Saturday 25 December 2021

পৌষালি সংখ্যা || মধুপর্ণা বসু

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা || মধুপর্ণা বসু


রঙ

চোখের ভেতরে যে মন অন্য কিছু দেখে,
কল্পনায় রঙেরা অনুভূতি হয়ে আসে
রক্তের মতো উষ্ণ, সবুজের মতো পেলব,
নীলের অতল গভীর, হলুদ যেন আনমনা,
             কল্পনার তরঙ্গে আবদ্ধ রঙেরা ভালোবেসে ভাবনার রাজস্থলী দূর্গ রচনা করে।
মালভূমির বালুচরে সাহসী বানজারা মেয়েদের বিচিত্র ঘাঘরার মতো কুশলী তার ভঙ্গিমা, 
এদের পা মাটিতে পড়েনা, এরা নির্লিপ্ত পুরুষতন্ত্রের বুকে নভশ্চর মোহিনীমায়া,
আমার মাটিতে আমি রঙ দেখিনা।
তারা পুরনো সাদা কালো ছবিতে আদরের রঙ ভরে দিয়ে মাঝরাতের স্বপ্ন হয়ে দিকশূন্যপুরে রওনা হয়েছে কবেই...
এখন বসন্ত আসে কলুষ গ্রীষ্ম অথবা খরার বুকে কয়েক ফোঁটা জল,
উৎসবও তিলেতিলে বলে দিয়ে যায় ঝরা মল্লিকার না বলা কথা , শুকনো কৃষ্ণচূড়ায় মৃত্যুর বাসি খবর,আর গভীর হয়ে গেড়ে বসা সংস্কারের ক্ষতচিহ্ন। 

প্রাগৈতিহাসিক 

কিছু গোপন ইচ্ছে মাথার চেতনায় জমাট লাল।
যেন বোধের মধ্যে খুঁজে ফিরি অনভ্যস্ত কিছু সুযোগ,
আজ স্বেচ্ছায় নিজের আর্য পরিচয় থেকে
শেকল ভেঙে বেরিয়ে পড়ি,
চলে আসি নিভৃত পল্লীর আদিম যুগে,
আমিও অশিষ্ট অনার্য নারী আগুন তেজে
ঘরভাঙা ত্যাগী, আর তুমিও বেশ মরুবাসী
যাযাবর পুরুষ, বীর্যে তীব্র গতি, এসে বসেছি। 
প্রাচীন পঞ্চনদের নিরাবরণ সভ্যতায়, রাত্রি বড় আগ্রাসী..
কিছু চিঙ্গারির মতো গোপনীয় কাম আজ
জেগে উঠুক, এই মাদক দ্রাবিড় রাতে।
সভ্যতার প্রথম আলোর মতো সজাগ থাক
ইতিহাসের প্রেম, নিয়নের বাতি নিভে যাক,
মন্ত্রঃপুত শরীরী গন্ধে আজ জিতে যাক
আমাদের নৈসর্গিক অনার্য ইচ্ছেরা। 


গর্ভধারণ 

অসহায় ভুলেদের দলে চিরকাল
আমি প্রথম সারিতেই।

বেওয়ারিশ স্থাবর মন,
লুকিয়ে রাখা সাবেকী
আদর ঘেন্না লজ্জা আর কিছু মায়া
বাঁধন থেকে মুক্তি চায়। 

আমিও ব্যারিকেড তুলে নিলাম
খাঁচা থেকে উড়িয়ে দিলাম
বন্দী প্রজাপতি..
                          নগ্ন কান্না সব
চোখের সাথে সহবাস সেরে
বুক বেয়ে নেমে যাক
                        জন্ম গন্ধ মাখা
মৃত্তিকার গভীর জরায়ুতে।

আর একটা নারী গাছ জন্ম নিক। 



পরের জন্মে

দুই পড়শি দেশের মতো
পাশাপাশি আছি, কানের লতি
ছুঁয়ে থাকে জন্মান্তর বিশ্বাস;
হয়েতো অনেক কষ্টে পাওয়া
আশ্বাস দুধ সাগর চোখের জল।
ভুলে গেলেও চলে, কিন্তু তবুও
শেষ কামরায় মুখোমুখি বসা,
জানলায় খুব দ্রুত সরে যায় মিনিট সেকেন্ড,
             তারপর লম্বা একটা বিরহের শতক..
অচেনা কোন শহরে হঠাৎ সেই মুখ,
চোখে চোখ রেখে যেন ভীষণ
জানতে চায়, 'কি গো? ভালোবাসো?'
আবার তিনটে নিস্তরঙ্গ যুগের পরেও
শেষ কামরায় সময়ের মেশিনে
পিছু হেঁটে যায় মন আর একবার,
'ভালোবাসো তো?'


ইথারের তরঙ্গে

সে শুধু ডানা মেলে উড়তে পারে, মুক্তি পছন্দ।
তাকে জিজ্ঞেস করেছি কতবার এই অল্প স্থায়ী
ওড়ার স্বপ্নের বুদবুদ উসকে দিলে কি হয়?
ইথারে উত্তর দিয়ে যায়, 'মুহূর্তের ভালোবাসা'।
জঙ্গি হামলায় নিহত মেঘ, আহত বৃষ্টিরা তারপর
নীচে নেমে আসে ত্রাণ শিবিরে।
রক্তাক্ত শবের হাতের মুঠোয় দেখি হলুদ পাতা,
শুকনো ছাতিমের মরে যাওয়া গন্ধ,
আর বিষের বাঁশিতে আগামী যুদ্ধ প্রস্তুতি।
এক ফোঁটা শিশির অভাবে অপুষ্ট আমের মুকুল।
আর শুনতে পাচ্ছি চৈতালী হাওয়ায় বাজছে
মারণের দামামা, ইথারে মিশে গেছে নীরব কান্নারা।  



No comments:

Post a Comment