Monday 25 April 2022

বৈশাখ সংখ্যা || দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||   দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় ||  গল্প



জীবনেরই কবিতা

লেকটাউন কবি সম্মেলনে সম্মাননা প্রদান করা হবে মানবকে আজ। কর্তৃপক্ষ অনেক দিন আগেই ওকে চিঠি পাঠিয়েছে।মানব যাবে জানিয়েছে ওদের। ভালো লাগে ছেলে মেয়েগুলোর ব্যবহার।তরুণ তুর্কী সব।বেশ ভালো লিখছে ওদের দু একজন। লম্বা রেসের ঘোড়া !
সকাল থেকেই তাই একটু একটু করে তৈরী হচ্ছে মানব।এ বয়সে তাড়াহুড়ো আর পছন্দ নয় ওর। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। দরজা খুলতেই দেখে ওদের আবাসনেরই পাশের ব্লকের মাসিমা। চোখে মুখে একরাশ ভয়! জিজ্ঞাসা করতেই জানালেন, মেসোমশাইয়ের সকাল থেকেই বুকে কেমন একটা ব্যথা করছে। গ্যাসের ব্যথা বলে ওষুধ খেয়েও কিছু হচ্ছে না। বরং বাড়ছে আগের থেকে। ওনার চোখে মুখে অসহায়তা।কি করবেন কিছু ভেবে পাচ্ছেন না। এক্ষুনি একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ভালো হতো।
       "  কিন্তু আমি তো এখন....."! হঠাৎ মানব দেখে মেয়ে তিতলি পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মেয়ের দুচোখে কেমন এক ঘৃণা যেন ! যেন বলতে চাইছে , মানুষের জীবনের চেয়ে কবিতা পাঠ আগে হলো ! এদিকে মাসিমার বার বার কাতর আর্তি। জানাতে ভুললেন না, অন্যদের বললেও কেউ রাজি হচ্ছে না সঙ্গে যেতে। কাজের অজুহাত সকলের।তাই মানবের কাছে ছুটে আসা।
  তিতলি বলে উঠলো :"চলো আমিও সঙ্গে যাবো তোমার। এক্ষুনি ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো আমরা।" ওর মা সুমনাও  তাই চায়। বেড়িয়ে পড়লো পাড়ার অ্যাম্বুলেন্সে মেসোমশাইকে নিয়ে ওরা। মাসিমা কাঁদছেন। মেয়ে ওনার হাত শক্ত করে ধরে রয়েছে।
ডাক্তার দেখে বললেন :" মাইল্ড অ্যাটাক। দেরি হলে খুব সমস্যা হয়ে যেত।এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন ঠিক সময়ে হাসপাতালে আনার জন্য।"
      নীচে এসে মানব দেখে , আবাসনের আরো কয়েকজন দাঁড়িয়ে। মাসিমা যাদের কাছে প্রথমে সাহায্যের জন্য গেছিলেন তাদেরই কয়েকজন সামনে দাঁড়িয়ে। খোঁজ খবর নিলেন মেসোমশাইয়ের। ডাক্তারের কথায় মাসিমার মুখের স্নায়ুচাপ উধাও।তার ওপর অনেককেই এখন দেখতে পাচ্ছেন ওনার পাশে।
      হাসপাতালের উল্টোদিকে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে মানব আর তিতলি। আরো কিছুক্ষন থাকতে হবে, ডাক্তারের পরামর্শ। মানবের চোখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ তিতলির প্রশ্ন , "কবিতা সাহিত্য কি জীবন বিচ্ছিন্ন"? বুঝলাম আমার প্রাথমিক ইতস্ততা দেখেই ওর প্রশ্ন এটা। মনে মনে ওকে ধন্যবাদ দিলাম। সাহিত্য কবিতা তো জীবন থেকেই উঠে আসা অনুভব। মানুষের জীবনই তো তার উৎস। মুমূর্ষু মানুষকে ছেড়ে আজ কবিতার আসরে গেলে কবিতা কখনোই মানবকে ক্ষমা করতো না। কবিতা তো মানুষকে জাগায়। বিবেকের করাঘাতে ফিরিয়ে আনে জীবনের মূল স্রোতে।ও আর তিতলির আজকের এগিয়ে আসা বাকি আবাসিকদের জাগিয়েছে।তাই তো ওরাও ছুটে এসেছে। জিতে গেছে মানব। জিতে গেছে কবিতা।একটা মুক্তির হালকা বাতাস যেন বেড়িয়ে এলো ওর ভেতর থেকে।



No comments:

Post a Comment