Monday, 25 April 2022

বৈশাখ সংখ্যা || মানিক বৈরাগী ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  মানিক বৈরাগী



মধ্যযুগিয় পিরিতি

পারিনা এড়াতে আড়ালে গলিতে কানা-ঘুষা চলে,মরি লাজে ওহ সুখযন্ত্রনা সহি নীরবে নিরবে।তবুও করি যাপন দুঃখবিলাশ, কলিজায় নিয়াছ ঠাঁই। মধুর বসন্ত বহিছে তোমার আঙ্গিনায়,বসন্ত জলে জ্বলি অনঙ্গ অঙ্গে। তিলে তিলে অনুভবে অংগার হতে কতদেরি? ওগো রাণী বাসন্তি,আ হা এমোনি অমন আনমনা হেয়ালি কর হে মধুরিমা জপমালা গুননে অঙ্গুরি অনিমাতে চাট হতে হতে পাথর হলো, নখ হলো ছুরি। নিজ নিজ আঁচড়ে করি অঙ্গহত, শুধু তোমার জন্য পরান পিয়াসি। লাজ্ব ফেলে বংশলতিকা ছিড়ে, অন্দর বন্দরে ঘুরে ঘুরে এসেছি গো তোমারি দুয়ারে।  তুলে নাও পরমপিয়াসে। আমি গো তোমি বিহনে জ্বলি।



 খোশরোজ মহল

তেমন কেউ আসেনা এখন এ বসন্ত তলে
তবুও সৌরভ কমেনা বসন্ত বৃক্ষের, পুষ্প বাহারে মুখরিত পথঘাট
সুরভিত পুষ্পমঞ্জরির ঘ্রাণে কেউ কেউ আসে পরম ভালোবাসার টানে
বনফুলের মৌতাতে মনফুল রাঙাতে, তরুণীর কুন্তল সাঁজাতে  আসে
ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষ সচলরয় মৌ মৌ খুশবো সমারোহে
আজকাল
বাসন্তীর বসন্তবাউরিতে  উন্নয়নের চাপে জলবায়ু পরিবর্তনে
বিশ্বায়নের বিশ্ববাজারে গোলকায়নের ভার্সুয়াল আগ্রাসনে
মমতাজ মাজারে
ভাটার টান,মনমরা আহবান ঋতুরীতির অস্বাভাবিক আচরণে
তারা সান্ধ্য মজমার কাওয়ালী আসরে, সুফির শায়েরিতে
ইসকে আশেকীরাও আসেনা, সুফিয়ানায় সুফিরা কবিরের ভজনে মজেনা
খোশরোজ মহলে নওরোজের গোলাপ ফুটে আশায় আশায়।


বৈশাখ সংখ্যা || প্রদীপ ঘোষ ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  প্রদীপ ঘোষ


তসব্বুর 

যতক্ষণ জলের নিচে; নুড়িপাথরের অনিঃশেষ অন্তরঙ্গতা।
রাতদিন স্রোতে অজস্র কথাকলির কত না এতোলবেতোল
প্রাণবন্ত মুদ্রা। কিন্তু বিয়াসের জেগে ওঠা চরে ওদের
শুকনো অবয়বে মেলানকলির আলুথালু ছবি স্পষ্ট
দেখেছি। যেন বুকের ছলাৎ'এ ছড়িয়ে ছিটিয়ে শত ভিড়েও
একাকীত্বের শবসাধনা। অভাগার সংসারে সময় কী
এমনই থমকে থাকা প্রবাহ? ইচ্ছেরা এমনই ছোটবড়
স্মৃতির ফসিল? তখনও তো দুধের সসপ্যানে সরের মেঘ
জমেনি। তবু উতল হাওয়ায় চোখে ভিসুভিয়াসের লাভার
তাপ। চলকে ওঠে জলের উদগীরণ। মনের বোধহয় বড়
জ্বর গো। অথচ ৯৮.৬ এ থার্মোমিটার নির্বাক। আয় বৃষ্টি
ঝেঁপে অশ্রুফুলের মতির মালায় আকণ্ঠ সুমতি। লহরীর
পরে লহরী ওগো বর্ষামঞ্জরি ছুঁয়ে দাও তপ্ত ললাট। অহল্যা
নুড়ি পাথরের এই পম্পেই নগরী আবার প্রাণ ফিরে পাক...



