চীন যাত্রা
হেমন্তকাল।বেড়াতে যাওয়ার আনন্দ ছিল।সাথে ছিল অনেক নিত্য নতুন সমস্যা।তবুও নিদিষ্ট সময়ে পৌছেগেলাম বিমানবন্দরে।নানা রকম নিয়মকানুন শেষ করে সিঙ্গাপুরের এয়ারলাইন্সে উঠে বসলাম।সময়ের অপেক্ষা।নিদিষ্ট সময়ে পৌছেগেলাম।ভীষণ সুন্দর সাজানো বিমানবন্দরটি।আধুনিক সবরকম চাকচিক্য এখানে দৃশ্যমান।চোখ ঝলসে যাবে।সাবধান যাত্রীগণ।
1965 তে স্বাধীন সর্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে লি কুয়ান।তাকে দেশের জনক বলা হয়।1981সালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠিত হয়।
এরপর,আবার ও সেই নিয়মকানুনের পথ বেয়ে ।বেজিং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা।সময় মতো পৌঁছে যাবো সেই কথা ভেবে ঘুমের দেশে পৌঁছেগেলাম।বেশ বড়ো বিমানবন্দরটি।সুন্দর সাজানো।নিজস্ব জিনিস পত্র নিয়ে পৌঁছেগেলাম সেই বাসটিতে।যেখানে পরিচয় হলো চীনা গাইডের সাথে।কিছুই বুঝিনি তার কথা।শুধু বাসের সিটে বসে রাস্তার দুধারে সাজানো শহরটিকে দেখছি আর একটু একটু করে ভালোবাসছি।কত কুকথা শূনেছিলাম
কিন্তু চোখ বলছে সব মিথ্যে।পাতা,ফল,ফুল সবদিয়ে যত্ন করে সাজানো বেজিং শহর।এখানে সবাই চায়নিজ।ভিন্ন জাতি নেই।চীনের মুদ্রা ইয়েন
বড়ো বড়ো সুসজ্জিত ইমারত মাথা তুলে দাঁড়িয়ে।
আধুনিকতার ধারক বাহক।তার সাক্ষী বহন করছে।প্রথম দিন তাই নানারকম বিভ্রাট ।গাইড কিছু স্থান এখন দেখাবে মনে হলো।
সন্ধ্যা তখন।চীনের এক গরুত্বপূর্ন দর্শনীয় স্হান তিয়েনমেন স্কোয়াড।রাজপথ।আলোক সজ্জা।লাল আলো।সব মিলিয়ে মনের ক্লান্তি দূর হলো।
রাস্তার ওপারে প্রাচীন চীনে ঐতিহাসিক প্রাসাদ।
সন্ধ্যায় এসে দাঁড়ালাম চীনের এক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান তিয়েনমেন রাজপথ, অদ্ভুত আলোর সম্ভার। লাল আলোর সৌর্ধ্য মন মোহিত করে। রাস্তা ওপারে প্রাচীন চীনে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রাসাদ,যা পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয়।প্রসাদটিতে নয়শো আশিটি ভবন ও নয় হাজার নয়শো নিরানব্বইটি সুসজ্জিত কক্ষ বিদ্যমান।অসাধারণ লাল ও হলুদ রং এর কারুকার্য,প্রাসাদের ছাদ সোনাদ্বারা নির্মিত। ইম্পিরিয়াল প্যালেস নামেও পরিচিত এই প্রাসাদটি বিশ্বের অন্যতম জটিল প্রাসাদের একটি। নিষিদ্ধ নগরী ( দ্য ফরবিটেন সিটি ) নামে পরিচিত।এটি কিং বংশ ও পরবর্তীতে ছিং বংশের সম্রাটেরা তাদের বসবাসের জন্য নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে চীনের অন্য রাজ বংশের সম্রাটেরা,1912 সাল পর্যন্ত চীনের শেষ সম্রাট পুই এর বাসস্থান হিসাবে ব্যবহৃত। রাজ পরিবার ব্যাতিত সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এই কারণে পরবর্তীতে নগরটির নাম করন হয় নিষিদ্ধ নগরী।1987 সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা পায়। বর্তমানে নগরীটির চল্লিশ শতাংশ পর্যটকদের কাছে উন্মুক্ত। অধিকাংশ জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত। নিষিদ্ধ নগরীর বাকি অংশ অতীতের মত বর্তমানেও রহস্যময়।