খোয়াই
ফাল্গুনী দে
"সোনাঝুরি হাট স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে একটি গ্রামীণ শিল্পোদ্যোগ যার অনেকটাই আবেগ এবং কিছুটা চমক। আন্ডারস্ট্যান্ড ?"
"এই আবেগের আবার অনেকটা রবীন্দ্রনাথ-নন্দলাল-রামকিঙ্কর এবং কিছুটা রাঢ় বেঙ্গল জিওলজি। এখন তো আবার ন্যাচারাল হেরিটেজ। টোটাল ব্যাপারটা আমাদের ধরতে হবে।"
চায়ের কাপটা নামিয়ে সানগ্লাসটা কপালে তুলে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল এবং শট ডিভিশন বোঝাচ্ছে সুনন্দা। বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী। সেখান থেকে দীর্ঘদিন এমএনসি ব্যাঙ্গালোর। পেশার চাপে নেশাটা হারিয়ে যাচ্ছিল। একদিন ফিরতেই হত। তিরিশ বছর পর মূলত ছেলের উৎসাহেই প্রথম ডকুমেন্টারি ফিল্মে হাতেখড়ি।
এখানে এলেই প্রাণটা কেমন হু-হু করে ওঠে। ছোটবেলার স্মৃতি, শাল-পলাশের গান, গরুগাড়ির খুরে খুরে লাল ধূলো, সাইকেলে আধোকুয়াশা বিনুড়িয়া খাল, গোয়ালপাড়ার সকুল হেমব্রমের তালপাতার ঠোঙায় দেশী মদ আর চানাচুর, পা ডোবানো কুলকুল কোপাই, জোনাকির তালুবন্দি জ্যোৎস্না। প্রেমের ব্যথাটা কেমন বেসুরে বেজে ওঠে। কোনো উপায় ছিল না ! নাকি আদতে কোনো উপায় থাকে না ? সুনন্দা সিগারেট ধরায়।
চা দোকানের লোকটা একটানা কেশে চলেছে। একবার শুরু হলে থামতেই চায়না। কাঁচাপাকা দাড়ি, ভগ্ন শরীরে যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ। তবু ঠোঁটের কোনে নাগাড়ে বিড়ি টানছে। বিশেষ একটা কথা বলতে শোনা যায়না। দোকানটাও বিশেষ পাকাপোক্ত নয়; কোন রকম ঠেকা দিয়ে দাঁড় করানো। বেঙ্গল গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের ভেতর বিভিন্ন গ্রুপে চলছে ক্রু-র ছেলেমেয়েদের লাইট টেস্টিং। ট্রলিতে প্যান শট নেবো।
"এমন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত একটি চায়ের দোকান চালাচ্ছেন ! সংসার চলে ?"
"খোয়াই পাহারা দিচ্ছি।"
জবাব শুনে পুরো ব্যাপারটা এত সিনেম্যাটিক মনে হল, জানতে চাইলাম, "ফিল্মে আপনার দোকানটা কভার করবো। ড্রোনে চেপে ক্যামেরাটা উড়ে যাবে। ঠিক এইভাবেই কেশে কেশে অভিনয়টা করতে হবে। পারবেন তো ? সহজ ব্যাপার।"
প্রত্যুত্তরে বললে -- "আলবাত, ক্ষয়েরও তো একটা সৌন্দর্য আছে !"
অনবদ্য লেখা।
ReplyDeleteওহ্ দুর্দান্ত
ReplyDeletekhub bhalo laglo golpo
ReplyDelete