Friday, 20 March 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ













হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


পাখি রঙের আকাশ ------ ৪২

আমি তাকে অনেকদিন ধরে চিনি। বাড়ির পাশের বটগাছ। কিন্তু তার গা থেকে উঠে আসা যে মেঘ, তাকে মনে হয় আমি ঠিক চিনি না। অনেকক্ষণ ধরে দেখলেও চিনতে পারব না। বটগাছ দাঁড়িয়ে আছে কেন? কেউ আসবে বলে কিন্তু নয়। কেউ তাকে দাঁড় করিয়ে রেখেও যায় নি। সে কাউকে দেখতেও চায় না। আসলে সে আমাদের অভিভাবক। আমাদের পিতা আমাদের বাতিঘর -------- এই আবদারকে সে প্রশ্রয় দিতে ভালোবাসে। তাই তার মুখে কোনো বিরক্তি নেই। তার শরীরের মেঘ অনেক পরে যেন মানুষ দেখেছে। বটগাছ আমাদের চোখে আসার অনেক আগেই গাছ। মেঘ তো গাছের হাত ধরে ধরে তবেই সামাজিক সমীকরণে সিদ্ধহস্ত। বটগাছ একা একাই অনেক বেশি করে আমাদের মনে গাছ হয়ে গেছে। মেঘ তখন বারান্দায় প্রপাতে ব্যস্ত।


প্রসেনজিৎ আচার্য

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










প্রসেনজিৎ  আচার্য



কঠোরভাবে মলিন
             
ভীষণ জ্বরে পুড়ে যাচ্ছি অপেরামিনি স্ল্যাস
উল্টানো পথ লবঙ্গের স্বাদ
  নিস্তব্ধ খদ্যোতের সচেতন সাঁতরে যাওয়া জঙ্গল
       রথবাজারে ফোল্ডার ফেরি করি 
নেফ্রণ গলে পড়ে আগুনের ইন্ধনে সারা আশমান
দিনের অবগুণ্ঠনে স্বায়ক ধরি আন্তর্জাল
জিগীষার তির হর্ গলি হর্ মহল্লা
বুভুক্ষু আর্তনাদ সহমরন ডাকে নদীজল কেলিবিলাস
                  মুমূর্ষু  প্রাণ আলজিভে দণ্ডী কাটে
          তাসের ঘর টাচস্ক্রিন আর ব্যাকওয়াড ইন্টারনেট


 বাকিটা ঐতিহাসিক
                
হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে একএকটি আকাশ উড়ে যাচ্ছে:
খণ্ড খণ্ড জোনাকী মিলিয়ে যাচ্ছে পাথর-চোখ আমার,
    আকাশ ক্রমশ হিম হয়ে গেছে —
           আমার প্রেমের বলিরেখার শবদেহে ;
কবরের ভিতর আমার        দ্বন্দ্ব, 
             আমার প্রেম!
আর মৃত্যুর অনন্ত চিতায় জ্বলছে শাশ্বত গান৷
অমি, ধরতে চেয়েছি লৌহযুগ থেকে তোমাদের হাত
এখন স্থির সময়, নতজানু এক বিরাট ভূমণ্ডল
            সম্মুখে আমার আধখাওয়া সমাধিস্থান!


পৃথিবীর বনেট খুলে দেখি
              

পৃথিবীর বনেট খুলে দেখি
                        প্রাগৈতিহাসিক  জীব
হুঁকে ঝোলানো রাত্রি ধূসরতায় আচ্ছন্ন
আকাশ গলে পড়ছে তার জিভ থেকে
ডাউনলোড হচ্ছে আমার ভবিতব্য 
ব্যাস্তানুপাতিক সষ্পর্কগুলো ঘুমে সবুজ হয়ে এলো
যে লম্বা গলি পেড়িয়ে এসেছি কাল রাতে
সে আমাকে খুলে দিলো তৎসম যোনিদ্বার
                                         শরীরে আমার নোনা
কৌনিক দূরত্বে ক্রমশ সরে যাচ্ছি ইস্তানবুল পেরিয়ার
স্ক্রিনশটে আমার ফেলে আসা বহুজীবনের ইতিহাস
         গলিত আকাশ থেকে ঝড়ে পড়ছে
                                        সম্মুখে আমি পিপাসার মোহে
পৃথিবীর বনেট খুলে দেখি 
                         প্রাগৈতিহাসিক  জীব

