Tuesday 8 October 2024

শারদীয় সংখ্যা ১৪৩১|| ঋতবৃতা মুখোপাধ্যায়

 


রবীন্দ্রনাথের প্রেমচেতনা ও প্রথম প্রেম ।। ঋতবৃতা মুখোপাধ্যায়
 

"তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি

        শত রূপে শত বার

জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।

    চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়

        গাঁথিয়াছে গীতহার,

    কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,

        নিয়েছ সে উপহার

জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।"


অনন্ত প্রেমের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনটি বিষয়বস্তু বারবার তাঁর রচনায় ফিরে ফিরে এসেছে, সেগুলো হলো পূজা, প্রেম আর প্রকৃতি। কিন্তু অধ্যাত্মিকতার কথা মনে রাখলে লক্ষ্য করা যায় যে, বয়স যতো বেড়েছে, ততোই তিনি আনুষ্ঠানিক ধর্ম থেকে সরে গিয়ে মানুষের ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। গানে তিনি বার বার নৈর্ব্যক্তিক ঈশ্বরের কাছে আশ্রয় এবং সান্ত্বনা খুঁজেছেন। তা সত্ত্বেও তাঁকে যদি কোনো বিশেষ ধরনের কবি অথবা শিল্পী বলে চিহ্নিত করতেই হয়, তাহলে সম্ভবত প্রেমের কবি অথবা প্রেমের শিল্পী বলেই নাম দিতে হয়। কারণ প্রেম কেবল তাঁর শত শত প্রেমের গান আর কবিতায় প্রকাশ পায়নি, তাঁর "প্রকৃতি" এবং "পূজা"ও প্রেমের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। তাঁর বেশিরভাগ গানে এই তিন ধরনের বিষয়বস্তুকে বিশ্লেষণ করে আলাদা করা যায় না, তবে একথা সর্বজনবিদিত যে, রবীন্দ্রনাথের প্রেমে দেহের তুলনায় মানসিক এবং আধ্যাত্মিক যোগাযোগ ছিলো অনেক বেশি।

রবীন্দ্রনাথের প্রেম-চেতনার কথা বলতে গেলে প্রথমেই মনে আসে তাঁর গানের কথা। গীতবিতান এর "প্রেম" পর্যায়ে মোট ৩৯৫ টি গান আছে, তার মধ্যে ২৭ টি গান "গান" উপপর্যায়ে এবং বাকি ৩৬৮ টি গান তিনি নিজেই আলাদা করে একটি উপপর্যায়ে রেখেছেন, যার নাম দিয়েছেন "প্রেম বৈচিত্র্য"।

মানবজীবনের প্রণয়-অনুভূতি প্রকাশের এক মর্মস্পর্শী মাধ্যম হলো গান। প্রেমের ভাষা মুখের কথার চেয়েও গানের ভিতর দিয়ে অনেক বেশি অভিব্যক্ত হয়। রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত জীবনেও তাই গানের মাধ্যমে প্রেমের অনন্য অনুভূতি সর্বাধিক পরিব্যক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গানের একটি মুখ্য বিশেষত্ব হল তার বেদনায় — বিরহবেদনার দুঃসহ অশ্রুস্রোত যেন কবির প্রেমের গানগুলিকে আগাগোড়া পূর্ণ করে রেখেছে। অধিকাংশ গানে কান পাতলেই এক বিচ্ছেদবিরহের রাগিনী শোনা যায়। সারাজীবনের যে অন্তহীন শোক, বিরহ, বিচ্ছেদের গভীর বিলাপ কবিকে বেষ্টন করে রেখেছিল, রবীন্দ্র-গানের ছত্রে ছত্রে তারই আভাস পাওয়া যায়। কয়েকটি গানের কথা উল্লেখ করলেই বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে...
"কাঁদালে তুমি মোরে ভালোবাসারই ঘায়ে— ",
"তবু   মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে",
"ফুল তুলিতে ভুল করেছি প্রেমের সাধনে",
"আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়",
"বড়ো বেদনার মতো বেজেছ তুমি হে আমার প্রাণে",
"যদি জানতেম আমার কিসের ব্যথা তোমায় জানাতাম"
... প্রভৃতি আরো অসংখ্য প্রেমের গানে বেদনাবিধুর অনুভূতিই বারবার প্রকাশ পেয়েছে।

