Tuesday, 8 October 2024

শারদীয় সংখ্যা ১৪৩১ || তৃষ্ণা বসাক

 


শ্যামচন্দ্র নাহি রে || তৃষ্ণা বসাক
 
‘শুনল শুনল বালিকা
রাখো কুসুম মালিকা
কুঞ্জ কুঞ্জ ফিরনু সখি শ্যামচন্দ্র নাহি রে…’
 
 
আমাদের সব আছে,
রাতের দখল নেওয়া আছে
অকাদেমি চত্বরে জমায়েত,
জমায়েত ছড়িয়ে পড়ছে কাঞ্চনজংঘা থেকে সুন্দরবন,
মিছিলে আওয়াজ আছে, শ্লোগানের অন্তাক্ষরী খেলা আছে,
 শেষে ছড়িয়ে পড়া আছে,
ছড়িয়ে পড়তে পড়তে ফেরা আছে,
কিন্তু আমাদের শ্যামচন্দ্র নাহি রে,
আমাদের  শ্যামচন্দ্র কোথাও নাহি রে!
 
 
 
আমাদের সঞ্জয় আছে, সন্দীপ আছে,
আছে ভ্রূণ ফেলার ইঁদারা,
সেই ইঁদারার মধ্যে উঁকি মারা চাঁদ,
শুধু শ্যামচন্দ্র নাহি রে, কোথাও নাহি রে!
 
আমাদের ফ্রিজে লাশ থাকে,
আর ফেলে দেওয়া হয় জীবনদায়ী ওষুধ,
আমাদের  স্বাধীনতা দিনে ভেঙে দেওয়া হয় সব আরোগ্য নিকেতন,
আমাদের শাঁখ বাজাবার লোক আছে,
কিন্তু বাঁশি? বাঁশি কে বাজাবে?
তমালের ডাল থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে রাধিকাকে,
কারণ সে বলেছিল সরপঞ্চের দুধে মাদক মেশানো আছে,
আমাদের মাদক আছে, মাধব নেই,
কোথাও, শ্যামচন্দ্র কোথাও  নাহি রে!
 
 
আমাদের পুলিশ শেষ দৃশ্যে আসে,
কিংবা আসেই না,
ওরা চলে গেছে,
যা কিছু ভাঙ্গবার ভেঙ্গে টেঙ্গে চলে গেছে জানার পর
নিশ্চিন্ত হয়ে আস্তে সুস্থে আসে ,
প্যান্টের জিপার লাগাতে লাগাতে রমণতৃপ্ত পুলিশ,
আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে  জেগে থাকা গোলাপি ব্রাটিকে
পেলে এদিক ওদিক দেখে পকেটে পুরে নেয়,
তারপর সেঁদিয়ে যায় নার্সিং কোয়ার্টারের ভেতরে,
ওদেরও ন্যায় চাই যেহেতু!
 
আমাদের পুলিশ কালীপুজোর রাতের
শেষ রোগাসোগা বাড়ির  টুনিবাল্বের মতো,
খুব ক্বচিৎ কখনো জ্বলে ওঠে, বেশিরভাগই নিভে থাকে,
 আর সেই অবসরে  ওরা নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে বিরিয়ানি খেতে পারে!
 
আমাদের এইসব আছে, আমাদের সব আছে,
বিশ্বাস করো, শনিবার বড়ঠাকুর,
মঙ্গলে আজকাল ব্জরঙবলী, লাড্ডু মাস্ট,
গ্ণেশের মোদক কেমন হয় আমরা জানি,
জুম্মাবার চুম্মাবার হুক্কাবার,
গোলাপ দিন, প্রলাপ দিন
জোলাপ দিন-
শুধু আমাদের শ্যামচন্দ্র নাহি রে, শ্যামচন্দ্র কোথাও নাহি রে!
 
 
আমাদের খাদান আছে,
খাদানে জল ঢুকে যাওয়া
নিরন্তর মেঘজল এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় আমাদের
আর তার তলায় ফুটপাথে চলন্ত বিছানা,
মাঝরাতে ছিঁড়ে নেওয়া ফুটন্ত ফুল-
আমাদের ভুলগুলো,
পরবর্তী ভুলের জন্যে অবিচলিত অপেক্ষা-
ট্রেন মিস করা
বারবার ট্রেন মিস করা-
শুধু আমাদের শ্যামচন্দ্র নাহি রে, শ্যামচন্দ্র কোথাও নাহি রে!
 
 
আমাদের পলিগ্রাফ টেস্ট আছে,
তার প্রস্তুতির জন্যে আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যে বলে চলি অনবরত,
তারপর আয়না ভেঙে দিই, আর আমাদের আয়না লাগে না,
পরপর শুনানির ডেট পেরিয়ে যায়,
আমরা প্যাঁচার ঘুম দেখে বেজায় হাসি,
আর হাসতে হাসতে টুক করে বেরিয়ে আর দুটো বডি পাচার করে আসি,
আমাদের বৃন্দাবনের কুঞ্জপথ জুড়ে শুধু লাশ আর লাশ
বিক্রি হবার অপেক্ষায় থাকে,
একটি লাশের পায়ের নূপুর দেখে আমাদের হেঁচকি ওঠে,
আর হেঁচকি তুলতে তুলতেই আমরা গাই
হায় আমাদের শ্যামচন্দ্র নাহি রে,
কোথাও নাহি রে!
 


 

No comments:

Post a Comment