ক্যারাটে মূলত আত্মরক্ষা ও সমাজ চেতনা নয়…
উৎপল চক্রবর্তী
‘’অন্যের কথা শুনে আপনি যা শিখেছেন ,তা আপনি খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যাবেন ………নিজের শারীরিক
পরিশ্রম দিয়ে যা শিখেছেন ,তা আপনি সারা জীবন মনে রাখবেন।‘’ – মাস্টার গিচিন ফুনাকসি।
ভারতীয় বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বোধি ধর্মা প্রথমে যোগা এবং মল্লযুদ্ধ মিশ্রিত করে মার্শাল আর্টসের প্রচলন করেন। মূলত আত্মরক্ষার জন্যই এই মার্শাল আর্টসের সৃষ্টি হয়। তারই বিভিন্ন অঙ্গ হল জুডো, ক্যারাটে ডো , কুংফু , জুজুৎসু ,কেঞ্জুৎসু , কবু ডো ।
ক্যারাটে শুধু আত্মরক্ষা করতেই শেখায়না,একই সঙ্গে আত্মপরিচয় ,শৃঙ্খলা বোধ এবং যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি তে অবিচলিত থাকার মনোভাব তৈরিতে সাহায্য করে । ক্যারাটে মানে শুধু খালি হাতে টালি ভাঙা বা বরফে র চাঁই ভাঙা নয়, ক্যারাটে শেখায় অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল থেকে দৈহিক এবং মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটানো ।
ক্যারাটে শেখানোর ক্ষেত্রে সবথেকে কঠিন কাজ হোল, এই শিল্পের নৈতিক দিকগুলিতে বিশ্বাস জাগানো । বেশিরভাগ শিক্ষার্থী লড়াইয়ের কৌশলগুলির তাৎক্ষনিক ফলাফলে আগ্রহী এবং এর নৈতিকতা বিষয়ে যত্ন নেয়না । তাহলে আমরা কি সেই শিল্পের অনুশীলন করছি ,যা মানুষকে ধ্বংস করতে সক্ষম ! তাহলে কিভাবে একই সঙ্গে লড়াইয়ের কৌশল শেখানো ও নৈতিকতা জাগ্রত করা যায় ! তার উত্তর পাওয়া যায় ক্যারাটের হৃদই কাতাতে । কাতা বলতে বোঝায় শরীর ও মনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং এটি কেবল ধারণা ও বৌদ্ধিক আত্মরক্ষার জন্য নয় , প্রকৃত পক্ষে কাতাকে বাস্তবের সঙ্গে যুক্ত করাই হল কাতার আসল উদ্দেশ্য ।
কাতার ভিত্তি হলো “কারাতে নি সেন্তে নাসি” , এই ধারণাটির মূল আক্ষরিক অর্থ অনুবাদ করলে দাঁড়ায় --- কোনো ব্যক্তি প্রথমেই কোনো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেয় না , সমস্ত ‘কাতা’ প্রতিরক্ষা দিয়েই আরম্ভ হয় এবং এই বিশ্বাস জাগিয়ে তোলে যে সত্যিকারে র ক্যারাটেকা কখনোই প্রথমে এবং অপ্রাসঙ্গিক ভাবে উত্তেজিত হয়ে কাউকে আঘাত করবেনা ।
ক্যারাটে ডো মন ও দেহের ইতিবাচক বিকাশের ওপর জোর দেয় ।প্রত্যেক ছাত্রকে অবশ্যই তার শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে তার বিকাশ করতে হবে । তাকে অবশ্যই ক্যারাটে ডো সম্পর্কে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ভালোভাবে অর্জন করতে হবে এবং নিজের সবলতা ও দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তারপর তাকে অবশ্যই দুর্বলতা গুলি সংশোধন করতে হবে এবং নিজের সবলতার জায়গাগুলির ওপর ভিত্তি করে নিজের উন্নতি করতে হবে।
ক্যারাটে বা যে কোনো শারীরিক শিল্পের ( মার্শাল আর্ট ) অনেক উপকারী দিক
আছে – যেমন – কার্ডিও ভাসকুলার ফিটনেসে বৃদ্ধি, পেশী ( মাসেল ফিটনেস) শক্তিশালী করা,লক্ষ্য ও
মনোযোগের বিকাশ,আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি ।
অবশ্য এগুলো শুধু মাত্র মার্শাল আর্ট নয় , যে কোনো আ্যথলেটিক ধরণের খেলাধূলা করলেই হয় । বিশেষত মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণের সুবিধা হল, নিজেকে রক্ষা করার কৌশল শেখা। শারীরিক সংঘাতের ভয় ও আঘাত এড়াতে শেখা,নিজের শারীরিক ও মানসিক সীমারেখা কে বাড়িয়ে তোলা,সচেতনতার
বিকাশ করা , যাতে যে কোনো পরিস্থিতিতে মনকে শান্ত রাখা যায় ।
মেয়েদের প্রায়শই শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। মার্শাল আর্ট লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলকে মার্শাল আর্টিস্ট হতে শেখায়। মেয়েরা শারীরিক আক্রমণ এড়ানোর ও আত্মরক্ষার কৌশল শেখার ফলে তাদের নির্ভীক মানসিকতার বিকাশ হয় । ক্যারাটে প্রশিক্ষণের বহুবিধ সুবিধা। তবে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান কটি সুবিধা হল ,নিজের ক্ষতি না করে কিভাবে সঠিক আঘাত করা যায় ,স্ট্রাইকের সময় কিভাবে শক্তি উৎপন্ন করা যায় ,গতি এবং ভারসাম্যের বিকাশ করা যায় কিভাবে ---- তা শেখা।
❤️
ReplyDelete