Saturday, 8 August 2020

| জয়িতা দে সরকার | ৮ই আগস্ট |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












জয়িতা দে সরকার
নিরুদ্দেশ-

ছেলেটির কোন ঘরবাড়ি নেই 
নেই চৌকাঠে ফেরার তাগিদ  
চলন্ত ট্রেনের পাশাপাশি হেঁটে গেছে  
অনাদরে ডুবে যাওয়া চওড়া বুক

মেঘলা চোখ বৃষ্টি ভালোবেসে 
ছেঁড়া প্যান্টে ধুলোবালি 
ঠোঁটের নীচে ঝুলে আছে জন্মদাগ 
ঘোড়াদের পাশাপাশি ছুটে গেছে  
অসুখের গর্তে একজোড়া গভীর চোখ 


ছেলেটির প্রিয় মাউথ অর্গান হারিয়ে গেছে নিরুদ্দেশের ঘন্টাখানেক আগে


পথিক জন্ম 

শীত সকাল,পথ চলা শুরু 
চলাচল থামে একদিন
শরীর মেখে নেয় আগুন রঙের আতর গন্ধ

প্রতিটা দৃশ্যে আঙুলের ছোপ স্পষ্ট
কাঁধে রাখা হাত সময়ের উচ্চতা বলে 

নতুন কাঁথা,কাজল লতা,গামলা,ঝিনুক বাটি
পিঠ ব্যাগ,চক-স্লেট,বই-খাতা,রঙ-তুলি,
সাইকেল শব্দে বেজে ওঠে রিংটোন

ঋতুস্রাব,প্রথম চুমু,চিঠির ভাঁজে বসন্ত দিশেহারা
একা দাঁড়িয়ে থাকা ঠিকানা হারিয়ে

ক্ষীণ হয়ে যায় হ্যারিকেন আলো জোনাকি চোখ ফ্যালফ্যাল চেয়ে থাকি,যেভাবে চাঁদ 

মেঘের গায়ে সিঁদুর রাত ফুঁড়ে উঠে আসা 
আহ্লাদ গায়ে লাগে

এভাবেই গায়ে গায়ে চারা গাছ ঘন হয়,বৃক্ষ হয়
তুমি ছায়া দিলে আমি পথিক জন্ম নেবো বারবার 


পিছুটান

সমস্ত অসুখ যত্ন করে তুলে রেখেছো 
ধুলো জমবে বলে বারবার স্নানঘরে যাও

একলা ছুঁয়ে গেলে শহরের চৌমাথা
সাদা রুমালে কান্নার আঁকিবুকি 
বৃষ্টি নামার আগেই চোখ ভেজা গন্ধ  
বালি ঘড়ি এখানে নামতার সুরে বাজে

দশ বাই বারো ঘরের উষ্ণতা চব্বিশ
তুলসী মঞ্চ উঠে এসেছে সিঁড়ি বেয়ে
শীতলপাটি রঙ বদলে শীতকালীন কার্পেট
ঘরোয়া কাজে জমেছে বাড়তি মেদ 

ভোলা হয়নি সেইসব সাদাকালো সিরিজ
এইভাবে খাতা ভরে ওঠে অসমাপ্ত কবিতায়


ভাইরাস
ধীর পায়ে উঠছে শরীরে
টুঁটি চেপে ধরছে অজগর
কবরের গায়ে লেখা কো-মর্বিডিটি
তর্জনীর ইঙ্গিতে ভাঙাচোরা হৃদপিণ্ডখানি
মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা কালশিটে
নীচে নেমেছে শরীর বেয়ে
চুল্লিতে ঢুকে যাওয়ার আগে হেসেছিলাম
ভেসে যাওয়া অস্থিতে শোকের টিপসই


শূন্যস্থান

আয়নায় নিজেকে দেখলে শূন্য মনে হয়! 

মায়ের মতো গভীর চোখ জোড়া
বাবার মতো চওড়া কপাল

অমুকের মতো ধৈর্য আমার নেই
রক্তে মিশে আছে জেনেটিক রাগ

আমার শূণ্য বৃত্তকে সম্পূর্ণ করে 
আসবাবপত্রে লেগে থাকা ছোপ

মঞ্চ ছাড়ার আগে 
নিজেকে সফল শূণ্যস্থান মনে হয়! 

1 comment:

  1. খুব ভালো লেখা।
    ভাব ও প্রকাশ গভীর ও সমন্বয়পূর্ণ।
    শুভেচ্ছা।

    ReplyDelete