Thursday, 19 March 2020

যুথিকা দাশগুপ্ত

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ










যুথিকা দাশগুপ্ত

সমর্পণ
আজকে  অনেক  সরল  প্রশ্ন
সহজ ভাবে  এসে ---
হঠাৎ  করেই  অপ্রস্তুতে 
দাঁড় করিয়ে  হাসে, 

তির্যক  আরও  প্রশ্ন  যেন 
স্বভাবত আসে  জুড়ে ---
বলতে  চেয়েও  পারলাম  না 
অবোধ  শিশুর  তরে। 

প্রতিদিন  আমি  একাই  মরি 
বাঁচার  প্রত্যাশায় ---
মাঝে  মাঝে তাই  সন্দেহ  হয় 
জীবিত  নাকি  নয় --? 

আমি যে  "অনাথ"---এই  কথাটা 
বোঝানোর  ভাষা  নেই ---
অবোধ  শিশু অবুঝের  মতো 
প্রশ্ন  করে  চলেই ----

কখনো পুরোনো  ছবিতে  দেওয়া
মালার  অর্থ  কি --? 
আমরাও  কেন  পড়িনা  মালা ---
বোঝে  না  লাভ -ক্ষতি। 

দুচোখ  আজকে  লুকাই  ক্ষণে 
নিষ্পাপ  চোখ  থেকে ---
জন্ম  আমার  কালিমা  মুখর 
কলঙ্কটাই  মেখে, 

প্রশ্নে-প্রশ্নে জর্জরিত 
অপরাধে  একাকার --
জাগ্রত হয়  অতীত  আমার 
জানাতেই  ধিক্কার। 

ভাগ্য চক্রে  আজকে  আমার 
আপনার  দোর বন্ধ ---
একদা  যেখানে কাটিয়েছি  বেলা 
স্তব্ধ  সে  হৃদপিন্ড, 

প্রাণ হীন  কিছু  রং চটা স্মৃতি 
ঘুরে  আসে  সম্মুখে ---
উত্তর  তার  খুঁজেছে  জীবন 
ক্ষত --বিক্ষত  বুকে, 

বার বার  সেই  ক্ষত  স্থান  জুড়ে 
নিবিড়ে  রক্ত ক্ষরণ ---
প্রতিবার  আমি হারের  কাছে 
করেছি  সমর্পণ। 


ভর

যে রাত  আজ  আর  চিনতে  পারেনা
তার  কাছে  আমি  অচেনা ---
যে বাক্যবাণ  বিঁধেছে  বহুল 
বিকৃত  তার  চেতনা ----

উপহার গুলো  আজও  সজ্জিত 
সযত্নে  মনিকোঠায় ---
একাকিত্বের  সুযোগ  নিতে 
বেপরোয়া  হাত  বাড়ায়, 

আমিও তখন পালিয়ে  বেড়াই 
নিজের ছায়ার  থেকে --
মায়া হীন  কিছু  আবছা  ছবি 
দাঁড়ায়  ধোঁয়াশা  মেখে। 

কথা  জুড়ে  সেই  চেনা  স্বর গুলি 
অদৃশ্যে  যেন  ভাসে ---
আজও  চলে কত সওয়াল -জবাব 
দেওয়ালের গা  ঘেঁষে, 

পুরোনো  পাঁচিল --সবুজ শ্যাওলা 
ধ্বংস স্তুপের  মতো ---
আজও  জাগ্রত  প্রত্যাশাতে 
পসরা  সাজানো  ক্ষত। 

নেমে আছে কত  বটের  ঝুরি 
সাক্ষ্য  বহন  করে ---
চেনা  স্বর  যেন  আনাচে -কানাচে 
ক্রমেই  আছড়ে  পরে, 

চেনা  নাম গুলো  প্রতি নিয়ত 
প্রতিধ্বনিত হয় ----
হয়তো  বা  তারা  আজও  বেঁচে  আছে
সতর্ক  পাহারায়। 

প্রাণ পণ  কভু  চেষ্টা  করি 
যদি বা  পারি  চিনতে ----
তখনই  যেন  ঘুম  ভেঙে  যায় 
শব্দ  শুনতে --শুনতে, 

কত  কান্না --কত  কোলাহল 
কুবাক্য  আর  চিৎকার ----
রাত শেষে  এসে  দিনের  সাথে 
হয়ে  যায়  সব  একাকার -----

স্বপ্ন গুলো  পরিচিত  আজ 
রোজ  যাতায়াত  করে ----
নিত্য  যাত্রী  হয়ে  যেন  তারা 
ক্রমাগত ভর  করে। 
জাত
জাত  নিয়ে  আজ  যুদ্ধ  বাঁধে 
জাতেই  মরে জাত -----
জাতের  হাতেই  হচ্ছে  নষ্ট 
অন্য  জাতের  ভাত, 

"জাত "বোঝাতে  হরেক  সংজ্ঞা 
আসলে  "জাত "কি --? 
বামুন -কায়েত -বদ্যি  নাকি 
এস. সি ---এস. টি. ----? 

জাতের  নামে  পৈতে পড়েন 
জাতের  নামেই  বিয়ে ---
এ জাত -সে জাত, না  মিললে  আজ 
যায়  মানুষ  পালিয়ে ----

তাতেও  জাতের  জাত  যায়  না 
খর্ব  হয়  না  মান ----
জাতের  জোরে  সংরক্ষণ 
জাত-ই  অভিমান, 

"মানুষ "শব্দ  গৌণ  হয়ে 
"জাত "হয়েছে  মুখ্য ----
জাত -ভাইদের  ঔদাসীন্যে 
জাত-ই  জাতের  দুঃখ। 

"বেজাত "কথার  অর্থ  যদি 
জাত  নেই  যার  কোন ----
জাতের  ব্যাখা --বিশ্লেষণে 
কাদের  কথা  শোনো ---? 

জাত  নিয়ে  হয়  মারামারি 
জাত  দেয়  না  ভাত ----
নষ্ট পাড়ার  জাত হয় না 
তাতেও  পোহায়  রাত। 


No comments:

Post a Comment