|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||
আজ মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকার "আপনার সাথে রবিবার ৫টি কথা"-য় থাকছেন কামরুল বাহার আরিফ রাজশাহী,বাংলাদেশ। কবি বাংলাদেশের, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক এবং নিজেকে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
--- নমস্কার অভিজিৎ দা। ভালো আছেন তো?
---- ভালো আছি দাদা।
আমি মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকায় নতুন ১টা বিষয় প্রতি সপ্তাহে প্রকাশ করছি " আপনার সাথে বরিবারে ৫টি কথা "। এই পর্বে আমি আপনার সাথে কথা বলার জন্য এসেছি। আপনার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের এবং এই ই-পত্রিকাকে ও আপনার কবিতার পাঠকদের জন্য আপনার কথাগুলো বলেন।
কেমন আছেন আপনি এবং আপনারা এই সংকটের কালে?
---- ধন্যবাদ আপনাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আসলে ভালো থাকা যায় না। তারপরও আশা নিয়ে আছি। সুন্দর একটা পৃথিবী নিশ্চয় আসবে।
✪ দাদা আপনিতো দুই বাংলার খুব পরিচিত। আপনার সম্পর্কে ২ চার কথা বলুন আমাদের পত্রিকা এবং আপনার পাঠকদের।
_____ খুব পরিচিত বলবো না। তবে অনেকের ভালোবাসায় আমি ঋণি। এই ভালোবাসা আমার প্রেরণা। নিজের সম্পর্কে বলতে গেলে বলবো, আমি নিতান্তই এক ক্ষুদ্র মানুষ। মানুষ হওয়ার প্রচেষ্টায় সাধনা করে যাচ্ছি। আর আমি যা বিশ্বাস করি তা-ই করি। তা যেমন জীবন যাপনে তেমনি সাহিত্যকর্মেও। কর্মক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক হিসেবে রত আছি। মূলতঃ নিজেকে একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
১) আপনি কবে থেকে কবিতা লিখছেন এবং সাহিত্যের সাথে যুক্ত?
➤ কবিতা এবং সাহিত্যের সাথে সংযুক্ত ছোটবেলা থেকেই। বাবা কবিতা লিখতেন। মা ছিলেন ভালো পাঠক। সে পারিবারিক সূত্র ধরেই সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক। তবে লেখালেখি মূলতঃ নব্বই দশকের শেষভাগে।
২) আপনি ক্যানো কবিতা লেখেন? কখনো যদি কবিতায় না আসতেন অবসর সময় কিভাবে কাটাতেন?
➤ কবিতার প্রতি ভালোবাসা থেকেই কবিতা লেখা। কবিতা যেভাবে ভাবতে শেখায় সাহিত্যের অন্যকোনো ক্ষেত্রে তা নয়। এক সময় কবিতার প্রেমে পড়লাম। কবিতা লিখতাম। লিখতে লিখতে এবং পড়তে পড়তেই তার প্রতি ভাব। ভাব থেকে সাধনা। পরে বুঝেছি কবিতা শেষ পর্যন্ত সাধনা। সাধনা থেকে সৃষ্টি কবিতা।
কবিতা না লিখলে রাজনীতিতে যুক্ত হতাম হয়তো। কারণ যৌবনের পুরো সময়টা অসাম্প্রদায়িক চিন্তা ও সমাজ বদলের চিন্তা থেকে সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকে স্বৈরাচার বিরোধী রাজনীতির সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। আর সেটাও না করলে ভ্রমণকারীও হতে পারতাম।