 কবির জীবনে কিশোর বয়স থেকে যাঁরা প্রেমের প্রদীপ জ্বালিয়ে গেছেন তাঁদের কবি "আপন মানুষের দূতী" এবং "প্রত্যক্ষের পিছনে থাকা চির-আগন্তুক বঁধুর দূত" বলেছেন। সব সাধারণ মানুষের মতোই বিশ্বকবির জীবনেও প্রেমের প্রথম অনুভূতি "অধরা মাধুরী"র মতো ধরা দিয়েছে অনিবার্য ভাবেই। কৈশোর কালের সেই অব্যক্ত ভালোবাসা প্রথম প্রেমের শিহরণ কেমন ভাবে ধরা দিয়েছিল কবির জীবনে?  

সংগীত সৃষ্টির প্রাথমিক লগ্ন থেকে ব্রাহ্মসমাজের নিয়মিত অনুষ্ঠানের প্রেরণায় ব্রহ্মসংগীত রচনার পাশাপাশি তাঁর কৈশোরের নিভৃত শিল্পীমানসে হৃদয়বৃত্তির সূক্ষ্মতম তরঙ্গাঘাত সুরে সুরে ঝংকৃত হয়ে গান রূপে উৎসারিত হয়েছে। তাই, তাঁর অপরিণত কৈশোর ও যৌবনকালে রচিত প্রেমসংগীতগুলিতেই তৎকালীন হৃদয়াবেগের পূর্ণ বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। কিশোর বয়সে রচিত "কবিকাহিনী" (১৮৭৮, নভেম্বর), "বনফুল" (১৮৮০, মার্চ), "ভগ্নহৃদয়" (১৮৮১, জুন), "রুদ্রচন্ড" (১৮৮১, জুন), "নলিনী" (১৮৮৪, মে), "মায়ার খেলা" (১৮৮৮, ডিসেম্বর) প্রভৃতি নাট্যসৃষ্টিগুলির বিষয়বস্তু নরনারীর অস্ফুট ভাবোদ্বেল প্রণয়।

রবীন্দ্রনাথের সতের বছর বয়সে রচিত "কবিকাহিনী" (১৮৭৮, নভেম্বর) কাব্যগ্রন্থে কবি ও তাঁর প্রেমপাত্রী "নলিনী"র অব্যক্ত প্রেমবেদনার প্রকাশ দেখা যায়।
"এখনও বুকের মাঝে রয়েছে দারুণ শূন্য
সে শূন্য কি এ জনমে পুরিবে না আর?
মনের মন্দির-মাঝে প্রতিমা নাহিক যেন
শুধু এ আঁধার গৃহ রয়েছে পড়িয়া।"

"কবিকাহিনী" কাব্যগ্রন্থ অনুযায়ী কবি ও নলিনীর প্রণয় বিঘ্নহীন অনায়াস হয়নি। অন্তরের অনির্বচনীয় বেদনায় কবি বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছেন, কিন্তু ততোধিক অশান্তিতে অন্তরে নলিনীর স্মৃতি বহন করে মুমূর্ষু নলিনীর কাছে প্রত্যাবর্তন করেছেন। কবিকাহিনীর নায়ক কবি, কাছে থাকার সময় নলিনীর প্রেম অনুভব করেনি। কিন্তু দূরে গিয়ে তার কাছে সেই প্রেম প্রতিভাত হয়েছে। "রবিচ্ছায়া"র একটি গানের কথা উল্লেখ না করলেই নয়...

