সর্বস্বান্তপুরের আভা
প্রকাশ ঘোষাল
চতুর্দিক অন্ধকার। গঙ্গার ঘাটে সে পা ডুবিয়ে বসে আছে। জলের খেয়ালে জল খেলছে। হাওয়ার ছাঁকনিতে নদীর ওপর চাঁদের গুঁড়ো ছড়িয়ে পড়ছে।
বছরখানেক হলো, সজলের জমি দখল করে নিয়েছে গাঁয়ের এক মাতব্বর। পঞ্চায়েতে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। এমনকি ভাগচাষী হয়েও বাঁচতে চেয়েছিল। তাতে কি আর সংসার চলে! মরা মাঠ থেকে ফিরে এসে মানুষটার আধপেটা খাওয়া, তারপর ঘুম। এইসব দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল আভা। দুটো সুখের কথা কইলে যদি মানুষটার মতিগতি ফেরে এই ভেবে বিশালাক্ষীর কাছে মানত পর্যন্ত করেছিল সে। বুক খুলে কতবার বলেছে- তোমার কি একটুও ইচ্ছে করে না গো।
কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়। তবুও ওর পেটানো শরীর দেখলে মায়া হতো খুব। অভাবের সংসার। দিনের পর দিন পাতা উনুনের পাশে শরীর গড়িয়ে গেছে। ভাত ফোটেনি। তবু মুখে রা পর্যন্ত কাটেনি সে। কিন্তু ঐ যে ঘুম - ঐ ঘুমই তার শেষে কাল হলো।
এখন তো ঘরে দু-দন্ড ঠাঁই পাবার জো নেই। সজল চলে যাবার পর থেকেই শাশুড়ির সেই একই বুলি - ভেবেছিলুম ঘরে লক্ষ্মী এয়েচে। ও মা, এখন দেখচি সাক্ষাৎ ডাইনি। গাঁয়ের আর কারোর শুনতে বাকি নেই।
আভা টের পেল- পায়ের তলায় কি যেন সরে সরে যাচ্ছে। জলের আছড়ে পড়ার শব্দ।
-তুমি কে গা? নাম কি? কোত্থেকে এয়েচ? সে চারপাশ ঘুরে তাকাল। ঠিকমতো ঠাহর হলো না।
-সর্বস্বান্তপুর। জলের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে সে বলল।
-সেটা কোনদিকে গা?
-ঐ - ঐ দক্ষিণ দিকে।
-আ মলো যা! মুখপুড়ি বলে কি?ভাতারখাকির কতার ছিরি দেক।
এদিকে নদী ফুলছে।আভার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তারাগুলো আজ যেন একটু বেশিই জ্বলছে।
সে দেখল -ওপারে লম্বা রেখা বরাবর এক গভীর শূন্যতা। ভারি পায়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। আর জলের মাথায় তখন একরাশ ঘুম।
দৈন্যতা আর বাস্তবতার মুখোমুখি করালো দাদা তোমার কলম
ReplyDelete