প্রচ্ছদ
Tuesday, 8 October 2024
শারদীয় সংখ্যা ১৪৩১ || সম্পূর্ণ সূচি
সম্পূর্ণ সূচি
শারদীয় সংখ্যা ১৪৩১ || সম্পাদকীয় নয় কিন্তু
শারদীয় সংখ্যা ১৪৩১|| মুখোমুখি সুশীল হাটুই ও ডঃ চন্দন বাঙ্গাল
“আমি কবিতার জন্য শ্রম দিয়েছি। আর এতে যে আনন্দ পেয়েছি তা অন্য কিছু হলে পেতাম না।“: সুশীল হাটুই"
জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলা কবিতার এক গভীর বোধের সংযোজন কবি সুশীল হাটুই। কবিতার বিষয়গত দিক থেকে শুধু নয়, কবিতার ফর্ম নিয়ে এতো সাহসী কর্মকাণ্ড সুশীলের আগে কেউ করেছেন বলে মনে হয় না। তিনি রিয়েলিস্টিক আবার চূড়ান্তরকমভাবে রোমান্টিকও।
আটের দশকে যখন কবিতার প্রকরণ নিয়ে একদল কবি সোচ্চার, কবিতাকে টেনে আনলেন ডিটেকশন রুমে, সুশীল হাটুই তখন ফিরে গেলেন চণ্ডীদাস, রামপ্রসাদ, লালনের মরমী ভাষার কাছে। নাহ্, তিনি চমকে দেওয়ার মতো একটি পঙক্তিও লেখেননি, তাঁর কোনো কবিতার সেই অর্থে পোয়েটিক হ্যাংওভার নেই। তারপরও সুশীল হাটুই পাঠককে আচ্ছন্ন রাখতে পারেন ইন্দ্রিয়-ঘনিষ্ঠ উচ্চারণে।
বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর শহরের একপ্রান্তে নির্জনে লিপিবদ্ধ করে চলেছেন তাঁর কবিতা-বিশ্বাস। মল্ল সাহিত্য পত্রিকার পক্ষ থেকে বিনয়ী, নম্র, মৃদভাষী, আন্তরিক এই কবির সঙ্গে কথা বলেছেন তরুণ কবি, সম্পাদক, গবেষক ড. চন্দন বাঙ্গাল।
মল্ল সাহিত্য : সুশীলদা, আপনার আগের দশক সাতের দশক। বিভিন্ন আন্দোলনে বাংলা উত্তাল। আপনাদেরকে অনেক রক্তাক্ত পথ দুপায়ে অতিক্রম করে আসতে হয়েছে। কবিতায় এলেন কীভাবে?
সুশীল হাটুই: আমি ' বিষ্ণুপুর হাই স্কুল'-এ পড়তাম। স্কুল থেকে প্রতি বছর 'কিশোর' নামে একটা পত্রিকা প্রকাশ করা হত। আমি একবার সেখানে একটা কবিতা দিয়েছিলাম। কবিতাটি ছাপা হয়েছিল। এটাকে আমার কবিতা লেখার প্রথম অঙ্কুর বলতে পার। তারপর আমি কবিতা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। ১৯৮০/৮১ সালে আবার লিখতে চেষ্টা করি।
মল্ল সাহিত্য : আপনার আগের দশকে শ্লোগান উঠেছিল, কবিতার গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার। এই প্রবণতা আপনার সময়ের প্রথমদিকের অজস্র কবিতায় লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু আপনি এসবের সম্পূর্ণ বিপরীতে, পোস্টমডার্ন কবিতার চর্চা করে গেছেন। পোস্টমডার্ন কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হলেন কীভাবে?
সুশীল হাটুই: আমি তখন কবিতা লিখে বিভিন্ন পত্রিকায় পাঠাতে শুরু করলাম। কিন্তু কোনো পত্রিকাই আমার কবিতা মনোনীত করেনি। আমি কবিতা লেখা বন্ধ করে দিলাম। ১৯৯০-এ আবার লিখতে শুরু করলাম। ২/১টি স্থানীয় পত্রিকায় কবিতা ছাপা হল। আমি একদিন সাহস করে কবিতাপাক্ষিক-এ একটা কবিতা পাঠালাম। নির্বাচিত হয়নি। কিন্তু শ্রদ্ধেয় প্রভাত চৌধুরী আমাকে একটা পোস্টকার্ড পাঠালেন। আমাকে কবিতা পাঠাতে বললেন। উৎসাহ দিলেন। কবিতা পাঠালাম। পোস্টমডার্ন কবিতার নতুনত্বে মুগ্ধ হলাম। সেই থেকেই এই সামান্য লেখালেখি।
মল্ল সাহিত্য : প্রভাত চৌধুরী তাঁর বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এমনকি উত্তর পর্বের কবিতা গ্রন্থে জানিয়েছেন "আমি রবীন্দ্রনাথের হয়ে কবিতা লিখি।" আপনি প্রভাত চৌধুরীকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা কী?