1271 থেকে 1368 সাল পর্যন্ত চীন শাসন করেন মঙ্গোলিয়ানরা।ইয়ুন সাম্রাজ্যের পঞ্চম সম্রাট কুখ্যাত চেঙ্গিস খানের নাতি কুবলাই খান বেজিং এ গড়ে তোলেন বিশাল এক রাজপ্রাসাদ। ইয়ুন সাম্রাজ্যের পতনের পর রহস্য জনক ভাবে হারিয়ে যায় প্রাসাদটি।সাউথ চায়না মনিং পোস্টের মতে 2016 প্রতত্নবিদরা হারিয়ে যাওয়া প্রাসাদটি আবিষ্কার করেন। এই প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এর উপর তৃতীয় মিং সম্রাট জুডি 1406 থেকে শুরু করে 1420 সালে অনন্য সুন্দর প্রাসাদটি নির্মাণ করেন।এত বড় প্রাসাদ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভিন্ন মত পাওয়া যায়।
1-চীনের সম্রাটেরা মনে করতেন, দেবতারা দশ হাজার কক্ষ বিশিষ্ট প্রাসাদে অবস্থান করেন। দেবতার পর রাজাদের স্থান। তাই নয় হাজার নয়শো নিরানব্বই টি কক্ষ বিশিষ্ট প্রাসাদ নির্মাণ।
2- অনেকের মতে জনপ্রিয় মিং সম্রাটেরা চরিত্রহীন ছিলেন।কোন কোন সম্রাটের নয় হাজারের অধিক উপপত্নী থাকতো। এ থেকে কক্ষের প্রয়োজনীয়তা অনুমেয়।
কিছু নির্মম তথ্য জানা যায়,এই সকল উপপত্নীদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার কোন মূল্য ছিল না সম্রাটের ইচ্ছা ব্যাতিত। সম্রাটের মৃত্যু পর এদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হতো। এমন কত অজানা করুন ইতিহাস ঝলমল প্রাসাদের অন্ধকারে লুকিয়ে আছে।বর্তমানে সাময়িক ভাবে প্রাসাদটিতে প্রবেশাধিকারে স্থগিতাদেশ জারি। ঐতিহ্যশালী প্রাসাদটির অভ্যন্তরীণ শিল্প কলা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করতে না পারা,হয়তো সারা জীবনের আক্ষেপ থেকে যাবে।
এরপর তিয়েনমেন স্কোয়াড, সামনে পার্লামেন্ট ভবন, তার সামনে একটি মিনার এবং মাঝখানে সুন্দর ফুলের স্তবক সজ্জিত সুন্দর একটি সৌর্ধ্য , আলোক সজ্জায় অপরূপ লাগছে।
এমনভাবে কেটে যায় এক সন্ধ্যা।অপেক্ষা নতুন দিনের।
দ্বিতীয় দিনের শুরু।প্রাতরাশের অপেক্ষা।তেমন সুস্বাদু না।তবুও,,,,,,,
আজকে প্রথমেই যাওয়া হবে স্টোন আর্ট গ্যালারি। এমন সংগ্রহ চোখের ক্লান্তি দূর করে।চোখ সুন্দর সামগ্রীর সাক্ষী হয়।এবার যাবো সেই ঐতিহাসিক স্হানে।কেবল কারের সাহায্যে একেবারে প্রাচীরের পাদদেশে।বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম।শুধু চেয়ে রইলাম চর্তুদিকে।মানুষের সৃষ্টি এই আশ্চর্য স্হাপত্য।অনুভূতির পারদ বেড়ে যায়।পাহাড়ের এক চূড়া থেকে অন্য চূড়ায় মিলিয়া যাওয়া দিকচক্রাবালে।
