Tuesday 24 August 2021

|| হাইকু সংখ্যা||~হাইকু নিয়ে কিছু কথা

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || হাইকু সংখ্যা||     

হাইকু নিয়ে কিছু কথা~ অনিন্দ্য রায়


ধ্রুপদী জাপানি কবিতা হাইকু।
তিনটি পর্বে রচিত এই কবিতা, পর্বগুলির মাত্রাসংখ্যা যথাক্রমে ৫, ৭ ও ৫ (মোট ১৭) ‘অন’। অন হল জাপানি
ধ্বনি-একক, Mora বা ‘কলা’র সমতুল্য।
জাপানে পরম্পরাগতভাবে একটি উল্লম্ব পঙ্‌ক্তিতে হাইকু লেখার রীতিই স্বীকৃত। ইংরেজি ও অন্য ভাষায় তিন
লাইনের হাইকু লেখার চল দেখা যায়, মাত্রাগণনায় কলা-র বদলে কেউ কেউ ব্যবহার করেন ৫-৭-৫ ‘দল’
(Syllable)।
কোনও দৃশ্য, যা আমাদের চেতনায় মূহূর্তে উদ্ভাসিত করে সত্যকে, প্রণোদিত করে হাইকুকে। হাইকু-মুহূর্তই
এই হ্রস্বকবিতার প্রাণ, স্বল্প উচারণে প্রকৃতির দুটি ছবির কাব্যিক প্রকাশে তা ফুটে ওঠে। ছবি দুটি জোড়া
থাকে ‘কিরেজি’ দিয়ে; কিরেজিকে বলা যায় ছেদশব্দ, তা ছবিদুটির ভেতর সমান্তরাল-ভাব বা জাক্সটাপজিশন
তৈরি করে। হাইকুর অপরিহার্য অংশ হল কিরেজি; আরেকটি ‘কিগো’। কিগো হল ঋতু-সম্পর্কিত শব্দ, যা নেওয়া
হয় ‘সাইজিকি’ বা কিগো-অভিধান থেকে। হাইকুতে একটি কিগো থাকবেই।
হাইকুতে সাধারণত থাকে না কোনও মানুষের কথা, মানবিক ক্রিয়াকর্মের বিষয়। পরম্পরাগত জাপানি হাইকুতে
থাকে না কোনও যতিচিহ্ন, অন্ত্যমিল, রূপক, চিত্রকল্প বা অন্য কোনও অলংকার। শুধু প্রকৃতির দুটি ছবি
আর তাদের অন্তর্গত অভিঘাতে জন্ম-নেওয়া বোধ— এই হল হাইকু।
হাইকু তাই ঋতুর কবিতা, প্রকৃতির কবিতা, মুহূর্তের কবিতা, সত্যের কবিতা। জেন ধর্মবিশ্বাস ও যাপনের
সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক এর। গুরুত্বপূর্ণ হাইকুকাররা এই ধর্মাবলম্বী।
জাপানি কবিতা ‘রেঙ্গা’র প্রারম্ভিক স্তবক ‘হোক্কু’র থেকে এর জন্ম। মাসাওকা সিকি (১৮৬৭-খ্রিস্টাব্দ
১৯০২ খ্রিস্টাব্দ) এই আঙ্গিকের হাইকু নামটি দেন। মাৎসুও বাসো (১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ– ১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দ),
ইয়োসা বুসান (১৭১৬ খ্রিস্টাব্দ – ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ), কোবায়াসি ইসা (১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দ -১৮২৮ খ্রিস্টাব্দ)
ও সিকি–কে শ্রেষ্ঠ হাইকুকার হিসেবে গণ্য করা হয়। হাইকু লিখেছেন অজস্র কবি, লেখা হয়েছে অসংখ্য তিন-
পর্বের আলোকিত শব্দসুষমা।  


1 comment:

  1. সমৃদ্ধ হলাম আপনার হাইকু বিষয়ক লেখাটি পড়ে। 🌷

    ReplyDelete