Sunday, 23 August 2020

| বিশেষ সংখ্যা | শ্রাবণী গুপ্ত |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||

শ্রাবণী গুপ্ত












অবগাহন

কোথাও ফিরে যেতে গেলে দিনকাল দেখতে নেই

পাথরের চোখ দিয়ে শুধু আবেশটুকুই দেখা যায়,
কোন্ নির্লিপ্ত অবকাশে কতটুকু কথা জমে আছে তা কি তুমি জানো?

তুমি তো শুনেছ শুধুই চলে যাওয়ার কথা,
হেমন্তের অম্লান শরীরে শীতের আগমনী-কথা কখনও যদি শুনতে!

বিকেলের নষ্ট প্রহরের পর 
যে মেয়েটি তুলসীতলায় প্রদীপ হাতে দাঁড়ায়, 
তার কাছে শুনে নিও ফিরে আসার কথা।

আমরা যারা রোজ বাড়ি ফিরি,
আমরা যারা জানি ফিরে আসার সুখ,
আমরা যারা ভালবাসতে জানি, 
রোদ্দুর মাখতে জানি,তাদের কাছে 

ফেরা মানেই পূন্যস্নান
প্রতিটি ফিরে আসাই এক একটি অবগাহন।


সিরিয়ার প্রেম

অতঃপর
আর নেই প্রেম,
জিজীবিষা যাও ছিল, 
তাও ধুলোর গহ্বরে গেল মিশে,
জিয়ন্ত ছিলাম আমি, জোঁকের মতন প্রেমিকার ঠোঁট থেকে শুষে নেওয়া প্রেম ছিল যতদিন আঠালো অধরে।

কোন জিয়নকাঠির আঁচড়েও আর প্রেম ফিরবে না জানি,
আমারও জিয়ারত হবে না প্রেমিকার চোখের তারায়,
ধ্বংসস্তূপে আমি কুড়িয়ে ফিরব হারানো ঘরের স্তম্ভ,
তোমরা দূর থেকে দেখে নেবে সব।

একে তোমরা জেহাদ বলো?
আমি বলি ঘেন্না,
একে তোমরা আনন্দ বলো?
আমি বলি কান্না,

তোমরা কারা, যারা প্রতিটা মুহূর্তে প্রিয়তমর বুক থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছ প্রেয়সীর নিষ্কলুষ দেহ?
তোমরা কারা, যারা প্রেমের বদলে প্রেম পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিচ্ছ বেয়নেটের জোরে?

অতঃপর
শেষ হবে সব,
আমারও নগ্ন দেহ পড়ে থাকবে তোমার রাইফেলের তলায়,
বারুদে বারুদে মিশে যাবে আঠালো সেই ঠোঁট,
যে ঠোঁটে প্রতি রাতে চুমু আঁকত আমার শেষ প্রিয়তমা...


যে চিঠিরা কথা বলে

প্রিয় চিঠি, 
তোমাকে খুলে বসলেই হারানো প্রেম আমার ঠোঁটে এসে কথা বলে,
আমার কল্পনায় প্রিয়ার সে অনাবিষ্কৃত শরীর,
নির্ভার দেহভার, কোমল অথচ দৃঢ় কপোতির মতো বুকেদের কম্পন
আমি আজও খুঁজে ফিরি সাদাকালো অক্ষরে
কেউ জানে না কত রাত স্বপ্ন দেখিনি আমি
বাস্তবের নির্মম আবহে আমার স্বপ্নেরা সুর তোলা ভুলে গেছে, 
প্রিয় চিঠি 
আমার দেরাজে তুমি তুলে রাখা আঘ্রাণ
দমবন্ধ রাতের বাধ্যকতামূলক রতিক্রিয়ায় তোমারইতো সৌরভ আমায় জিতে যাওয়া শেখায়
তুমি নিশ্চয় ভুলে যাওনি প্রিয়ার অনুরোধ,
"এক রাত্রির অমাবস্যার পর যখন একফালি চাঁদ উঠবে, তুমি সে আলোকেই জড়িয়ে নিও প্রিয়"
প্রিয় চিঠি, 
চিন্তা কোরো না, আমি জানি একদিন না একদিন
আমার নিভৃতে, আমার আমিতে ঠিক মিশে যাবে প্রিয়ার সে প্রেমের অক্ষর
তুমিও তো সেদিনই ছাই হবে যেদিন আমিও নগ্ন পুড়ব উষ্ণ পোড়া কাঠে।