Thursday, 19 March 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


পাখি রঙের আকাশ ------- ৪১

রাতারাতি আকাশটা যেন কেমন পাল্টে গেছে। সবাই দেখি বারান্দায় দাঁড়িয়ে সাদা পায়রা ওড়ায়। জানলায় চোখ রাখি ------ হাইওয়ে দিয়ে ট্রাক চলে যায়। ওরও কি ঘর সংসার আছে ? এত গতিতে চারপাশ নিয়ে ও কিভাবে থাকে ? এটা ওর গতি না পালিয়ে যাওয়া ? জানলা থেকে চোখ সরিয়ে নিই। দেখি রান্নাচালায় মা ধোঁয়া মুখে ভাত রাঁধছে। জলে এখনও চাল নাচা শুরু করে নি। তবুও পাঁচ ভাই বোন থালা ধুয়ে আগুনের চারপাশে বাজনা বাজাই।


যুথিকা দাশগুপ্ত

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










যুথিকা দাশগুপ্ত

সমর্পণ
আজকে  অনেক  সরল  প্রশ্ন
সহজ ভাবে  এসে ---
হঠাৎ  করেই  অপ্রস্তুতে 
দাঁড় করিয়ে  হাসে, 

তির্যক  আরও  প্রশ্ন  যেন 
স্বভাবত আসে  জুড়ে ---
বলতে  চেয়েও  পারলাম  না 
অবোধ  শিশুর  তরে। 

প্রতিদিন  আমি  একাই  মরি 
বাঁচার  প্রত্যাশায় ---
মাঝে  মাঝে তাই  সন্দেহ  হয় 
জীবিত  নাকি  নয় --? 

আমি যে  "অনাথ"---এই  কথাটা 
বোঝানোর  ভাষা  নেই ---
অবোধ  শিশু অবুঝের  মতো 
প্রশ্ন  করে  চলেই ----

কখনো পুরোনো  ছবিতে  দেওয়া
মালার  অর্থ  কি --? 
আমরাও  কেন  পড়িনা  মালা ---
বোঝে  না  লাভ -ক্ষতি। 

দুচোখ  আজকে  লুকাই  ক্ষণে 
নিষ্পাপ  চোখ  থেকে ---
জন্ম  আমার  কালিমা  মুখর 
কলঙ্কটাই  মেখে, 

প্রশ্নে-প্রশ্নে জর্জরিত 
অপরাধে  একাকার --
জাগ্রত হয়  অতীত  আমার 
জানাতেই  ধিক্কার। 

ভাগ্য চক্রে  আজকে  আমার 
আপনার  দোর বন্ধ ---
একদা  যেখানে কাটিয়েছি  বেলা 
স্তব্ধ  সে  হৃদপিন্ড, 

প্রাণ হীন  কিছু  রং চটা স্মৃতি 
ঘুরে  আসে  সম্মুখে ---
উত্তর  তার  খুঁজেছে  জীবন 
ক্ষত --বিক্ষত  বুকে, 

বার বার  সেই  ক্ষত  স্থান  জুড়ে 
নিবিড়ে  রক্ত ক্ষরণ ---
প্রতিবার  আমি হারের  কাছে 
করেছি  সমর্পণ। 


ভর

যে রাত  আজ  আর  চিনতে  পারেনা
তার  কাছে  আমি  অচেনা ---
যে বাক্যবাণ  বিঁধেছে  বহুল 
বিকৃত  তার  চেতনা ----

উপহার গুলো  আজও  সজ্জিত 
সযত্নে  মনিকোঠায় ---
একাকিত্বের  সুযোগ  নিতে 
বেপরোয়া  হাত  বাড়ায়, 

আমিও তখন পালিয়ে  বেড়াই 
নিজের ছায়ার  থেকে --
মায়া হীন  কিছু  আবছা  ছবি 
দাঁড়ায়  ধোঁয়াশা  মেখে। 

কথা  জুড়ে  সেই  চেনা  স্বর গুলি 
অদৃশ্যে  যেন  ভাসে ---
আজও  চলে কত সওয়াল -জবাব 
দেওয়ালের গা  ঘেঁষে, 

পুরোনো  পাঁচিল --সবুজ শ্যাওলা 
ধ্বংস স্তুপের  মতো ---
আজও  জাগ্রত  প্রত্যাশাতে 
পসরা  সাজানো  ক্ষত। 

নেমে আছে কত  বটের  ঝুরি 
সাক্ষ্য  বহন  করে ---
চেনা  স্বর  যেন  আনাচে -কানাচে 
ক্রমেই  আছড়ে  পরে, 

চেনা  নাম গুলো  প্রতি নিয়ত 
প্রতিধ্বনিত হয় ----
হয়তো  বা  তারা  আজও  বেঁচে  আছে
সতর্ক  পাহারায়। 