বৈশাখ সংখ্যা || দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||   দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় ||  গল্প



জীবনেরই কবিতা

লেকটাউন কবি সম্মেলনে সম্মাননা প্রদান করা হবে মানবকে আজ। কর্তৃপক্ষ অনেক দিন আগেই ওকে চিঠি পাঠিয়েছে।মানব যাবে জানিয়েছে ওদের। ভালো লাগে ছেলে মেয়েগুলোর ব্যবহার।তরুণ তুর্কী সব।বেশ ভালো লিখছে ওদের দু একজন। লম্বা রেসের ঘোড়া !
সকাল থেকেই তাই একটু একটু করে তৈরী হচ্ছে মানব।এ বয়সে তাড়াহুড়ো আর পছন্দ নয় ওর। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। দরজা খুলতেই দেখে ওদের আবাসনেরই পাশের ব্লকের মাসিমা। চোখে মুখে একরাশ ভয়! জিজ্ঞাসা করতেই জানালেন, মেসোমশাইয়ের সকাল থেকেই বুকে কেমন একটা ব্যথা করছে। গ্যাসের ব্যথা বলে ওষুধ খেয়েও কিছু হচ্ছে না। বরং বাড়ছে আগের থেকে। ওনার চোখে মুখে অসহায়তা।কি করবেন কিছু ভেবে পাচ্ছেন না। এক্ষুনি একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ভালো হতো।
       "  কিন্তু আমি তো এখন....."! হঠাৎ মানব দেখে মেয়ে তিতলি পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মেয়ের দুচোখে কেমন এক ঘৃণা যেন ! যেন বলতে চাইছে , মানুষের জীবনের চেয়ে কবিতা পাঠ আগে হলো ! এদিকে মাসিমার বার বার কাতর আর্তি। জানাতে ভুললেন না, অন্যদের বললেও কেউ রাজি হচ্ছে না সঙ্গে যেতে। কাজের অজুহাত সকলের।তাই মানবের কাছে ছুটে আসা।
  তিতলি বলে উঠলো :"চলো আমিও সঙ্গে যাবো তোমার। এক্ষুনি ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো আমরা।" ওর মা সুমনাও  তাই চায়। বেড়িয়ে পড়লো পাড়ার অ্যাম্বুলেন্সে মেসোমশাইকে নিয়ে ওরা। মাসিমা কাঁদছেন। মেয়ে ওনার হাত শক্ত করে ধরে রয়েছে।
ডাক্তার দেখে বললেন :" মাইল্ড অ্যাটাক। দেরি হলে খুব সমস্যা হয়ে যেত।এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন ঠিক সময়ে হাসপাতালে আনার জন্য।"
      নীচে এসে মানব দেখে , আবাসনের আরো কয়েকজন দাঁড়িয়ে। মাসিমা যাদের কাছে প্রথমে সাহায্যের জন্য গেছিলেন তাদেরই কয়েকজন সামনে দাঁড়িয়ে। খোঁজ খবর নিলেন মেসোমশাইয়ের। ডাক্তারের কথায় মাসিমার মুখের স্নায়ুচাপ উধাও।তার ওপর অনেককেই এখন দেখতে পাচ্ছেন ওনার পাশে।
      হাসপাতালের উল্টোদিকে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে মানব আর তিতলি। আরো কিছুক্ষন থাকতে হবে, ডাক্তারের পরামর্শ। মানবের চোখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ তিতলির প্রশ্ন , "কবিতা সাহিত্য কি জীবন বিচ্ছিন্ন"? বুঝলাম আমার প্রাথমিক ইতস্ততা দেখেই ওর প্রশ্ন এটা। মনে মনে ওকে ধন্যবাদ দিলাম। সাহিত্য কবিতা তো জীবন থেকেই উঠে আসা অনুভব। মানুষের জীবনই তো তার উৎস। মুমূর্ষু মানুষকে ছেড়ে আজ কবিতার আসরে গেলে কবিতা কখনোই মানবকে ক্ষমা করতো না। কবিতা তো মানুষকে জাগায়। বিবেকের করাঘাতে ফিরিয়ে আনে জীবনের মূল স্রোতে।ও আর তিতলির আজকের এগিয়ে আসা বাকি আবাসিকদের জাগিয়েছে।তাই তো ওরাও ছুটে এসেছে। জিতে গেছে মানব। জিতে গেছে কবিতা।একটা মুক্তির হালকা বাতাস যেন বেড়িয়ে এলো ওর ভেতর থেকে।