Sunday, 16 August 2020

| জারা সোমা | ১৬ই আগস্ট |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












জারা সোমা
স্পর্ধার পদাবলি______১৫

গোপবেশ ছোড়ি পরবি রাজবেশ
দুধ দহি মাখন খায়ি পাগরি সজাব কেশ।।
কুন্তল আতর গজমোতি মালা
অঙ্গুরী কবজি সজব মোতিমালা।।

গোকুলবাসি নিবেদন তুঁহু পদতলে
ন যাও ন যাও অভি কালা।
ন যাবক মথুরা ছোড়ন গোপাল
রহব হিয়া করি আলা।।

শ্যামক লাল আঁখি ভরব নয়নবারি
জোর হাতে কাতর রবেক।
অনুমতি দেহ মোরে হে সখীগন
যাইবন মোহে হবেক।।

মথুরা আশ লগায়ি বঠসি বহুযুগ
আবেক কব শ্যামক আর।
অনাচার অতিচারে ভরসি মথুরা
সখীগন সারা হোবেক লাচার।।

ভাগমে যইসন রহব সাথ 
ন যায়ে ইয়ে লিখন বদলি।
কংস কাল অভি আবত নিকটে
 পাপক কলস পূরণ হবল।।

দেবকী বাসুকি পহুপানে চাহে
 আশ লগায়ি যুগ কাটি।
আবল অয়ি খন করহু নিবেদন
কাম কাজ সব হামক বাকি।।

হিয়া দুখত ভর আসন শূন্য 
কানহা চলি যাবক মথুরাধাম।
বিলাপে সখীগন রোয়ত রোয়ত
গাবক হরি হরি নাম।।

বিলাপে রাধা ভনে হে সখীগন
যো রহব পড়ি হিয়া সাধ।
কানহা ছোড় গেলা অকেলি হামক
ন মিল পায়ি হরি প্রসাদ।।

জারা ভনে কানহা সারি কামকাজ
ফিরব ফিরসে গোকুল।
তুঁহু চরণে নিবেদিত বালা
পিরিত জ্বরে ব্যকুল।।

কয়সন সহিব এয়সন বিচ্ছেদ
আকেলি সরল দুখী রাই।
রহু চুপকে বন্ধ কপাট পারে 
যেয়সন বোবন লাচার গাই।।

তুঁহু দরশন লাগি পহুপানে চাহি
দিনরাত গোপি বালা।
জলদি আওবত মথুরা ছোড়ি
রাই হিয়া করব আলা।।

দো বোল মিঠা বোলসি ওহি সন
পিরিতি করব খুব কুঞ্জধাম।
যুগল দরশনে অভিলাষি সখীসন
গাবত মুহু মুহু  হরিনাম।।

দিলীপ নন্দিনী ভনে সখীগন
আও সজাবত সেজ রাশ।
রাধাকৃষ্ণ মূরত যুগল দরশনে
 মিটব সকল পিরিত পিয়াস।।

এত বলি করব  কীর্তন সমাপন
হরি হরিবোল এ নামাবলী।
জগ সারা  যুগধরি রখব হিয়া মাঝে 
আশ লিয়ে লিখত জারা পদাবলী।।

(হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে )
                                        

| প্রিয়াঙ্কা পিহু কর্মকার | ১৬ই আগস্ট |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












প্রিয়াঙ্কা পিহু কর্মকার
চন্দ্রাভায় ছত্রাক লেগে 

চন্দ্রাভায়  ছত্রাক লেগে ।
        দৃশ্যম পন্থা নির্জন আবহমান
চরিত্রের মড়া ছুঁয়ে বসে থাকার সাহসে প্রশস্ত
     কখন অনন্তশায়িনীর অধরের পার্শ্বে
চুম্বন নিরন্তর , অদ্ভুত বিষন্ন মোচড়
তীব্র মত্ততায় মলিন মুখপানে
    অট্টহাসের ,     প্রগাঢ় বিপনি বন্টন ।
               তালভঙ্গ হয় ,
ছত্রাকের রক্তিমতা ,
       বোধহয় , সিঁদুর মাখানো গায়ে যবনিকা পতন ।
চন্দ্রাভায় আজ জন্ম হয়েছে..উদাসিনীর  বৃত্তান্যাস
           ছত্রাকের সেই জীর্ণ রূপম
                    ঔদাসীন্য.....।