প্রাণ পণ  কভু  চেষ্টা  করি 
যদি বা  পারি  চিনতে ----
তখনই  যেন  ঘুম  ভেঙে  যায় 
শব্দ  শুনতে --শুনতে, 

কত  কান্না --কত  কোলাহল 
কুবাক্য  আর  চিৎকার ----
রাত শেষে  এসে  দিনের  সাথে 
হয়ে  যায়  সব  একাকার -----

স্বপ্ন গুলো  পরিচিত  আজ 
রোজ  যাতায়াত  করে ----
নিত্য  যাত্রী  হয়ে  যেন  তারা 
ক্রমাগত ভর  করে। 
জাত
জাত  নিয়ে  আজ  যুদ্ধ  বাঁধে 
জাতেই  মরে জাত -----
জাতের  হাতেই  হচ্ছে  নষ্ট 
অন্য  জাতের  ভাত, 

"জাত "বোঝাতে  হরেক  সংজ্ঞা 
আসলে  "জাত "কি --? 
বামুন -কায়েত -বদ্যি  নাকি 
এস. সি ---এস. টি. ----? 

জাতের  নামে  পৈতে পড়েন 
জাতের  নামেই  বিয়ে ---
এ জাত -সে জাত, না  মিললে  আজ 
যায়  মানুষ  পালিয়ে ----

তাতেও  জাতের  জাত  যায়  না 
খর্ব  হয়  না  মান ----
জাতের  জোরে  সংরক্ষণ 
জাত-ই  অভিমান, 

"মানুষ "শব্দ  গৌণ  হয়ে 
"জাত "হয়েছে  মুখ্য ----
জাত -ভাইদের  ঔদাসীন্যে 
জাত-ই  জাতের  দুঃখ। 

"বেজাত "কথার  অর্থ  যদি 
জাত  নেই  যার  কোন ----
জাতের  ব্যাখা --বিশ্লেষণে 
কাদের  কথা  শোনো ---? 

জাত  নিয়ে  হয়  মারামারি 
জাত  দেয়  না  ভাত ----
নষ্ট পাড়ার  জাত হয় না 
তাতেও  পোহায়  রাত। 


Thursday, 5 March 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ












পাখি রঙের আকাশ ---- ৪০ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ আমার কোনো নাম নেই। আজ নেই বলে কোনোকালে ছিল না এমনটা ভাবা ঠিক নয়। আবার হয়ত প্রথম থেকেই ছিল না, এমনটা হওয়াও খুব একটা অসম্ভব কিছু নয়। আসলে নাম থাকতে হলে যে আকার আয়তনে চোখ বড় হতে হয় আমার চোখ তার ধারেকাছেও ছিল না। তাছাড়া নাম রাখার জন্যে কমপক্ষে যতটুকু জায়গা লাগে সেটাও আমার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। তাই মনে হয় নাম যদি থেকেও থাকত তা আমার অপারকতায় দেহ থেকে কবেই ঝরে গেছে।


রুনা দত্ত

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










বৃষ্টির জলছবি   রুনা দত্ত

বৃষ্টি শিলাবৃষ্টি ছুঁয়ে আবার তরুণী হলাম 
বর্ষাস্নাত শরীরের ঘ্রাণ ছুঁয়ে 
নিবিড় আশ্লেষে মেঘ পুরুষকে 
নতুন করে ভালোবাসলাম। 

বৃষ্টিকণা বিন্দু বিন্দু ফোঁটায় ছুঁয়ে দিল 
আমার মুখ চিবুক ঠোঁট নাভি  হয়ে
সমস্ত গোপন অলিন্দকে...
বর্ষাভেজা বানভাসিতে নতুন করে ভিজলাম। 

 বৃষ্টির জলছবিতে ফুঁটে উঠলো 
 ভালোবাসাস্নাত পূর্ণাঙ্গ নারী পুরুষ অবয়ব 
  হারিয়ে যাবার আগে অভিযোজিত হতে হতে 
  আমি আবার প্রবল ভাবে নারী হয়ে উঠলাম। 

যুথিকা দাশগুপ্ত

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










মালিক সাজা শালিক  যুথিকা দাশগুপ্ত

শালিকও  নাকি  মালিক  সাজে 
সময়ের  বৈঠায় ---
তরজা  গানে দরজা  জুড়ে 
থাকাটাই  এক দায়, 

ইচ্ছা  থাকুক  বা  না  থাকুক 
সমস্যা  একটাই ----
মালিক রূপী শালিকটাকে 
কি  করে  সামলাই ---? 