৩) দাদা এইসময়ে আপনার কাছে কেমন ধরনের কবিতা বেশি প্রাধান্য পাবে? কারণ বাংলাদেশে প্রচুর তরুণ কবি কবিতা লিখছেন। কাদের কবিতা এইসময়কার বলে আপনি মনে করছেন, [কারণ সকলের নাম তো নেওয়া সম্ভব নয়।তবুও তদের মধ্যে উল্লেখ্য ] মানে শব্দ, গঠনগত এমনকি বলার ভঙ্গির দিক দিয়ে।
➤ কবিতা কেমন ধরণের হবে এমন নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না। কবির মধ্যে কখন কোন ভাব নাড়া দিবে কবি নিজেও জানে না। তবে হ্যাঁ কখনো কখনো কবিকে সময়, পরিবেশ, প্রকৃতি, প্রেম, রাজনীতি, মানবিকতা নাড়া দিয়ে যায়, ছুঁয়ে যায়।
তবে কবিতার বাঁক বদল নিয়ত ঘটছে সমযের সাথে। তাই যে কবিতা আমাকে বোধনে পূর্ণ করতে পারে, আন্দোলিত বা শিহরিত করতে পারে এমন কবিতাই আমার কাছে প্রাধান্য পাবে।
দ্বিতীয় প্রশ্নে বলবো, বাংলাদেশটা আসলে প্রকৃতিগতভাবে কবিতার ভূমি। এর রূপ লাবণ্য, সুর-ছন্দ এ অঞ্চলের মানুষকে কাব্যিকতায় ডুবিয়ে ভাসিয়ে রাখে। সে হিসেবে তরুণদের মধ্যে এ কাব্যনুভবতা খুব ছুঁয়ে যায়। সেইসব তরুণেরা বেশ লিখছে। নতুন নতুন ভাবনা, কবিতার গড়ন, আধুনিক প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে তাদের নতুন স্বরও সৃষ্টি হচ্ছে। নাম বলা খুব কঠিন তবু দু-চারজনের নাম বলতেই পারি যেমন-- কবি অরবিন্দ চক্রবর্তী, যাকির যাফরান, শামীম হোসেন, কুমার দীপ, আশরাফ জুয়েল, আনিফ রুবেদ, মুজাহিদ আহমেদ সুমন সামস, তুষার প্রসূনসহ বেশ কিছু তরুণেরা যারা নিজস্ব একটা স্বর আনতে পেরেছে।
৪) আপনি তো পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) অনেক কবির কবিতাও পড়েছেন এবং এখনো পড়ছেন।আপনার কী মনে হয় বাংলাদেশের লেখার ধরণ এবং পশ্চিমবঙ্গের লেখার ধরণের মধ্যে ফারাক খুব বেশি বা সমসাময়িক?
➤ এর আগেই বলেছি প্রকৃতিগতভাবে বাংলাদেশ অনন্যা সৌন্দর্যের দেশ। এর নদী-সমুদ্র, সবুজ-শ্যামলিমা রূপ, জীবন চলাচল, রাজনীতি এমনকি ভাবগত দর্শনের কিছু দিকও এ দেশের কবিদেরকে প্রভাবিত করে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের কবিতার সাথে কিছু পার্থক্য আছেই। যদিও তা খুব সুক্ষ্ম। তবে ইদানিং দুই দেশের কবিদের যাতায়াত, যোগাযোগ, পঠন-পাঠনে সেই পার্থক্য আরো কমে আসছে। যেনো একই সুর বাজছে করিতায়। যা বাংলা কবিতাকে একসূত্রে গাথতে পারছে। আর মজার বিষয় হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, মাইকেল যখন দুই দেশেরই কবি হয়ে যান তখন পার্থক্য তো শুধু কাঁটাতারে সীমাবদ্ধ থাকে, মননে নয়।
৫) পোস্টমডার্ন কবিতা বাংলাদেশে কতোটা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে? এখন কী তরুণ প্রজন্ম পোস্টমডার্ন কবিতা লেখেন নাকি অন্য কোনো ইজম বা দর্শণের প্রতি আকৃষ্ট বলে আপনার মনে হয়?
