কয়েকটি পাপীকবিতা || বিভাবসু
পাপ
চোঁয়ানো অন্ধকার ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে
যেন দেবীভীষণা তাঁর সব ধ্বংস নিয়ে,
মারি ও মড়ক নিয়ে
গ্রাস করছেন আমাদের দেশ ও কাল
সব শুভ ও সুনীতিকে গোগ্রাসে গিলে নিয়ে
তিনি, সেই মহীয়সী
রচনা করছেন রাজকীয় সন্ত্রাস
আবিল ধ্বংসচিত্র
তিনি দুর্মতি আর দুর্নীতির কাঁধে ভর করে
দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আসমুদ্রহিমাচল
অর্ধচন্দ্রখচিত তাঁর দম্ভপতাকা
দেবী নিশাচরী, লোলজিহ্বা
আপৃথিবী ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁর ক্রোধাগ্নি
লোভের ফার্নেস জ্বালিয়ে
গ্রাস করছেন আমারই আয়ু ও আয়ুধ
প্রায় নির্জীব হয়ে আমরা পালন করছি
তার সব ভ্রান্ত অভিলাষ
বিনাশযাত্রায় গায়ে মাখছি তেজস্ক্রিয় অন্ধকার
আমার মাটি এখন দূষিত
আমাদের মানুষেরা ভ্রষ্ট
আমাদের মাটি আজ অহল্যা
আমরা আজ শয়তানশাসিত
একটি রাজনৈতিক সভার ধারাভাষ্য
মিথ্যে আলোয় উদ্ভাসিত হওয়া মঞ্চে
মিথ্যের উজ্জ্বল্যে প্রণত কিছু ধুরন্ধর
মিথ্যের মাধুর্যে উজ্জীবিত কিছু উজবুক
কিছু স্তাবক
কিছু প্রতারক
কিছু ধর্ষকামী
কিছু ধ্বজাধারী
কিছু মিনমিনে
কিছু তালেবর
শয়তানের প্রশস্তি রচনায় ব্যস্ত
মিথ্যের বাগ্মিতায় জেগে ওঠা কিছু শ্বাপদ
মিথ্যের ভেলকিতে আশান্বিত কিছু ধুরন্ধর
মিথ্যের আশীর্বাদস্নাত কিছু চামচে
কিছু ধামাধরা
কিছু অপরিণামদর্শী
কিছু ইতর
কিছু খুনি
কিছু সুযোগসন্ধানী
কিছু বোকা
সম্মোহিত হয়ে শুনছে সেই ধ্বংসকথা
মিথ্যে আলোয় আলোকিত এক নরপিশাচ
দারুন নৈপুণ্যে
মানুষের রক্তে মিশিয়ে দিচ্ছে বিষ
মানুষের মস্তিষ্কে পরিয়ে দিচ্ছে শিকল
আর চারদিকে ম-ম করছে জয়ধ্বনি
দুর্গতি
এরপরও তার মুখ থেকে অসংখ্য মুখোশ খুলে পড়বে
সব মুখোশই নানা কিসিমের মিথ্যে দিয়ে আঁকা
সব মুখোশ এর থিম—‘মানবতাকে হত্যা করে জয়োল্লাস'
তারপর আমরা সেই কুৎসিত মুখোশগুলো নিয়ে
একটা মিথ্যেসাথীর হাট চালু করতে পারব
যাতে পৃথিবীর সব মুখোশধারীরা এসে পছন্দমত
মুখোশ সংগ্রহ করতে পারে
আমরা মনে করি মিথ্যেবাদীরাও মানুষ
তাদেরও এই স্বাধীনতা আছে, ইচ্ছেমতো মুখোশ কেনার বা পরার
এই মৌলিক অধিকারে কেউ বাধা দিতে পারে না
যে বা যারা বাধা দেবে
তাদের কালো হাত ভেঙে দিতে আমরা দ্বিধা করব না
এ ব্যাপারে আমাদের পেয়াদারা সদাজাগ্রত
এরপর উপজাত হিসেবে প্রাপ্ত ভাঙ্গা হাতগুলিকে
জড়ো করে আমরা একটা জ্যান্ত ভাস্কর্য বানাবো তার না দেবো—
‘ন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ’
যাতে প্রতিবাদ করতে কেউ আর হাত তোলার সাহস না পায়
আমরা ধর্ষিতাকেও ফাঁসি দিয়ে প্রমাণ করব যে—
ফাঁসি পাওয়ার অধিকার সবারই আছে
আমরা কেউ চাই
আমাদের এও চাই আরো ফাঁসুরেদের চাকরি দিতে
কারণ তারাও তো মানুষ
বাড়িতে তাদেরও বউ-বাচ্চা আছে
পাপাচারী
আরো অবারিত হয়েছে পাপ
পাপের ফসলে গোলাঘর উপচে পড়ছে
লক্ষ্মীর ভাড়ার থেকে অলক্ষ্মীর খেলাঘর পর্যন্ত
হে অপুংষক, হে অযোনী
তুমি কি অন্ধত্বের ক্ষয়রোগা ঠিকাদার হয়ে উঠেছ
না হলে মানুষের চারদিকে কীভাবে
রচনা করছ লোভের উঁচু-উঁচু গার্ডরেল?
নিজেকে লুকাচ্ছে দম্ভের আড়ালে?
আর প্রতিবাদীর দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে টিয়ার গ্যাসের শেল
জলকামানের ফোয়ারায় ধুয়ে ফেলতে চাইছ
নিজের সমস্ত নৃশংসতা
নীতিহীনতার চূড়ায় উঠে
বিনাশ করছ মানবতার চৌহদ্দি
বিনাশ কাল সমাগত বলে তুমি
তুমি হে দানবী
তুমি হে পুঁতিগন্ধের দেবী
জন্ম দিচ্ছ জারজ অভিব্যক্তি
আর সেই ইশারায়
আরো আরো অবারিত হচ্ছে পাপ
পাপশালা জমজমাট হয়ে আছে
আদি গঙ্গার তীরে
পৈশাচিক
যে নিরুৎসাহ মাঝে মাঝেই আমাকে গ্রাস করে
আমাকে দুর্বিপাকে ফেলে
তার অন্দরমহলে ঢুঁ মেরে দেখি
পচাগলা লাশের পাহাড় জমেছে
দেবী পাপময়ী বসে আছেন শর্পাসনে
দম্ভী, পিশাচাশনে
পুঁতি গন্ধে গুলিয়ে ওঠছে গা
এই সাম্রাজ্যের কোথায়ও আর শুভাচার নেই
মানবিক অভিমুখ নেই
শুধু হত্যাযজ্ঞ, যেন কয়েকশো চেঙ্গিস খাঁ-র সম্মিলিত তাণ্ডব এই
মাঝে মাঝে, ঝাঁকে ঝাঁকে আত্মহত্যারা আসে আমাকে কুরে কুরে খায়
আর প্রতি মুহূর্তে ছিবড়ে করে হৃদয়
হায়! মৃত্যুও এখানে মাফিয়া নিয়ন্ত্রিত
যেন সুস্বাদু মাংসপিণ্ডে মহাভোজ
তাতে কেউ মিশিয়ে দিয়েছে বিষ
আমি বিষাক্ত শরীর নিয়ে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করি
প্রতিবারই ব্যর্থ হই
তবে প্রতিবারই যে হব এমনটা ভাবার কিছু নেই
এবার পিশাচতন্ত্রের পরাজয় নিশ্চিত...
No comments:
Post a Comment