Saturday, 25 December 2021

পৌষালি সংখ্যা || শান্তনু ভট্টাচার্য

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||   শান্তনু ভট্টাচার্য  


ছবি

  
ঘরের সামনে 
দাঁড়িয়ে আছে একটা চৌকো অন্ধকার।

তার গা-য়ে আলো পড়লেই 
বেঁকে,কুঁকড়ে ছোট হয়।  আলো সরে গেলে
আবার  বড় হয়ে যায়।


তার গায়ে কিছু রঙিনপাতা আর শিশুর মুখ
এঁকে দিতেই কলকলিয়ে হসে উঠলো অন্ধকার 

চাঁদ তারা আঁকবো কি না 
ভাবতে ভাবতেই দেখি 
অদ্ভুত ফুলের গন্ধ সব আমার শরীরে মাখামাখি ।


ঠেক

আমি যেখানটায় দাঁড়িয়ে আছি 
একটু পরেই ঝুরো বরফের মতো
সেখানে নেমে আসবে সন্ধ্যা।

বাতিস্তম্ভের পাশের রেলিং এর গায়ে হেলান দিয়ে  শূন্যস্থান ভরে দেবে
নীল ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক লাগানো 
কিছু ছায়া ছায়া মূর্তি।

শিয়াল কুকুরের মাংস হলেই যথেষ্ট,
সেই মহাভোজে মেতে ওঠে আকাশের তারা...চাঁদ...রাতের বৃষ্টি আর
দূর নিওনের সারির মতো চাট আর জল এনে দেবার খতেন।
দরকচা মারা নগদ প্রেমের কালশিটে দাগ লেগে যায় 
তাকে ধোবে বলে নদীতে নেমে পড়ে গোটা রাত। 

ক্লান্ত খদ্দের টলতে টলতে ফিরে গেলে  
নদীর বুক থেকে পুণ্যস্নান সেরে
উঠে এসে দাঁড়ায় ভোর...বাতি স্তম্ভের গায়ে।

বেলা বাড়লে 
রোজগারের মত যেখানে এসে দাঁড়াবো আমি।


কবিতার অ্যারোমা

যেভাবে চারিদিকে কবিতার বই ছড়িয়ে রেখে 
দুপুরবেলা একান্তে শুয়ে থাকো তুমি 
ঠিক তেমনিভাবে চারপাশে নুড়িপাথর বিছিয়ে 
উপুড় হয়ে শুয়ে আছে একটা নদী। 

তার গায়ে ভাঙ্গা আয়নার কাঁচের মতো 
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দিনের আলো।
সন্ধ্যা নামলে তার কাছে যাই; পাশে বসি 
বুক ভরে টেনে নিই সেই নদীর অ্যারোমা।

আকাশ ভরা নক্ষত্রের মাঝে কালপুরুষ
ঈর্ষায় লাল হয়ে ওঠে। তির নিক্ষেপ করে
অযুত আলোকবর্ষ সুদূর হতে।

পাখির মতো ফিরে যাই...
ফিরতেই হয়।কোনোদিন
মনখারাপের গোধূলিতে পড়শি নদীর কাছে এলে
তোমার কথাই মনে পড়ে বারবার  
আর নিঃশ্বাসের মধ্যে দিয়ে একটু একটু করে
সেই অ্যারোমা  ছাড়তে থাকি বাতাসে 

তখন কংক্রিটের জঙ্গলে যেন আশ্চর্য ম‍্যাজিক ----

তোমার শরীরের গন্ধের সঙ্গে মিশতে মিশতে 
হাওয়ায় হাওয়ায় উড়তে থাকে কবিতারা।

নিশীথ আহিরী
          
এক ভিন্ন পৃথিবীর মধ‍্যরাতে
মানুষের পায়ের ছাপ না-পড়া অরণ‍্যে
ঠিক লুব্ধকের নিচে পাথরের ওপর 
বিরহিনী এক তারা কাঁদতে থাকে।

আকাশগঙ্গার প্রবল স্বান্তনাস্রোতে ভেসে ভেসে
অযুত তারারা নেমে বসলে ঘাসের ডগায় ডগায়,
গাছের অন্ধকারে নিজের আলো নিভিয়ে 
মুগ্ধ বিষ্ময়ে তাদের দেখতে থাকে বনজোনাকির দল।

একটানা ঝিমধরানো সেই  কান্না 
শুদ্ধ কোমলে মিশে ধ্রুপদে ভেসে যায় বাতাসে...

রোদের সকাল হলে
পাখিরা শিকারের গন্ধ  ডানায় মুছে 
আদিগন্ত ঘাসবন তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখে-
নিশ্চিহ্ন রাতের  ফসিল পড়ে আছে।

খাওয়া 

খাবার খাওয়ার একটা নিয়ম আছে 
শক্ত হলে চিবিয়ে খাও
তরল হলে গিলে খাও 
চোষার হলে চুষে খাও 
চাটার হলে চাটো
সমস্ত খাওয়ারই নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে 
মোটামুটি সবাই তা মেনে চলে।

অসহ্য লাগে তখন যখন কেউ আলোকে 
কড়মড় করে চিবিয়ে খেয়ে প্রমাণ করে 

আলোর শরীরে কোন হাড় নেই...



No comments:

Post a Comment