মানুষ যত যন্ত্রনির্ভর হবে তত কবিতার দিকে ঝুঁকবে : সুমিতাভ ঘোষাল
প্রিয়াঙ্কা গুহ : তুমি তো আটের দশকের কবি। এই সময়টার দ্বিতীয় ভাগে তোমার মূলত লেখালিখির সূত্রপাত....
সুমিতাভ ঘোষাল : হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ। আটের দশকের শেষ দিকেই আমার লেখা প্রকাশিত হতে থাকে ক্রমশ। পার্কসার্কাস থেকে অধুনালুপ্ত 'প্রমা' পত্রিকায় 'নীল নৈরাজ্য' নামে একটি কবিতা আমার ছাপা হয়। ওদের প্রকাশনা সংস্থাই নয়ের দশকে আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অরণ্যদেবের চশমা' বের করে।
প্রিয়াঙ্কা গুহ : আচ্ছা, সাতের দশকে বিভিন্ন অস্থির সময়ের টানাপোড়েন, নকশাল আন্দোলন — এসব তখন তো অনেকটাই স্তিমিত । তো, অন্যান্য দশকের থেকে এই আটের দশক অনেকটাই ভিন্ন ও স্বতন্ত্র। এই সময়টা তোমাকে কিভাবে প্রভাবিত করেছিল?
সুমিতাভ ঘোষাল : হ্যাঁ, ঠিকই এই দশকের বাহ্যিক জীবনযাপন অনেকটাই নিস্তরঙ্গ ছিল । প্রত্যক্ষ কোনো সংঘাত বা টালমাটাল অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়নি । তবু বিচ্ছেদ, বেকারত্ব, নিঃসঙ্গতা — এইসব থেকে তো আর দূরে ছিল না আটের দশক। এদিক থেকে বর্তমান সময়ও ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং কবিতার মধ্যেও এইসব কথা উঠে আসাটাই স্বাভাবিক। এসেছেও, তবু আমি বলব এই আটের দশকে বিশেষ কোনো বৈপ্লবিক আদর্শের ঘনবদ্ধতা ছিল না, হয়ত সেটা ছিল না বলেই কবিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগটা অনেক বেশি ছিল ।
প্রিয়াঙ্কা গুহ : তোমার কবিতা কি বিশেষ ভাবে কোনো দর্শন আশ্রিত ?
সুমিতাভ ঘোষাল : যদি শুরুর দিকটার কথা বলো, তো আমি বলব — অবশ্যই কোনো বিশেষ দর্শন বা শুদ্ধতা বা কবিতা ম্যানিফেস্টোর প্রতি আলাদা করে আমার ঝোঁক ছিল না। লেখাতেও তার প্রভাব সেভাবে এসেছে বলে আমার মনে হয় না। পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত 'ম্যাডাম আপনি', 'অত কিছু ভাববেন না', 'সাঁকো নাড়াবার আগে' এইসব কাব্যগ্রন্থে অবশ্যই ভিন্নধর্মী স্বাতন্ত্র বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। যে কারণে এরা একে অপরের থেকে আলাদা । কনটেন্ট এবং ফর্ম দুভাবেই ।
তবে যদি এককথায় বলতে বলো , তাহলে বলবো , বিশ্বাসহীনতা থেকে বিশ্বাসের দিকে , নৈরাজ্য থেকে নীলিমার দিকে গড়িয়ে যাওয়াই আমার কবিতার দর্শন ।
প্রিয়াঙ্কা গুহ : ' ম্যাডাম , আপনি ' এবং ' মন কেমনের বাঁশি ' বই দুটোর মধ্যে ভাবনা এবং শৈলীর বিস্তর তফাৎ । কিছু বল
সুমিতাভ ঘোষাল : হ্যাঁ ঠিকই বলেছ , এই 'মন কেমনের বাঁশি ' বইতে শ্লেষ বিষয়টা একদমই নেই । এটা আমার জীবনের একটি অনপনেয় দুঃখজনিত ঘটনার পর লেখা । বিষাদ , মনখারাপ আর মৃত্যুকে সামনে থেকে মেনে নেওয়া, মৃত্যুর সঙ্গে দাবার ঘুটিতে বসা এর উপজীব্য । আর " ম্যাডাম ,আপনি " বিষয়টাই সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র । এমন এক মহিলাকে উদ্দেশ্য করে কবিতাগুলি লেখা যিনি বয়সে , প্রতিপত্তিতে , সামাজিক গরিমায় আমার থেকে অনেক বড় । তির্যকতা এবং শ্লেষ এই কবিতাগুলির প্রাণ ভোমরা । তাছাড়া আমার সব বইতেই কবিতার ভাষা কিছুটা হলেও ভিন্ন
প্রিয়াঙ্কা গুহ : অনেকে বলেন তোমার " ম্যাডাম, আপনি " তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে লেখা । কথাটা কি ঠিক ?