বৈশাখ সংখ্যা || পৃথা চট্টোপাধ্যায় ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  পৃথা চট্টোপাধ্যায়   


রাস্তা

কোনো কোনো রাস্তা শেষ হয়।
যেটুকু চলার পথ অযুত নির্মাণ, স্রোতের উজান তারা বলেছিল, 
অন্তহীন থেকে যাবো আমরাও লাল নীল খামে ভরা দিনে রাতে,
গুটি কেটে প্রজাপতি উড়েছিল একসাথে
তখনও তো বোধ ছিল অন্তর্গত বোধের ভিতর
তবুও কীভাবে এল ভাবনার জটে ঢাকা ধূসর আঁধার
কথা ছিল একসাথে সাঁকো পেরোবার
...কেন এত থই থই জল
গভীরে ফুরিয়ে যায় জীবন সুফল



বৈশাখ সংখ্যা || নমিতা বসু ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||    নমিতা বসু 



ছয়জন একতাল

তনুমন      গুঞ্জরন 
ছয়জন     একতাল,
শূন্যস্থান    অসমান
গলানাঙ্ক    মায়াজাল।

করিডোরে  আসে ভোর
দরজাটা     বেমানান,
রাতভোর     বৃষ্টি 
একশ  ও   এক সমান।

সুখ  ও         তাপ 
একই           মাপ 
ক্ষণিকের        বেসামাল ,
উপবন            দেহ মন 
এক্জন          ছয়তাল ।।



বৈশাখ সংখ্যা || সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়


অতল

ঝরে না স্মৃতির শুভ্রজল
শব ব্যবচ্ছেদের খবর 
জানা হয়ে গেছে 
নীলাভ আধারে জমা 
অস্তিত্বের অতল

এই সেই হঠকারী জমানা
পাহাড়ের শীর্ষ বেয়ে নেমে আসে 
আগুনরঙের ফেরোমন

সাগরের শেষ 
শুরু রসাতল..


বৈশাখ সংখ্যা || কেদারনাথ দাস ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  কেদারনাথ দাস


মনে পড়ে

মনে পড়ে ছাদে ছিল একফালি চাঁদ,
নারকেল গাছের ছায়ায় চুলগুলো
উড়তে দেখেছি তার উদাসী হাওয়ায়।
জ্যোৎস্না আমাকে যদি ‘নক্ষত্র , নক্ষত্র’ বলে
ডেকে নেয় তার নগ্ন শরীরে ...
সে যে আগুনে ভস্ম হবে ভেবেছে কখন ,
সন্ন্যসী মন তবু বারবার প্রাচীর তুলেছে !
শন শন হাওয়া এসে সব কিছু তছনচ করে
আর মেঘেদের বলে দেয় ভিডিওটা তুলে রাখো..
শাসন ও শোষণের নিত্য কষাঘাতে
ভালোলাগা, ভালোবাসা কার্নিশ থেকে খসে পড়ে রাতের শিশিরে !
সেসব নিরুচ্চার কাহিনির বর্ণমালা নেই কোন সমাধিলিপিতে।

বৈশাখ সংখ্যা || শ্রীময়ী চক্রবর্তী ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  শ্রীময়ী চক্রবর্তী 


পবিত্র ধর্ম

আমার ধর্মের কোনও নির্দিষ্ট রঙ নেই
কালার হুইলের মতো সব রঙ মিলেমিশে সাদা হয়ে গেছে
আর নিষ্কলুষ সেই সাদা রঙ গায়ে জড়িয়ে
মানবিকতা হাত ধরাধরি করে চলেছে
মন্দির মসজিদ চার্চ কোথাও অভিন্ন
পৃথিবী যেন আজ অজান্তেই
সুগন্ধি ফুলের বাগান হয়ে উঠেছে



বৈশাখ সংখ্যা || পাপড়ি দাস সরকার ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  পাপড়ি দাস সরকার