সুশীল হাটুই: প্রভাত চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ-কে খুব শ্রদ্ধা করতেন। আমি একবার তাঁকে প্রণাম করতে গেলে তিনি প্রণাম নিলেন না। বললেন, শুধু রবীন্দ্রনাথ-কে প্রণাম করবে। রবীন্দ্রনাথ এবং প্রভাত চৌধুরী-র কবিতার জগৎ আলাদা। প্রভাতদা পোস্টমডার্ন চিন্তাভাবনার একজন পথিকৃৎ। আমার মনে হয় প্রভাতদা-র ধারণা ছিল, রবীন্দ্রনাথ এই সময় জীবিত থাকলে, পোস্টমডার্ন কবিতা লিখতেন। তিনি (রবীন্দ্রনাথ) যেহেতু সশরীরে নেই, তাই প্রভাতদা আমি রবীন্দ্রনাথের হয়ে কবিতা লিখছি, বলতেন।
মল্ল সাহিত্য : প্রভাত চৌধুরীর কবিতা আপনাকে আলোড়িত করেছে কখনো?
সুশীল হাটুই: প্রভাতদা-র কবিতা আমার কাছে এক বিষ্ময়। আমি তাঁর কবিতা পড়ে বারবার আন্দোলিত হয়েছি। এখনো হই। প্রভাতদা-র লেখা 'সাক্ষাৎকার' আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতার বই।
মল্ল সাহিত্য : পোস্টমডার্ন কবিতা নিজেই বিশেষ দর্শন ভাবনার ফসল। তার উপর আপনার কবিতারও নিজস্ব একটা দর্শন আছে। মানে আমরা বলতে চাইছি, অমিতাভ মৈত্র, নাসের হোসেন, গৌরাঙ্গ মিত্র, মুরারি সিঙ্গি এমনকি শান্তনু গঙ্গারিডি আপনারা সবাই একই প্ল্যাটফর্মে কবিতা লিখলেও আপনার কবিতাকে অনায়াসে আলাদা করা যায়। এই যে সকলের মাঝে থেকেও আলাদা হয়ে উঠা। এটা কী আপনার সচেতন প্রচেষ্টা সুশীলদা?
সুশীল হাটুই: আমি যখন কবিতা লিখি, একটা ঘোরের মধ্যেই লিখি। কিন্তু কবিতা লেখার আগে একটা সচেতনতা থাকে। তা হল, নতুন বিষয় নিয়ে কবিতা লেখা। আর সহজ ভাষায় কথা বলা। তাই হয়তো আমার কবিতা কিছুটা আলাদা।
মল্ল সাহিত্য : আপনার কবিতায় সময় সরাসরি কখনোই আসেনি। এসেছে সময়ের অজস্র টুকরো, ভগ্নাংশ। অথচ, রবীন্দ্র পরবর্তী বাংলা কবিতায় প্রত্যেক কবিই সময়কে সরাসরি কবিতায় ব্যবহার করেছেন। আপনি কবিতার উপাদান হিসেবে সরাসরি সময়কে ব্যবহার না করে সময়ের টুকরোকে, ভগ্নাংশকে ব্যবহার করেন কেন?
সুশীল হাটুই: যখন একটি কবিতায় সময়কে সরাসরি ধরা হয়, তখন আমার ভয় হয়, একঘেয়েমি চলে আসতে পারে। তাই যাতে কবিতায় একঘেয়েমি না আসে তার জন্য আমি সময়ের টুকরোকে ভগ্নাংশ হিসাবে ব্যবহার করি। আমার মনে হয়, এতে কবিতা অনেকটা নতুন মাত্রা পায়।
মল্ল সাহিত্য : আপনার কবিতায় মিথিক উপাদানের প্রত্যাবর্তন আছে। বিষ্ণু দে-র উর্বশী ও আর্টেমিস, সুশীল হাটুইয়ের কফি with উর্বশী। আর্টেমিসকে বাদ দিলেন কেন? আবার দেখুন অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রা আপনার কাছে গন্ধ-সাবানের ক্লিওপেট্রা। অ্যারোমেটিক সোপের ক্লিওপেট্রা নয়। এটা কী বিশ্বায়নের আগ্রাসী স্টিম রোলারকে আটকানোর চেষ্টা? নাকি নস্টালজিয়া?
সুশীল হাটুই: কবি বিষ্ণু দে 'উর্বশী ও আর্টেমিস' লিখেছেন। আমি অন্যভাবে লিখেছি, 'কফি with উর্বশী'। আর্টেমিস-য়ের কথা একজন মহৎ কবি বলেছেন। আমি নিজেরমতো করে উর্বশীর সঙ্গে কফি পানের কথা বললাম। আর যদি 'গন্ধ-সাবানের ক্লিওপেট্রা'-র কথা বলো, তাহলে বলব, এটা নস্টালজিয়া ছাড়া কিছু নয়।
মল্ল সাহিত্য : আপনার কবিতা সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের প্রত্যাশা মেশানো। অথচ আপনার কবিতায় অতি সাম্প্রতিক বিষয় উপাদান হিসেবে বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে। এধরনের বৈপরীত্যের সম্মুখীন হলে, পাঠককে আপনি কী বলবেন?