➤ পোস্টমডার্ন শব্দটা নিয়ে আমার ভিতরে একটা দ্বন্দ্ব আছে। আমি মডার্ন শব্দে বিশ্বাস করি। আধুনিকার উপরে আবার কিসের উত্তরাধুনিকতা? আধুনিকতাই সার্বজনিন, সর্বকালের। আধুনিকতা নিয়ত সুন্দর পরিবর্তন। তাই কবিতার পরিবর্তনটা যদি সুন্দর ধারাবাহিক পরম্পরায় হয় তবে তাকে স্বাগত জানাতে হয় না এমনিতেই নিজের হয়ে যায়। হ্যাঁ কিছু তরুণ আধুনিকতাকেই ধারণ না করে উত্তরাধুনিকতার নামে খই ফোটাচ্ছেন। এরা শেষ পর্যন্ত মূলধারাতেই ফিরছে না হলে কবিতা থেকে ছিটকে যাচ্ছে। ইজম বা দর্শন থাকা তো দোষের নয়, সেখানে আধুনিক চিন্তার প্রসার ঘটাতেই পারে। তবে শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নয়।
✪ আপনি কী সরাসরি কোনো পত্রিকার সাথে যুক্ত।তাহলে এই জার্নিটা একটু share করুন ---
আমার সম্পাদনায় ২০০০ সাল থেকে "মৃদঙ্গ" নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। পাশাপাশি কবিকুঞ্জ, সমযের কাছে, বিবক্ষাসহ বহু পত্রিকার সম্পাদনা করেছি বিভিন্ন সময়ে।
✪ আপনার কবিতাকে আমরা কীভাবে শনাক্ত করবো____
এটা নিজে কিভাবে বলবো? পাঠকরাই বলবেন। তবে ঠিক, আমি ও আমার কবিতা শিকড়ের বাইরে নয়, পরম্পরা থেকে উঠে আসবার চেষ্টা করেছি। আর অবশ্যই আধুনিক মানবিক মানুষ হিসেবে সে ছাপ তুলে ধরতে চেষ্টা করি কবিতার উপস্থাপনে।
✪ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ --
১. সূর্যের ম্যাপ ছুঁয়ে (২০০৮),
২. গোধূলির পাণ্ডু নীলিমায় (২০১২),
৩. কে ডাকে আগুনপথে (২০১৩),
৪. বর্ষা তো জলের বর্ণ (২০১৫),
৫. রাঙারোদ ছুঁয়েছে পৌষের শরীর (২০১৫), দ্বিতীয় সংস্করণ (২০১৬, বইমেলা),
৬. প্রেমবৃত্তে জল ও নারী (২০১৭),
৭. কে ওড়ে নদীপারের নায়ে (২০১৭),
৮. পাখিটি আর জলে নামেনি (২০১৯),
৯. পাতার ওপর লেখা আছে আমার কিছু (২০১৯)
✪✪ আপনার ২টি প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত কবিতা দিন।
মৃত জানালায়
ধরে নাও, মৃত কোনো জানালায় এই বর্ষায়
একদিন উঁকি দিয়ে চলে যাবো
ধরে নাও, দেখে নিবে দোটানার চোখে, খুব আচম্বিতে
ব্যগ্র-ব্যকুলতায়, দেহমন দেখিবে অতীত, নাচঘর মুদ্রায়।
বর্ষার ডোবাপথ হারিয়েছে পথে পথে অজানার দুরাশার মনে
তবুও খুঁজিছো তুমি, জানালার এই পাশে জলে ডোবাপথে,
পথহীন পথে।
ধরে নাও, ভিজিতেছি আমি। ভিজিতেছে মরীচিকা দূরপথ.
বর্ষার ভেজাজলে ডুবে যাওয়া পথহীন পথ।
তুমিও ডুবিছো দেখি, সবুজের পথ ধরে কালের পিছে
আজ যা সাদা-কালো বিরহ মায়ায়।
কোন পথে চলেছিলে, কোন পথে হেঁটেছিলে-- পথের শাখায়!
কেনো চোখ বিঁধে যায় আজ--
বোবামনে খেয়ালে বে-খেয়ালে এই মৃত জানালায়!