উচ্চতা ছয় থেকে আট মিটার। কিছু কিছু জায়গা প্রায় ষোলো মিটার উচ্চতা।সুইংনুর জনগোষ্ঠী ও বহির শক্র বিশেষ করে মঙ্গোলিয়ানদের আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এই স্থাপত্যের স্থাপনা।খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ শতক থেকে খ্রিস্টীয় ষোলো শতক পর্যন্ত চীনের বিভিন্ন রাজবংশ দ্বারা নির্মিত।অনুমেয় খ্রিস্টপূর্ব 220 থেকে 200 সময়ের মধ্যবর্তী প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াঙের আমলে নির্মিত প্রাচীরটি সব থেকে বিখ্যাত।এটি বর্তমান প্রাচীরের উওরে অবস্থিত এবং খুব সামান্য অংশ অক্ষত।মূল অংশটি 208 BC তে নির্মাণ শুরু হয়।মূলত উওর সীমান্ত রক্ষার্থে, হান,সুই,ছিং সাম্রাজ্যের সময় এর নির্মাণ ও রক্ষনা বেক্ষনের স্বাক্ষ ইতিহাস বহন করছে। বর্তমানে পর্যটকেরা যে প্রাচীরটি দেখেন, সেটি মিং সম্রাটের আমলে নির্মিত।দুই হাজার বছর ধরে মোঙ্গলীয়ানদের বাংরবার আক্রমণ, বিশেষ করে সেপ্টম্বর1550 তাদের গণহত্যা, লুঠতরাজ, বিকল্পায়ন ভাবনায় বাধ্য করে।যুদ্ধের ব্যার্থতা ও পলায়ন, প্রধান সেনাপতির শিরচ্ছেদ এবং 23 বছর বয়সী সেনা অফিসার ছি চি গুয়াং এর উত্থান।বীরত্ব প্রদর্শনে 1567 সালে সেনাপ্রধান পদে অসীন। পুনরায় মোঙ্গলীয়ন আক্রমণের আশঙ্কা, অর্থ মন্ত্রীর সহায়তায় সম্রাটের অনুমতি আদায় ও 1569 সালে পুনরায় প্রাচীর নির্মাণ শুরু, পাঁচ বছরের পরিকল্পনায়। কিছুটা সময় বেশি লাগায় 1575 সালে প্রথম ধাপ সমাপ্ত।এরপর মঙ্গোলিয়ানদের আক্রমণ ব্যার্থ।অর্থমন্ত্রীর মৃত্যু,কিছু ঈর্ষানীত আমলাদের চক্রান্তে ছি চি গুয়াং এর রাজ্যসভায় প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ ও সম্রাটের বিরাগভাজন। অকর্মণ্য সম্রাট, চক্রান্ত দুর্নীতি ও সম্রাটকে খুনের অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করেন। পরবর্তীতে তিনি খুন হন। প্রত্যেক শাসনকালেই কিছু অন্ধকার দিক ছিল , ছিল চক্রান্ত।কিছু মানুষকে মূল্য চোকাতে হয়েছে নীজের জীবন দিয়ে। ছি চি গুয়াং তার ব্যতিক্রম নন। এই মহান স্থাপত্যকারকে ইতিহাসও হয়তো সঠিক মূল্যায়ন করেনি।
চীনে প্রাচীর নিয়ে কিছু ধারণা প্রচলিত আছে।মহাকাশ থেকে এমনকি চাঁদ থেকেও দেখা যায় বলে 1904 থেকে দাবি করা হচ্ছে। মহাকাশ শব্দটি অনির্দিষ্ট ও অপরিমেয়।কার্যত 180 মাইল উপর থেকে কিছু দৃশ্যত হয় না। কিছু নীল, সাদা, সবুজ ,হলুদ রঙের রেখা বা অংশ দেখা যায়। কোন স পকেটের কথা ভেবে।
এবার গাইডের তত্ত্বাবধানে এসে পৌছালাম, বেজিংয়ের ওলিম্পিক পার্ক, যা 2864 একর আয়তন বিশিষ্ট, তিনটি পরিকল্পনায় পরিকল্পিত।এর মধ্যে1680 একর আয়তন বিশিষ্ট ফরেস্ট পার্ক বলে আরো একটি পার্ক আছে।অসাধারণ সৌন্দর্য, জলাশয়,ভাস্কর্য ও বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ বিদ্যমান।বেজিং শহরের ফুসফুস বলে খ্যাত, যা সমগ্র বেজিং শহরকে দূষণ মুক্ত করার জন্য যথেষ্ট।
দেখলাম পাখির বাসার ( বার্ড নেস্ট স্টেডিয়াম ) আদলে তৈরি স্টেডিয়াম।অদ্ভুত তার শিল্প শৈলী, সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাতের আলোক সজ্জায় সজ্জিত ,অপরূপ তার সৌন্দর্য, সকল পর্যটকদের মত আমিও বিভোর।2003 সালে নির্মাণ শুরু সমাপ্ত 2008।সাতাশ হাজার টন স্টিলের ব্যবহার, চারটি স্তম্ভে উপর নির্মিত।