দৃষ্টিকোণে
মুখচোরা, গোলগাল চেহারার প্রিয়াংশী ভট্টাচার্য্য । বেশ মেধাবী ছাত্রী, কিন্তু প্রকাশের অভাবে ওর প্রতিভা যেনো চাপা পড়ে আছে, ঠিক যেমন ছাইচাপা আগুন ।
কলেজে ওদের ক্লাসের বেশিরভাগ ছাত্র - ছাত্রীরা ওকে কেমন যেন হেলাফেলার নজরে দেখে । এমনকি স্যার বা ম্যাডাম দের কাছেও ও যেনো এক অবজ্ঞার পাত্রী । জুলজির রঞ্জনা ম্যাডাম তো ওকে রীতিমতো টনট করে কথা বলতে ছাড়েন না । কখনো "ডাইনোসরের নতুন সংস্করণ", তো কখনো "ডাঙার জলহস্তী" বলে ওকে ডাকেন । কেউ কোনো কাজে, কোনো আনন্দে, কোনো পরামর্শে ওকে সামিল করতে চায় না ।
মুখচোরা হলেও, ওর খুব ইচ্ছে করে সবার সাথে মিলে মিশে থাকতে, আনন্দ - হাসি গানে সামিল হতে । কিন্তু, মনের ইচ্ছেগুলো মনেই থেকে যায়, কাউকে বলা আর হয়ে ওঠেনা ।
সামনের মাসে ওদের জুলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে "দীঘা ও শংকরপুর" এক্সকারসনে যাওয়া হচ্ছে । প্রিয়াংশীর মনে মনে খুব আনন্দ । নতুন জায়গা ঘুরে দেখবে, হয়তোবা নতুন বন্ধুত্বও হতে পারে কারুর সাথে । আশায় আশায় দিন গোনার পালা শুরু হলো ওর ।
এক্সকার্শনের দিন সকালে সবাই একসাথে কলেজের বাসে করে রওনা দিলো দীঘার উদ্দেশ্যে । সবাই খুব আনন্দ করতে করতে বাসে করে চলেছে । সাথে খাওয়া - দাওয়া, গান - নাচ সমানতালে । প্রিয়াংশীকে একা বসানো হয়েছে । ও সবার আনন্দ উপভোগ করা দেখছে । খুব ইচ্ছে করছে ওদের সাথে যোগ দেবার । কিন্তু, কেউ ওকে ডাকছে না ।
বেশ কিছুক্ষণ এরকম চলার পরে বাসের সামনের দিক থেকে একটা প্রবল হইচই শোনা গেলো । বাসটাও দাঁড়িয়ে পড়েছে । ছাত্র ছাত্রীরা সামনের দিকে গিয়ে দেখে, রঞ্জনা ম্যাডাম সিট থেকে পড়ে গেছেন । উনি প্রায় অজ্ঞান । শ্বাস - প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে । মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে ।
সব স্যার, ম্যাডামরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন । ভয়ে কেউ রঞ্জনা ম্যাডামের গায়ে হাত পর্যন্ত দিয়ে দেখছেনা । চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেছে রীতিমতো ।
হটাৎ সবাই দেখে, ভীড় ঠেলে সবাইকে সাইডে সরিয়ে দিয়ে প্রিয়াংশী রঞ্জনা ম্যাডামের সামনে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসলো । তারপরেই নিজের বামহাত টা রঞ্জনা ম্যাডামের বুকের ঠিক মাঝে রেখে, ডানহাত টা বামহাতের ওপরে রাখলো । তারপরে জোরে জোরে দ্রুত চাপ দিতে লাগলো ম্যাডামের বুকের মাঝখানে । যাকে বলে সি পি আর দেওয়া । দরদর করে ঘামছে প্রিয়াংশী । ওর বেশ কিছুক্ষণের কঠোর পরিশ্রমের ফলে হটাৎ রঞ্জনা ম্যাডাম জোরে একটা শ্বাস নিয়ে চোখ মেলে তাকালেন ।
কোনো কারণবশত রঞ্জনা ম্যাডামের খাদ্যনালীতে খাবার চলে গিয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । যাকে আমরা বলি "চোকিং" , সেই ভয়ানক পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন ম্যাডাম ।
মিনিট পনেরোর মধ্যেই ম্যাডাম সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেন । সব ছাত্র ছাত্রীরা, স্যারেরা এবং বাকি ম্যাডামেরা অবাক চোখে প্রিয়াংশীর দিকে তাকিয়ে রইলো । সবার বিহ্বল ভাব দেখে প্রিয়াংশী হেসে উঠলো । মিষ্টি করে বললো, "এরকম অবাক হলেন কেন সবাই । আমার বাবা ডাক্তার । বাবার সাথে হসপিটালে গিয়ে আমি দেখেছি কিভাবে সি পি আর দিতে হয় । তাই আজকে চেষ্টা করলাম মাত্র । ভগবানের দয়ায় ম্যাডাম বেঁচে গেছেন ।"
রঞ্জনা ম্যাডাম প্রিয়াংশীর হাত ধরে টেনে নিয়ে ওকে নিজের পাশের সিটে বসালেন । ওর হাত ধরে বললেন, "আমায় ক্ষমা করে দে মা, তুই আজ আমার প্রাণ বাঁচালি । এক মা জন্মদাত্রী, আরেক মা তুই, তুই আমার জীবনদাত্রী মা । তোকে অনেক অপমান, অনেক ছোট করে কথা বলেছি । সেই জন্যেই ভগবান হয়তো আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে, কাউকে ছোট করে দেখা উচিত নয় । প্রত্যেকের ভিতরেই কিছু না কিছু অসামান্য আছে, যা দেখার জন্য প্রয়োজন যোগ্য দৃষ্টিকোণের ।
অসাধারণ।। খুবই ভালো
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ
Deleteঅসাধারণ লেখনী দিদি...যোগ্য দৃষ্টিকোণ লাগে অসামান্য সবকিছু দেখতে... দৃষ্টি থাকলেই অসামান্যতা ধরা পড়ে না..
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ
Deleteঅনবদ্য দি
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ
Deleteভগবান প্রদত্ত রূপের বিচার না করে মানুষের নিজস্ব অর্জিতগুণের বিচার করলে তবেই একমাত্র সমাজের উন্নতি সম্ভব।।অসাধারণ এক মেসেজ...অনবদ্য লেখনী
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ
Deleteভেতরের গুনাবলী প্রকাশের জন্য পরিবেশ পরিস্থিতি যে অনেকাংশে দায়ী তা দিদি তুমি অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছো। আমি মুগ্ধ। ভীষণ ভালো লাগলো।
ReplyDeleteবাহ্যিক আভরণ দিয়ে মানুষ চেনা যায় না। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উঠে আসা শক্তি দিয়ে মানুষ চিনতে পারা যায়।ভী ভী সুন্দর দিদি।🙏🙏🙏🌹🌹🌹❣️❣️
অনেক ধন্যবাদ ভাই
Deleteঅপূর্ব 👌👌👌👌👌👌
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ
Deleteঅসাধারন😊😊😊❤❤❤❤❤❤
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ
Deleteখুব সুন্দর গল্প 👌👌👌💐💐💐💐🤗🤗🤗🤗
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ
Delete