Saturday, 23 January 2021

জানুয়ারি সংখ্যা≈ মুক্ত গদ্য ✪ প্রকাশ ঘোষাল

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  প্রকাশ ঘোষাল    

শব্দের রিলেটিভিটি  এবং গর্বিত আইকন 

মধ্যরাতে আমি যখন শূন্য দেরাজ খুলি,কিংবা তারা ভর্তি আকাশের নিচে আমার শান্ত জগৎ বিছিয়ে রাখি তখনি প্রকৃতি আর সৃজনশীল পরিবেশের মধ্যে এক অদ্ভুত অভিলেপন ঘটে।এই সংকরায়নের ফলে বহুরৈখিক শব্দের ত্রিমাত্রিক বিন্যাসে দৃশ্যত এক জটিলতার জন্ম টের পাই। যেখানে অবশ্যই মাখন স্বর কিংবা আগুনের ভ্রমণ কবিতার যতিচিহ্ন বদলে দেয়। এও এক গভীর অন্ধকারে যেন টেষ্ট টিউবের ভেতর হৃদপিণ্ড আর শক্তির সাংঘাতিক বিস্ফোরণ।

সত্যি বলতে কি, যদি শব্দের প্রকৃত অবস্থান পরিবর্তিত না হয়, বলা ভাল, লোয়ার স্পেস থেকে আপার স্পেসে না যায় যেখানে চিন্তা,চেতনা বা বোধের মিথস্ক্রিয়ায় বহুমুখীকরণ সত্যিই মৃত বৎসার তকমা পায় তাহলে যে কোন কবিতাই শারীরিক ভাবে দূর্বল হতে বাধ্য। তখন সাদা মাটা পংক্তির বাজার ছাড়া আর কিই বা বলা যায়। আমার ব্যক্তিগত মত এই যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ন্ডের শব্দ নির্মাণ বা বিনির্মাণ যাই হোক না কেন মূলত শব্দের লীলাখেলা স্পেস আর টাইম ওরিয়েন্টেড। ইদানীং অনেক কবিতায় দেখি থিসিস আর অ্যান্টিথিসিসের জারণ বিজারণ। ফলত আমার মনে হয় ক্রমাগত রূপান্তর ক্রিয়ার ফলে শব্দ বুঝি পরিসীমা থেকে ছিটকে বেরিয়ে পড়ছে। যেন মুক্তি বেগ পেলেই আয়োনস্ফেয়ার পেরিয়ে যাবে।বলা ভালো এখানেই অতিআধুনিকতার টাই পরে স্মার্ট হয় কবিতা। নথিভুক্ত ব্যবহারিক যতিচিহ্নের গতিপথ বদলে যায় অতি বিস্ময়ের দিকে। কোন কোন ক্ষেত্রে কবিতার ইউনিভার্সালিটি হয়তো বা পাঠকের চেতন স্তর চুঁইয়ে চুঁইয়ে ক্রমশ অনিবার্যতা লাভ করে। 

আমি আশ্চর্য হই এই ভেবে যে শব্দেরা আজও  ছায়ার নিচে অনন্তকাল কবির জন্য অপেক্ষা করে এবং কবিরা কিভাবে কখন যে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা পেরিয়ে উৎকেন্দ্রিক বিন্দুতে মিশে গিয়ে বিস্ময়চিহ্ন জাগিয়ে তোলে এবং পাঠকের মগজ খোলতাই করে নিজেরাই কি টের পায় হয়তো পায় কিংবা পায় না। অদ্ভুত এক ঘোর কাজ করে। এখন আর সেই 'নরম নরম ঘুম জেগে থাকে চোখের উপর' গোছের লেখা হয় না।বরং 'ক্ষুদ্রান্ত্রের ভেতর মাসকাবারি হিসেব কষছে রামানুজমের বিদ্যুৎ' অনেক বেশি মাল্টি ডাইমেনশনাল।ব্যাপ্তিরেখার মাত্রাও ছড়িয়ে যায় স্বাভাবিক নিয়মে।পাঠকের ডিগ্রি অফ অবঅজারভেশন পূর্ণসংখ্যা পেরিয়ে যায়।


তাহলে দেখা যাচ্ছে এই যে, আমিত্ববোধ থেকে নিস্তার পেতে কবি বা লেখক যখন শব্দের গর্ভকোষে সাঁতার কাটেন যা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ইন অরবাইটাল ওয়েভ ইকুয়েশন, তার বিস্তার দশার মায়াজগৎ তখনি কবিতা আমার কাছে এক নতুন ইথারিয়াল ভার্সান হয়ে মাথার চারপাশে ঘোরে । কয়েক দশক জুড়ে আজও চলছে কবিতায়  সেই বিনির্মাণ পর্বের মেগা সিরিয়াল । স্বীকার করছি, আমিও তার শিকার। এর প্রতিক্রিয়া ভালো না খারাপ সময় বলবে। 

আমার বিশ্বাস এই যে আজ অব্দি কবিতার জন্য যত মতবাদ জন্ম নিয়েছে তা কোনটাই চূড়ান্ত সত্য নয়। এরও আপেক্ষিকতা আছে, যা সামাজিক দায়বদ্ধতার সম্পুরক।বলতে দ্বিধা নেই, নিয়ত্রণহীন কোন লেখাই সাহিত্য বিচার্য নয়। সমুদ্র থেকে মহাকাশ প্রত্যেক পর্বেই লাইন অফ কন্ট্রোল আঁকা আছে যা অবশ্যই বাস্তবিক কিংবা কাল্পনিক এবং বলা বাহুল্য বাধ্যতামূলক। সমুদ্র পারে বিভ্রান্তিকর পতাকা উড়লে বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ হতেই পারে। ভাবনার প্রতিসরাঙ্ক বদলে গেলেও তা কখনোই ওসানোগ্রাফি বা কসমোলজির বাইরে নয়।অতি দূর চিন্তায় অনেক গুপ্তস্বর শুনতে পেলেও তা যে বিশ্বতন্ত্রের বাইরে এ তত্ত্ব মেনে নিতে আজও আমি দ্বিধাগ্রস্ত হই। কেননা প্রতিটি শব্দই আমার কাছে গর্বিত আইকন। 

No comments:

Post a Comment