মোট তিনশো কুড়ি কিলোমিটার স্টিলের ঝালাই সমন্বিত চীনে বৃহত্তম স্টেডিয়াম এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিয়া স্থাপনার একটি। প্রধান কাঠামো রিখটার স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিরোধ সক্ষম। আনুমানিক কর্মক্ষমতা একশো বছর। নব্বই হাজার দর্শক ধারেন সক্ষম।আকস্মিক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সক্ষম। চারতল সম্পন্ন দর্শকাসনের মধ্যে ফাঁকা থাকায়, আপদকালীন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার খাতিরে ,মাত্র আট মিনিটের মধ্যে দর্শকদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত সম্ভব।সৌরশক্তির ব্যবহার ও বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং সবুজায়নের তার ব্যবহার অতুলনীয়। বর্তমানে চীনে গর্ব।
এক পাশে ওয়াটার কিউব, যা বেজিং ওলিম্পিকের জন্য 2008 এর জন্য নির্মিত। সমস্ত সুইমিং ইভেন্টগুলো এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। বাইরে দিক দেখতে জলের বুদবুদের মতন। দুই স্টেডিয়ামের মধ্যবর্তী বিস্তৃন্য গ্রানাইট পাথরের বাঁধনো অঞ্চল, সর্বোপরি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কেবল পর্যটকদের নয়, সমান ভাবে চাইনিজদের কেও আকর্ষিত করে। তাপমাত্রা প্রায় আট ডিগ্রি সেলসিয়াস । সঙ্গে কনকনে হাওয়া, প্রচুর মানুষের সমাগম। দৃষ্টি নন্দন পরিবেশ,মনকে উৎফুল্লিত করে।
এমন করে দুটি দিন সুন্দর অনুভূতির সাথেই কাটিয়ে দিলাম।এবার যাত্রা অন্য পথে।
হেমন্তকাল।বেড়াতে যাওয়ার আনন্দ ছিল।সাথে ছিল অনেক নিত্য নতুন সমস্যা।তবুও নিদিষ্ট সময়ে পৌছেগেলাম বিমানবন্দরে।নানা রকম নিয়মকানুন শেষ করে সিঙ্গাপুরের এয়ারলাইন্সে উঠে বসলাম।সময়ের অপেক্ষা।নিদিষ্ট সময়ে পৌছেগেলাম।ভীষণ সুন্দর সাজানো বিমানবন্দরটি।আধুনিক সবরকম চাকচিক্য এখানে দৃশ্যমান।চোখ ঝলসে যাবে।সাবধান যাত্রীগণ।
1965 তে স্বাধীন সর্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে লি কুয়ান।তাকে দেশের জনক বলা হয়।1981সালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠিত হয়।
এরপর,আবার ও সেই নিয়মকানুনের পথ বেয়ে ।বেজিং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা।সময় মতো পৌঁছে যাবো সেই কথা ভেবে ঘুমের দেশে পৌঁছেগেলাম।বেশ বড়ো বিমানবন্দরটি।সুন্দর সাজানো।নিজস্ব জিনিস পত্র নিয়ে পৌঁছেগেলাম সেই বাসটিতে।যেখানে পরিচয় হলো চীনা গাইডের সাথে।কিছুই বুঝিনি তার কথা।শুধু বাসের সিটে বসে রাস্তার দুধারে সাজানো শহরটিকে দেখছি আর একটু একটু করে ভালোবাসছি।কত কুকথা শূনেছিলাম
কিন্তু চোখ বলছে সব মিথ্যে।পাতা,ফল,ফুল সবদিয়ে যত্ন করে সাজানো বেজিং শহর।এখানে সবাই চায়নিজ।ভিন্ন জাতি নেই।চীনের মুদ্রা ইয়েন
বড়ো বড়ো সুসজ্জিত ইমারত মাথা তুলে দাঁড়িয়ে।
আধুনিকতার ধারক বাহক।তার সাক্ষী বহন করছে।প্রথম দিন তাই নানারকম বিভ্রাট ।গাইড কিছু স্থান এখন দেখাবে মনে হলো।