অনধিকার
বড় বেশি গভীরে যেতে নেই।
হাঁটতে হাঁটতে বড়জোর বেলাভূম পার হওয়া যায়;
জেনো, দ্রাঘিমা পার হতে নেই।
বেশি কিছু লিখতে নেই। লিখতে লিখতে পাতা পেরুতেও নেই
হাতের দু’একটি রেখায় একে-বেঁকে নিতে পারো চোখ;
তার বেশি নয়। জ্যোতিষবিদ্যায় রেখো ভয়।
পূজার প্রসূন থাক দেবীর বেদীতে;
মাথা খুঁটে মরো না সে সমাধিতে।
বেশি মাখামাখি ভালো নয় মোটেও
জলটুকু জল থাক শুধু; মুদ্রার ওপারে বাজে ভুলের নিক্কন ধু ধু
বেশি গভীরে যায় না আলো; জেনো, আলোর গভীরেও আঁধার কালো
ভালো বাসতে বাসতে বড়জোর মরে যাওয়া যায়
বেঁচে থেকে থেকে কখনো ভালোবাসা হয় না পূরণ
খুব বেশি হলে মৃত্যু মৃত্যু ছায়ায় দ্রাঘিমায় পৌছানো যায়।
ধন্যবাদ কামরুল বাহার আরিফ মহাশয়কে। উনি ওনার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের মাধ্যমে ওনার পাঠকদের কিছু কথা এবং অনুভব share করলেন।মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকার তরফ থেকে ওনাকে অনেক শুভকামনা, শুভেচ্ছা এবং অশেষ ভালবাসা রইলো। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
আজ মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকার "আপনার সাথে রবিবার ৫টি কথা"-য় থাকছেন কামরুল বাহার আরিফ রাজশাহী,বাংলাদেশ। কবি বাংলাদেশের, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক এবং নিজেকে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
নমস্কার কামরুল দা।
--- নমস্কার অভিজিৎ দা। ভালো আছেন তো?
---- ভালো আছি দাদা।
আমি মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকায় নতুন ১টা বিষয় প্রতি সপ্তাহে প্রকাশ করছি " আপনার সাথে বরিবারে ৫টি কথা "। এই পর্বে আমি আপনার সাথে কথা বলার জন্য এসেছি। আপনার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের এবং এই ই-পত্রিকাকে ও আপনার কবিতার পাঠকদের জন্য আপনার কথাগুলো বলেন।
কেমন আছেন আপনি এবং আপনারা এই সংকটের কালে?
---- ধন্যবাদ আপনাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আসলে ভালো থাকা যায় না। তারপরও আশা নিয়ে আছি। সুন্দর একটা পৃথিবী নিশ্চয় আসবে।
✪ দাদা আপনিতো দুই বাংলার খুব পরিচিত। আপনার সম্পর্কে ২ চার কথা বলুন আমাদের পত্রিকা এবং আপনার পাঠকদের।
_____ খুব পরিচিত বলবো না। তবে অনেকের ভালোবাসায় আমি ঋণি। এই ভালোবাসা আমার প্রেরণা। নিজের সম্পর্কে বলতে গেলে বলবো, আমি নিতান্তই এক ক্ষুদ্র মানুষ। মানুষ হওয়ার প্রচেষ্টায় সাধনা করে যাচ্ছি। আর আমি যা বিশ্বাস করি তা-ই করি। তা যেমন জীবন যাপনে তেমনি সাহিত্যকর্মেও। কর্মক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক হিসেবে রত আছি। মূলতঃ নিজেকে একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
১) আপনি কবে থেকে কবিতা লিখছেন এবং সাহিত্যের সাথে যুক্ত?