যতই  শালিক  মালিক  সাজুক 
খাবেই  কিন্তু  পোকা ----
চোখ  বুজলেই  জগৎ  অন্ধ 
ভাবতে  থাকে  বোকা, 

চলন -বলন  শালিক  সুলভ 
অবয়বটাও  এক ----
যে  মালিকটা  পুষলো তাকে 
তাঁকেই আগে ত্যাগ। 

শালিক  এখন বেজায় খুশী 
মালিক  সেজে  ঘোরে ---
এক  পশলা বৃষ্টি  এসে 
ভিজিয়ে  দিলো  তারে, 

ভিজলো  শালিক  উঠলো  রং 
ফিরলো  আগের  রূপ ---
মালিক  রূপের  অহং-টা  তার 
শুধুই  রঙের  স্তূপ। 

যাদের  দলে  মিশতো  না  আর 
শালিক, মালিক  সেজে ---
তাদের  কাছেই  দুঃখের  কথা 
শোনাতে  গেলো  নিজে, 

তারাও  এবার  ঠাট্টা  করে 
নাম  দিলো  তার "মালিক "---
শালিক  বেশেই  রইলো  শেষে 
ঘুরলো  চারিদিক ---

"মালিক "নামের  অর্থ  শালিক 
বুঝালো ক্রমেই  আজ -----
শালিক  হয়েই ধরবে  পোকা 
এটাই  তার  কাজ। 

শ্যামল অধিকারী

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










আহ্নিক গতির প্রেমের উত্তাপ ‌  শ্যামল অধিকারী

পদ্ম পাতায় ভালোবাসার স্বপ্ন সাজানো,
সেই ভালোবাসা ক্যাকটাস হয়ে রক্ত ঝরায়।
সুখ স্মৃতি গুলো হয়েছে নষ্টালজিক,
ভালোবাসার গ্রহ-উপগ্রহ গুলো ও স্ট্রাটেজিতে পূর্ন।
আলোকিত প্রানে চন্দ্র গ্রহনের নাভিশ্বাস!
ধূসর মমতাকে আঁধারি চশমা পরায়।
আঁধি ঝড় হয়ে উড়ে যায় ভালোবাসার আঁচল,
নিরুত্তাপ যৌবন হয়েছে অগ্নি পিন্ড।
আর স্বপ্ন হয়েছে একটি পোড়া দেশলাই কাঠি,
ভালোবাসার মিথুন রাশিতে বৃশ্চিক রাশির নিদারুণ কামড়।
মুছে গেছে প্রেমের আহ্নিক গতি স্বপ্নের মায়াজালে,
প্রেম পৃথিবীর আঁচলে লেগেছে রক্তের দাগ।
আগুন ঝরানো রক্ত মেখে আহ্নিক গতির প্রেমের উত্তাপ।

দেবাশীষ সরকার

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










তোমারই নীলাম্বরী হয়ে...  দেবাশীষ সরকার 

আমার রং বেরং স্বপ্ন গুলোকে রেখে দিই 
পদ্ম পাতার বুকে ,
তারার আলোতে ভেঙে চলি একের পর এক সীমারেখা l  
ভাসিয়ে দিই নিজেকে দুরন্ত ঈথার তরঙ্গে ; 
তোমারি মন ঘেঁষে আর একটি মন কখন হয়েছে ফেরারি 
সত্যি তুমি তা জান না l  
সুপ্ত কাঙ্খিত মন খুঁজে নেয় অন্য আকাশ 
মেঘ পালকের বুকে ;
অসীম নীলের মাঝে লীন হয়ে বাঁচতে চাই 
শুধু ...শুধু তোমারই নীলাম্বরী হয়ে l    


Tuesday, 3 March 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










পাখি রঙের আকাশ --- ৩৯   হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

          দুজনেই পাঁচমাথার আলো দেখব বলে একজায়গায় এসেছিলাম। একসঙ্গে রাত দেখার কোনো ইচ্ছা আমাদের ছিল না। তাই পরামর্শের জন্যে আমরা নিয়ম করে কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে পরিনি। খোলাই ছিল আমাদের জীবন। হঠাৎ করে দু'একদিন সাতসকালের কয়েকটা সংসার দেখে আমরা দাঁড়িয়ে পড়ি। তারপর উড়ে যাওয়ার শখ হল। উড়েও গেলাম। আলো চিনি না, জল চিনি না ------ সম্পূর্ণ অচেনা আবহাওয়ায় আবার শুরু। 
          প্রিয় কিছু নেই ? কাউকে কোনো কথা দেওয়া নেই ? কোথাও একটুও মন পড়ে নেই ? সব ফেলে চলে এলে ? এখনও তোমার কেউ কিছু দেখবে ? এর পরেও আর কি দেখানো বাকি আছে তোমার ?