পথ-পাঁক

সমাজের বাথরুমে নাগরিকত্ব দিয়ে স্নান করার চেয়ে ।
মুল্যবোধ দিয়ে মুখ ধোয়া   অনেক শ্রেয় ।
নগরায়ণের জঙ্গলে আজকাল অতি অভিজ্ঞতার
চুলোচুলি লেগেছে ।
বাজারের বোবা  মনু পাগলাটাও ঘর খুঁজছে ।
সমাজের আপদামস্তক নগ্ন সাম্যতা  -
বিপ্লবতার  রতিক্রিয়ার মত্ত আজীবন ।
আমরা তো মন্ত্রমুগ্ধ বিশ্বায়ণের আর্দশ নিয়ে আছি ,
ঐদিকে পণ্যের প্রেতাত্মারা বাজারের হাড়-মাংস চিবিয়ে খাচ্ছে ।
আর , আমরা শালা বাদানুবাদের গোপন সমঝোতায় ,
নগরায়ণের  জঙ্গলে খুঁজে চলেছি
রাজনীতির চোরাস্রোত.।
খুঁজতে খুঁজতে লিবারলিজমের পথ-পাঁক খুঁজে
পাবো কি ?


সম্ভোগ

পাহাড়ের স্নিগ্ধতা বেয়ে পড়ছে গিরি খাদের প্রান্তে
চড়া বিকেলের দিগন্তে দেখি ,
-পাহাড়ের বুকে সৃষ্টির আদি কাল
উপত্যকায় চেয়ে  আছে মেঘের সম্ভোগ ।
তৃপ্ততায় , নিমোজ্জিত ছিন্নরাশের চিহ্নে দেখি ,
-নিষ্পলক চোখে তার উন্মুক্ত দেহকে ।
দেখছি - পরিণত স্পর্ধা কে ,
    অনুভূত হচ্ছি  আঙুলের স্পর্শের অদম্যতাকে ।
কোনো এক আদি কালের নৃপতির উষ্ণীষের তীব্র
সেই স্পর্শ ....
      গিরি খাদের সেই সূর্যাস্ত....
      রিক্ততায় তৃপ্ত রূপায়ণ
     সম্ভোগের....
                   

| কৌশিক দে | ১৬ই আগস্ট |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












কৌশিক দে-র ধারাবাহিক উপন্যাস
আসাযাওয়া____

পর্ব : 

