Sunday, 9 August 2020

| এবাদুল হক | ৯ই আগস্ট |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












এবাদুল হক 

রোমান্থন 

অবহেলার উত্তর আর কী হতে পারে আর কী একটু ভিতরে যাওয়া আরও কিছুক্ষণ রক্তের মধ‍্যে ডুবে থাকা রবীন্দ্রনাথের গান ভালোবাসার উত্তর আর কী হতে পারে আরও একটু জ্বলন্ত হাওয়া আরও কিছুক্ষণ অগ্নিগাহনের মত্ততা অতৃপ্তি একদণ্ড অম্লান ঘৃণার উত্তর আমি জানতাম যখন শ্রাবণের চোখে জল এনে তোমার পবিত্রতা তোমার কৌমার্যের বিপণ্ণতা পৃথিবীকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল আরেক পৃথিবীর মুখোমুখি আরেক প্রবল হাওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছিল একটি ক্ষীণ ঝড় দুমড়ে গিয়েছিল কালোছাতা 

তাহলে কে বলে তোমাকে ভালোবাসা ও অবহেলার পরিসীমা কে চিনিয়ে দেবে তোমাকে ভালোবাসার গাছে ঘৃণার গোপন পাতাটি কখনও এই তিনজন হাতে হাত রেখে হাঁটে বাতাসে ছড়িয়ে রেশম তুলোর প্রতিমা ভঙ্গুর অথবা দৃদৃঢ় অস্পষ্টতাকে ধরে  আনতে এদের জুটি নেই একটি অথচ তারা তোমাকে কখনই বলে দেবেনা কোথায় থামতে হয় কোন মুহূর্তে কোনখানে লুকানো ছিল গোপন তন্ত্রী তোমার শুধু রোমান্থনের বিস্ময়।


শবের সঙ্গে পানাহার

ঘুম ভেঙে দেখি কেউ কেউ  গেছে চলে 
স্তব্ধ রাতের বিনুনি খুলে জাহাজ চলে কি ভেসে 
শবের সঙ্গে পানাহার সেরে গতরাত্রির নেশা 
সকালে ভাবছে কেন বিবমিষা কেন পবিত্র দ্বার 
জলের জন্য করে হাহাকার! হায় ভালবাসা 
মাছির ঘৃণ্য ওড়াউড়ি যেন সইতে পারে না আর।

যারা চলে গেছে রক্তনদীর ধারে 
গোলাপের ক্ষেতে চলে উৎসব জোড়ায় জোড়ায় বসে 
যায়নি যারা ঘরের কোণে রক্তবমি করে 
দ্বীপান্তরে অথচ দ্বীপ নেই বেঁচে আছে যেন বিষহীন বিষে। 

শান্তি আমি ছড়িয়ে দিয়েছি তোমার অমৃতলোকে 
অনুপস্থিতির সৌন্দর্য সৌরভ রেশমে দিয়েছি ঢেকে 
এই চলে যাওয়া, এই থেকে যাওয়া এই ক্লেশ আমরণ। 

মানুষেরা আজও নদীর কিনারে চমকে ওঠে কি আগুন দেখে।


হার্ডডিস্কের মেমরি

আমি আর নির্জনতর ঘর, টিমটিম হ‍্যারিকেন
খাতা কলম চিন্তাপ্রসূত অক্ষরগুলো 
একের পর এক খুঁজে চলেছে 
গ্রীষ্মের দুপুরে সাইকেলিং করবার সময় 
বনবন শব্দে যে অক্ষরগুলো আমার হার্ডডিস্কে ঢুকেছিল
সেগুলো এখন বেপাত্তা।
অথচ আমার জানা ছিল মেমরি বোতাম 
টিপলেই সব উত্তর পাওয়া যাবে 
অথচ আমার মেমরি ফেল করছে বারবার
কেন হারিয়ে যাচ্ছে সব আমার আজও অজানা।

ডেস্কের চওড়া পর্দা জুড়ে যে অক্ষরগুলো 
খানখান অদ্ভুতকিমাকার অচেনা মুখ 
তারা বলেছিল আমাকে নাকি ওর আলাকবর্তিকা দেখাবে 
দেখাবে আট প্রহর কিংবা তিন প্রহরের বিল।

আমি তিন প্রহর দেখবো কেন? আট প্রহর দেখার সাধ আমার।

প্রথম প্রহর : মিথুন সোহাগের রসমস শৃঙ্খল ভঙ্গিমা
দ্বিতীয় প্রহর : কার্গিল যোদ্ধাদের যুদ্ধ কসরত।
তৃতীয় প্রহর : পাথর পেটে যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত।
চতুর্থ প্রহর : ঘোড়ার রেসে জিততে হলে গতি নির্ণয়ের মধুর সংকেত।
পাঁচ প্রহর : নির্জনতম ঘরে শব্দেরা কেমন করে আসে কেমন করে ধরা দেয়।
ষষ্ঠ প্রহর : নদী ও সাগর পাড় ভাঙ্গনের পার্থক্য।
সপ্তম প্রহর : চামেলি ফুলের জন্মবৃত্তান্তের পূর্ভাবাস।
অষ্টম প্রহর : শ্রাবন নিয়ে যারা মিথ্যার বেসাতি করে তাদের চালাকি চটুলতা।

এজন্মে প্রহর গুলোর অর্থ বোঝা হল না আর।

ভেঙে যাচ্ছে সাধ ভেঙে পড়ছে স্বপ্নের ইমারত।

এখন আমি সা-রে-গা-ভাঁজতে ভাঁজতে 
তেপান্তরের বিলে গিয়ে মাছ ধরবো? 
নাকি খাদিম হাওয়াই পরে সকলের সাথী হয়ে 
রক্তবীজ বুনতে বুনতে একগঙ্গা আকাশে ভেসে বেড়াবো? 
আমার তো কিছুই জানা নেই।

মন খারাপের সময় 

মন খারাপের দিনগুলি আমার জুড়ে বসে
মন তো একটাই ; মন্দগুলির সংখ‍্যা গণনাধীন নয়
জানালার ফাঁকফোকরে শাদা কাশফুল নাগরদোলা
ঘরের ভিতর এসেন্স গন্ধ নতুন কাপড় রকমারি
অথচ অন্ধ চোখের উপর ভিড় জমিয়েছে কালোমেঘ
পানসি নৌকায় ভেসে যায় হিরণ‍্যবুক, চিন্তান্বিত হাতে কম্পন
অবেলায় স্রোতহীন সময়, তিলেক দণ্ড এখন এখানে নয়।

তাহলে একান্ত আমার আমি কোথায় যাবে?
কোনো সুদূরপ্রসারী মায়াবী হলুদ হাত ডেকেছে কী?
বেকুব সময় সুদূর বোঝে না অনন্তকালও নয়
এখন আমি দূরবীণ চোখে দেখি নিস্তেজ আঁধার।




No comments:

Post a Comment