Saturday, 25 December 2021

পৌষালি সংখ্যা || অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়


সাম্প্রতিকী

পেট্রোলের সেঞ্চুরি পার। কোভিডের নয়া সংক্রমণ।
তারাদম্পতির বিচ্ছেদ। খুন-চেটে-নেওয়া তালিবান।
‘পলিটিক্স’ পিছলেই গেছে। উড়ুউড়ু দলবদলু ভীষণ।
সামনে তো দায়িত্ব বহু—‘সেলফি তুলুন। সেলফি তুলে যান’।

সেকেন্ডে-সেকেন্ডে চাপ : ‘বাড়ি থাকো’ ‘মাস্ক তুলে ঘোরো’
‘ঘনঘন দু’হাত ধোওয়া’ ‘মনে থাকুক স্যানিটাইজ়ার’
বাড়তে বাড়তে বাড়তে বাড়তে উঠে-গেছে মাথায়, ওপরও...
ক্যালাইডোস্কোপের নকশা : ক্ষণে-ক্ষণে বৈচিত্র, বাহার

খেতে পাই বা না-ই পাই—ভাবনাগুচ্ছ বিচিত্র, সুন্দর...
চিন্তা তো ‘জিনিয়াস’! তার ‘ক্রিয়েটিভিটি’। মুগ্ধ-করা। ছল।
তীক্ষ্ণধার। ক্ষুরে-চাঁচা। শস্যে-শস্যে শনশনে উর্বর।
ধানকাটার হিম-ক্ষেত। জলে-ফাঁসা খলসের খলবল।
অর্থনীতির শীঘ্রপতন, লকডাউনে ছটফটে সঞ্চয়...
চিন্তার কী হবে শেষে!—সেটা খুবই চিন্তার বিষয়

অলৌকিক

অতৃপ্ত আত্মা যে কারও ঘাড়ে-চেপে নামছেই না আর...
কণ্ঠ দিয়ে একটানা প্রলাপ অদ্ভুত খোনা স্বরে...
দিব্যি সুস্থ-স্বাভাবিক, কী ক’রে চড়ল সে’ কাঁধে তার!...
গাছতলা গিয়েছিল শনি-সন্ধ্যা ঘনাবার পরে!...

শরীরী-ছায়ায় ব’সে রক্তমাংস শুষেছে সমানে...
আউড়াচ্ছে বিড়বিড়িয়ে অশ্রাব্য-খেউড়... খল হাসি...
বীভৎস তাগত গায়ে... কাছে গেলে মেরে দেবে জানে...
চলছে ছাড়াবার মতো জাঁদরেল ওঝাটির তল্লাশি...

মুঠোয় সরিষা আগুনে মারবে ছুড়ে মন্ত্রপড়া ঘা...
প্রকাণ্ড ঝাঁটা ঠুকেই, চিৎকার : ‘বল! বলবি না!’...
শেষবার শুধোচ্ছি কিন্তু : ‘কে তুই?’ ‘তুই কে?’ ‘চলে যা!’...
উত্তর বিকট হেসে সাড়া দিল : ‘আমি কবিতা’

জলভরা কলসি দাঁতে টেনে-নেওয়ার ছল সে’ দেখাবে
কবিতা অতৃপ্ত প্রেত—কবিকে ছাড়বে না কোনওভাবে

পথিক

মাড়িয়ে চলেছি বর্ষা, হাহাকার ও সর্পের খোলস...
কান-ঘেঁষে হা-হা শব্দে চলে-যাচ্ছে দৈত্যাকার লরি...
বাড়িয়েও দিয়েছি মুষ্টি—ভাসমান যত কর্মদোষ...
কোমরে-ছেঁচড়ে-চলা—যেন পায়ে বাঁধা দড়াদড়ি...

আমাকে পেঁচিয়ে-ধ’রে ওহে রাস্তা, চলেছ কোথাও?
কোথায় বা ছুটেছে চাকা, সব পথনির্দেশিকা সাদা...
গড়িয়ে লাফালো রাত; টালুমালু হয়ে-যাচ্ছে পা-ও...
মাড়িয়ে চলেছি পীচ, ধুলো-খোয়া, এঁটে-বসা-কাদা...

এ পথে স্বপ্নের ডোবা; শুধু ভূতেদের আসা-যাওয়া...
আশপাশ তো ঝিমশূন্য; হেডলাইটের আঁখি কানা...

হাওয়ার ঝাপটাও এসে মিশে-গেল ছমছমে ধূ-হাওয়ায়...
যাত্রীরা ছায়া-ছায়া—কারা, চুপ, ফিসফাস, কোন্‌ রুটে না-জানা...
তালু ফুটে রক্তদানা, দুটো পা-ই ক্ষয়ে যাচ্ছে, ক্ষয়ে...
শুয়েছি তোমার দু’স্তনে চোদ্দ-নম্বরের-হাইওয়ে

স্নান

যে প্রাপ্য কখনও দাওনি আজ তীব্র রাত্রির জোয়ারে
না-ছোড় সাঁতারে ঢেউ ভাঙতে-ভাঙতে ডাকছি ভেসে : দাও
যা যা-কিছু পাওনাগণ্ডা... বিন্দু-বিন্দু নড়ছে ঐ ওপারে...
অপূর্ণ ঘূর্ণিস্রোতে... বুদবুদ-আরামে টেনে নাও।

এই ডুবছি... ভাসছি এই... যে ক’রেও তীরে যাওয়া চাই
সাঁতরানো অভিমুখে...। জল ফুলে-উঠে ভেঙ্গে-দিচ্ছে বুক...।
কাঁধ ছুঁয়ে... কখনও বা কোমরের নীচে মারল ঘাই...
বোয়াল বা ইলিশ কোনও? কাছিমেরা! কামঠ! শুশুক!
কিচ্ছুটি না-ভেবে দুটি হাত, দুটো পায়ে ফেনা ভাঙা...
দেহ জাপটে ধরল গতি... চোরাপাকে এনেছে তলায়...
বুঝেও বুঝছি না ঠিক কতদূরে আছে জমিডাঙা...
ক্রমশ ফুরোচ্ছে দম...। ঘোলানুন ঢুকেছে গলায়...

পারলাম না পারলাম না আর... গুলিয়ে-মুচড়ে সবই বমি হল...
প্রচণ্ড ধাক্কারও শেষ। কেঁপে উঠছি... কেঁপে উঠল জলও



No comments:

Post a Comment