আমি পকেট থেকে একটা সিগারেট-এর প্যাকেট বের করলাম। তিতলী বললো, এখন সিগারেট খাবেন না। আগে আমার প্রশ্নের জবাব দিন।
আমি সিগারেটের প্যাকেট হাতের মধ্যে নাচাতে নাচাতে বললাম, ১০০ ডলার সপ্তাহে খারাপ অফার না। চাইলে আ‍‌মি আপনার গাইড হতে প্রস্তুত।
ভোরের আলার মতো মলীন হাসি দিয়ে তিতলী বললো, এতো আপনি আমার মনের কথা বললেন। আমিও এটাই ভাবছিলাম। আপনিই তা হলে আমার গাইড হবেন। তবে একটা কথা আরও বলার আছে।
আমি বললাম, আবার কি কথা! সিগারেট ধরাই এবার?
বিচলিত হয়ে তিতলী জবাব দি‍‌লো, না, আমি যখন বলবো তখন ধরাবেন। সিগারেটের ধোঁয়া আমায় গভীর চিন্তা করতে বাধ্য করে। আমি আবার চুপচাপ হয়ে যাবো। এবার শুনুন যে কথাটা বলার ছিল তা হলো, আপনার শনি-রবি ছুটি থাকবে। এবার প্রশ্ন করুন কেন?
- কেন?
- কারণ, ঐ দুটি দিন আমি কলকাতার বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে ঘুরবো। আমি সেসব জায়গায় থাকা মানুষগুলোকে অবজার্ভ করতে চাই। মানুষ যখন ভক্তি ভরে পুজো করে তখন তাদেরকে অবজার্ভ করার মধ্যে আমি আনন্দ খুঁজে পাই। আপনি যদি এসবের ক্ষেত্রে রাজি হয়ে থাকেন তাহলে জানান।
- আমি রাজি। এবার সিগারেট ধরাই?
- তাহলে আজ থেকেই আপনি কাজে‍‌ নিযুক্ত হলেন। কোনোদিন কাজে কামাই করলে সেদিনের টাকা পাবেন না। আমার হাতে সত্তর দিন সময় আছে। তারপর আমার ভিসা শেষ হয়ে যাবে। তাই আমার কাছে প্রতিটি দিন খুব ইম্পরটেন্ট। এবার আপনি সিগারেট ধরাতে পারেন।
আমার সিগারেট ধরানো হলো না। কারণ হোটেল পিয়ারলেস এসে গেছে। আমরা গাড়ি থেকে নামলাম। তিতলী গাড়ি থেকে নেমে সোজা হোটেলের ভিতরে ঢুকে যায়। আমিও তার পিছন পিছন হোটেলে ঢুকলাম। পিয়ারলেস হোটেলের ৮তলার ৪০৫ নম্বর রুমের সামনে গিয়ে তিতলী বললো, আপনি এখানে দাঁড়ান। আপনা‍‌কে আমার আরও কিছু বলার আছে। তিতলী ঘরে ঢুকে গেল। মিনিট পাঁচেক পর দরজা খুলে আমায় ভিতরে আসতে বললো। আমি ৪০৫ নম্বর রুমে ঢুকে একটি সোফায় বসলাম। তিতলীকে দেখলাম আমার মুখোমুখি বসতে। সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আপনাকে কাজে নেওয়া তো আমার হয়ে গেছে কিন্তু কাজ করার আগে আমার কিছু প্রশ্ন আছে।
                               
                                   আগামী কাল আবার পড়বো




Friday, 14 August 2020

| জারা সোমা | ১৪ ই আগস্ট |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












জারা সোমা
স্পর্ধার পদাবলি______১৪

ঘোর নিশি বরখন দামিনী গরজন
চমকন ঘনঘন বিজুরি।
শ্যামক নাম ধরি রাই অভাগী
মিলন ন রোয়ব অধুরি।।

দিবস-রজনী বিরহ দহন লগি
মরণ ন আবএ এয়সন।
 ডর লগে মোহে হে ঘনশ্যাম
 দেহ তুঁহু অব দরশন।।

এয়সন বাঁশরি কহা তুঁহু শিখলই
হাসত হিয়া হবেক চোরি।
তুঁহু সন পিরিত রচায়ব রাই
  কয়সন লাজ শরমে মরি।।

জারা ভণে কানহা কয়সন খিলাড়ি 
দিল নাহি তোহে পাশ
একবার দেখত রাই আকেলি
   বঠসি কয়সন উদাস।।

রোয়ত রোয়ত নয়ন লাল হোয়ি
  ভুখ পিয়াস ন রাতভর জাগি
ছোড়কে জগ রাই পহুপানে চাহে
  ঘনশ্যাম তুঁহু দরশন লগি।।

বজাবে যব মোহনবাঁশরি কানহা
দূর হবেক দূখত সব আজ
সখীগন সারা নয়নভরি দেখব
যুগল মিলন বাহার সাজ।।

দিলীপ নন্দিনী ভণে সখীগন
আও অব গোকুলধাম
মিলন গীত গাবক করত সমাপন
 জয় রাধে, হরি হরি নাম।।



                                                                  #ছবিঋণ Shilpi Sarkar Roy

| পার্থ সারথি চক্রবর্তী | ১৪ ই আগস্ট |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












পার্থ সারথি চক্রবর্তী 
আনন্দবৃক্ষ

আমার আনন্দের একটা বটগাছ ছিল 
বা এখনো আছে বলা যায় 
যখন কষ্ট পাই,আচঁড় কাটে কোন 
অচেনা অজানা আঘাত, কিংবা চেনা