আকাঙ্খা

ব্রহ্মাণ্ড ছিন্ন ভিন্ন। অন্ত পুড়ে খাক
শরমা ভাতার তার কিয় দংশ পাক।।

কলসি শূন্য ছিলো, ভরা করলো কে?
এ গূঢ় তত্ব ঢাকা হরির বিবরে।
কাতরে আর্তস্বর নষ্ট চন্দ্র রাতে।
কদলি ভক্ষণ হয়ে বাতুল প্রতাপে।।
পর্ণমোচি বৃক্ষ খোঁজে কাক বন্ধ্যা নারী।
তালুক সন্ধান আমি দিতে পারি।।

বিন্দু বিসর্গ হাসে দুই ওষ্ঠ ফাঁকে।
এক চন্দ্র বিন্দু তার শূন্য কোল ঢাকে।।



বৈশাখ সংখ্যা || সোমা মুখোপাধ্যায় ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  সোমা মুখোপাধ্যায় || অণুগল্প


রংটোনা গ্রাম
                  
গ্রামের জীবন এখনও অনেক সহজ।কাঁচা শালপাতায় গরম তেলেভাজা মুড়ে দেয় দোকানি।কত সহজ  মানুষজন।কোনো আড়ম্বর নেই।শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ।মনে হয় ,চলে এসেছি পৃথিবীর অন্য কোনো গোলার্ধে।ছুটি পেলেই শৌর্য চলে আসে এই রংটোনা গ্রামে। প্রাণ ভরে অক্সিজেন নেয়।মেঠোপথ ধরে ঘুরে বেড়ায় এধার -ওধার।খবর পেলেই আয়না মাসি ছুটে আসে।
   দেশভাগের সময় দাদু চলে আসে এদেশে।কলকাতায় বসবাস শুরু করে।কিন্তু শহরের কোলাহল ভালো লাগে না তার।তখন অনেক দেখে শুনে এই গ্রামের বাড়িটা কেনে। লোকালয় ছেড়ে মাঝে মাঝেই দাদু চলে আসতেন। ছুটি থাকলে শৌর্যও তার সঙ্গী হত।    
  রিনিতা কিছুতেই আসতে চায় না।জোর করলে প্রশ্ন করে " কি আছে ওখানে?"শৌর্য আজও বোঝাতে পারে নি!হয়তো কোনোদিনও পারবে ও না! মায়ের পছন্দ হয়েছিল রিনিতাকে।সবাই বলবে "ও মা! কি সুন্দর বউ এনেছো!কিন্তু দিনে দিনে শৌর্য বুঝেছে রিনিতার ভিতর নেই।আদর্শগত কোনো চিন্তা ভাবনাও নেই।গভীরতাহীন সঙ্গী যে কত বীভৎস হতে পারে!
 চারদিক নিঝুম হয়ে আছে। ধীরে ধীরে কৃষ্ণচূড়া গাছটার কাছে এসে দাঁড়ায় সে। মনে পড়ে সুমিতার কথা।দাদুর প্রিয় ছাত্রী ছিল ও।প্রায়ই আসত দাদুর কাছে।বড় উচ্ছল ছিল।ওকে  কত লুকিয়ে লুকিয়ে দেখত সে। কোনোদিন বলা -ই হয়নি ! তবে এই গ্রামে আসার নাকি প্রবল ইচ্ছা ছিল ওর।দাদুই একদিন হাসতে হাসতে বলেছিল সে কথা।দাদু ওর মনের ভিতরটা অনুভব করেছিল কিনা কে জানে!এসব মনে হতেই শৌর্যর চোখ দুটি ছল ছল করে ওঠে।


বৈশাখ সংখ্যা || শ্রীকান্ত মাহাত ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  শ্রীকান্ত মাহাত



ভাদর মাসে

                ১
ভাদর মাসে পাকে তাল
খুকুমণি র ফোলা গাল
       তাল পিঠা হলে
       মনটা খুশি বলে
না হলে খুকি বে-সাম্ হাল‌।

                ২

ভাদর মাসে গাদর জনার
পুড়ায় খেতে ভীষণ মজার
       জনার পুড়া হলে
       মনটা খুশি বলে
ভাটাক ভুটুক করছে ভাঁড়ার।