"কত দিন একসাথে ছিনু ঘুমঘোরে,
তবু জানিতাম নাকো ভালোবাসি তোরে ।
মনে আছে ছেলেবেলা     কত যে খেলেছি খেলা,
কুসুম তুলেছি কত দুইটি আঁচল ভ’রে ।
ছিনু সুখে যতদিন   দুজনে বিরহহীন
তখন কি জানিতাম ভালোবাসি তোরে !
অবশেষে এ কপাল ভাঙিল যখন,
ছেলেবেলাকার যত ফুরালো স্বপন,
লইয়া দলিত মন হইনু প্রবাসী—
তখন জানিনু, সখী, কত ভালোবাসি ।।"

"ভগ্নহৃদয়" (১৮৮১, জুন) কাব্যগ্রন্থে এই গানটি কবি ও নলিনীর পুনর্বার সাক্ষাৎকালে নলিনীর কন্ঠে আছে। "ভগ্নহৃদয়" কবির বিলাতবাসকালে রচিত এবং দেশে ফিরে সমাপ্ত হয়। এই গানের অনুভূতি তাঁর একাধিক নাটকে যেভাবে ঘুরে-ফিরে দেখা গেছে তাতে সংকোচ-সতর্কভাবে একটি প্রশ্ন মনের মধ্যে নাড়া দেয়, এই গভীর প্রেমের কাব্যিক অনুভূতি কি কবির ব্যক্তিগত জীবনের কোনো অনুভূতির সঙ্গে জড়িত?

রবীন্দ্রনাথের বাস্তব জীবনের সঙ্গে এই "নলিনী"র যোগাযোগ কতখানি তা একটু দেখে নেওয়া যাক।

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যারিস্টারি পড়ানোর জন্য কনিষ্ঠ পুত্র রবীন্দ্রনাথকে বিলেতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। রবীন্দ্রনাথ সতের বছর বয়সে ১৮৭৮ সালের আগস্ট মাসে মেজদা সত্যেন্দ্রনাথের সাথে বোম্বাই (অধুনা মুম্বাই) আসেন এবং সত্যেন্দ্রনাথের মারাঠি বন্ধু ডঃ আত্মারাম পান্ডুরং এর পরিবারে মাস দুয়েকের জন্য গৃহবিদ্যার্থী হিসেবে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল প্রধানত স্পোকেন ইংলিশে ও ইংরেজি আদবকায়দায় অভ্যস্থ ও সড়গড় হওয়া। ডঃ পান্ডুরং এর সদ্য বিলেতফেরত কন্যা আন্না তড়খড় কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রবীন্দ্রনাথকে ইংরেজি আদবকায়দায় সড়গড় করানোর এবং স্পোকেন ইংলিশে চৌখস করে তোলার। আন্না রবীন্দ্রনাথের থেকে ছয় বছরের বড় ছিলেন, তখন তিনি সদ্য বিলেত থেকে পড়াশোনা করে ফিরেছেন। শিক্ষা আদৌ কতটা হয় সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ থাকলেও, আন্নার সঙ্গে কিশোর রবির মন দেওয়া-নেওয়ার পথ যে অচিরেই আরও প্রশস্ত হয়ে ওঠে তা বলাই বাহুল্য। রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিত্ব ও কাব্যপ্রতিভায় আন্না অনুরক্ত হন। সম্পর্ক বদল হল। বিদ্যার্থী বসলেন গুরুর আসনে, আর শিক্ষয়িত্রী হলেন নবীন কবির কাব্য সংগীত সৌন্দর্যমুগ্ধ অনুরাগময়ী প্রিয়শিষ্যা। সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথের "কবিকাহিনী" ভারতী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। তার অনুবাদ আন্নাকে শোনাতেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু শুধু অনুবাদে আন্নার মন ভরে নি। প্রিয়-কবির কাব্যরস আস্বাদনের জন্য তিনি বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেন। আন্না বলেছিলেন, "কবি তোমার গান শুনলে আমি বোধহয় আমার মরণদিনের থেকেও প্রাণ পেয়ে জেগে উঠতে পারি।" মারাঠি তরুণী আন্না তড়খড় রবীন্দ্রনাথের প্রেমে পড়েন। ১৭ বছরের তরুণ কবি মারাঠি তরুণীর রোমান্টিক প্রেমে সরবে না হলেও নীরবে যে সাড়া দিয়েছিলেন, তাঁর প্রমাণ মেলে যথেষ্ট। আন্না তড়খড় ভালোবেসে একটি নাম চেয়েছিলেন তাঁর কিশোর প্রেমিকের থেকে, রবীন্দ্রনাথ দিয়েওছিলেন সেই নাম - "নলিনী"। বলা বাহুল্য, "নলিনী" নামটি রবীন্দ্রনাথের খুবই প্রিয় ছিল। কবির প্রথম জীবনে রচিত বহু কাব্য-কবিতায়-নাটকে এই নামের উল্লেখ পাওয়া যায় সেই কারণেই। আন্নার জন্য কবি কাব্যের ‘গাঁথুনি’তে রচনা করেছিলেন- "শুন নলিনী খোল গো আঁখি" এই গানটি। অচেনা মহল থেকে আপন মানুষের যে দূতী এসে প্রথমে কবির হৃদয় দখলের সীমানা বড় করে দিলেন- তিনি নিঃসন্দেহে আন্না।