ছুটে যাই ঐ গাছটির কাছে 
দু'দন্ড বসি সটান মাটিতে 

গাছ থেকে  টুপ করে  নেমে আসে একটা পাতা
আমার মাথায়, গায়ে বা কোলের কাছে 

আমি মোক্ষলাভ করি,হয়ে যাই চিরভিক্ষুক
ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বেড়োই পৃথিবীর দুয়ারে

জ্যামিতি

আশেপাশের মানুষগুলোকে দেখি 
একেকজন একেক জ্যামিতিক আকারের
মেপে উঠতে খুব বেগ পেতে হয় 
স্কেল কম্পাস কোন কাজেই আসেনা 

যদি ভাবি গোলাকার, হয়ে যায় চারকোণা 
আর যদি ভাবি চারকোণা, হয় ত্রিভূজাকার

বাধ্য হয়ে মনের ভিতরে ডুব দিই
হাতড়ে বেড়াই কেন্দ্রবিন্দু 

অবগাহন করি অনুভবের সাগরে।

পথ

রোদের ভিতরে হেঁটে যাই-
        অলিগলি থেকে রাজপথ ।

কক্ষপথে আবর্তিত হতে গিয়ে-
        দিকভ্রষ্ট তারা পথ হাওড়ায় ।

নিস্পত্র গাছ ও বসন্তের শেষে-
আবার জেগে ওঠে, 
নতুন আশায় ।
নব উদ্যমে ।

বেঁচে থাকা তবু কঠিন, 
নির্বান্ধব ।
হারিয়ে যাওয়া বন্ধু স্বজন, 
খুঁজে পাওয়ার আকুল চেষ্টায় ।
গলি থেকে এঁদো রাস্তা হয়ে, 
 প্রশস্ত রাজপথ ।

জীবনের রবি 

আঁধারের পটে আঁকা শুভ্র সতেজ এক ছবি 
নিরামিষ গল্পে জীবনের ব্যান্জন সাজায় কবি 
ছিদ্র খাতায় কিছু আঁকিবুকি লেখা
ফুটে ওঠে রূপোলি আলোর রেখা 

আকাশ বদলে জাগ্রত এক নতুন রবি।

ভালোবাসার মোড়কে ঢাকা যত সংস্কার
ভুলে যাই জীবনটাই  সেরা অহংকার 
দিন রাত মিলে সময়ের ঘড়িটা 
একের উর্ধে রাখি মানবতার রাশ

উথ্বান কি পতনে জীবনই সময়ের উপহার ।

ডায়েরির ছেঁড়া পাতা  

কবিতা লিখতে গিয়ে হাত কেঁপে যাচ্ছে । একটা খরখরে কাঠের উপর বারবার ঝর্না কলমটা ঘসছি।  

সুখ খুঁজতে গিয়ে জীবনের ভাঁজ খুলে চলেছি কতকাল। ন্যাপথলিনের পুরনো গন্ধ ছাড়া আর কিছুই পাইনি ।

নিকোটিনের ধোঁয়া অনেক উড়েছে বাতাসে । মদিরার নেশা আজ অবধি পারেনি মাতাল করতে ।

এপিটাফে লেখা স্মৃতি মুছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে,  চুইয়ে পড়া ঘামে। হাতরানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছি মুখ গুঁজে ।

বারবার কক্ষচ্যুত হয়ে পড়ছি । তবু আবার সেই কক্ষেই  ফিরে আসার চেষ্টা করছি ভুল পথে।

একটাই দেওয়াল লিখন । লিখতে গেলে হাঁটতে হবে রুক্ষ্ম পথে।  রক্ত ও ঝরবে।

| কৌশিক দে | ১৪ ই আগস্ট |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












কৌশিক দে-র ধারাবাহিক উপন্যাস
আসাযাওয়া____

পর্ব : 