সুশীল হাটুই: একই মানুষের একাধিক সত্তা থাকে। কবিরা এর থেকে মুক্ত নয়। আমার কবিতায় তুমি
দেখেছ, সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের প্রত্যাশা। আবার কখনো দেখছ, সাম্প্রতিক বিষয়ের উপস্থিতি। দুটোই সত্যি। এটা নতুন কিছু নয়। এটাকে বৈপরীত্য না বলে অন্য কিছু বলাই ভালো। পোস্টমডার্নিজম বৈপরীত্যে বিশ্বাস করে না। আমি পাঠকদের বলব প্রতিটি কবিতা ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে।
মল্ল সাহিত্য : সুশীলদা, আপনি যখন লিখতে এলেন তখন বাংলা কবিতা অনেক ধারায় বিভক্ত। মেইন স্ট্রিমের সমান্তরালে পোস্টমডার্ন কবিতা, নতুন কবিতা, ভাষা বদলের কবিতা ইত্যাদি। এতগুলো অপশন থেকে আপনি পোস্টমডার্ন কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হলেন কিভাবে?
সুশীল হাটুই: আধুনিক কবিতা আমার কাছে ম্যাড়মেড়ে লাগছিল। পোস্টমডার্ন কবিতায় আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম, তার সীমাকে অতিক্রম করার সাহস দেখে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন কবির কবিতায় পোস্টমডার্নিজমের বহুরৈখিকতা বিনির্মাণ যুক্তিহীনতা লজিক্যাল ক্লেফটের প্রয়োগ দেখেও আমি আক্রান্ত হয়েছিলাম। তারপর থেকেই আমি পোস্টমডার্ন কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরি করি।
মল্ল সাহিত্য : কাব্যগ্রন্থের নামকরণের ক্ষেত্রে আপনি অনেক ক্ষেত্রেই অতীতকালকে বর্তমানের প্রেক্ষাপটে টেনে এনেছেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে এদের মধ্যে দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক রয়েছে। যেমন ধরুন ‘হিটলারের খড়ম’। হিটলারের মতো শাসকের পায়ে খড়ম কি মানায়?
সুশীল হাটুই: তুমি প্রশ্ন তুলেছ, হিটলারের মতো শাসকের পায়ে খড়ম কি মানায়? এর উত্তরে আমি বলব, পোস্টমডার্ন কবিতায় যুক্তিকাঠামোকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। সেই হিসাবে কবিতা বা কবিতাবইয়ের নাম যুক্তিহীন হতেই পারে।
মল্ল সাহিত্য : বেশ কিছু সামাজিক উপাদান আপনার কবিতায় শ্লেষ হিসেবে উঠে এসেছে। সরাসরি এই প্রসঙ্গ আসেনি কেন?
সুশীল হাটুই: আমার মনে হয়, শ্লেষ তির্যককথা বিদ্রুপ এ-সব দিয়েও প্রতিবাদ করা যায়। তাই আমি কবিতায় বারবার শ্লেষ প্রয়োগ করি। আমি সরাসরি এই প্রসঙ্গে আসিনি কেন সেটা মুখ্য নয়। আমার শ্লেষগুলো লক্ষ্যবস্তুকে কতটা অস্বস্তিতে ফেলল সেটাই বড়ো কথা।
মল্ল সাহিত্য : বিশেষ কোনো চেতনা বা ইজম কী কবিতার কোনো ক্ষতি করে?
সুশীল হাটুই: আমি বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে কবিতাকে যুক্ত করা ঠিক নয়। আমার মনে হয়, কবিতায় কোনো নির্দিষ্ট চেতন বা ইজম এলে কবিতাটি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।
মল্ল সাহিত্য : আপনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন সুশীলদা। আটের দশকের বেশিরভাগ মানুষ যখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, তখন আপনি হঠাৎ ব্যাংকিং সেক্টরে কাজ নিলেন। কেন নিজের মেধা ও শ্রমকে আপনি সময় দিলেন না?
সুশীল হাটুই: অনেকেই ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার অথবা প্রশাসনিক কর্মকর্তা হতে চেয়েছে। আমি চাইনি। বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল। আমি কীভাবে একটা কাজ পাব, সেই চিন্তায় রাতের পর রাত ঘুমোইনি। আমি নিজের মেধা ও শ্রমকে সময় দিলাম না, একথা ঠিক নয়। আমি কবিতার জন্য শ্রম দিয়েছি। আর এতে যে আনন্দ পেয়েছি তা অন্য কিছু হলে পেতাম না।
মল্ল সাহিত্য : এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। কখনো কারো লিপস্টিক আপনাকে খেপিয়েছে সুশীলদা?
