|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||
শ্রাবণী গুপ্ত
শ্রাবণী গুপ্ত
অবগাহন
কোথাও ফিরে যেতে গেলে দিনকাল দেখতে নেই
পাথরের চোখ দিয়ে শুধু আবেশটুকুই দেখা যায়,
কোন্ নির্লিপ্ত অবকাশে কতটুকু কথা জমে আছে তা কি তুমি জানো?
তুমি তো শুনেছ শুধুই চলে যাওয়ার কথা,
হেমন্তের অম্লান শরীরে শীতের আগমনী-কথা কখনও যদি শুনতে!
বিকেলের নষ্ট প্রহরের পর
যে মেয়েটি তুলসীতলায় প্রদীপ হাতে দাঁড়ায়,
তার কাছে শুনে নিও ফিরে আসার কথা।
আমরা যারা রোজ বাড়ি ফিরি,
আমরা যারা জানি ফিরে আসার সুখ,
আমরা যারা ভালবাসতে জানি,
রোদ্দুর মাখতে জানি,তাদের কাছে
ফেরা মানেই পূন্যস্নান
প্রতিটি ফিরে আসাই এক একটি অবগাহন।
সিরিয়ার প্রেম
অতঃপর
আর নেই প্রেম,
জিজীবিষা যাও ছিল,
তাও ধুলোর গহ্বরে গেল মিশে,
জিয়ন্ত ছিলাম আমি, জোঁকের মতন প্রেমিকার ঠোঁট থেকে শুষে নেওয়া প্রেম ছিল যতদিন আঠালো অধরে।
কোন জিয়নকাঠির আঁচড়েও আর প্রেম ফিরবে না জানি,
আমারও জিয়ারত হবে না প্রেমিকার চোখের তারায়,
ধ্বংসস্তূপে আমি কুড়িয়ে ফিরব হারানো ঘরের স্তম্ভ,
তোমরা দূর থেকে দেখে নেবে সব।
একে তোমরা জেহাদ বলো?
আমি বলি ঘেন্না,
একে তোমরা আনন্দ বলো?
আমি বলি কান্না,
তোমরা কারা, যারা প্রতিটা মুহূর্তে প্রিয়তমর বুক থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছ প্রেয়সীর নিষ্কলুষ দেহ?
তোমরা কারা, যারা প্রেমের বদলে প্রেম পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিচ্ছ বেয়নেটের জোরে?
অতঃপর
শেষ হবে সব,
আমারও নগ্ন দেহ পড়ে থাকবে তোমার রাইফেলের তলায়,
বারুদে বারুদে মিশে যাবে আঠালো সেই ঠোঁট,
যে ঠোঁটে প্রতি রাতে চুমু আঁকত আমার শেষ প্রিয়তমা...
যে চিঠিরা কথা বলে
প্রিয় চিঠি,
তোমাকে খুলে বসলেই হারানো প্রেম আমার ঠোঁটে এসে কথা বলে,
আমার কল্পনায় প্রিয়ার সে অনাবিষ্কৃত শরীর,
নির্ভার দেহভার, কোমল অথচ দৃঢ় কপোতির মতো বুকেদের কম্পন
আমি আজও খুঁজে ফিরি সাদাকালো অক্ষরে
কেউ জানে না কত রাত স্বপ্ন দেখিনি আমি
বাস্তবের নির্মম আবহে আমার স্বপ্নেরা সুর তোলা ভুলে গেছে,
প্রিয় চিঠি
আমার দেরাজে তুমি তুলে রাখা আঘ্রাণ
দমবন্ধ রাতের বাধ্যকতামূলক রতিক্রিয়ায় তোমারইতো সৌরভ আমায় জিতে যাওয়া শেখায়
তুমি নিশ্চয় ভুলে যাওনি প্রিয়ার অনুরোধ,
"এক রাত্রির অমাবস্যার পর যখন একফালি চাঁদ উঠবে, তুমি সে আলোকেই জড়িয়ে নিও প্রিয়"
প্রিয় চিঠি,
চিন্তা কোরো না, আমি জানি একদিন না একদিন
আমার নিভৃতে, আমার আমিতে ঠিক মিশে যাবে প্রিয়ার সে প্রেমের অক্ষর
তুমিও তো সেদিনই ছাই হবে যেদিন আমিও নগ্ন পুড়ব উষ্ণ পোড়া কাঠে।