মেয়েটি বলল, অদ্ভুদ ব্যাপার, আমি সত্যিই একট বিষয় নিয়ে গম্ভীর চিন্তায় ছিলাম।
- কি ব্যাপার?
- সেটি পরে বলবো। আপনি এত ভোরে কি অফিস যাচ্ছেন না ফিরছেন?
- আমি ফিরছি।
- কিছু মনে না করলে আমি কি জানতে পারি আপনি কি করেন? কোনো অসুবিধা থাকলে বলতে হবে না।
আমি মৃদু হেসে জবাব দিলাম, আমি পার্ট টাইমে একটা কাজ করি। নাইট টিউটি।
মেয়েটি বলল, দেখুন কান্ড, এতক্ষন হয়ে গেল আমার নামটাই আপনাকে বলা হয়নি। আমার নাম তিতলী। আপনার নাম কি?
- আমার নাম শঙ্কর, তবে আমায় অনেকে শঙ্কু বলেও ডাকে।
- শঙ্কু নামটাই ভাল লাগল। যাইহোক, আপনাকে আমি আমার সম্বন্ধে কিছু বলি। আমার আরও একটি সাহায্যের দরকার। মনে হচ্ছে আপনি আমায় সেই সাহায্যটাও করতে পারবেন।
আমি নিজেকে ট্যাক্সির সিটে হেলিয়ে দিয়ে হাই তুলতে তুলতে বললাম, বলুন।
তিতলী বলে চলল, পাঁচ বছর বয়সে আমার মা মারা যায়। তারপর আমার বাবা আমায় এখান থেকে নিয়ে ইংল্যান্ড চলে যায়। আমি ওখান থেকেই পড়াশুনো করি। বর্তমানে আমি পদার্থবিদ্যায় Ph. D করেছি।
আমি কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকালাম তিতলীর দিকে। ভাবলাম, এত সুন্দর মেয়ে পদাথবিদ্যা নিয়ে কেন পড়াশুনা কর‍‌লো। একে তো সাহিত্য নিয়ে পড়া উচিত। পদার্থবিদ্যা বা অংকের মানুষগুলো হবে চোয়ার ভাঙা, রোগা-প্যাটকা, চোখে হাই পাওয়ার চশমা। কোনো দিক থেকেই এই মেয়েকে পদার্থবিদ্যার মানুষ বলে মানাচ্ছে না।
তিতলী আমায় বলল, আমি কলকাতায় এসেছি একটি বই লিখতে। পদার্থবিদ্যার পাশাপাশি আমি লেখালেখিও করি। আমার বহু লেখা লন্ডনের পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। যে বইটি আমি এবার লিখবো আমি তার নাম দিয়েছি ‘কলকাতা এক মায়াবী নগরি’। নামটা কেমন লাগল আপনার?

আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, বেশ সুন্দর হয়েছে। কি সাহায্য দরকার সেটা বলুন। 
তিতলী বললো, হ্যাঁ, এবার সেটাই বলবো। কলকাতায় আমার জন্ম হলেও এই শহরের আমি কিছুই চিনি না। আর আমার বই লেখার জন্য আমায় এই শহর ঘুরে দেখতে হবে। এই শহরের আনাচে কানাচে কি ঘটছে তা জানতে হবে আর তাই আমার একজন গাইড দরকার। আমি তাকে সপ্তাহে ১০০ ডলার দেবো। এবার আপনি কি আমায় একজন গাইড জোগাড় করে দিতে পারবেন?


                                                                          আগামী কাল আবার পড়বো



Tuesday, 11 August 2020

| জারা সোমা | ১১ই আগস্ট |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












জারা সোমা
স্পর্ধার পদাবলি______১৩

রাধা ভণে শ্যামক কয়সন শোধব
হামক তুঁহু  সব ঋণ।
প্রেমক বানী না শুনি হামক
কয়সন কটব অব দিন।।

সাধন ভজন ন জানে মোহে
ন জানে সাজ শৃঙ্গার।
বাসুকি নন্দন হে মোর নাথ
ন করব বন্ধ দুয়ার।।

পিরিত বিনা মোহে কুছু ন চাহি
ন লোভী  ধন রতন।
অভাগী জনম যুগ তুঁহ পদতলে
রাখব প্রেম নিবেদন।।

তুঁহু পাস বঠসি হাসয়ে হাসয়ে
দো বোল বলিস মিঠা।
পিরিত কয়সন ঝলসি হিয়া
জানব দুখীয়ারি সীতা।।

জনম যুগ ফির মোহে আওবত
তোহার পিরিতি চাহি কালা।
এ কৃপা কর মোহে বচন রাখব
  রয়ব হিয়া করি আলা।।

সখীগন মুহু মুহু দেখব যুগলে
গাবক গীত পিহু কোয়েল।
কুঞ্জবন মে রাস রচাইব
যয়সন যুগল দোয়েল।।