সুশীল হাটুই: কারো লিপস্টিক আমাকে খেপিয়েছে বললে মিথ্যা বলা হবে। তবে আমার ঠোঁটকে বারবার খেপিয়েছে।
মল্ল সাহিত্য : এই মুহূর্তে বাংলা কবিতার অবস্থা আপনার কাছে কেমন মনে হয়?
সু: হা: বাংলা কবিতা বইয়ের বিক্রি খুব কম বলেই মনে হয়। আর যদি কবিতার কথা বলো, তাহলে বলব, সেই একই রকমের গতানুগতিক লেখা। তবু তারইমধ্যে অনেকেই প্রথাবিরোধী কবিতা লেখার জন্য আগ্রহী হচ্ছে। এটা খুব ভালো লক্ষণ।
মল্ল সাহিত্য : নতুন যাঁরা লিখতে আসছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
সুশীল হাটুই: নতুন যাঁরা লিখতে আসছেন তাঁরা আমার কথা শুনবেন কেন? তবে সত্যিই যদি কেউ
শুনতে আগ্রহী হয়, তাঁকে বলব, প্রভাত চৌধুরীর-র কবিতা পড়ুন, মুরারি সিংহ-র কবিতা পড়ুন, আফজল আলি-র কবিতা পড়ুন। আমি এঁদের কবিতা পড়েই নিজেকে আপডেট করার চেষ্টা করি।
মল্ল সাহিত্য : মল্ল সাহিত্য পত্রিকার পক্ষ থেকে অনেক শ্রদ্ধা আপনাকে।
সুশীল হাটুই: ধন্যবাদ চন্দন। ধন্যবাদ মল্ল সাহিত্য পত্রিকা।
শারদীয় সংখ্যা ১৪৩১ || তৃষ্ণা বসাক
শ্যামচন্দ্র নাহি রে || তৃষ্ণা বসাক
‘শুনল শুনল বালিকা
রাখো কুসুম মালিকা
কুঞ্জ কুঞ্জ ফিরনু সখি শ্যামচন্দ্র নাহি রে…’
আমাদের সব আছে,
রাতের দখল নেওয়া আছে
অকাদেমি চত্বরে জমায়েত,
জমায়েত ছড়িয়ে পড়ছে কাঞ্চনজংঘা থেকে সুন্দরবন,
মিছিলে আওয়াজ আছে, শ্লোগানের অন্তাক্ষরী খেলা আছে,
শেষে ছড়িয়ে পড়া আছে,
ছড়িয়ে পড়তে পড়তে ফেরা আছে,
কিন্তু আমাদের শ্যামচন্দ্র নাহি রে,
আমাদের শ্যামচন্দ্র কোথাও নাহি রে!
আমাদের সঞ্জয় আছে, সন্দীপ আছে,
আছে ভ্রূণ ফেলার ইঁদারা,
সেই ইঁদারার মধ্যে উঁকি মারা চাঁদ,
শুধু শ্যামচন্দ্র নাহি রে, কোথাও নাহি রে!
আমাদের ফ্রিজে লাশ থাকে,
আর ফেলে দেওয়া হয় জীবনদায়ী ওষুধ,
আমাদের স্বাধীনতা দিনে ভেঙে দেওয়া হয় সব আরোগ্য নিকেতন,
আমাদের শাঁখ বাজাবার লোক আছে,
কিন্তু বাঁশি? বাঁশি কে বাজাবে?
তমালের ডাল থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে রাধিকাকে,
কারণ সে বলেছিল সরপঞ্চের দুধে মাদক মেশানো আছে,
আমাদের মাদক আছে, মাধব নেই,
কোথাও, শ্যামচন্দ্র কোথাও নাহি রে!
আমাদের পুলিশ শেষ দৃশ্যে আসে,
কিংবা আসেই না,
ওরা চলে গেছে,
যা কিছু ভাঙ্গবার ভেঙ্গে টেঙ্গে চলে গেছে জানার পর
নিশ্চিন্ত হয়ে আস্তে সুস্থে আসে ,
প্যান্টের জিপার লাগাতে লাগাতে রমণতৃপ্ত পুলিশ,
আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জেগে থাকা গোলাপি ব্রাটিকে
পেলে এদিক ওদিক দেখে পকেটে পুরে নেয়,
তারপর সেঁদিয়ে যায় নার্সিং কোয়ার্টারের ভেতরে,
ওদেরও ন্যায় চাই যেহেতু!
