চোরাবালিতে রোদ
নার্গিস পারভিন
ভোর পড়ে থাকে দেশলাই বাক্সে। শিশুদের ভবিষ্যৎ কোচিং এর ক্লাসে। আকাশের নীল বুকে দূষণের কালো জমে থরে থরে। কালবৈশাখী ঝড় নাম বদলে ফিরে ফিরে আসে পৃথিবী জুড়ে। বোধশূন্য চেতনায় ঘটনার ঘনঘটা-একের পিঠে এক। স্লাইডিং শো এর মত সরে সরে যায় আমাদের চেতনাহীনতা। তারই মাঝে ঘটে যাওয়া অ্যাক্সিডেন্টের মৃতদেহ সরাতে সরাতে মর্গে কাজ করা ছেলেটি ডুকরে কেঁদে ওঠে। যদিও সেই আন-আইডেন্টিফায়েড নিথর যুবকটির সে ছেলেটি কেউ নয়! যদিও সেই আন-আইডেন্টিফায়েড পাঁচ বছরের শিশুটির সে কেউ নয়! যদিও সেই আন-আইডেন্টিফায়েড নিথর পড়ে থাকা মায়ের সে কেউ নয়! বড় কাছ থেকে দেখেছে সে বেদনার চিহ্ন! বড় কাছ থেকে দেখেছে সে নিথর শরীরের অক্ষমতা আর স্বপ্নালু চোখের কি সূক্ষ্ম ফারাক টুকু! তারপর একসময় সব থেমে থাকা ভুলে আবার চলতে থাকে জীবন রেলগাড়ি চড়ে। টিভির চ্যানেলে বদলাতে থাকে দৃশ্যপট। যেমন শিশুর পৃথিবী থেকে মুছে গেছে নামতার ঘর। ম্যাথ শেখার সহজ উপায় এখন অ্যাবাকাস। না শিখলে ট্রিক বৃথা সময় নষ্ট; ব্যর্থ কম্পিটিটিভ এক্সাম, বিজ্ঞাপনে এমনই শুনি। আর সব বাবা-মায়ের মত আমিও দুষ্ট একই দোষে। তুমিও থাকবে না বেঁচে।পৃথিবীর বুকে সুনামির মত তীব্র গতিতে আসছে যন্ত্র মানুষের সব কাজ কেড়ে নেবে বলে। অবশেষে সারি সারি লাইনে দাঁড়িয়ে একটাই গান গাইবে সবাই চোখ বুজে, সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট। দেশ-বিদেশ সকলের একই নীতি সুযোগের সদ্ব্যবহারে যত তুমি সিদ্ধহস্ত ততই তোমার যশ খ্যাতি।পৃথিবীজুড়ে তাই গিরগিটি আজও রং বদলায়। তখনও মা-শালিক মুখে কীট নিয়ে ফেরে শিশুদের তরে।যদিও নাগরিক পৃথিবীর কোলাহলে ক্রমশ বিলুপ্তমান শালিকের কিচির-মিচির দূরে দূরান্তে! তখনও কবি বিরহ ভুলতে ছুটে যায় বনানীর বুকে। যদিও প্রেমিকা তার, ব্যস্ত শহুরে প্রাত্যহিকতায়।
আর সবার মত রোজ রোজ আমিও হাসি, আমিও কথা বলি, খাই, ঘুমাই। নিঃসঙ্গতা আমারও জানালার সামনে এসে দাঁড়ায়। আমাকে সম্ভাষণ করে, কুশল জানে। তাকে ভিড়ের মাঝে ঠেলে, হাতে হাত রেখে, ভিড়ের মাঝেই উধাও হয়ে যাই; আবার সূর্য উঠবে বলে। আমিও কলিং বেল শুনে ছুটে যাই,দরজা খুলি।
No comments:
Post a Comment