➤ কবিতা এবং সাহিত্যের সাথে সংযুক্ত ছোটবেলা থেকেই। বাবা কবিতা লিখতেন। মা ছিলেন ভালো পাঠক। সে পারিবারিক সূত্র ধরেই সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক। তবে লেখালেখি মূলতঃ নব্বই দশকের শেষভাগে।
২) আপনি ক্যানো কবিতা লেখেন? কখনো যদি কবিতায় না আসতেন অবসর সময় কিভাবে কাটাতেন?
➤ কবিতার প্রতি ভালোবাসা থেকেই কবিতা লেখা। কবিতা যেভাবে ভাবতে শেখায় সাহিত্যের অন্যকোনো ক্ষেত্রে তা নয়। এক সময় কবিতার প্রেমে পড়লাম। কবিতা লিখতাম। লিখতে লিখতে এবং পড়তে পড়তেই তার প্রতি ভাব। ভাব থেকে সাধনা। পরে বুঝেছি কবিতা শেষ পর্যন্ত সাধনা। সাধনা থেকে সৃষ্টি কবিতা।
কবিতা না লিখলে রাজনীতিতে যুক্ত হতাম হয়তো। কারণ যৌবনের পুরো সময়টা অসাম্প্রদায়িক চিন্তা ও সমাজ বদলের চিন্তা থেকে সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকে স্বৈরাচার বিরোধী রাজনীতির সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। আর সেটাও না করলে ভ্রমণকারীও হতে পারতাম।
৩) দাদা এইসময়ে আপনার কাছে কেমন ধরনের কবিতা বেশি প্রাধান্য পাবে? কারণ বাংলাদেশে প্রচুর তরুণ কবি কবিতা লিখছেন। কাদের কবিতা এইসময়কার বলে আপনি মনে করছেন, [কারণ সকলের নাম তো নেওয়া সম্ভব নয়।তবুও তদের মধ্যে উল্লেখ্য ] মানে শব্দ, গঠনগত এমনকি বলার ভঙ্গির দিক দিয়ে।
➤ কবিতা কেমন ধরণের হবে এমন নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না। কবির মধ্যে কখন কোন ভাব নাড়া দিবে কবি নিজেও জানে না। তবে হ্যাঁ কখনো কখনো কবিকে সময়, পরিবেশ, প্রকৃতি, প্রেম, রাজনীতি, মানবিকতা নাড়া দিয়ে যায়, ছুঁয়ে যায়।
তবে কবিতার বাঁক বদল নিয়ত ঘটছে সমযের সাথে। তাই যে কবিতা আমাকে বোধনে পূর্ণ করতে পারে, আন্দোলিত বা শিহরিত করতে পারে এমন কবিতাই আমার কাছে প্রাধান্য পাবে।
দ্বিতীয় প্রশ্নে বলবো, বাংলাদেশটা আসলে প্রকৃতিগতভাবে কবিতার ভূমি। এর রূপ লাবণ্য, সুর-ছন্দ এ অঞ্চলের মানুষকে কাব্যিকতায় ডুবিয়ে ভাসিয়ে রাখে। সে হিসেবে তরুণদের মধ্যে এ কাব্যনুভবতা খুব ছুঁয়ে যায়। সেইসব তরুণেরা বেশ লিখছে। নতুন নতুন ভাবনা, কবিতার গড়ন, আধুনিক প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে তাদের নতুন স্বরও সৃষ্টি হচ্ছে। নাম বলা খুব কঠিন তবু দু-চারজনের নাম বলতেই পারি যেমন-- কবি অরবিন্দ চক্রবর্তী, যাকির যাফরান, শামীম হোসেন, কুমার দীপ, আশরাফ জুয়েল, আনিফ রুবেদ, মুজাহিদ আহমেদ সুমন সামস, তুষার প্রসূনসহ বেশ কিছু তরুণেরা যারা নিজস্ব একটা স্বর আনতে পেরেছে।
৪) আপনি তো পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) অনেক কবির কবিতাও পড়েছেন এবং এখনো পড়ছেন।আপনার কী মনে হয় বাংলাদেশের লেখার ধরণ এবং পশ্চিমবঙ্গের লেখার ধরণের মধ্যে ফারাক খুব বেশি বা সমসাময়িক?
