমিই সেই যুবক --- যার প্রতিটি আঙুল 
                     উদ্দীপন ভাবে উথালপাতাল।
মৃত্তিকা কলসের স্পর্শের পর স্পর্শে  
                          কারুবাসনায় মোহমুদ্গর।
দিনান্তের অন্বেষণে সঞ্জীবনী উৎসব গানে নিবিড়।
উদগ্র  প্রতিকৃতির রংরূপরেখায়।


আমিই সেই যুবক---যাত্রার কনসার্ট শুনলে.
যার বুক মারীচের মতো 
                         দ্রুত ধাবিত হয় চণ্ডীতলায়।
তমালতলি আশ্রমে রুপোলি জ্যোৎস্নায় বাউলের সুরে,
অবিন্যস্ত সোনালি চুলের ওড়াওড়ি দেখার লোভে,
                                 হত্যে দিয়ে শুয়ে থাকে।
হরিনাম সংকীর্তনের অষ্টপ্রহরে,
কদম-কুন্দ মালায় শোভিত হয়ে উদ্বাহু নৃত্যে,
                     গোরাচাঁদতলার মেদিনী বিদরে।

আমিই সেই যুবক ---যার ঘৃণা নেই 
অসূয়া নেই, বিদ্বেষ নেই।
সংকোচ নেই স্পষ্ট অভিভাষণে,
                           নিরপেক্ষ মতামত গর্জনে।
লজ্জা নেই আত্মভুল স্বীকারে ও সংশোধনে।
উদ্বায়ী মানস নেই ,
মিশ্রিত সনাতনী ঐতিহ্যে শ্রদ্ধাশীল কিন্তু আনুগত্য নেই।


আমি সেই যুবক  
আমি যুবশ্রী  


চাঁদিপুর

মাঝেমাঝে সমুদ্রের কবিতা পড়ার মগ্ন উচ্চারণ শুনতে পাচ্ছি। মাঝেমাঝে উতল হাওয়ার নগ্ন ঝিনুক প্রেম উঁকি মেরে দেখে নিচ্ছি।

এই সেই চাঁদিপুর।যেখানে চাঁদ রুপোলি বালিতে লজ্জায় মুখ ঢেকে মুক্তোর অশ্রু বিসর্জন করে।

এখন আমি কী করি !

পান্থনিবাসের উটের মতো গলা উঁচিয়ে থাকা ব্যালকনি থেকে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে যাচ্ছি।যে-সিঁড়ি দিয়ে তুমি উপরে উঠেছিলে সংসারের সাত রিল সুতো গুটিয়ে। 

তাই তো তোমাকে পেলাম রাতের গন্ধে দিনের ছন্দে--- হে খুশিবালি।


শরীর 

আমি কি আগের মতো ছাই চাপা আপোড়া                                                                
বেগুন
হেনা ঘষে ঘষে চুল দুলালের তালমিছরি
কুয়াশার বলিরেখা কাঁকতালে গল-গলগণ্ডে
চামড়া পিতল লোল নিস্তরঙ্গ আবেগ
বৃদ্ধ হয়েছি দ্বিগুণ একক দশক ব্যবধানে
হেঁট হতে কষ্ট হয় ফ্রেম ভেঙে চুর
এই শুরু এই শেষ----- রক্ত অনাসক্ত মৃত গঙ্গা 
বুড়ো বটগাছের মতো সব পালাবদলের সাক্ষী
বিসর্গ বিযুক্ত দুঃখ টিকটিকির মতো নিরীহ