সুমিতাভ ঘোষাল: কথাটা একেবারেই ঠিক নয় । আসলে লেখাগুলি কোনো বিশেষ নারীকে নিয়ে নয় । কিন্তু ওই যে বললাম, এমন সব নারীদের নিয়ে লেখা যারা প্রতিপত্তি, বয়স এবং সামাজিক গরিমায় আমার থেকে অনেক বড় ।
প্রিয়াঙ্কা গুহ : ক্যাকটাসের গায়ক সিধু তো তোমার কবিতায় সুরারোপ করেছে । কবিতা থেকে গান হলে কি কবিতার ক্ষতি হয় ?
সুমিতাভ ঘোষাল : এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে । কবীর সুমনের গান তো কবিতাই । সিধু ' সন্ত্রাস ' নামে যে গানটা করেছে সেটা সন্ত্রাসের অন্তঃসারশূন্যতা নিয়ে লেখা। ওই কবিতায় একটা লাইন আছে, --- "দিকে দিকে ব্যুহ মৃত্যুর , তুমি কাকে নিয়ে ঘর করবে ? " আবার কলকাতা পুলিশের মাদকবিরোধী প্রচারের জন্য আমাকে একটা গান লিখতে হয়েছিল। এছাড়া আমার কথায় সুর দিয়ে আরও বেশ কয়েকজন গান করেছে । প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি , আমার গানের এবং কবিতার ভাষা কিন্তু আলাদা ।
প্রিয়াঙ্কা গুহ : এই যে তুমি সোশ্যাল মিডিয়ার কথা বললে , এই যে ফেসবুক, বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, ওয়েব ম্যাগাজিন — এসবের গুরুত্ব ও ভূমিকা দিনে দিনে কি বৃদ্ধি পাচ্ছে? বাংলা কবিতামনষ্ক পাঠকের কাছে এর মাধ্যমে কতটা মূল্যায়িত হচ্ছে কবিতা?
সুমিতাভ ঘোষাল : অবশ্যই বৃদ্ধি পাচ্ছে, লাইক বা কমেন্ট কিংবা ভিউজের পার্সেন্টেজের বিচারে কিছু বলছি না। যেটা সবচেয়ে বড় কথা, তা হলো — এমন কিছু পাঠক আছেন যাঁরা ফেসবুকেই আমার কবিতা প্রথম পড়েছেন। কিন্তু ভালো লেগেছে বলে আমার বই সংগ্রহ করে কবিতা পড়েছেন এবং আমাকে তা জানিয়েছেন। যখন কোনো মফস্বলের মেয়ে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে লিখে জানায় 'আপনার কবিতা আমার খুব ভালো লাগে'। সেটাকেও তো একটা পাওয়া বলেই মনে হয়। তাছাড়া অনেক সিরিয়াস গ্রুপ রয়েছে, যারা কবিতা বিষয়ক বহু সমৃদ্ধ আলোচনা এবং দুর্দান্ত বুক রিভিউ করছে। বহু মানুষ উৎসাহিত হয়ে সেই বিষয়ে মতামত জানায়, নতুন বই সংগ্রহ করে। আসলে ফেসবুক অনেক তাড়াতাড়ি বহু মানুষের কাছে কবিতাকে পৌঁছে দিতে পারে। অনেক অনলাইন পোর্টাল, ওয়েব ম্যাগাজিন বহুসংখ্যক পাঠকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বলতে পারো। এদের নিজেদের কিছু পাঠকগোষ্ঠীও আছে। তাছাড়া এখানে সম্পাদনার মতন একটা ব্যাপার তো আছে ।
প্রিয়াঙ্কা গুহ : কবিতা একটা ভাষা থেকে আর একটা ভাষায় কতটা অনুবাদ করা সম্ভব!
