Friday, 13 October 2023

উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : প্রবন্ধ , পাপড়ি ভট্টাচার্য

 


খ্যাতির সিংহাসন 
পাপড়ি ভট্টাচার্য

    এই খ্যাতির সিংহাসনে বসতে চায়না এমন মানুষ সংসারে দুর্লভ।সবাই এই সিংহাসনে বসার জন্য ব্যাকুল ।এই ব্যাকুলতা অপরাধ নয়।সব রকম মানুষের মধ্যেই আছে খ্যাতির মোহ।সবাই চায় তাদের কাজের প্রশংসা। শিল্পী চান তাঁর শিল্পের সম্মান, কবি চাঁন তাঁর কবিতার সঠিক মূল্যায়ন । লেখক চান পাঠকের তুমুল গ্রহণ যোগ্যতা। দিকে দিকে তাঁদের নাম যশ ছড়িয়ে পড়ুক,সবাই চিনুক জানুক।খ্যাতির অপর নাম অমরত্ব। মানুষ মৃত্যুর পর স্মৃতির মাধ্যমে বেঁচে থাকতে চায় তাদের প্রিয়জনদের মধ্যে।অক্ষয় হয়ে অক্ষত থাকে অনেক সৃষ্টিশীল কাজ।তাই স্রষ্টার কাজ ভালো সৃষ্টি করা।সেই সৃজনে নিজে যেমন আনন্দ অনুভব করেন তেমনি অন্যকেও আনন্দ দিতে পারেন।
    তবে খ্যাতির মোহ যেন রাজনৈতিক নেতাদের মত না হয়। সেই ভয়ঙ্কর মোহ মানুষের অকাল মৃত্যু ডেকে আনে ক্ষমতার মোহ আর খ্যাতি এক নয়।
  আদর্শ দিয়ে শুরু করে তাঁরা আদর্শকে মই হিসেবে ব্যবহার করে রাতারাতি খ্যাতির সিংহাসন দখল করে সেই আদর্শ বিসর্জন দিয়ে দেন। এদের কথা বলতে গেলে এসে যাবে মানব জাতির কল্যাণ,অকল্যান, জনসভায় বক্তৃতা, সংবাদিক, ফটোশ্যুট, সোস্যাল মিডিয়া, টিভির প্রচার ইত্যাদির মাধ্যমে খ্যাতি আর খ্যাতি।
  আমি এ প্রসঙ্গ বাদ দিচ্ছি।  
        

  (২)

  আমি মনে করি মাটিতে ফসল ফলায় যে কৃষক সেও চায় তার ভালো ফলনের নাম যশ ও অর্থ। তবে না তার কাজে উৎসাহ বাড়বে।
  কিন্তু সমস্যা হলো এখন প্রযুক্তির যুগ।সেই সুবাদে কবি, লেখক, শিল্পীরাও বন্যার গতিতে খ্যাতি চান। কিন্তু শিল্পী বা কবি, সাহিত্যিকদের খ্যাতি বরাবর একটু অন্যরকম।লেখকরা খ্যাতি পাবার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন।লেখার প্রতি সৎ থাকতে হয়। তবে লেখার জন্য প্রতিভা থাকাটা সবচেয়ে বড় কথা। সেটা ছাড়া লেখক হিসেবে খ্যাতির সিংহাসন অর্জন করা সম্ভব নয়। তবে আজকাল কবি লেখকদের আত্মপ্রকাশের জন্য হাজারো বানিজ্যিক,অবানিজ্যিক পত্র -পত্রিকা এবং তাদের নিজস্ব কিছু পাঠক ও সম্পাদক বন্ধু এবং সংগঠকদের সৌজন্যে তাঁদের লেখা ছাপা বা কবিসম্মেলনে ডাকাডাকি, সাহিত্যিকদের সাহিত্যসভায় সম্মাননা ইত্যাদি পেয়ে লেখক মর্যাদা পেয়ে যান অনায়াসে। তবে এক্ষেত্রে তাঁর লেখা খ্যাতি না পেলে,আপামর পাঠককুল তাঁকে সাদরে বরণ না করলে প্রথমে জনপ্রিয়  হলেও শেষমেষ তিনি হারিয়ে যান চিরতরে।
  পরিশেষে একটাই কথা সাহিত্যে জনপ্রিয়তা একধরনের রহস্যময় আবরনে আবৃত। অনেকে জীবদ্দশায় খ্যাতি পাননা। নীরবে সারা জীবন সাহিত্য সাধনায় মগ্ন থেকেছেন । দেখা গেছে তিনি মৃত্যুর পর খ্যাতির অধিকারী হয়েছেন। আসলে কার কি কারণের উপর খ্যাতি আসে কেউ বলতে পারেনা । তবে মৃত্যুর পর খ্যাতির সিংহাসন পেয়ে লেখকদের কোনো লাভ নেই। তবে লাভ হয় দেশ বা জাতির। ইতিহাসের খ্যাতির সিংহাসনে তাঁর সৃজন কর্ম অক্ষয় সম্পদ হয়ে থাকে।
    আমার এই নিবন্ধের প্রধান বক্তব্য এই খ্যাতির পিছনে দৌড়ে বা দৌড়াতে পারলে অনেক কম লিখেও বা ভালো না লিখেও যে খ্যাতির সিংহাসন তাঁরা পাচ্ছেন সে কবি শিল্পী বা সাহিত্যিক হয়তো মানসিক তৃপ্তি পান। কিন্তু যে মুহূর্তে তিনি মৃত্যুবরণ করেন তারপর তাঁকে আর কেউ মনে রাখে কি?
    ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে কিন্তু তা হাতে গোনা।





No comments:

Post a Comment