কত ছুতো করেই না তিনি কবির কাছে আসতেন। কবিকে বিমর্ষ দেখলে দিতেন সান্ত্বনা। আর প্রফুল্ল দেখলে পিছন থেকে জড়িয়ে চোখ টিপে ধরতেন। পরে রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন দিলীপ কুমার রায় কে  (তীর্থংকর গ্রন্থে) - "আন্না বলে বসলেন- ‘আহা কী এতো ভাবো আকাশ পাতাল’। অথবা কখনও বা প্রস্তাব পেশ করতেন, 'আচ্ছা আমার হাত ধরে টানোতো, টাগ-অফ-ওয়ারে দেখি কে জেতে?' শেষে একদিন বলে বসলেন আচমকা, ‘জানো কোন মেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে যদি তার দস্তানা কেউ চুরি করতে পারে তবে তার অধিকার জন্মায় মেয়েটিকে চুমো খাওয়ার।’ আর তারপর আন্না রবীন্দ্রনাথের আরাম কেদারাটিতে ঢলে পড়লেন নিদ্রাবশে। এক সময় কপট নিদ্রা ভাঙলো। করুণ বিপদে নয়ন পল্লব সিক্ত করে আন্না দেখলেন- তার দস্তানা দুটি তার হাতেই আছে, কেউ চুরি করেনি।" কবির লজ্জা কুণ্ঠা স্বভাব আর ভীরুতা এগোতে দেয়নি তাঁকে প্রেমের অনুচ্চারিত পথে। হায় ভীরু প্রেম! কবি তখন আন্নার প্রেমকে স্বীকার করে সাড়া দিতে না পারলেও কিন্তু কখনও ভোলেননি তাঁকে। আন্নার সঙ্গে কবির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল মাত্র এক মাসের সামান্য কিছু বেশি সময়, জানা যায় পরে বহুদিন তাঁর সঙ্গে কবির যোগাযোগ ছিল পত্র বিনিময়ের মাধ্যমে। প্রথম প্রেমের প্রথম কদমফুলের সেই শিহরণ নিয়েই কবি জাহাজে করে বিলাতের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন ১৮৭৮ সালে। সেইসময় তরুণ রবীন্দ্রনাথের কাছে না হলেও পরিণত বয়সে এবং জীবনসায়াহ্নে এসে সেই প্রেম কবির কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব ও স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯২৭ সালের ১লা জানুয়ারি অতুলপ্রসাদ সেন ও দিলীপ কুমার রায়ের সঙ্গে আলাপচারিতায় কবি আন্নার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সেইসব কৈশোর স্মৃতিচারণ করেন। সেই কথোপকথনে আন্নার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এ কথা আমি মানবো যে আমি বেশ টের পেতাম যে ঘটবার মতো একটা কিছু ঘটছে, কিন্তু হায়রে! সে হওয়াটাকে উস্কে দেবার দিকে আমার না ছিল কোনও তৎপরতা, না ছিল