সুমিতাভ ঘোষাল : সত্যি কথা বলতে গেলে যেটা বলতে হয় একটা কবিতার যেটুকু অংশ বিশুদ্ধ কবিতা সেইটুকু কোনোভাবেই অনুবাদ করা যায় না। কিন্তু যিনি অনুবাদ করছেন তিনি যদি উভয় ভাষাতেই দক্ষ হন এবং তাঁর যদি কবিতাকে হৃদয়ঙ্গম করার, সেই নির্যাসটুকু মর্মের গভীর থেকে আত্মস্থ করার ক্ষমতা থাকে, সেইসঙ্গে থাকে উপযুক্ত শব্দ ব্যবহারের দক্ষ মুনশিয়ানা; তাহলে তিনি মূল কবিতার কাছাকাছি অনুবাদের মাধ্যমে আমাদের পৌঁছে দিতে পারেন। এইটুকু জায়গা গ্রহণ করা ছাড়া আমাদের আর কোনো গত্যন্তরও নেই।
প্রিয়াঙ্কা গুহ : তুমি যেহেতু 'মাসিক কবিতাপত্র' সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত, এর আগে "খোলামন " পত্রিকাতেও ছিলে। কিছুদিন 'পদ্য গদ্য সংবাদ' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছ । লেখালেখির ক্ষেত্রে লিটল ম্যাগাজিনের ভূমিকা কতখানি বলে তোমার মনে হয়?
সুমিতাভ ঘোষাল : লেখালেখির ক্ষেত্রে সবরকম ম্যাগেরই বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সে লিটল কিংবা বিগ যাই হোক না কেন। তবে লিটল ম্যাগের ক্ষেত্রে গুরুত্বটা অনেক বেশি, কারণ লিটল ম্যাগাজিন ঝুঁকি নিয়ে বহু নতুন লেখকের নিরীক্ষামূলক লেখা ছাপতে পারে। ভিন্নধর্মী বা এক্সপেরিমেন্টাল লেখার মৃগয়াক্ষেত্র অবশ্যই লিটল ম্যাগাজিন। যা বরাবরই নতুন লেখকদের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছে। তবে লিটল ম্যাগাজিনের নাম নিয়ে এমন কিছু গতরজব্দ পত্রিকা বেরোয়, যাদের পুঁজি কিংবা যোগাযোগ সবই বৃহদাকারের কিন্তু পরিচালকগোষ্ঠী মনে করেন লিটল ম্যাগাজিনের তকমা থাকলে বিশেষ গুরুত্ব পাওয়া যাবে । আসলে অসংখ্য উন্নত স্তরের ভালো ভালো লেখা নিয়মিত বহু ছোট পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও হচ্ছে, বিভিন্ন ক্রোড়পত্র ও মহার্ঘ্য সংখ্যা বিশেষ গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে । এতে লিটল ম্যাগাজিনের গুরুত্ব যে কতখানি বাড়ছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কোনও সাংস্কৃতিক বিপ্লব নয়, বড়সড়ো আন্দোলনও নয়, স্রেফ ভেতরের আলোড়ন আর উদ্দীপনায় বহু মানুষ উৎসাহিত হচ্ছেন লিটল ম্যাগাজিনের প্রতি। তবে এই মুহূর্তে লিটল আর বিগের দূরত্ব অনেক কমে এসেছে ।
প্রিয়াঙ্কা গুহ : তুমি সমাজমনস্ক কবিতা লিখেছো তবু তোমার রোমান্টিক কবিতার জনপ্রিয়তা বেশি। অস্বীকার করবে ?
