|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||
কৌশিক দে-র ধারাবাহিক উপন্যাস
আগামী কাল আবার পড়বো----
কৌশিক দে-র ধারাবাহিক উপন্যাস
আসাযাওয়া____
পর্ব :১
রাতের পৃথিবী দেখার মজাই আলাদা। কোনো এক কবি বলে গেছেন, 'পৃথিবীর যদি আসল সৌন্দর্য দেখতে হয় তবে রাতের পৃথিবী দেখো।'
আমি অবশ্য রাতের পৃথিবী দেখার সাথে সাথে কোন বাড়ির দরজায় কোন তালা লেগে আছে সেটাও দেখি। আর এরকম আমি করে আসছি বিগত পাঁচ বছর ধরে। আগে আমি কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়াতাম তবে ওখানে এখন পুলিশের টহল অনেক বেশি তাই আমার পছন্দ এখন মফঃস্বলের রাস্তা। দেখতে শুনতে বেশ ভালো বলে হঠাৎ পুলিশের সামনে পড়লে তেমন অসুবিধা হয় না। কথায় আছে, যে চোর তার শরীর লুকিয়ে রাখে সমাজের থেকে সে সবচেয়ে বেশি সাফল্য লাভ করে। আমিও এই সাফল্য লাভ করে আসছি বিগত পাঁচ বছর ধরে।
শহুরে ফ্ল্যাটবাড়ি আমার ভালো লাগেনা। সেখানে প্রধান গেট থেকে শুরু করে শিরা, উপশিরার মতো দরজা। তার উপর ইন্টারলক্ সিস্টেম। এর থেকে কথিত কলকাতার বাইরের বাড়িগুলো ভাল। কারন এখানে বাড়ির দরজায় তালা ঝোলে। বাড়ির মালিক রাতে দরজায় তালা দিয়ে ভাবে সে অত্যন্ত নিরাপদ। কারণ তালা কোম্পানিগুলো বলে থাকে তাদের তালা হল ' ইউনিভার্সাল কি 'বিশিষ্ট। অর্থাৎ সেই তালা খোলার জন্য যে চাবি তা এই পৃথিবী তথা মহাবিশ্বে একটাই তৈরী হয়েছে। কিন্তু বেচারারা জানে না যে আমার মতো ডাকাতরা চাবি নিয়ে বেশি মাথা ঘামায় না। আমরা যেটা করি সেটা হল, তালার হাতলে অ্যাসিড ফেলে তা গলিয়ে দিই। একে বলে বাইপাস মেথড। এই বিদ্যা আমায় শিখিয়েছিল প্রেডিসেন্সি জেলে আমার উস্তাদ রাখিবুল খাঁ। এই অ্যাসিডের নাম কি আমি জানি না। তবে এই অ্যাসিড তালার হাতলে পড়লে মাখনের মতো তালা গলে যায়। যদিও এই অ্যাসিডের নাম জানার অনেক চেষ্টাই আমি করেছিলাম।
পার্কসার্কাসের রেললাইনের ঝুপড়িতে একডাকে চেনে আসিফ কালিক’কে অ্যাসিড দাদা বলে। এর কারণ তার কাছেই একমাত্র এই অ্যাসিড পাওয়া যায়। যার দাম এক লিটার আড়াই হাজার টাকা। আসিফভাইকে প্রশ্ন করেছিলাম, তবে সে উত্তর দয়েছিল, ভাইজান, নাম জানি না। খিদিরপুর ডকে মাল আসে। আমি নিয়ে আসি। আমিও এর নাম কোনোদিন জানতে চাইনি। তবে এখন এই অ্যাসিডের কাস্টমার অনেক।
এরপর থেকে আমি আসিফের কাছে যতবার গেছি সে কখনও ‘নাইট্রিক’, কখনও ‘সালফিউরিক’, আবার একবার বললো এই অ্যাসিড আমেরিকার এক বৈজ্ঞানিক গুপ্তভাবে তৈরী করেছে। তার নাম অনুসারে এই অ্যাসিডের নাম ‘আর্মাড’। মানুষ যখন অন্তরীক্ষে যায় রকেটে চেপে তখন তাদের এই অ্যাসিড দেওয়া হয়। প্রয়োজনে তারা ইস্পাতের মতো ধাতুও এই অ্যাসিড দিয়ে গলিয়ে দিতে পারে।
আমি আজ ঘুরলাম বাগুইহাটির অস্বীনিনগর অঞ্চলে। বেশ কয়েকটি বাড়ি চিহ্নিত করে রাখলাম। বেশিরভাগ বাড়িতেই একটা করে তালা ঝুলছে। কিন্তু এরপর আমার এই বাড়িগুলোতে নজর রাখতে হবে। বাড়িতে কজন থাকে। কুকুর আছে কি না, বাড়ির লোক ব্যবসা করে নাকি চাকরি। এরপর আমায় আমার গ্রুপকে খবর দিতে হবে। আমি প্রতিটি অপরেশনে নতুন ছেলেদের নিয়ে কাজ করি। আমার গ্রুপে থাকে আমি ছাড়া আর দু’জন। আমি ছেলে তুলি চাঁদনি বা পার্কসার্কাস থেকে। গ্রুপে বেশি ছেলে নিলে মুস্কিল। এতে সমস্যা বাড়ে। অধিক সন্ন্যাসিতে গাজন নষ্টের মতো ব্যাপার।
আগামী কাল আবার পড়বো----
No comments:
Post a Comment