 ‌            ৩

ভাদর মাসে রাজার ভাঁড়ার খালি
    'ই সময় লয় কুটুম কুটমালি
     কি করে আমি রাখবো মান
        কুটুম জানে বিহন ধান
পাকা তালেই কুটুমকে তো বধালি।


বৈশাখ সংখ্যা || রঞ্জনা বসু ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||   রঞ্জনা বসু  ||  অণুগল্প

কাম  

তুহিনের মাথায় কতগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো। কেন এভাবে এসেছিল গরিমা? কেনই বা গায়ের থেকে হালকা আস্তরণটা এভাবে ফেলে দিতে দিতে গায়ে তুলে নিতে এতটা সময় নিল ? কোন মেয়ের পক্ষে এটা ঠিক স্বাভাবিক নয়। মেয়েরা গায়ের আচ্ছাদন সহজে খসে পড়তে দেয় না। দৈবাৎ খসে গেলেও তা সঙ্গে সঙ্গে তুলে নেয়। গরিমা তা করেনি। তবে কী সবটাই ইচ্ছাকৃত? ওর ঠোঁটের হাসিটা তার প্রমাণ। 

পাশের ঘরে ঈশিতা ঘুমিয়ে। প্রতি রাতে ঘুমের ইঞ্জেকশন নিয়ে তবেই ওর ঘুম আসে। ক্যান্সার লাস্ট স্টেজ এ এসে পৌঁছেছে। ডাক্তার জবাব দিয়ে দিয়েছে। এখন শুধুমাত্র দিন গোনা। শেষের কটা দিন গরিমা তার দিদির কাছে ও পাশে থাকার ইচ্ছে নিয়েই এখানে এসে রয়েছে। তুহিনও ঈশিতার শারীরিক কষ্ট নিয়ে কম দুশ্চিন্তায় নেই। 

তুহিন অকারণে ঘরের ভেতর কয়েক রাউন্ড ঘুরপাক খেল। আয়নায় ওর ছায়া পড়ল, কিন্তু সেদিকে এক প্রবল অস্বস্তির তাড়নায় তাকাতে পারল না। শুধুমাত্র বিবাহের কারণেই কী এক জায়গায় স্থির থাকতে হবে? 

তারপর থেকে অপেক্ষা করছিল তুহিন। আজ গরিমাকে পাগলের মতো আদর করল। খোলা দরজার পর্দাটা দুলে উঠতেই তুহিন চমকে ওঠে। দুজনের কেউই ভাবেনি ঈশিতা বিছানা ছেড়ে উঠে আসতে পারে! 

চমকে ওঠার মতো ভিড় যখন রাস্তা দখল করে নিয়েছে, তখন ঈশিতার মৃত্যু এত মানুষের মন খারাপের বিষয় হতে পারে বলে তুহিনের জানা ছিল না। হঠাৎই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল গরিমা। 

অন্য সময় হলে বিব্রত বোধ করতো তুহিন। কিন্তু এই মুহূর্তে গরিমার জন্য কাম বা প্রেম--- কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই। 


বৈশাখ সংখ্যা || মৃণালেন্দু দাশ ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  মৃণালেন্দু দাশ 


প্রস্তর  যুগের মেয়ে

গায়ে  জড়িয়েছি  লতাগুল্ম
শরীর  ঢেকেছি
এইভাবে —

মন  ঢাকিনি  তো  !

হঠাৎ  হঠাৎ  উৎলে  উঠছে  নদী  ৷


বন জোছনায়  তরী  বেয়ে
চলেছে  যে  মেয়ে ,
সে  আমার  প্রস্তর  যুগের
আদিম  বান্ধবী  ৷

পাতায়  পাতায়  সে  জীবন —

বন্য  প্রাণীদের  সঙ্গে  নিখুঁত  সংসার
পাথরে পাথর  ঘঁষে



বৈশাখ সংখ্যা || ডালিয়া রায় ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  ডালিয়া রায়


নাবিক
 

আধ ঘুমে সমুদ্রের তীরে...
বন্দর  ছুঁয়ে শুয়ে আছে ডানা ভাঙা রাত।
যাত্রীরা ঢুলু ঢুলু