➤ এর আগেই বলেছি প্রকৃতিগতভাবে বাংলাদেশ অনন্যা সৌন্দর্যের দেশ। এর নদী-সমুদ্র, সবুজ-শ্যামলিমা রূপ, জীবন চলাচল, রাজনীতি এমনকি ভাবগত দর্শনের কিছু দিকও এ দেশের কবিদেরকে প্রভাবিত করে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের কবিতার সাথে কিছু পার্থক্য আছেই। যদিও তা খুব সুক্ষ্ম। তবে ইদানিং দুই দেশের কবিদের যাতায়াত, যোগাযোগ, পঠন-পাঠনে সেই পার্থক্য আরো কমে আসছে। যেনো একই সুর বাজছে করিতায়। যা বাংলা কবিতাকে একসূত্রে গাথতে পারছে। আর মজার বিষয় হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, মাইকেল যখন দুই দেশেরই কবি হয়ে যান তখন পার্থক্য তো শুধু কাঁটাতারে সীমাবদ্ধ থাকে, মননে নয়।
৫) পোস্টমডার্ন কবিতা বাংলাদেশে কতোটা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে? এখন কী তরুণ প্রজন্ম পোস্টমডার্ন কবিতা লেখেন নাকি অন্য কোনো ইজম বা দর্শণের প্রতি আকৃষ্ট বলে আপনার মনে হয়?
➤ পোস্টমডার্ন শব্দটা নিয়ে আমার ভিতরে একটা দ্বন্দ্ব আছে। আমি মডার্ন শব্দে বিশ্বাস করি। আধুনিকার উপরে আবার কিসের উত্তরাধুনিকতা? আধুনিকতাই সার্বজনিন, সর্বকালের। আধুনিকতা নিয়ত সুন্দর পরিবর্তন। তাই কবিতার পরিবর্তনটা যদি সুন্দর ধারাবাহিক পরম্পরায় হয় তবে তাকে স্বাগত জানাতে হয় না এমনিতেই নিজের হয়ে যায়। হ্যাঁ কিছু তরুণ আধুনিকতাকেই ধারণ না করে উত্তরাধুনিকতার নামে খই ফোটাচ্ছেন। এরা শেষ পর্যন্ত মূলধারাতেই ফিরছে না হলে কবিতা থেকে ছিটকে যাচ্ছে। ইজম বা দর্শন থাকা তো দোষের নয়, সেখানে আধুনিক চিন্তার প্রসার ঘটাতেই পারে। তবে শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নয়।
✪ আপনি কী সরাসরি কোনো পত্রিকার সাথে যুক্ত।তাহলে এই জার্নিটা একটু share করুন ---
আমার সম্পাদনায় ২০০০ সাল থেকে "মৃদঙ্গ" নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। পাশাপাশি কবিকুঞ্জ, সমযের কাছে, বিবক্ষাসহ বহু পত্রিকার সম্পাদনা করেছি বিভিন্ন সময়ে।
✪ আপনার কবিতাকে আমরা কীভাবে শনাক্ত করবো____
এটা নিজে কিভাবে বলবো? পাঠকরাই বলবেন। তবে ঠিক, আমি ও আমার কবিতা শিকড়ের বাইরে নয়, পরম্পরা থেকে উঠে আসবার চেষ্টা করেছি। আর অবশ্যই আধুনিক মানবিক মানুষ হিসেবে সে ছাপ তুলে ধরতে চেষ্টা করি কবিতার উপস্থাপনে।
✪ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ --
১. সূর্যের ম্যাপ ছুঁয়ে (২০০৮),
২. গোধূলির পাণ্ডু নীলিমায় (২০১২),
৩. কে ডাকে আগুনপথে (২০১৩),
৪. বর্ষা তো জলের বর্ণ (২০১৫),