জারা ভণে   শুনব দেবকি নন্দন
রাধা তুঁহু প্রেমক পিয়াস।
ছোড়ি কামকাজ ভুলব লোকলাজ
নয়নভরে দেখব মিটায়ব আশ।।

আভি যাও কদম কুঞ্জধামে
সাজব অভিসারি মালা।
জগত সংসার রূপ হেরইব
প্রেমক দীপ হিয়া জালা।।

ধিরেন নাতিন ভণে আওবত সখীগন
আও আও কুঞ্জবন।
যুগল রূপ দেখব করি আজ
করব কীর্তন সমাপন।।

(জয় রাধাকৃষ্ণ, জয় রাধাকৃষ্ণ)


                                                                   #ছবিঋণ Abhishek Nandi

| বিশ্বজিৎ | ১১ই আগস্ট |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












বিশ্বজিৎ
নিরাময়___
স্পর্শ ও জীবনের ভেতর
বারবার ফিরে আসি।
বারবার ধুলোমাখা যুদ্ধে

ভুল নয়
ঠিক নয়

তারও গভীরে
ক্রমশ ছড়িয়ে থাকা গান...

দাঁড় করায় নতুন ঝংকারে

সিগনেচার____

সম্ভাবনার বেশী 
তুমি মাথায় নিয়ে ঘোরো। 
তবুও সম্ভাবনা এঁকে-বেঁকে চলে 
অন্য সিঁড়ি ধরে... 
বালি ছড়াও,কালি মেখে 
দিক নির্ণয় কর শিল্পের। 
বুদ্ হতে গিয়ে,  
আরও ভূত হয়ে যাও অজান্তে 

পথ নেই 
জানি,কোনও ভগবানও নেই 

শুধু ভুলের ভেতর...

আসল গল্প লুকিয়ে আছে 

নারাজ____

কিছু কিছু আলো 
আমাকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে 
ডুবতে ডুবতে 
মোক্ষম দাওয়াই তুমিজুড়ে 

শুধু প্রস্তুত আর প্রস্তুতি 
শিহরণ লকডাউনে 
পুরোনো চাল আর 
ভাতে বাড়বে না 

শুধু অনন্ত এপিটাফ-এ 
ছাই হয়ে যাবে একরত্তি কুয়াশার মত...

পথ___

আলো নেভাটাই স্বাভাবিক 
যেভাবে অবিশ্বাস বেড়ে ওঠে। 

রাত ও দিন ততটাই কাছাকাছি 

যাপনভরতি যন্ত্রণা 
পথ বলে দেয়, 

কতটা সহজ হতে পার তুমি...

| কৌশিক দে | ১১ই আগস্ট |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












কৌশিক দে-র ধারাবাহিক উপন্যাস
আসাযাওয়া____
পর্ব :


আমি ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়িয়ে হরির বেঞ্চিতে বসে চা খেতে লাগলাম।
কিছু সময়ের পর দেখলাম এসটি মেয়ে একটি বড় ট্রলি ব্যাগ নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। আমি কিছু বোঝার আগেই বললো, আমায় একটা সাহায্য করবেন? বেশ কিছুক্ষণ ধরে হাত দেখাচ্ছি একটাও ট্যাক্সি দাঁড়াচ্ছে না। আমায় একটা ট্যাক্সি ঠিক করে দেবেন?
আমি উদাসভাবে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম, কোথায় যাবেন?
মেয়েটি বললো, এসপ্ল্যানেড। পিয়ারলেস হোটেলে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। হাত দেখাতেই একটা হলুদ ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো আমাদের সামনে।
মেয়েটির মুখ দেখে মনো হলো সে কিছুটা অবাক হয়ে গেছে। বিড়বিড় করে সে বললো, অদ্ভুদ ব্যাপার তো !
দরজা খু‍‌লে ট্যাক্সি‍‌তে ব্যাগ তুলে মেয়েটি বললো, ইয়ে মানে আপনাকে আমি লিফ্ট দিতে পারলে খুশি হবো।
আ‍‌মি চা শেষ করে বললাম, আমার এখন বিশেষ কাজ নেই। চলুন আপনার সাথেই যাওয়া যাক। চাঁদনিতে আমার একজনের বাড়িতে যাওয়ার আছে।