সন্ধ্যা তখন।চীনের এক গরুত্বপূর্ন দর্শনীয় স্হান তিয়েনমেন স্কোয়াড।রাজপথ।আলোক সজ্জা।লাল আলো।সব মিলিয়ে মনের ক্লান্তি দূর হলো।
রাস্তার ওপারে প্রাচীন চীনে ঐতিহাসিক প্রাসাদ।
সন্ধ্যায় এসে দাঁড়ালাম চীনের এক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান তিয়েনমেন রাজপথ, অদ্ভুত আলোর সম্ভার। লাল আলোর সৌর্ধ্য মন মোহিত করে। রাস্তা ওপারে প্রাচীন চীনে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রাসাদ,যা পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয়।প্রসাদটিতে নয়শো আশিটি ভবন ও নয় হাজার নয়শো নিরানব্বইটি সুসজ্জিত কক্ষ বিদ্যমান।অসাধারণ লাল ও হলুদ রং এর কারুকার্য,প্রাসাদের ছাদ সোনাদ্বারা নির্মিত। ইম্পিরিয়াল প্যালেস নামেও পরিচিত এই প্রাসাদটি বিশ্বের অন্যতম জটিল প্রাসাদের একটি। নিষিদ্ধ নগরী ( দ্য ফরবিটেন সিটি ) নামে পরিচিত।এটি কিং বংশ ও পরবর্তীতে ছিং বংশের সম্রাটেরা তাদের বসবাসের জন্য নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে চীনের অন্য রাজ বংশের সম্রাটেরা,1912 সাল পর্যন্ত চীনের শেষ সম্রাট পুই এর বাসস্থান হিসাবে ব্যবহৃত। রাজ পরিবার ব্যাতিত সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এই কারণে পরবর্তীতে নগরটির নাম করন হয় নিষিদ্ধ নগরী।1987 সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা পায়। বর্তমানে নগরীটির চল্লিশ শতাংশ পর্যটকদের কাছে উন্মুক্ত। অধিকাংশ জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত। নিষিদ্ধ নগরীর বাকি অংশ অতীতের মত বর্তমানেও রহস্যময়।1271 থেকে 1368 সাল পর্যন্ত চীন শাসন করেন মঙ্গোলিয়ানরা।ইয়ুন সাম্রাজ্যের পঞ্চম সম্রাট কুখ্যাত চেঙ্গিস খানের নাতি কুবলাই খান বেজিং এ গড়ে তোলেন বিশাল এক রাজপ্রাসাদ। ইয়ুন সাম্রাজ্যের পতনের পর রহস্য জনক ভাবে হারিয়ে যায় প্রাসাদটি।সাউথ চায়না মনিং পোস্টের মতে 2016 প্রতত্নবিদরা হারিয়ে যাওয়া প্রাসাদটি আবিষ্কার করেন। এই প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এর উপর তৃতীয় মিং সম্রাট জুডি 1406 থেকে শুরু করে 1420 সালে অনন্য সুন্দর প্রাসাদটি নির্মাণ করেন।এত বড় প্রাসাদ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভিন্ন মত পাওয়া যায়।
1-চীনের সম্রাটেরা মনে করতেন, দেবতারা দশ হাজার কক্ষ বিশিষ্ট প্রাসাদে অবস্থান করেন। দেবতার পর রাজাদের স্থান। তাই নয় হাজার নয়শো নিরানব্বই টি কক্ষ বিশিষ্ট প্রাসাদ নির্মাণ।
2- অনেকের মতে জনপ্রিয় মিং সম্রাটেরা চরিত্রহীন ছিলেন।কোন কোন সম্রাটের নয় হাজারের অধিক উপপত্নী থাকতো। এ থেকে কক্ষের প্রয়োজনীয়তা অনুমেয়।
কিছু নির্মম তথ্য জানা যায়,এই সকল উপপত্নীদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার কোন মূল্য ছিল না সম্রাটের ইচ্ছা ব্যাতিত। সম্রাটের মৃত্যু পর এদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হতো। এমন কত অজানা করুন ইতিহাস ঝলমল প্রাসাদের অন্ধকারে লুকিয়ে আছে।বর্তমানে সাময়িক ভাবে প্রাসাদটিতে প্রবেশাধিকারে স্থগিতাদেশ জারি। ঐতিহ্যশালী প্রাসাদটির অভ্যন্তরীণ শিল্প কলা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করতে না পারা,হয়তো সারা জীবনের আক্ষেপ থেকে যাবে।