আমাদের পুলিশ কালীপুজোর রাতের
শেষ রোগাসোগা বাড়ির টুনিবাল্বের মতো,
খুব ক্বচিৎ কখনো জ্বলে ওঠে, বেশিরভাগই নিভে থাকে,
আর সেই অবসরে ওরা নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে বিরিয়ানি খেতে পারে!
আমাদের এইসব আছে, আমাদের সব আছে,
বিশ্বাস করো, শনিবার বড়ঠাকুর,
মঙ্গলে আজকাল ব্জরঙবলী, লাড্ডু মাস্ট,
গ্ণেশের মোদক কেমন হয় আমরা জানি,
জুম্মাবার চুম্মাবার হুক্কাবার,
গোলাপ দিন, প্রলাপ দিন
জোলাপ দিন-
শুধু আমাদের শ্যামচন্দ্র নাহি রে, শ্যামচন্দ্র কোথাও নাহি রে!
আমাদের খাদান আছে,
খাদানে জল ঢুকে যাওয়া
নিরন্তর মেঘজল এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় আমাদের
আর তার তলায় ফুটপাথে চলন্ত বিছানা,
মাঝরাতে ছিঁড়ে নেওয়া ফুটন্ত ফুল-
আমাদের ভুলগুলো,
পরবর্তী ভুলের জন্যে অবিচলিত অপেক্ষা-
ট্রেন মিস করা
বারবার ট্রেন মিস করা-
শুধু আমাদের শ্যামচন্দ্র নাহি রে, শ্যামচন্দ্র কোথাও নাহি রে!
আমাদের পলিগ্রাফ টেস্ট আছে,
তার প্রস্তুতির জন্যে আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যে বলে চলি অনবরত,
তারপর আয়না ভেঙে দিই, আর আমাদের আয়না লাগে না,
পরপর শুনানির ডেট পেরিয়ে যায়,
আমরা প্যাঁচার ঘুম দেখে বেজায় হাসি,
আর হাসতে হাসতে টুক করে বেরিয়ে আর দুটো বডি পাচার করে আসি,
আমাদের বৃন্দাবনের কুঞ্জপথ জুড়ে শুধু লাশ আর লাশ
বিক্রি হবার অপেক্ষায় থাকে,
একটি লাশের পায়ের নূপুর দেখে আমাদের হেঁচকি ওঠে,
আর হেঁচকি তুলতে তুলতেই আমরা গাই
হায় আমাদের শ্যামচন্দ্র নাহি রে,
কোথাও নাহি রে!
শারদীয় সংখ্যা ১৪৩১|| বিভাবসু
কয়েকটি পাপীকবিতা || বিভাবসু
পাপ
চোঁয়ানো অন্ধকার ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে
যেন দেবীভীষণা তাঁর সব ধ্বংস নিয়ে,
মারি ও মড়ক নিয়ে
গ্রাস করছেন আমাদের দেশ ও কাল
সব শুভ ও সুনীতিকে গোগ্রাসে গিলে নিয়ে
তিনি, সেই মহীয়সী
রচনা করছেন রাজকীয় সন্ত্রাস
আবিল ধ্বংসচিত্র
তিনি দুর্মতি আর দুর্নীতির কাঁধে ভর করে
দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আসমুদ্রহিমাচল
অর্ধচন্দ্রখচিত তাঁর দম্ভপতাকা
দেবী নিশাচরী, লোলজিহ্বা
আপৃথিবী ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁর ক্রোধাগ্নি
লোভের ফার্নেস জ্বালিয়ে
গ্রাস করছেন আমারই আয়ু ও আয়ুধ
প্রায় নির্জীব হয়ে আমরা পালন করছি
তার সব ভ্রান্ত অভিলাষ
বিনাশযাত্রায় গায়ে মাখছি তেজস্ক্রিয় অন্ধকার
আমার মাটি এখন দূষিত
আমাদের মানুষেরা ভ্রষ্ট
আমাদের মাটি আজ অহল্যা
আমরা আজ শয়তানশাসিত
একটি রাজনৈতিক সভার ধারাভাষ্য
মিথ্যে আলোয় উদ্ভাসিত হওয়া মঞ্চে
মিথ্যের উজ্জ্বল্যে প্রণত কিছু ধুরন্ধর
মিথ্যের মাধুর্যে উজ্জীবিত কিছু উজবুক
কিছু স্তাবক
কিছু প্রতারক
কিছু ধর্ষকামী
কিছু ধ্বজাধারী
কিছু মিনমিনে
কিছু তালেবর
শয়তানের প্রশস্তি রচনায় ব্যস্ত
মিথ্যের বাগ্মিতায় জেগে ওঠা কিছু শ্বাপদ
মিথ্যের ভেলকিতে আশান্বিত কিছু ধুরন্ধর
মিথ্যের আশীর্বাদস্নাত কিছু চামচে
