অব্যবহৃত
মানুষ মানে তো শুধু তুমি আমি নই,
আদিগন্ত চা বাগানের শেড-ট্রির নিচে অনাহারে মরে থাকা মানুষটাও তো ছিল,
ছিল মাসে একদিন ঘরে ফেরা নোনাজল উজিয়ে মেছো বাতাসে গা ভেজানো মানুষটাও,
ফিরে যখন যেতে পারছি না উলঙ্গের দেশে,
তখন কাপড়ের নিচের আমি-মানুষটা তো সবটাই রক্তমাংসের কাঠামো।
আমরা মানে তো শুধু আমি তুমি না,
গাইতি হাতে ঝড়ের সামাল দেওয়া কাকে বলে দেখেছ কোনওদিন?
আমি সমুদ্র নই, আমি নুলিয়া নই, আমি মৃতদেহও নই,
অব্যবহৃত কোন চাবির মত পড়ে থাকি ঘরের সামনেই,
তুমি হয়ত আমায় এঁটো চাঁদ নিয়ে কবিতা লিখতে দেখনি; কিন্তু -
দেখেছ কি নিপুন যত্নে আমি তোমার সেমিজ সেলাই করি?
যেখানে এখন আমি
আর কোনদিনও চিঠি আসবে না,
আর কোনও ডাকঘরের ঠিকানা খুঁজে পাবে না কোনও সামান্য পোস্টকার্ড,
দেশ বিদেশের ডাকটিকিট ছোপানো রঙিন অথবা সাদাকালো,
প্রায় নোংরা হয়ে আসা জীবনের কথাগুলো সম্বল করে,
আর আসবে না এই খোয়াইয়ের চরে।
যেখানে এখন আমি,
জানতাম কীভাবে একতারা, দোতারা, তিনতারা হয়ে উঠে যাওয়া যায় সপ্তসুরে,
সপ্তডিঙা ভাসিয়ে দেবার প্রাক্কালে।
ঠিক এখন যেখানে আছি, তার অনেক উপরে অনেক কাক, চিল, অর্ধ-উন্মাদ পাখীর দল,
অনেকদিন কাটিয়েছি ওদের জীবন, নারীসঙ্গ, কবিতা আসর......
আস্বাদিত তৃণের শাকাহারি জিভ ছুঁয়ে পড়ে আছি পরম শান্তিতে।
আর কোন পুর্ব-আদেশ মত চিঠি লিখতে রাজি নই আমি।
বিছানা-বালিশ
যদিও এই বিছানা-বালিশে লেপ্টালেপ্টি করে আছি,
তবু চাইলেই কি ফিরে যাওয়া যায় সেই বাদুরের দেশে,
সেথায় কোন এক প্রাগৈতিহাসিক সন্ধ্যেতে,
বিশাল ঘরের এক প্রান্তে রাখা চারশ’ বছরের পুরনো পিপেতে রাখা মদ,
চুপিসাড়ে একঢোক পান করে ফিরে যাবার সময়েই,
বিষাক্ত অবিশ্বাসে হা হা উড়ে গিয়েছিল বাদুরের দল,
আমার অস্তিত্বকে বিশ্বাস না করেই।
তবুও আজও বিছানা-বালিশে সেই অস্তিত্বের স্বাদ মাখিয়ে রাখি,
ভুলে যেতে চাই ঘরছাড়া বাদুরের মত –
আমি চলে গেলে এই বিছানা-বালিশ বেচা হবে দারুন সস্তাদরে।
ঘুম চাই
আমার হৃদপিণ্ডের নিচে দমচাপা প্রেম এক-ঠ্যাং ভাঙা কাকের মত,
দাঁড়াবার অতি প্রচেষ্টা, তবু নানা সাংসারিক অক্ষমতা, নাড়িছেঁড়া প্রতিবন্ধকতা,
বিশ্বাস না পেতে পেতে নাক দিয়ে অবিশ্রাম শ্লেষ্মার মত বেড়িয়ে আসে দম,
কখনো শিশুর মত ঘুম চাই।
আমার ফুসফুসের নিচে দমচাপা প্রেম কোমরে দড়ি দেওয়া বাঁদরের মত,
কত অহংকারে রাত জেগে থাকে কত সাম্রাজ্যের বৃদ্ধা রাজকুমারীরা,
তবে তাঁরাও জানে, ঘোরাফেরা তাঁদেরও অলিন্দে, বড়জোর বাতায়নে,
তা নিয়ে একটা স্বরচিত কবিতা হয়, নারীজন্ম সার্থক হয় না; তাই,
এখনই শিশুর মত ঘুম চাই।
সিন্ধুনদের ওপর দিয়ে যে বক বাতাসে ভাসার স্বপ্ন দেখেছিল,
তারও বন্ধুত্ব করার সাধ আমার এঁদো গলির সেই এক-ঠ্যাং ভাঙা কাকের সাথে,
নিমেষে যৌনমূর্তি, মৌনমূর্তির রূপ পরিগ্রহ করে আমায় আরও জাগাতে চায়,
এইমাত্র শিশুর মত ঘুম চাই।
বোকা চাদর
যে সব নারীর দেহ আরও গলে, আরো খানিকটা পচে গেছে,
তাদের ফোঁপানি চাপা দিই অনির্মিত বোকা চাদর দিয়ে,
ওদের মধ্যপ্রদেশ ফুলে ঢোল, হাত-পা-আঙুলে বেনামা নির্দেশ,
দূরবীন রেখো বন্ধু হাতে,
আমরা সুরক্ষার দুর্গ থেকে ওদের শোভাযাত্রা দেখব,
বেমক্কায় জ্ঞান-ফুল ছিঁড়ে রেখে দেবো,
টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দেবো ওপর থেকে,
তবে সাথে রাখব নিশ্চিন্ত নিরাপদ দুরত্ব।
আর যে সব নারীর দেহ অবাক কংকাল,
আমোদের ঠাসবুনুনি – ওদের এভাবে পাওয়া সমীচীন নয়,
নাকে কাপড় চাপা দিয়ে চাইলে খুঁজে দেখতেই পারো;
ওই নারীদেহের মজ্জাহীন হাড়ের ভিতর ভালোবাসা – গুপ্তধন।
No comments:
Post a Comment