Thursday, 1 July 2021

জন্মদিন সংখ্যা-রঞ্জন মৈত্র

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || জন্মদিন সংখ্যা ||
রঞ্জন দা,আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ভালেবাসা ও শ্রদ্ধা জানালাম।



চলো খুলি

রঙ ধাপে ধাপে জলে নামছে

বর্গিয় জ-তে কার নৌকোটি বাঁধা

চলো অরিন্দম খুঁজি

গোটানো মাদুর ক্যালেণ্ডার পথ

খুলতে খুলনা ছিল

দেশ ছিল মাই কা তোলি

রোডে রোডে ছাওয়া নগরের গিঁট থেকে

চলো দেশ খুলি

এত লিনিয়ার চলা

জুতো থেকে মাত্র ক্লিক ক্লিক

স্বরাণু ব্ল্যাকহোল এবং হোল স্কোয়্যার

শূণ্যে ভাসছে ক্লাস

ফ্রী ফল করবে কোন আঁকাঁবাকা স্বরলিপি

তিন সপ্তকেই আছে বর্গিয় জ লুকিয়ে


শুধু রঙ আর নৌকোর জন্য এতটা আসিনি অরিন্দম




অনলাইন বিছানা 

          (১)

রাত হয়ে গেলে শব্দের ঘুম কেটে যায়

এই দরজা খোলার তো ওই জানলা

একটি ভূতকে মনে পড়ে

ছোটবেলায় ভালবাসত

বড়বেলায় কাছে আসত

ঘুমের ওষুধে কোন শব্দ নেই

সমস্ত হার্ট ফেসবুকে জব্দ হ'লে

বাকি চিহ্ন নিয়ে রাত জাগে অনলাইন বিছানা

শোনে আর শোনে

গোনে আর গুনতে থাকে ছায়ার নিঃশ্বাস

           (২)

নিঃশ্বাসের ছায়াদের জায়গা হয় না

জানলাও অকুলান

বেবাক পরীক্ষাগার যোনি আর স্তন

লাভলীন চেস্ট আর দ্রিদিম বাইসেপস

ফুটছে ঠান্ডা হচ্ছে প্রবল হাততালি করছে

তামাম ছক্কা সবই বান্টু সিং-এর কারনামা

হে কামাল হে অরুণ হে বরুণ

কিরণমালার ফাঁকে জিভ নড়ে

শব্দ বাক্য সিনট্যাক্স সেলসট্যাক্স ওঠে বসে

বেশ রাতে ডাকব ডাকব করে লালঝুঁটি রেপ

কফি ও দরজার শ্বাস হিম হয়ে লেগে থাকে 

ল্যাবের দেয়ালে      

              


টাইম কল

সময়ের জল নাকি সময়ই সলিল

উত্তর খুঁজতে আজ চানই বকেয়া হ'ল

রোকেয়া রোকেয়া আমি আরেকবার বর্ডার পেরোলে

নিশ্চই দুপুরে খাবো চান করব সনেট শাওয়ারে

সনেটই শাওয়ার নাকি শাওয়ারের চতুর্দশপদী

আমারই স্বপ্ন যদি ফোঁস করা ইন্টারোগেশন

থানা ও থানেদারের চিপায় পড়ে থাকি সরু গলি

এত ভিজে এতটাই ভিজে

সরহদ পেরিয়ে সব ঢেউ এসেছিল

শরৎ পেরিয়ে শস্য কাটা হবে দুমুখো বাসায়

এবং হেমন্ত বলবেন আগুন জ্বালো

তারপর শ্যামল আরতি কত ঝরোঝরো সোনা

সনেট ইনটারনেট উত্তেজিত রান্নার মাঠ

পেনাল্টি তুমিই মারবে বন্ধু রোকেয়া

দু' হাত ছড়িয়ে আছি

গ্যালারির মাথা থেকে ঘড়িগলা স্রোত নামছে

খাওয়া তো হবেই, আগে গোসল সেরে নিই। 

             

বসেরা

আজ করোনা কথা বলছে

কাল রোনা এবং রুমাল

বার বার ভিজে যাবে

একটা টানেলমুক্ত হাওয়া কতকিছু শুকিয়ে দেয়

যখন দূরে দূরে মিশে আছে ধপধপে বসেরা

চিনতে পারছি না

চাঁদে যাওয়ার পোষাকে লালারস অবদি পৌঁছনো যায়

তারপর ল্যাবে ল্যাবান্তরে মাত্র অসুখ নির্ণয়

তারপর টেবিলেই স্কাই ওয়াক

হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ছে গেলাস

মদ চলে যাচ্ছে ভাইরাস পেরিয়ে শুশুনিয়ার দিকে

সামনেই রকশিক্ষা জলশিক্ষা মাস্ক আর গ্লাভস

করোনা না জেনেই মেট্রো পেরিয়ে যাচ্ছে কুদঘাট স্টেশন

রুমাল না জেনেই হাওয়ার ড্রায়ার

সাদা চারতলা কোন প্রতীক নয়, সৌমিত্র থাকত।

 