একজোড়া সদ্য পরিণীতা চোখ জেগে আছে অপলক আধভাঙা রাতে।
শিকলের ঝন ঝন, রাত করে খান খান। সমুদ্র দিয়েছে সুযোগ চোখ বোলাবার।
নাবিক হাতের কাছে রেখেছে পরিবার, চোখ  চলে যায় তার,
দিগন্তে ফুটে ওঠে লালিমা প্রভাত।
অনতি দূরে ঝিঁঝি পোকা, সরগমে বেঁধে তান, বাজিয়েছে নবরাগ।
গাছেদের কাছে গিয়ে, অনুরাগে ছুঁয়ে ফেলে বলেছে ভোর হলো

জাহাজ বুঝিয়েছে মোহহীন আরাম ভাসমান। নাবিকের কথামত গন্তব্য স্থির করে ঘাটে নামা।

ফেলে আসছে কত গ্রাম, কত জনপথ, কত যাত্রীহীন ধূ ধূ বন্দর। সময় নেই থামার, শুধু 
লক্ষ্যে পৌঁছবার অবিরাম ক্লান্ত ঘাম মুছে ফেলা। 

যেদিকে চেতনা যায়, সব দিকে মায়া জহরত! মৃদু পায়ে এসে নামে ঘাটের কাছে জাহাজের মাস্তুল!
একে একে যাত্রীরা বেছে নেয়
সুখ , বৈভব, ঐশ্বর্য্য ও চিন্তা। 

শুধু পড়ে থাকে বাসি ভালোবাসা গত  রাত্রের...



Thursday, 21 April 2022

বৈশাখ সংখ্যা || রুমী লস্কর বরা ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  রুমী লস্কর বরা 


তোমার জন্য কিছু কথা কিছু কবিতা
মূল অসমিয়া কবিতা - তোমার বাবে কিছু কথা কিছু কবিতা  
অনুবাদ - বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

তোমাকে শোনাতে চাই 
বৈশাখী এক মিষ্টি গান
যে গান শুনতে চাও
লিখতে পারিনি
সুরও যে সময়ে হারায়।  
তথাপিও শোনাতে চাই
একটি মিষ্টি গান 
যেখানে গাঁথা থাকবে 
আমার আকুল চিত্ত। 

নতুন জলের পলি পড়েনি
আমাদের গাঁয়ে নাকি অকাল
ফুলের চমক-জমক
ভোগমন খুড়া ‘জবকার্ড’ পেলেন 
সরুমাই পিসি 
বৃদ্ধের পেনশন পেলেন
ভাত চালের আকাল নেই 
হলে কী হবে
ঘর আছে
উঠোন নেই
জঙ্গল আছে 
গাছ নেই
পথ প্রশস্ত হল
মাঠের প্রকৃতি নাশ হল
গোয়ালে গোরু নেই
কারোরই সময় নেই। 

তথাপিও তোমাকে শোনাতে চাই
বৈশাখী এক সুমধুর গান
গুণ গুণ গুণ
যা বেজে থাকে হিয়াতে

গতবার বানে ডুবে গেল
কৃষক দাদার খেতি 
নদীপারের মাটিতে
নদীবাঁধের ফসল
কার বুকের পাঁজর দেয়
দুঃসময়ের খবর
আকাশে মেঘ
তৃষ্ণায় কাতর কেন
হাজার চাতক পক্ষী ?
তোমাকে পাঠাতে চাই না
এমন একটি ছবি
অভিলাষে শোনাব
হৃদয়ের দীর্ঘশ্বাস ঢেকে
বৈশাখী এক সুকোমল গান। 

নেই সেই তখনের
রূপকথার দিন
ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই
অধিকারের দাবিতে মাঠ রাঙিয়ে
থেকে থেকে আসে ভেসে
নিঝুম রাত
কলং এর ক্রন্দন।
বকুলবনে এলাম ছেড়ে
ঠাকুমার মধুমাখা অকথার একটি কথা
কে ডাকে
কে ডাকে
রাখালিয়া বাঁশির সুর
হৃদয় কাঁপায়। 

বৈশাখী বৃষ্টি
আসবে কিজানি।
থাকব কি থাকব না সদা
পাই কি না পাই আবার
একই উঠোনে 
ভিজে নিই এসো। 