কোনও প্রত্তুৎপন্নমতিত্ব।" শেষ বয়সে এসে কবির "পশ্চিমযাত্রীর ডায়েরি"তে স্মৃতিচারণার অংশে তিনি বলেছেন, "কিশোর বয়সে যারা আমাকে কাঁদিয়েছিল, হাসিয়েছিল, আমার কাছ থেকে আমার গান লুঠ করে নিয়ে ছড়িয়ে ফেলেছিল, আমার মনের কৃতজ্ঞতা তাদের দিকে ছুটল। তারা মস্ত বড়ো কিছুই নয়; তারা দেখা দিয়েছে কেউ বা বনের ছায়ায়, কেউ বা নদীর ধারে, কেউ বা ঘরের কোণে, কেউ বা পথের বাঁকে। তারা স্থায়ী কীর্তি রাখবার দল নয়, ক্ষমতার ক্ষয়বৃদ্ধি নিয়ে তাদের ভাবনাই নেই; তারা চলতে চলতে দুটো কথা বলেছে, সব কথা বলবার সময় পায় নি; তারা কালস্রোতের মাঝখানে বাঁধ বাঁধবার চেষ্টা করে নি, তারই ঢেউয়ের উপর নৃত্য করে চলে গেছে, তারই কলস্বরে সুর মিলিয়ে; হেসে চলে গেছে, তারই আলোর ঝিলিমিলির মতো। তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললুম, "আমার জীবনে যারা সত্যিকার ফসল ফলিয়েছে সেই আলোর, সেই উত্তাপের দূত তোমরাই। প্রণাম তোমাদের। তোমাদের অনেকেই এসেছিল ক্ষণকালের জন্য আধো-স্বপ্ন আধো-জাগার ভোরবেলায় শুকতারার মতো। প্রভাত না হতেই অস্ত গেল। মধ্যাহ্নে মনে হল তারা তুচ্ছ; বোধ হল, তাদের ভুলেই গেছি। তার পরে সন্ধ্যার অন্ধকারে যখন নক্ষত্রলোক সমস্ত আকাশ জুড়ে আমার মুখের দিকে চাইল, তখন জানলুম সেই ক্ষণিকা তো ক্ষণিকা নয়, তারাই চিরকালের; ভোরের স্বপ্নে বা সন্ধ্যাবেলার স্বপ্নাবেশে জানতে না-জানতে তারা যার কপালে একটুখানি আলোর টিপ পরিয়ে দিয়ে যায় তাদের সৌভাগ্যের সীমা নেই। তাই মন বলছে, একদিন যারা ছোটো হয়ে এসেছিল আজ আমি যেন ছোটো হয়ে তাদের কাছে আর-একবার যাবার অধিকার পাই; যারা ক্ষণকালের ভান করে এসেছিল, বিদায় নেবার দিনে আর-একবার যেন তারা আমাকে বলে 'তোমাকে চিনেছি', আমি যেন বলি, 'তোমাদের চিনলুম'।"



তথ্যসূত্র : 


১) বাংলা কাব্যসংগীত ও রবীন্দ্র সংগীত  — ড. অরুণকুমার বসু
২) রবীন্দ্র সংগীত — শান্তিদেব ঘোষ
৩) তীর্থংকর — শরীর দিলীপকুমার রায়
৪) পশ্চিমযাত্রীর ডায়েরি (রবীন্দ্র রচনাবলী) — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৫) রবীন্দ্র গানের অন্তরালে — পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার



No comments:

Post a Comment