কিছু ধামাধরা
কিছু অপরিণামদর্শী
কিছু ইতর
কিছু খুনি
কিছু সুযোগসন্ধানী
কিছু বোকা
সম্মোহিত হয়ে শুনছে সেই ধ্বংসকথা
মিথ্যে আলোয় আলোকিত এক নরপিশাচ
দারুন নৈপুণ্যে
মানুষের রক্তে মিশিয়ে দিচ্ছে বিষ
মানুষের মস্তিষ্কে পরিয়ে দিচ্ছে শিকল
আর চারদিকে ম-ম করছে জয়ধ্বনি
দুর্গতি
এরপরও তার মুখ থেকে অসংখ্য মুখোশ খুলে পড়বে
সব মুখোশই নানা কিসিমের মিথ্যে দিয়ে আঁকা
সব মুখোশ এর থিম—‘মানবতাকে হত্যা করে জয়োল্লাস'
তারপর আমরা সেই কুৎসিত মুখোশগুলো নিয়ে
একটা মিথ্যেসাথীর হাট চালু করতে পারব
যাতে পৃথিবীর সব মুখোশধারীরা এসে পছন্দমত
মুখোশ সংগ্রহ করতে পারে
আমরা মনে করি মিথ্যেবাদীরাও মানুষ
তাদেরও এই স্বাধীনতা আছে, ইচ্ছেমতো মুখোশ কেনার বা পরার
এই মৌলিক অধিকারে কেউ বাধা দিতে পারে না
যে বা যারা বাধা দেবে
তাদের কালো হাত ভেঙে দিতে আমরা দ্বিধা করব না
এ ব্যাপারে আমাদের পেয়াদারা সদাজাগ্রত
এরপর উপজাত হিসেবে প্রাপ্ত ভাঙ্গা হাতগুলিকে
জড়ো করে আমরা একটা জ্যান্ত ভাস্কর্য বানাবো তার না দেবো—
‘ন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ’
যাতে প্রতিবাদ করতে কেউ আর হাত তোলার সাহস না পায়
আমরা ধর্ষিতাকেও ফাঁসি দিয়ে প্রমাণ করব যে—
ফাঁসি পাওয়ার অধিকার সবারই আছে
আমরা কেউ চাই
আমাদের এও চাই আরো ফাঁসুরেদের চাকরি দিতে
কারণ তারাও তো মানুষ
বাড়িতে তাদেরও বউ-বাচ্চা আছে
পাপাচারী
আরো অবারিত হয়েছে পাপ
পাপের ফসলে গোলাঘর উপচে পড়ছে
লক্ষ্মীর ভাড়ার থেকে অলক্ষ্মীর খেলাঘর পর্যন্ত
হে অপুংষক, হে অযোনী
তুমি কি অন্ধত্বের ক্ষয়রোগা ঠিকাদার হয়ে উঠেছ
না হলে মানুষের চারদিকে কীভাবে
রচনা করছ লোভের উঁচু-উঁচু গার্ডরেল?
নিজেকে লুকাচ্ছে দম্ভের আড়ালে?
আর প্রতিবাদীর দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে টিয়ার গ্যাসের শেল
জলকামানের ফোয়ারায় ধুয়ে ফেলতে চাইছ
নিজের সমস্ত নৃশংসতা
নীতিহীনতার চূড়ায় উঠে
বিনাশ করছ মানবতার চৌহদ্দি
বিনাশ কাল সমাগত বলে তুমি
তুমি হে দানবী
তুমি হে পুঁতিগন্ধের দেবী
জন্ম দিচ্ছ জারজ অভিব্যক্তি
আর সেই ইশারায়
আরো আরো অবারিত হচ্ছে পাপ
পাপশালা জমজমাট হয়ে আছে
আদি গঙ্গার তীরে
পৈশাচিক
যে নিরুৎসাহ মাঝে মাঝেই আমাকে গ্রাস করে
আমাকে দুর্বিপাকে ফেলে
তার অন্দরমহলে ঢুঁ মেরে দেখি
পচাগলা লাশের পাহাড় জমেছে
দেবী পাপময়ী বসে আছেন শর্পাসনে
দম্ভী, পিশাচাশনে
পুঁতি গন্ধে গুলিয়ে ওঠছে গা
এই সাম্রাজ্যের কোথায়ও আর শুভাচার নেই
মানবিক অভিমুখ নেই
শুধু হত্যাযজ্ঞ, যেন কয়েকশো চেঙ্গিস খাঁ-র সম্মিলিত তাণ্ডব এই
মাঝে মাঝে, ঝাঁকে ঝাঁকে আত্মহত্যারা আসে আমাকে কুরে কুরে খায়
আর প্রতি মুহূর্তে ছিবড়ে করে হৃদয়
হায়! মৃত্যুও এখানে মাফিয়া নিয়ন্ত্রিত
যেন সুস্বাদু মাংসপিণ্ডে মহাভোজ
তাতে কেউ মিশিয়ে দিয়েছে বিষ
আমি বিষাক্ত শরীর নিয়ে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করি
প্রতিবারই ব্যর্থ হই
তবে প্রতিবারই যে হব এমনটা ভাবার কিছু নেই
এবার পিশাচতন্ত্রের পরাজয় নিশ্চিত...
