Saturday, 25 December 2021

পৌষালি সংখ্যা || ফাল্গুনী দে

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  ফাল্গুনী দে



দ্রোণাচার্যকে 

এতই যদি একলব্য ভয় 
গায়ের জোরে আঙ্গুল রক্তাক্ত হয় 

অর্জুনের সাথেই তবে যুদ্ধ আজ 
বর্মখানি খুলে রাখো হে তীরন্দাজ 

দলিতের নেই ন্যায়ের অধিকার 
বলো, এই হেনস্থা কি শুধুই আমার ?


মায়ার খেলা 

যাও, সোনার হরিণ খুঁজে আনো বলে 
যাকে ক্লান্ত ছুটিয়ে মেরে 
অপেক্ষায় থেকেছি লক্ষণরেখার আশ্রয়ে

দিনের শেষে সে যখন সত্যিই
সোনার হরিণ হাতে সামনে দাঁড়ায় 
তখন তাকে রক্তমাংসের মানুষ বলেই মনে হয়
 
ঈশ্বরওতো কখনো কখনো ভুল করে 
মায়ার পেছনে ছোটে !


লোডশেডিং 

লোডশেডিংয়ের ভিতর অন্ধকার হাতড়ে
                     পেয়েছি আলোর মজলিস
পাটভাঙ্গা আঁচল প্রিয় হ্যারিকেন হাতে 
                                নক্ষত্রমালা খোঁজে

নাগরিক যাপন ভুলে রূপকথার সামনে
                           হাঁটু মুড়ে বসে জীবন 
অন্ধকার সিঁড়ি বয়ে অতীত উঠে আসে 
                              আকাশের গ্রীনরুম

আলো নিভে গেলে সম্পর্ক গভীর হয়
ভাঙ্গা পিয়ানোয় কাঁদে মুনলাইট সোনাটা
অন্ধকার বলে দেয় গোপন অলিন্দ ব্যথা
                     টানেলের গায়ে হায়রোগ্লিফ

তুমি তো গোপন করোনি কিছু আয়নায়
              তবু অন্ধকার কেন প্রিয় মনে হয় ?
কেন বিষন্ন রঙের চাদর আজ ফিনিক্স পাখি 
                       ঘুমের ভিতর জিয়ন উৎসব ? 


তোর লাগি মোর ভীমরতি

তখনো গুটি পায়ে হাঁটছে ঘরভর্তি লেটনাইট আলো
অ্যাস্ট্রেতে জমে ওঠে কিছু ছাইরঙা মরা আগুন

দূরের ঝাপসা নীল আটকে থাকে শহরের চুপকথায়
কিছু অন্ধকারই আমাকে চিনে নেয় নিজের মত করে

কড়ি বরগায় বাদুড় ঝুলে একটি দ্বীপ হয়ে বেঁচে থাকি
আমার একান্তে -- তোর প্রিয় শহর কলকাতায়

দেরাজ ভর্তি মেঘ গুমোট হাওয়া বৃষ্টির তোড়ে উড়ে গেলে
আমি তোকে তেষ্টায় মেখে গিলে গিলে খাই আজও

যেটুকু মনে রাখিস সেটুকুই আমার ফুসফুসের বাতাস
বাকিটা জানে ভোররাত -- আমার পাপড়ি শুয়ে থাকা

খোলা রইল পূবের জানালা আর ডাইরির পাতায় তুই
কিছু কথা না বলা থাক পান্ডুলিপি খুঁজে দেখে নিস্।


সোনার তরী 

আমাদের নতুন বাড়ির ছাদ উঠে যাচ্ছে আকাশে
তারার গায়ে এলোচুল মেঘ পাশাপাশি গা-ঘেঁষে 
                                     বসে থাকে আঙুলে আঙুল

ছায়াপথ ধরে নেমে আসে সুখ মহারাত্রিকথা
চিলেকোঠা থেকে বাবা মেলে ধরে পতাকা গাঢ় সবুজ
মা জ্বেলে রাখে সাবেক আকাশ - প্রদীপ

নীচে তখন প্রতি স্কোয়্যার ফুটের হিসেব লাভ লোকসান
বিপরীত নিয়মে উঠে আসে গা-ধোয়া কৈশিক জল
রামধনু নিংড়ে আনে দেওয়াল জোড়া প্রিজম আলো

লোহা লোহা কাঠ কাঠ বালি বালি পাথর পাথর
আজ আর মনে নেই কত ঘাম দিয়ে সিমেন্ট কিনেছি কত
চৌকিতে এলিয়ে ক্লান্ত শরীর ধুলো হয়ে গেছে কবে

আরও নিচে তখন জীবাশ্ম কান্না। পুরানো বাড়ির মৃত কঙ্কাল
দেহাতি চুনকাম আর এলেমাটির কবরে বাঁধানো মার্বেল
আমাদের শিশুবেলা আঁকা ছিল অনটন - আহত কোলাজে।




No comments:

Post a Comment