বৈশাখী বরিষণ
রিমঝিম রিমঝিম
সাড়ম্বরে 
উল্লাসে মাতাল চিত্ত
কোমল কিরণ
মেঘের মাদল
কোকিল সুরের লহর
মহামিলনের রামধনু
তোমার ও আমার হৃদয়েরও তাতে
অনন্য কোলাজ
আহ্‌ !! 
শোনাতে পারলে তোমাকে
সত্যি এমনই এক গান।


বলি শোনো 
মূল অসমিয়া কবিতা - কঁও শোনা   
অনুবাদ - বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

এখনই ‘বেঁচে’ নিই
এসো -
কাল হয়তো
নাও থাকতে পারি
কিছু আদরের জন্য
খানিক ভালোবাসার জন্য
মৃত্যুই যেন
মইয়ের শেষ ধাপ
‘শব’গুলো কি
রাখতে পারে
জীবন্ত মানুষের খবর ? 


কত যুদ্ধ
কত কষ্ট !
লিখলে কী হবে ?
না লিখলেই যদি
সহানুভূতির নদী বইবে।


কী করিনি
কী হইনি
শব্দবাণ
বাক্যবাণ
জানালা খোলা
দুয়ার খোলা
জর্জরিত কলিজা
কারো পরিতৃপ্ত হিয়া।


কারো ট্র্যাজেডি
কারো চূড়ান্ত স্বীকৃতি
টানাহ্যাঁচড়ার কত যে খেলা
কেউ দেখে না গতপ্রাণের
দু’চোখের জল।


কে জানে
কাল হতে পারি
আমিও বিশেষ সংবাদ
আশ্চর্য - 
আমার নাম না শোনা
আমার নাম না জানাজনও
সংবাদ দেখে দিতে পারা হবে বিশেষ বিবৃতি
এমন সময়েও
বেড়ে যায় অনেকের ‘টি আর পি’
বাজবে বাঁশির করুণ সুর
দেখাতে থাকবে
সংগৃহীত ভিডিও ক্লিপ
কিংবা স্থির চিত্র
যেন এক বিয়োগান্ত নাটকের
স্পর্শকাতর দৃশ্য। 


কারো আর্দ্র দু’চোখের কোণ
অন্য কেউ না বললেও ভাববে,
‘যা হলো, হলো - মন্দও হলো না,
কত করবে ভালো দিনের অপেক্ষা
এক তিল ভালোবাসার জন্য
আজকের ভোগবাদী পৃথিবীতে


বলতে পারো পলাতক বলে,
(আমার) ঠোঁটে থাকবে লেগে বিদ্রুপের হাসি
কোথায় সেই অন্তর্দৃষ্টি
মৃত্যু যেন এখন শেষ অস্ত্র
চুলচেরা দেখার
কতজনের আছে শুদ্ধ মমত্ব ? 


দেখতে পারো ব্রেকিং নিউজ
গুণের কীর্তম
উঁহু,
কোনোকালে মৃতের দোষ ছিলই না কিজানি
কেবল জানো -
তোমার ভাল লাগা
তোমার অবদান
তোমার অস্তিত্বের
আঁচ নিতে
মৃত্যুই যেন এখন শেষ সোপান
জানো -
কখনো
ব্রেকিং খবরে সঘনে বাজবে
এই কবিতা।


বৈশাখ সংখ্যা || তিস্তা ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  তিস্তা




ফ্ল্যাশব্যাক


১/

বর্ণনাহীন
আরো একটা
চালচিত্তির

বিশ্বাস হয় না–
এ গুপ্তচরবৃত্তি

যদি বা
অনুমান করা যায়

লেখা– শব্দাতীত!

২/

নীরবতা
প্রকাশ করেছি

ধান্যজমি শেষ

আশ্বিনের–
কর্তব্য এখন
বিল্বপত্র
 
চন্দনের দেশ...

৩/

কেমন হয়
অসুখের কবিতারা
চৈতালি দি?

কেমন হয়
কবিতার অসুখ?