শারদীয় সংখ্যা ১৪৩১||পল্লববরন পাল
মহাকাব্য নির্মাণ || পল্লববরন পাল
আমার রক্তের ঘাম
এবং ঘামের রক্ত
মিশে যাচ্ছে কলমের নিবে
আর নিব ক্রমশ বদলে যাচ্ছে
ধারালো নখে
আমার শান্ত বৌদ্ধ চোখের
কালো মণিবৃত্তে
রক্ত আঁচড়ে লেখা হচ্ছে
উই ওয়ান্ট জাস্টিস
দৃষ্টির যমজ ঘুঁষিতে ভেঙে পড়ছে
ন্যায় নীতি ধর্মের সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক অপইতিহাস
জ্যোৎস্নাকে ডেকে বলি -
তোমার এখন কাজ বুকআকাশকে নরম রাখা
ফুলকে বলি -
ফোটো মগজবৃক্ষে
সুগন্ধ ছড়িয়ে দাও শিরাপথেপথে
তোমাদের ঘামরক্তে আর রক্তঘামে
আমার কলম তরোয়াল হয়ে নামবে কুরুক্ষেত্রে
আর নাকের অন্ধকারে ঢুকে
শয়তান শিকনিদের টেনে বের করে
ধারালো নিব-নখের ডগায় রেখে
পট করে ছুঁড়ে ফেলে
মহাকাব্য লিখবে অচিরেই
শারদীয় সংখ্যা ১৪৩১|| ঋতবৃতা মুখোপাধ্যায়
শারদীয় সংখ্যা ১৪৩১|| বিশ্বজিৎ রায়
আমার কবিতাবাড়ি || বিশ্বজিৎ রায়
এ যাবত যাকিছু লিখেছি তার ভূমি পরীক্ষা করা হোক---
ভিত গড়ার আগে কতদূর খনন করা হয়েছে
নতুন-পুরানো ক’হাজার পুঁথি গেঁথে ভিত রচিত হয়েছে ,
কতো পরিমাণ বঞ্চনা, অবজ্ঞা, অবহেলা,
ক্ষতচিহ্নের নুনজলে মিশিয়ে
গড়ে তোলা হয়েছে এই কবিতাবাড়ি,
তার ঘর, বারান্দা, ছাদ, আসবাব, সব দেখা হোক …
সব ভালো করে পরীক্ষা করে দেখে মূল্যায়ন করা হোক,
আমার মৃত্যুর পর এর বাজার মূল্য কতটা থাকবে,
যথাযথ সম্মানে বিকোবে কিনা ---
নাকি, অন্য অনেকের মতো সব ধুলিস্যাত হয়ে
স্মৃতির অতলে চলে যাবে চোখ বুজতে না বুজতেই !
সেসব খুব দ্রুত পরীক্ষা করে আমাকে জানানো হোক ---
সেই বুঝে আমি সীদ্ধান্ত নেব, এই কবিতাবাড়ি আমি
অক্ষত রেখে যাব, নাকি আত্মঘাতি বিস্ফোরণে
উড়িয়ে দিয়ে যাব নিজেই, নিজের মৃত্যুর আগে...
শারদীয় সংখ্যা ১৪৩১|| রিতা মিত্র
লেনিয়াদ্রি গুহা || রিতা মিত্র
এবারে আমার যাত্রা ছিল মহারাষ্ট্রের পশ্চিম ঘাট। যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্য মাত্রার ।বিশেষ করে বর্ষার মরশুমে।
আরব সাগরের হাওয়া এসে এই পাহাড়ের গায়ে আটকে যায় ফলে বৃষ্টির পরিমাণ খুব এবং পাহাড়ি অঞ্চল বলে পাহাড়ে গা বেয়ে হাজার জলধারা নেমে আসে। এই অঞ্চলকে থাউজেন্ড সিস্টার ফল বললে কম বলা হয়।
আমরা যাব লেনিয়াদ্রি গুহা। এই জায়গা গণেশ গুহা বা গণেশ পাহাড় বলে খ্যাত।
কেননা পাহাড়ের এক গুহায় গণেশ দেবের পুজো হয়ে থাকে।
লেনিয়াদ্রি গুহা মহারাষ্ট্রের পুনে জেলার জুন্নার শহরের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এখানে পাহাড় কেটে প্রায় তিরিশটি গুহা নির্মাণ করা হয়। ইতিহাসবিদ দের কথায় এর নির্মাণ কাল প্রথম শতাব্দী থেকে তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যে।
মুলত এই গুহাগুলি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কিন্তু সাত নম্বর গুহাটি হিন্দুদের দখলে চলে যায় এবং এখানে গণশের অষ্টবিনায়ক মূর্তি পূজো আরম্ভ হয়। গণেশ পুরাণ এর মতে দেবি পার্বতী বারো বছর তপস্যা করে গণেশকে পুত্র রুপে পান।