সুমিতাভ ঘোষাল : প্রথমত তথাকথিত অর্থে রোমান্টিক কবিতা বলতে যা বোঝায় সেরকম কবিতা আমি লিখি না। আবার এটাও সত্যি , সেই অর্থে সমাজ-সচেতন কবিতা বলতেও যা বোঝায় সেটাও আমি লিখি না।
আমার সমাজ সচেতন কবিতার মধ্যেও মিশে থাকে রোমান্স, আর রোমান্টিক কবিতার মধ্যেও মিশে থাকে সমাজ-সচেতনতা। আমার ভিতর থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যেটুকু আসে, সেটাই আমি। তাছাড়া তথাকথিত অর্থে জনপ্রিয় কবি বলতে যা বোঝায় , সেটাও আমি নই।
প্রিয়াঙ্কা গুহ : কবিতা ছাড়াও তো মুক্তগদ্য, ফিচার ইত্যাদি বহু লিখেছো । সাক্ষাৎকার নিয়েছো , সম্পাদনা করেছো এমনকি তথ্যচিত্রও পরিচালনা করেছো জানতে পেরেছি.....
সুমিতাভ ঘোষাল : তোমার কথা অনুযায়ী মুক্তগদ্য নিয়েই প্রথমে বলি। আমার অনেকগুলি মুক্তগদ্য সংকলিত করে বইমেলায় ইতিকথা পাবলিকেশন একটা নতুন বই বের করেছে । খনিজ জীবনের প্রতিস্বর। আর সাক্ষাৎকার তো অনেকেরই নিয়েছি। অপর্ণা সেন, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, কবীর সুমন থেকে শুরু করে অনেকেরই। সুমনের প্রথম ক্যাসেট বেরোনোর পর আনন্দবাজারে ওঁর প্রথম ইন্টারভিউ আমিই নিয়েছিলাম। আর সম্পাদনার কথা তো তুমি আগের প্রশ্নেই বললে। একটা ব্যাপার জানো তো,সেই অর্থে আমি কিন্তু কবিতা কমই লিখেছি। গদ্য বা ফিচার অসংখ্য লেখা হয়েছে। আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট সব বিষয়েই লিখতে হয়েছে আমাকে। পত্র-পত্রিকা ছাড়াও দুটো বই সম্পাদনা করেছিলাম। একটা বাংলায়, একটা ইংরেজিতে।
বাংলা বইটির নাম 'তখন তসলিমা, এখন তসলিমা'। ইংরেজিটা হল 'ডেমোক্রেসি : ইন্ডিয়ান সেকুলারিজম এন্ড দ্য কেস অফ তসলিমা নাসরিন।' এটা সুনন্দন রায়চৌধুরীর সঙ্গে যুগ্মভাবে সম্পাদনা করা। এছাড়া আমি আন্দামানের পর্যটন দপ্তরের জন্য করা কয়েকটি তথ্যচিত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। নিজে দুটি তথ্যচিত্র পরিচালনা করেছি। বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে করা একটি তথ্যচিত্র, নাম 'ওয়াকিং স্টিকস্' । দ্বিতীয়টি যৌনপল্লীর বাচ্চাদের নিয়ে করা । নাম 'স্বপ্ন, সূর্যমুখী'। এই তথ্যচিত্রে মূলত যে জিনিসটা ধরতে চেয়েছিলাম তা হল কনসেপ্ট অফ মাদারহুড । ওদের জন্য কিভাবে বদলে যায় , সেটা। এই হল কবিতা ছাড়াও আমার অন্যান্য ব্যাপার-স্যাপার।
প্রিয়াঙ্কা গুহ : বাংলা কবিতায় গোষ্ঠী রাজনীতি নিয়ে তোমার কী মত ?
সুমিতাভ ঘোষাল : বাংলা কবিতায় গোষ্ঠী রাজনীতি তো আজকের নয় , বহুদিনের । অনেক শক্তিশালী কবি গোষ্ঠী বা ক্ষমতার বলে বলীয়ান কবির ব্যক্তি রাজনীতির শিকার হয়ে কালের অতলে চুপি চুপি মরে গেছেন । এখন সেটা কদর্য জায়গায় পৌঁছেছে । আগে একটা চক্ষু লজ্জার ব্যাপার ছিল । এখন আর শালীনতার সেই জায়গাটুকুও অবশিষ্ট নেই । যিনি দাক্ষিণ্য দেখাচ্ছেন তারও নেই যিনি নিচ্ছেন তারও নেই । ফলতঃ একজন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন কবি এই দলবাজির বাইরে থাকাটাই শ্রেয় মনে করছেন । তবে যার কব্জির জোর আছে তিনি সবকিছুর পরেও ফুটে বেরোবেন ।
প্রিয়াঙ্কা গুহ : প্রকাশনা সংস্থা প্রতিভাস থেকে তো আপনার শ্রেষ্ঠ কবিতা এইবছর প্রকাশিত হলো। পাঠকমহলে সাড়া কিরকম পাচ্ছেন?
