Saturday, 23 January 2021

জানুয়ারি সংখ্যা≈ অণুগল্প ✪ দীপঙ্কর কুণ্ডু

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  দীপঙ্কর কুণ্ডু   

ঘরের চাল

লক্ষ্মণ বাবু কাঠ মিস্ত্রির কাজ করে খেটে খাওয়া মানুষ।বাড়িতে তেল আনতে নুন ফুরোয় নুন আনতে তেল।কর্মস্থান ও নেই দুটো যুবক ছেলে বাড়িতে বসে ধান চাল মিশ করে বেছে দিন কাটায়।লক্ষ্মণ বাবুর দক্ষিণ পাড়ায় অসীম কুমার উকিলের বাড়ি, অসীম উকিলের দালান কোঠা আছে তবুও সেদিন লক্ষন বাবুর ডাক পড়ল তার বাড়িতে, অসীম উকিল তাঁর বাবার একটি ঘর এখনো স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছে সেই ঘরটার ই চাল সাড়াই করতে হবে।ঘরের পিছন দিকে দুটো কালো জামের গাছ আছে জাম পড়ে টিন গুলো ঝাঁজরা হয়ে গেছে। গরমের দিন আসলে ওই গাছটার নীচে কত ছেলে পুলের আড্ডা বসত।এখন বাড়ি ঘর হয়ে গাছ দুটো যেন ইঁদুর ধারার খাঁচার ফাঁকে আটকে গেছে।

শনিবার দুপুরে লক্ষ্মণ বাবুর গিয়েছিলেন তার বাড়ি।

অসীম বাবু নীচ তলায় বাড়ি তে ঢুকে ডান দিকে তিন নম্বর ঘরে থাকেন,সাড়া ঘর জুড়ে বই বই আর বই। আইনের নয় বিভিন্ন গল্প কবিতা উপন্যাস সমগ্র আলমারির থাকে থাকে ধুলোর চাদর শুয়ে আছে।

ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই অসীম বাবু দেখতে পেয়েই লক্ষন কে ডাকলেন তার ঘরে 

-কি হে লক্ষ্মন তোমার যে পাত্তাই নেই, তিন দিন আগে ছেলে কে পাঠিয়ে খবর দিলাম।

-আগ্গে আর কি আর বলব ওই নিমতলায় বিরেন বাবুর বাড়িতে কাজ করার পরে চারদিন ধরে বিছানায় পরে আছি বুকের ব্যাথাটা বেড়েছিল।

-তাহলে এখন ভালো তো ডাক্তর দেখিয়েছ?

-হ্যাঁ দেখাতে হল ই, হার্টের সমস্যা টা বেড়েছে ওষুধ খেতে হবে বলেছে।

-আচ্ছা। তাহলে বাবার ঘরের চাল গুলো কবে ঠিক করে দিবে? আগামী কাল ফাঁকা আছো ।টিন গুলো তো আনিয়ে রেখেছি।আর কিছু দরকার হবে তাহলে বল আনিয়ে রাখব।

-হ্যাঁ।ওই ২ইঞ্চি কাঁটা ১কেজী,চাকতি ২৫০গ্রাম হলেই হবে।

-তাহলে কালকে সকাল সকাল চলে আসবেন।আমি ওগুলো আনিয়ে রাখব।

-ঠিক আছে আমি ওই ধরুন ১০টার দিকে চলে আসবো।তাহলে আজ আসি।

পরদিন সকালে আলু সেদ্ধ ডিম ভাজা দিয়ে ভাত খেয়ে অসীম উকিলের বাড়ি গেলেন লক্ষ্মণ বাবু।সাথে তার ভাইপো কে নিয়ে গিয়েছিলেন টিন গুলো একা ওঠানো সম্ভব নয় তাই।বাড়ি ঢুকে সোজা যন্ত্র পাতি ব্যাগ থেকে বের করে ভাঙ্গা ঘরের চালে উঠে পড়লেন। অসীম বাবু দাঁড়িয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন। তারপর ভাঙ্গা টিন গুলো খুলে খুলে নীচে ফেলে দিল আধ ঘন্টার মধ্যেই। ভাইপো নতুন টিন গুলো উঠিয়ে দিল উপরে সব টিন টিন গুলো সাজিয়ে নিল লক্ষন বাবু। ভাইপো নীচে পেরেকের মধ্যে সব চাকতি আগেই পড়িয়ে দিয়েছিল, উপরে মই উঠে কাকার হাতের এগিয়ে দিচ্ছল সে। লক্ষন বাবু টিন গুলো আটকাতে শুরু করতেই দুটো টিন একধার করে লাগাতেই তার আবার হঠাৎ করে বুকে ব্যথা শুরু হয় যেমনটা সেদিন হয়েছিল বিরেন ডাক্তারের বাড়িতে।ভাইপো তাকে ধরে নীচে নামিয়ে এনে বসিয়ে দেয় অসীম বাবুর ঘরের সামনে জল দেওয়া হয় কিন্তু তার ব্যাথা বাড়তে থাকে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। অসীম বাবুর গাড়ি করে হাসপাতাল নিয়ে যেতেই নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।আর চাল সাড়াই হল না।

No comments:

Post a Comment