সন্দীপ ভট্টাচার্য

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ









ডিসটোপিয়া   সন্দীপ ভট্টাচার্য


এমনি করেই মাঝ দুপুরে নামে গভীর রাত
রক্তের গন্ধে ছুটে আসে বিষাক্ত শেয়াল
মধ্যবিত্ত খিলের এপারে 
ব্যাস্ততা তখন, গোলাপ চাষের,
অজান্তে লালিত কাঁটারা হাসে মুচকি হাসি

ঘুঘুরঙা নিস্তব্ধতা ছিঁড়ে যায় ওপারে
কে যেন কড়া নাড়ে শীতল পায়ে
অন্ধকার চাঁদোয়ার নীচে জমা হয় ঘৃণা
চুপিচুপি বলে যায় বিষাক্ত শ্বাপদ
বিশ্বাসের শিরায় শিরায় নাকি হাঁপানির জীবাণু

তুমিও তৈরি থেকো গৃহস্থ
শুকনো ফুলের আবডালে কাঁটারা কিন্তু মুক্ত শির
দহন হাওয়া ছুটে এলে শার্সি বেয়ে
দূরত্ব কমে রক্ত এবং সময়ের।

চিরঞ্জিৎ বৈরাগী

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










নিম্নগতিতে   চিরঞ্জিৎ বৈরাগী
আলকাতরা ল্যাপা পিচের রাস্তা
সাদা পায়ের চর্বিতে বেনারস
কিংবা গঙ্গাসাগর।
চোখের জলে সন্ন্যাস নিলাম
রঙিন সুতোয় বোনা চামড়ার রঙ,
অবশেষে খুললাম...
পাথরে খোদাই করা পাঁচ শতোর ছাপ।
বিশ্বাসের কেন্দ্রমন্ডলে জ্যোতিষী
হৃদযন্ত্রে গন্ধকের বিষাক্ত জিন
দিক নির্ণয়ে স্মৃতিভ্রষ্ট।
জনপ্রিয়তার উপসংহারে
পলল ভূমি মৃত..
নিম্নগতিতে ফিরলাম!

অনসূয়া চন্দ্র

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










বাঁচা (অণুগল্প)   অনসূয়া চন্দ্র

"কী ভাবছিস!খুব খারাপ মা।তাই তো? আসলে যে লড়াইটা লড়তে হবে তাতে না এগোলেও চলে কিন্তু এগিয়ে পিছিয়ে আসা যায়না।"
নিজের মনেই কথাগুলো বলছিল আরশি। আরো কতকিছু যে বলছিল তা শুধু ওই শুনছিল।বাড়িতে পা রাখতেই শাশুড়ি বলল "মেয়ে লক্ষ্মী,সংসারে আয় বৃদ্ধি হবে" শ্বশুর বলল"ওর বিয়ের দায়িত্ব সব আমার,কিচ্ছু ভাবিস না!"ষষ্ঠী পু্জোর ধুমধাম আয়োজন বাড়ি জুড়ে।পুজোর প্রসাদ কোলে আরশি।
  কিছু ভাবছে না আরশি।ও শুধু ওর অক্ষত দেহ আর এক আকাশ বাঁচার কথা ভাবছিল।পারবে তো তোমরা দিতে?

মুস্তাফিজ রহমান

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ









অলীক প্রসূতি সদনে   মুস্তাফিজ রহমান 



এই অন্ধকার আকাশে নীহারিকার দিকে 
তাকিয়ে  আছি 
দেখলাম পেটটি তার আসন্নপ্রসবার মতো ফুলে আছে। 
চরম সুখের মুহূর্তে তোমার চোখের তারায়    যেমন 
কাঁপন লাগে 
তেমনই ভাবে কাঁপছে অসংখ্য মৃতপ্রায় নক্ষত্রের গালে 
লাল আবেগের গুলাল। 

নিরন্ন কৃষ্ণগহ্বর তার 
কুমীরের ক্ষুধা নিয়ে প্রাণে  
লেজ আছড়ে যাক,অভুক্তই পড়ে থাক 
তার মৃত্যু আসন্ন। 
তবু সন্ধ্যার ঠোঁটে আনন্দ উধাও 
যাও পাখি খোঁজ নাও 
কেন মন তার এখনও বিষণ্ণ? 
আকাশে সুচেতনার নিমন্ত্রণ 
নেই কি তার মনে? 
হুল্লোড় উঠেছে  আজ অলীক প্রসূতি সদনে 
নবজাতকের আগমনে।