সুমিতাভ ঘোষাল : একটা কথা খুব প্রচলিত রয়েছে সেটা হল — কবিতার বই বাজারে কাটে কম, পোকায় কাটে বেশি। সেটা অবশ্য এই ক্ষেত্রে হয়নি। বহু পাঠক স্বতঃস্ফূর্তভাবে বইটি সংগ্রহ করেছেন এবং পড়ে জানিয়েছেন, আমার লেখা তাঁদের স্পর্শ করে গিয়েছে। খুব ভালো লেগেছে তাঁদের। এটুকুই তো পাওনা ! সবচেয়ে বড় কথা, এত তাড়াতাড়ি এইরকম সাড়া পাওয়ার বিষয়টা নিশ্চয়ই আমার কাছে আনন্দের । এর আগে শব্দহরিণ থেকে সত্যপ্রিয় মুখোপাধ্যায়, আমার 'প্রিয় ২৫' বার করেছিল। তাতেও বহু পাঠক উৎসাহিত হয়েছিলেন।
প্রিয়াঙ্কা গুহ : অসংখ্য সিরিয়াস পত্রপত্রিকায় লেখা ছাড়াও, অনেক জায়গা থেকে সম্মাননাও তো তুমি পেয়েছো । এর মধ্যে 'সুধীন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি পুরস্কার' , 'কালকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার' এসব তো আছেই। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকেও মনে হয় 'পূর্ব-পশ্চিম সাহিত্য পুরস্কার' পেলে। এছাড়া ফেসবুক মারফৎ জানতে পারলাম তুমি সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল পুরস্কার পাচ্ছো । এই প্রসঙ্গে কি বলবে?
সুমিতাভ ঘোষাল : তেমন কিছু তো বলার নেই, আবার কিছুটা বলারও আছে। সেটা হল —পত্রিকা গোষ্ঠী, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজক, সকলে মিলে যে উদ্যোগ নিচ্ছেন তা একজন কবিকে সম্মানিত করার। বাংলা সাহিত্যে এর গুরুত্ব অবশ্যই উজ্জ্বল। একজন কবিকে , সেই অর্থে স্বীকৃতি আরও ভালো লেখার দিকে নিয়ে যায় ।
এর বাইরেও এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এতজনের উৎসাহ ও প্রেরণা পেয়েছি , সেটাও অনেক । কিন্তু এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, পুরস্কারের তুলনায় তিরস্কার , বঞ্চনা এবং অবজ্ঞা বরং আমায় দিয়ে অনেক বেশি কবিতা লিখিয়ে নিয়েছে ।
প্রিয়াঙ্কা গুহ :এখন যারা নতুন লিখতে এসেছে তাদের সম্পর্কে তোমার কি বলার আছে ?
সুমিতাভ ঘোষাল : এ ব্যাপারে গতানুগতিক কথা বলা ছাড়া উপায় নেই । অনেক কবিতা লেখা হচ্ছে ।অনেকেই ভালো লিখছেন । চমকে দেওয়ার মতো লেখালেখিও করছেন কেউ কেউ । নতুন কবিদের সবাইকার জন্য শুভকামনা ।
প্রিয়াঙ্কা গুহ : মানুষ এমনিতেই কবিতা কম পড়ে। আর ক্রমশই মানুষ যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছে । আগামী দিনে আদৌ কবিতা বিষয়টি থাকবে বলে কি তুমি মনে করো ?
সুমিতাভ ঘোষাল: মানুষ যত যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়বে ,ততই সে কবিতার কাছে আশ্রয় খুঁজবে । আরো বেশি করে কবিতাকে আঁকড়ে ধরবে । কবিতা বিষয়টি তো থাকবেই , মানুষ আরো বেশি বেশি করে কবিতা পড়বে।
অপূর্ব অকপট আলাপচারিতায় কবি পরিচয় হলো
ReplyDelete