এরপর তিয়েনমেন স্কোয়াড, সামনে পার্লামেন্ট ভবন, তার সামনে একটি মিনার এবং মাঝখানে সুন্দর ফুলের স্তবক সজ্জিত সুন্দর একটি সৌর্ধ্য , আলোক সজ্জায় অপরূপ লাগছে।
এমনভাবে কেটে যায় এক সন্ধ্যা।অপেক্ষা নতুন দিনের।
দ্বিতীয় দিনের শুরু।প্রাতরাশের অপেক্ষা।তেমন সুস্বাদু না।তবুও,,,,,,,
আজকে প্রথমেই যাওয়া হবে স্টোন আর্ট গ্যালারি। এমন সংগ্রহ চোখের ক্লান্তি দূর করে।চোখ সুন্দর সামগ্রীর সাক্ষী হয়।এবার যাবো সেই ঐতিহাসিক স্হানে।কেবল কারের সাহায্যে একেবারে প্রাচীরের পাদদেশে।বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম।শুধু চেয়ে রইলাম চর্তুদিকে।মানুষের সৃষ্টি এই আশ্চর্য স্হাপত্য।অনুভূতির পারদ বেড়ে যায়।পাহাড়ের এক চূড়া থেকে অন্য চূড়ায় মিলিয়া যাওয়া দিকচক্রাবালে।
উচ্চতা ছয় থেকে আট মিটার। কিছু কিছু জায়গা প্রায় ষোলো মিটার উচ্চতা।সুইংনুর জনগোষ্ঠী ও বহির শক্র বিশেষ করে মঙ্গোলিয়ানদের আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এই স্থাপত্যের স্থাপনা।খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ শতক থেকে খ্রিস্টীয় ষোলো শতক পর্যন্ত চীনের বিভিন্ন রাজবংশ দ্বারা নির্মিত।অনুমেয় খ্রিস্টপূর্ব 220 থেকে 200 সময়ের মধ্যবর্তী প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াঙের আমলে নির্মিত প্রাচীরটি সব থেকে বিখ্যাত।এটি বর্তমান প্রাচীরের উওরে অবস্থিত এবং খুব সামান্য অংশ অক্ষত।মূল অংশটি 208 BC তে নির্মাণ শুরু হয়।মূলত উওর সীমান্ত রক্ষার্থে, হান,সুই,ছিং সাম্রাজ্যের সময় এর নির্মাণ ও রক্ষনা বেক্ষনের স্বাক্ষ ইতিহাস বহন করছে। বর্তমানে পর্যটকেরা যে প্রাচীরটি দেখেন, সেটি মিং সম্রাটের আমলে নির্মিত।দুই হাজার বছর ধরে মোঙ্গলীয়ানদের বাংরবার আক্রমণ, বিশেষ করে সেপ্টম্বর1550 তাদের গণহত্যা, লুঠতরাজ, বিকল্পায়ন ভাবনায় বাধ্য করে।যুদ্ধের ব্যার্থতা ও পলায়ন, প্রধান সেনাপতির শিরচ্ছেদ এবং 23 বছর বয়সী সেনা অফিসার ছি চি গুয়াং এর উত্থান।বীরত্ব প্রদর্শনে 1567 সালে সেনাপ্রধান পদে অসীন। পুনরায় মোঙ্গলীয়ন আক্রমণের আশঙ্কা, অর্থ মন্ত্রীর সহায়তায় সম্রাটের অনুমতি আদায় ও 1569 সালে পুনরায় প্রাচীর নির্মাণ শুরু, পাঁচ বছরের পরিকল্পনায়। কিছুটা সময় বেশি লাগায় 1575 সালে প্রথম ধাপ সমাপ্ত।এরপর মঙ্গোলিয়ানদের আক্রমণ ব্যার্থ।অর্থমন্ত্রীর মৃত্যু,কিছু ঈর্ষানীত আমলাদের চক্রান্তে ছি চি গুয়াং এর রাজ্যসভায় প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ ও সম্রাটের বিরাগভাজন। অকর্মণ্য সম্রাট, চক্রান্ত দুর্নীতি ও সম্রাটকে খুনের অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করেন। পরবর্তীতে তিনি খুন হন। প্রত্যেক শাসনকালেই কিছু অন্ধকার দিক ছিল , ছিল চক্রান্ত।কিছু মানুষকে মূল্য চোকাতে হয়েছে নীজের জীবন দিয়ে। ছি চি গুয়াং তার ব্যতিক্রম নন। এই মহান স্থাপত্যকারকে ইতিহাসও হয়তো সঠিক মূল্যায়ন করেনি।