                                            দুই

আমরা এখন ট্যাক্সিতে। আমার পাশে সেই মেয়েটি বসে আছে। মেয়েটির বয়স আঠাশ থেকে তিরিশের মধ্যে। গায়ের রঙ নদীর মতো স্বচ্ছ। কোঁকড়ানো চুল, পরনে টি শার্ট আর জিন্স। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটি বেশ চটপটে। কিন্তু মেয়েটা একটু ভাবুক প্রকৃতির। ট্যাক্সিতে ওঠার পর প্রায় ৫ মিনিট কেটে গেছে সে একটাও কথা বলেনি। হঠাৎ সে নিজের চিন্তার জগৎ থেকে উঠে এসে বলল, মাফ করবেন, আমি মাঝে মাঝে একটু চুপচাপ থাকি।

আমি বললাম, এতে মাফ দাওয়ার কিছু হয়নি; আমিও মাঝে মাঝে চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি। নিজেকে মানুষ কোনো গভীর চিন্তার মধ্যে রাখলে চুপচাপ হয়ে যায়।

                                                          আগামী সোমাবার আবার পড়বো


Sunday, 9 August 2020

| জারা সোমা | ৯ই আগস্ট |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












জারা সোমা 
স্পর্ধার পদাবলি______১২

আওবত শ্যাম তুঁহু হামক ঘর
পহুপানে চাহত নয়ন বিছায়ে দিনভর।।

সারথি সঙ  কালা ছোড়ি গোকুল
তবসে  দুখী রাধা হিয়া ব্যকুল।।

রাত রাত জাগত নিন্দ নাহি আবক
তোহার লিয়ে কানহা সারি রাত জাগত।।

সখীসারা আবকে লে গই হামক
ওহা পর ভি নাহি লাগি মন খেলত।।

 দিন মাহিনা বরস চলি গেলা জাগি
কয়সন বচিব এ রাই  অভাগী।।

   পহুপানে দেখত  নন্দলালা ডর লাগি হামক
    তুঁহু  দরশন পহলে মরণ না  আবেক।।

শান্ত যামিনী আজ চাঁদ ভি শীতল
ফিরবি না ঠন্ড হোয়ি  মনকি হলচল।।

কত যুগ গেলা অপেক্ষা ঘোর অতি
শ্যামক তুঁহু না ফিরে সুমতি।।

শ্যামক দরশন  জনম হোবেক সার্থক 
জরা ব্যাধি শোক পাপ নাহি ঠ্যয়ব।।

দুহু ভ্রমর মাঝে  তিলক অনিমিখ
নয়ন ভরি দেখব ভুলব দিক বিদিক।।

অঙ্গার অস্তি ভেদন না কোই
রূপ রঙ ধন কুছ না হোই।।

জারা ভণে কালা অব যাও গোকুল
তোহার লিয়ে রাই বহুত হি ব্যকুল।।

 সহব  না পারি ও বিরহ জালা
 একবার তুঁহ সমঝো রে কালা।।

পিরিতি লগি জগ ছোড়ি রাধা
সখীগন ভাগ হইল আধা আধা।।

কয়সন সহব রাই কু বোল সারা
হিয়া কাহে নহি রে তুঁহু কালা।।

পিরিতি করল যব দায় ন নিভাইবেক
কয়সন তুঁহু পুরুষোত্তম কহেলবেক।।

শরম না আভি লগে তোহে কালা 
কয়সন করম করস তুঁহ সোচ ভালা।।

এয়সন করব ভালা নাহি হোবক
নয়ন বারি তুঁহ শাপ দেবক।।

আভি ন ইতনা দের হুই কালা 
যাও রাধা পাশ জীবন কর আলা।।

পিহু কোয়েলিয়া গাবত প্রেমক গান
যমুনামে করত  দোঁহে সঙ্গম স্নান।।

যুগল দরশনে জনম হবইল সার্থক 
 হরি হরি বলি জগ গাবক কির্তন।।

দিলীপ নন্দিনী ভণে আও সব সখীগন
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ বলোত সুখী হ জীবন।।

(হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে )

                                                             #ছবিঋণ Abhishek Nandi