বিলুপ্ত
জড়িবুটি সমেত
এই ডুবে যাওয়া
ওঠা পড়া
এই অনর্থ
কবিতা আমার
শোনো,
আজন্ম
প্রেমের অধিক


বৈশাখ সংখ্যা || দেবলীনা ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  সাহির লুধিয়ানভির কবিতা অনুবাদে দেবলীনা


কবি পরিচিতি :  সাহির লুধিয়ানভি একজন প্রসিদ্ধ কবি ও গীতিকার। তাঁর রচিত হিন্দি ও উর্দু গীত ও গজল হিন্দি চলচ্চিত্রে বহু জনপ্রিয়তা পায়। সাহির ৮ মার্চ ১৯২১ সালে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় জন্মগ্রহণ করেন। শব্দের জাদুকর সাহির লুধিয়ানভি প্রথম ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হন "তাজমহল" ( ১৯৬৩) এবং দ্বিতীয়বার "কভি কভি " ( ১৯৭৬ ) ফিল্মের গীতিকার হিসেবে। কবি পদ্ম শ্রী পুরস্কার পান ১৯৭১ সালে। এই শান্ত লাজুক চরিত্রের মানুষটির কলম ও কাব্যের মধ্যে দিয়েই করেছেন প্রেম বিরহ পূজা ও প্রার্থনার আত্ম বহিঃপ্রকাশ। 
আজ তাঁর দুটি কবিতা আমি বাংলায় অনুবাদ করার চেষ্টা করলাম । 


दूर रह कर न करो बात क़रीब आ जाओ

दूर रह कर न करो बात क़रीब आ जाओ 
याद रह जाएगी ये रात क़रीब आ जाओ 
एक मुद्दत से तमन्ना थी तुम्हें छूने की 
आज बस में नहीं जज़्बात क़रीब आ जाओ 
सर्द झोंकों से भड़कते हैं बदन में शो'ले 
जान ले लेगी ये बरसात क़रीब आ जाओ 
इस क़दर हम से झिजकने की ज़रूरत क्या है 
ज़िंदगी भर का है अब साथ क़रीब आ जाओ 


দূরে থেকে আর কথা নয় কাছে এসো 

দূরে থেকে আর কথা নয় ,কাছে এসো
স্মরণে রয়ে যাবে এ রাত ,কাছে এসো

বহু যুগের সুপ্ত ইচ্ছা তোমায় ছোঁয়ার
কাছে এসো,আজ আবেগ বশে নেই আর

হিমেল ঝড়ো হাওয়া শরীরে আগুন ধরায়
এই বৃষ্টি নেশা জাগায় , কাছে এসো এবার

এত আড়ষ্ঠতার কি বা কারণ তোমার
 কাছে এসো,সাথী যে আমরা আজীবনের।


चेहरे पे ख़ुशी छा जाती है आँखों में सुरूर आ जाता है

चेहरे पे ख़ुशी छा जाती है आँखों में सुरूर आ जाता है 
जब तुम मुझे अपना कहते हो अपने पे ग़ुरूर आ जाता है 
तुम हुस्न की ख़ुद इक दुनिया हो शायद ये तुम्हें मालूम नहीं 
महफ़िल में तुम्हारे आने से हर चीज़ पे नूर आ जाता है 
हम पास से तुम को क्या देखें तुम जब भी मुक़ाबिल होते हो 
बेताब निगाहों के आगे पर्दा सा ज़रूर आ जाता है 
जब तुम से मोहब्बत की हम ने तब जा के कहीं ये राज़ खुला 
मरने का सलीक़ा आते ही जीने का शुऊ'र आ जाता है।

মুখে খুশির ঢেউ আর চোখ ছেয়ে যায় নেশায়

মুখে খুশির ঢেউ আর চোখ ছেয়ে যায় নেশায়
যখন তুমি তোমার বলো আমায় গরবিনী হয়ে ওঠায়
 তুমি তো নিজেই সুন্দরের মূর্ত প্রতীক তবু 
  তা তুমি জানোই না
 তোমার উপস্থিতি প্রতি আসরের সবকিছুকে অমল আলোয় ভরায়
 আমি কীকরে তোমায় খুব কাছ থেকে দেখি ,যখনই আমার মুখোমুখি হও 
  ব্যাকুলতা আমার দৃষ্টিতে এক পর্দা ঢেকে দেয়
  তোমায় ভালোবাসতে গিয়েই এই গোপনীয়তা ভঙ্গ হলো
মৃত্যুর যোগ্যতা অর্জন করতে করতেই বাঁচার অভিলাষ জেগে উঠলো।