চীনে প্রাচীর নিয়ে কিছু ধারণা প্রচলিত আছে।মহাকাশ থেকে এমনকি চাঁদ থেকেও দেখা যায় বলে 1904 থেকে দাবি করা হচ্ছে। মহাকাশ শব্দটি অনির্দিষ্ট ও অপরিমেয়।কার্যত 180 মাইল উপর থেকে কিছু দৃশ্যত হয় না। কিছু নীল, সাদা, সবুজ ,হলুদ রঙের রেখা বা অংশ দেখা যায়। কোন স পকেটের কথা ভেবে।
এবার গাইডের তত্ত্বাবধানে এসে পৌছালাম, বেজিংয়ের ওলিম্পিক পার্ক, যা 2864 একর আয়তন বিশিষ্ট, তিনটি পরিকল্পনায় পরিকল্পিত।এর মধ্যে1680 একর আয়তন বিশিষ্ট ফরেস্ট পার্ক বলে আরো একটি পার্ক আছে।অসাধারণ সৌন্দর্য, জলাশয়,ভাস্কর্য ও বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ বিদ্যমান।বেজিং শহরের ফুসফুস বলে খ্যাত, যা সমগ্র বেজিং শহরকে দূষণ মুক্ত করার জন্য যথেষ্ট।
দেখলাম পাখির বাসার ( বার্ড নেস্ট স্টেডিয়াম ) আদলে তৈরি স্টেডিয়াম।অদ্ভুত তার শিল্প শৈলী, সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাতের আলোক সজ্জায় সজ্জিত ,অপরূপ তার সৌন্দর্য, সকল পর্যটকদের মত আমিও বিভোর।2003 সালে নির্মাণ শুরু সমাপ্ত 2008।সাতাশ হাজার টন স্টিলের ব্যবহার, চারটি স্তম্ভে উপর নির্মিত।মোট তিনশো কুড়ি কিলোমিটার স্টিলের ঝালাই সমন্বিত চীনে বৃহত্তম স্টেডিয়াম এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিয়া স্থাপনার একটি। প্রধান কাঠামো রিখটার স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিরোধ সক্ষম। আনুমানিক কর্মক্ষমতা একশো বছর। নব্বই হাজার দর্শক ধারেন সক্ষম।আকস্মিক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সক্ষম। চারতল সম্পন্ন দর্শকাসনের মধ্যে ফাঁকা থাকায়, আপদকালীন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার খাতিরে ,মাত্র আট মিনিটের মধ্যে দর্শকদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত সম্ভব।সৌরশক্তির ব্যবহার ও বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং সবুজায়নের তার ব্যবহার অতুলনীয়। বর্তমানে চীনে গর্ব।
এক পাশে ওয়াটার কিউব, যা বেজিং ওলিম্পিকের জন্য 2008 এর জন্য নির্মিত। সমস্ত সুইমিং ইভেন্টগুলো এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। বাইরে দিক দেখতে জলের বুদবুদের মতন। দুই স্টেডিয়ামের মধ্যবর্তী বিস্তৃন্য গ্রানাইট পাথরের বাঁধনো অঞ্চল, সর্বোপরি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কেবল পর্যটকদের নয়, সমান ভাবে চাইনিজদের কেও আকর্ষিত করে। তাপমাত্রা প্রায় আট ডিগ্রি সেলসিয়াস । সঙ্গে কনকনে হাওয়া, প্রচুর মানুষের সমাগম। দৃষ্টি নন্দন পরিবেশ,মনকে উৎফুল্লিত করে।
এমন করে দুটি দিন সুন্দর অনুভূতির সাথেই কাটিয়ে দিলাম।এবার যাত্রা অন্য পথে।
No comments:
Post a Comment