৫. রাঙারোদ ছুঁয়েছে পৌষের শরীর (২০১৫), দ্বিতীয় সংস্করণ (২০১৬, বইমেলা),
৬. প্রেমবৃত্তে জল ও নারী (২০১৭),
৭. কে ওড়ে নদীপারের নায়ে (২০১৭),
৮. পাখিটি আর জলে নামেনি (২০১৯),
৯. পাতার ওপর লেখা আছে আমার কিছু (২০১৯)
✪✪ আপনার ২টি প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত কবিতা দিন।
মৃত জানালায়
ধরে নাও, মৃত কোনো জানালায় এই বর্ষায়
একদিন উঁকি দিয়ে চলে যাবো
ধরে নাও, দেখে নিবে দোটানার চোখে, খুব আচম্বিতে
ব্যগ্র-ব্যকুলতায়, দেহমন দেখিবে অতীত, নাচঘর মুদ্রায়।
বর্ষার ডোবাপথ হারিয়েছে পথে পথে অজানার দুরাশার মনে
তবুও খুঁজিছো তুমি, জানালার এই পাশে জলে ডোবাপথে,
পথহীন পথে।
ধরে নাও, ভিজিতেছি আমি। ভিজিতেছে মরীচিকা দূরপথ.
বর্ষার ভেজাজলে ডুবে যাওয়া পথহীন পথ।
তুমিও ডুবিছো দেখি, সবুজের পথ ধরে কালের পিছে
আজ যা সাদা-কালো বিরহ মায়ায়।
কোন পথে চলেছিলে, কোন পথে হেঁটেছিলে-- পথের শাখায়!
কেনো চোখ বিঁধে যায় আজ--
বোবামনে খেয়ালে বে-খেয়ালে এই মৃত জানালায়!
অনধিকার
বড় বেশি গভীরে যেতে নেই।
হাঁটতে হাঁটতে বড়জোর বেলাভূম পার হওয়া যায়;
জেনো, দ্রাঘিমা পার হতে নেই।
বেশি কিছু লিখতে নেই। লিখতে লিখতে পাতা পেরুতেও নেই
হাতের দু’একটি রেখায় একে-বেঁকে নিতে পারো চোখ;
তার বেশি নয়। জ্যোতিষবিদ্যায় রেখো ভয়।
পূজার প্রসূন থাক দেবীর বেদীতে;
মাথা খুঁটে মরো না সে সমাধিতে।
বেশি মাখামাখি ভালো নয় মোটেও
জলটুকু জল থাক শুধু; মুদ্রার ওপারে বাজে ভুলের নিক্কন ধু ধু
বেশি গভীরে যায় না আলো; জেনো, আলোর গভীরেও আঁধার কালো
ভালো বাসতে বাসতে বড়জোর মরে যাওয়া যায়
বেঁচে থেকে থেকে কখনো ভালোবাসা হয় না পূরণ
খুব বেশি হলে মৃত্যু মৃত্যু ছায়ায় দ্রাঘিমায় পৌছানো যায়।
ধন্যবাদ কামরুল বাহার আরিফ মহাশয়কে। উনি ওনার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের মাধ্যমে ওনার পাঠকদের কিছু কথা এবং অনুভব share করলেন।মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকার তরফ থেকে ওনাকে অনেক শুভকামনা, শুভেচ্ছা এবং অশেষ ভালবাসা রইলো। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
খুব সুন্দর সাক্ষাৎ কার ও কবিতা ২ টি
ReplyDeleteচমৎকার আয়োজন। আয়োজককে ধন্যবাদ। আরিফ ভাইয়ের বলার ধরণ অসাধারণ। বিনয়ী এই মানষটিকে অনেক ভালোবাসি
ReplyDeleteচমৎকার আয়োজন। আয়োজককে ধন্যবাদ। আরিফ ভাইয়ের বলার ধরণ অসাধারণ। বিনয়ী এই মানষটিকে অনেক ভালোবাসি
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDelete