Friday, 13 October 2023

উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : ভ্রামণিক, রিতা মিত্র

 


কোলাখাম
রিতা মিত্র


 এপ্রিল মাসে উত্তর বঙ্গ ভ্রমণের সুচিতে দুই দিন রাখা হয়েছিল কোলাখাম এর জন্য। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা খুব ভালো দেখা যায় তার সঙ্গে বাকি শৃঙ্গ গুলি যেমন কাবু, কাবরুডোম, পানডিম, সিনিয়ালচু দর্শন করা যায়। 
কোলাখাম কালিম্পং জেলার একটি গ্রাম। যার চারপাশে কালিবং জঙ্গল। এটি আবার বৃহত নেওড়া ভ্যালির রিজার্ভ ফরেস্টের অন্তর্ভুক্ত। 
লাভা থেকে আট কিলোমিটার দূরে এই গ্রাম। 
গরুমারা জঙ্গল ছেড়ে যত উপরে পাহাড়ের দিকে উঠছে গাড়ি  ততই মেঘ আর কুয়াশার চাদর আমাদের লেপ্টে ধরছে। একটু দূরের কিছু দেখা যাচ্ছে না। 
দেড়টা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম কোলাখাম গ্রামে "Silent vally homestay তে যা আগে বুকিং করা ছিল। দুটি ঘর আমাদের জন্য। একটিতে দুই বন্ধু প্রতাপ ও স্বরাজ অন্যটিতে আমি আমার দিদি ও পাপিয়াদি। চার বেলা খাওয়া নিয়ে প্রতি দিন মাথাপিছু 1300/। খাওয়া সেরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম ছাঙ্গে ফলস দেখতে। যা ছয় কিলোমিটার দূরে। অপরুপ সুন্দর। অনেক নিচে নামতে হয়। উঠতে দম ফুরিয়ে আসে। চারিদিকে ঘন সবুজ। পাখির ডাক। জলের শব্দ। কুয়াশায় মোড়া আবহাওয়ায় আবার বৃষ্টি নামল। অগত্যা চা পান করে শরীর গরম করা ছাড়া উপায় নেই। সেখান থেকে ফিরে এলাম হোমস্টেতে। অন্ধকার নেমে এল। আমরা ফিরতেই গরম গরম পকোড়া আর এক কেটলি চা চলে এল রুমে কম্বলে পা ঢুকিয়ে চা পানের মজাই আলাদা। 

কতক্ষণ গান গাওয়া হল। মোবাইলে লুডো খেলা হল। সময় আর পেরোতে চায় না। ব্যালকোনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। কূয়াশার খেলা চলছে। হঠাৎ কারেন্ট অফ। মোমবাতি নেই। বসে বসে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা দেখছি। আলো এলো। আমাদের ছায়া পড়ল ঘন কুয়াশার শরীরে। 
রাত সাড়ে আটটায় রাতের খাবার তৈরি জানিয়ে গেল। ডাইনিং হলে যেতে হবে। জল যেন করাত। হাত কেটে যাচ্ছে।  গরম ডাল, তরকারি, মুরগির মাংস ও রুটি। নিমিষেই সাবাড়। 

পরের দিন সকালে উঠে আমি ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়লাম আসে পাশের ছবি তুলতে। কত পাখি। ফুরুত আর ফুরুত। ধরা দেয় না লেন্সে। বাড়ির কুকুর টা সঙ্গে সঙ্গে চলছে যেন ওর ঘাড়ে বড়ো দায়িত্ব আমাদের খেয়াল রাখার সুরক্ষা দেবার। আমি দাঁড়ালেই সে দাঁড়ায় বা পথে বসে পড়ে আর আমি হাঁটলেই সে হাঁটে লেজ নাড়ে। ফিরে এলাম। এবার স্নান সারতে হবে তৈরি হতে হবে। 

সাড়ে নটার সময় ড্রাইভার চলে এলো। আমরা রিশপ , লাভা যাব । পাহাড়ি রাস্তার পাক আর সবুজের ঘ্রাণ নিতে নিতে পৌঁছে গেলাম ফাফরখেতি বলে একটি জায়গায়। একটি পাহাড়ি নদী কুলকূল করে বয়ে যাচ্ছে পাথর ডিঙিয়ে ব্রিজের নীচ দিয়ে। একটি বড়ো শিলাখন্ড রয়েছে পথের ধারে তার উপর বজরঙ্গবলির মন্দির। আগেও দর্শন করেছি। আবারও করলাম। তবে এবার নদীর ধারে যাইনি। জল কম। দুই ছেলে কিছুক্ষণ ফটোসুট করে এল। বড়ো দুই দিদি চা আর মোমো অর্ডার করল। সেখান থেকে লাভা মনেস্টেরি। তোরণ দ্বার পেরিয়ে বেশ উঁচুর দিকে হাঁটতে হয়। দিদি যাবে না। ছেলে দূটো গেল আর আমার চোখ শুধু পাখির খোঁজে ব্যস্ত। পেলাম বেশ কয়েকটিকে দেখতে। তবে ছবি খুব কম তুলতে পারলাম আলোর অভাব। বৃষ্টিও পড়ছে টুপটাপ। শেষে দিদিকে প্রায় জোর করে ধরে মনাস্ট্রি দর্শন করালাম। সেখানের এক দোকান থেকে কিছু কেনাকাটা হল। নিচে নেমে বাজার হোটেল দোকান। একটি হোটেলে কফি ও চিকন মোমো অর্ডার হল। আবার ফেরা। দুপুরের খাবার খেয়ে রিশপের পথে একটি ইকো পার্ক দর্শন করা হল। 

বিকেলে আমরা চারজন হেঁটে হোমস্টের আসেপাশে ঘুরতে বেরুলাম। আন্টি ওই দেখো হরিণ। প্রতাপ আমার হাত চেপে ধরেছে উত্তেজনায়। এই গ্রামে হরিণ? ছাগল হবে। কিন্তু নিমেষে গেল কই? দাঁড়িয়ে পাহাড়ি ঢালে নজর ঘোরাচ্ছি সকলে। খচখচ আওয়াজ। কই কই? ওইতো গাছের গুড়ির কাছে পাথরের উপর খয়েরি রঙের। ঠিক সকলে দেখতে পেলাম। সেও ঘাড় ঘুরিয়ে আমাদের দেখছে। হ্যাঁ ওটা মাস্ক ডিয়র। স্বাধীন ভাবে ঘুরছে। কোনো পিঞ্জর বন্দি নয় সে। 
অনেক পাখি দেখলাম। ফিরে এলাম। মন চা চা ডাকছে। গরম গরম মোমো আর চা। জমে গেল আড্ডা। 
পরেরদিন সকালে উঠে আবার সেই সারমেয়র সঙ্গে পাখি দেখতে বেরিয়ে পড়লাম। আজ একটু রোদ রোদ ভাব। বেশ কিছু পাখির ছবি তোলা গেল। 
 আগামী ডেস্টিনেশন কালিম্পং এর ডেলো পাহাড়। গাড়ি ছুটল নিজের ঠিকানার দিকে। বিদায় কোলাখাম। 






1 comment:

  1. দেবলীনা15 October 2023 at 11:07

    অসাধারণ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পড়লাম দিদি তোমার কলমে

    ReplyDelete