খিদের ওপারে

দুপুরে রিকশাস্ট্যাণ্ডেও কেমন ঘুমের ভাব। আলস্যটা প্রায় দেখতে পাওয়া যায়। ধারে কাছের দেশির ঠেক, গাঁজার জমায়েত, সাট্টার পেনসিল, যেন নেই। রিকশার উপর তেড়ে বেঁকে ব'সে চালক গান শুনছে। পানের দোকান থেকে আসা মহম্মদ রফির কবেকার সব গান। পরনের পোশাক, শরীরের হাড় গোড় পেশী বেশ গরীব গরীব। একটি গল্পের জন্য আজকাল দু' হাজার টাকা পাওয়া যায়। প্লটের খোঁজে হদ্দমুদ্দ হওয়ার ফাঁকে এই স্ট্যাণ্ড, ওই রিকশাঅলা। তার বাড়িটি দরমার বেড়ার হলে ঠিক হয়। দরজা ঢেউ খেলানো টিনের। এইটুকু বাবুয়ানিই যেন। টালির চালে ফাটল থাকলে ভালো, যা পয়সার টানাটানিতে ঠিক করা যাচ্ছে না। এবার গল্পটা দু' রকম হওয়া সম্ভব। এক, সারাদিন রিকশা টেনে সন্ধ্যায় দেশি এবং জুয়া। বাড়ি ফিরে যে কোন ছুতোয় ঝামেলা পাকিয়ে বউ পেটানো। তারপর রাত বাড়ে। যেমন সম্ভব পেট ভরে। এরপর কে মারলো আর কে মার খেলো সব গুবলেট হয়ে যায় বিছানায়। পরে পরে বাচ্চা হয়। তাদের ঠিকমতো পোশাক পড়াশোনা জোটে না। তবে বাচ্চা হতেই থাকে। এবং দ্বিতীয় রকম, ক্লান্ত শরীরে রিকশাঅলা টিনের দরজার বাইরে বসে খানিকক্ষণ। হাত পাখা চালায়। মাটির উনুনের পাশ থেকে ঘামে চুবচুবে লাল রঙের বউ মাঝে মাঝে পাশে আসে। জলের গ্লাস। সস্তার চা। বিড়ি। তারপর ওই কোনরকমের পেট ভরানো। বিছানায় অল্প চাঁদের আলো ভাঙা টালির ফাঁক দিয়ে। বর্ষাও তার নিয়মে আসবেই। তার আগে টালি সারানোর পয়সা জোগাড় নিয়ে খানিক আলোচনা। রাত আরও বাড়ে। দুজনে টালির ফাঁক দিয়ে ভাঙা চাঁদ দেখে একটু আধটু।  ভাবে, বাচ্চাদের খুব ভালো করে বড় করবে। অনেক বড়। গাড়ি, বাড়ি। ফুলের টবে সাজানো ব্যালকনিতে বসার চেয়ার হবে নিজেদের জন্য। হাতে সুন্দর কাপে সুন্দর চা। আর সেই চায়েও কখনও জ্যোৎস্না এসে পড়বে, রোদ কখনও। 

 

সবজির নূন্যতম দাম ৫০টাকা কেজি। মাছের ২০০। চালের হু হু করে বাড়ছে। আটার চিনির সর্ষের তেলের দরমার বেড়ার ঢেউ টিনের, বাড়ছে। অটো এবং টোটোর পাঞ্জা কষাকষির মধ্যে রিকশাস্ট্যাণ্ডে প্রায় সারাক্ষণই মাঝদুপুর। কাস্টমার টানাটানি করতে হয়। এবং খুব পরিচিত ছাড়া বাকি অন্যদের সাথে ভাড়া নিয়ে দুগগিবাজি না করলে সবদিক সামলে বাঁচা অসম্ভব হয়ে যায়। মদ জুয়ায় ওড়ালেও যায়, না ওড়ালেও যায়। ভাঙা টালির উপর সস্তার প্লাস্টিক। কালুর ঘুগনির দোকান, বণিকের মুদী দোকান, কানাইয়ের সাইকেল সারানোর গুমটি, কোথাও একটা ঢুকিয়ে দিতে পারলে বাচ্চাটা সংসারে কিছু আনতে পারবে। একদম ভোগে চলে যাবে তার চেয়ে তো ভালো।

 

তো গল্পটা মোটামুটি তৈরি। দুটো রকমেরই পাঠক আছে। তারপর বর্ষা আসে, শরৎ শীত মৌরলা মাছ। পত্রিকা আসে। দু' হাজারের চেক। চড়াই ঘুঘু রিকশা এসব দেশ থেকে উঠে যাবে যে কোনদিন।  নিয়মে বসন্ত আসে, গ্রীষ্ম। কোথাও মহম্মদ রফির গান বেজে যায়, অনেক পুরোনো সব গান।

 




মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ও

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন এর তরফ থেকে।ভালো থাকবেন। 



 


4 comments:

  1. আমি আপ্লুত, কৃতজ্ঞ। এত ভালবাসা, মাথায় রাখি।

    ReplyDelete
  2. “অনেক পুরনো সব গান”। আহ্, মুগ্ধতা রেখে গেলাম।

    ReplyDelete
  3. খুব ভালো লাগলো। আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

    ReplyDelete
  4. ভালো লাগলো

    ReplyDelete