এখানে প্রবেশ মুল্য পঁচিশ টাকা। গাড়ি পার্কিং আলাদা। গুহায় উঠছে ৩৩৮ টি খাড়াই সিঁড়ি উঠতে হবে। বৃষ্টির জলে বেশ পিচ্ছিল থাকে। বয়স্কদের জন্য ডুলির ব্যবস্থা আছে হাজার টাকা মাথা পিছু। আমিও ডুলিতে উঠে বসলাম। কেননা আগের দিন প্রচুর হাঁটাহাঁটি করে সাড়ে চারশ সিঁড়ি বেয়ে ঘুরে কোমরে হাঁটুতে খুব ব্যথা হয়েছে।
চারজন মিলে ডুলি বয়ে নিয়ে চলল জোর কদমে। আমি ভয়ে মরেই যাই এত জোরে ছুটছে সিঁড়িতে যদি ওদের পা পিছলে যায় তবে আমার স্বর্গের টিকিট পাকা।
প্রায় দুশো সিঁড়ি উঠে একবারে জন্য বিশ্রাম তাও দু মিনিট এর জন্য আবার সেই দৌড়। একেবারে অষ্টবিনায়ক মন্দির সামনে নামাল।। বৃষ্টি ছিলনা বলে এতটা পথ শুকনো এসেছি কিন্তু আর উপায় নেই। মন্দিরে প্রবেশ করতে হলে গুহায় যেতে হবে আর পাহাড়ের গা বেয়ে সহস্র ধারার মতো জল পড়েই যাচ্ছে ক্রমশ।
সিঁড়ি ওঠা শেষ হয়েও হল না। আরো দশ বারোটা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে। আর সিঁড়ির ধাপ এত উচুঁ যে হাঁটু কপালে ঠেকে যাবার জোগাড়। কোনো মতে বসে বসে একধাপ একধাপ করে উঠে মন্দিরে প্রবেশ করলাম। বিশাল এক নাথ মন্দিরের মতো জায়গা। প্রায় দেড়শ লোক এটে যাবে এক সাথে। পাথরের মেঝেতে অনেকে বসে আছেন হাত জোড় করে। একদিকে পুরুত মশাই পূজো দিয়ে যাচ্ছেন। প্রবেশ পথের পিলারে হাতি সিংহের মূর্তি পাথর কেটে করা আছে। ভেতরে ছবি তোলা বারণ। তাই বায়রনের ছবি তুললাম।
আবার নেমে একটি কক্ষে প্রবেশ করলাম। এখানে কোনো মূর্তি নেই। একটি মঙ্গল কলস পাথর কেটে তৈরি করা যা মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বিশাল। অনেক গুলি পাথরের থাম রয়েছে কক্ষ জুড়ে।
বাইরে বেরিয়ে পাশের গুহাগুলি দেখতে যেতেই সবাই বলল ওগুলো তালা বন্ধ
। তাও এগিয়ে গেলাম। লক্ষ করলাম সেগুলো বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ধ্যান কক্ষ। বাকিগুলো সত্যি তালা বন্ধ। এত উপরেও প্রাচীন কালে জল ধরে রাখার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বৃষ্টির জল পাহাড় বেয়ে এই পাথরের কুণ্ড গুলোতে জমা হত। যা সারা বছর ধরে ব্যবহার করা হত।
এখানে দাঁড়িয়ে জুন্নার শহরের অনেকটা দেখা যায়। প্রচুর গাছপালা চারিদিকে। বর্ষার ছোঁয়া পেয়ে নব যুবতীর মতো খিলখিল হাসছে। কত পাখির গান শুনলাম। পথের ধারে পাহাড়ি সিঁড়ির উপরে কোথাও কোথাও বাঁদর বাবাজীরা সদলবলে বসে আছেন। অনেকে কলা আপেল খেতে দিচ্ছে। কিন্তু বাঁদর বাবাজীরা জলের বোতল দেখলেই হামলে পড়ে কেড়ে নিচ্ছে। আমাদের দলের সর্বকনিষ্ঠ যাত্রী ঈশিতার জলের বোতল তারা কেড়ে নিয়ে ফেলে দিয়েছে।
ডুলি করে আবার নেমে এলাম। আমরা তিনজন ডুলি করে গিয়েছিলাম।যখন নামছি তখন দলের বাকিরা উঠছে। তাদের অর্ধেক পথ বাকি।
নিচে নেমে দোকান থেকে প্রসাদ কিনলাম। লাড্ডু প্রসাদ দুটো তিরিশ টাকা।
এক কাপ চা নিয়ে বাকিদের নেমে আসার অপেক্ষা সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে রইলাম।