Monday 30 December 2019

রাজদীপ ভট্টাচার্য

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ১-ম বর্ষ , ২৮৩-তম প্রয়াস







দধীচির হাড়    রাজদীপ ভট্টাচার্য 

"আসছে আসছে আসছে / সাবধান সাবধান সাবধান" -- ঘোষকের কন্ঠস্বর রাতের অন্ধকার ছিঁড়তে ছিঁড়তে ছড়িয়ে যাচ্ছিলো শহরের প্রতিটি ঘরে।  ঘুমের ভিতরে, স্বপ্নের ভিতরে, বুকের ভিতরে। 

বেশ কিছুদিন হল এরকম একটা আশঙ্কা সবার মনে আসছিল। খবরে শোনা যাচ্ছিলো বিভিন্ন স্থানে এমনটাই ঘটছে। নিরন্ন মানুষ ভাতের বদলে আজকাল ধর্ম খাচ্ছে গোগ্রাসে। এতে বেশ নেশা হয়। ওই দেশি বিদেশি মদ, ভাঙ, আফিম সব ফেল এর কাছে। আর চড়া নেশায় যা হয় তাই হচ্ছে। দাঙ্গা - মৃত্যু - রক্ত। আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত এই দেশের আনাচেকানাচে বয়ে যাচ্ছে রক্তের নদী। যেসব শহর - গ্রাম পথে পড়ছে তারা বদলে যাচ্ছে নরকে। প্রতিটি পা ফেলতে হচ্ছে চারপাশ দেখে। অগ্রপশ্চাত বিবেচনা করে। 

এই আশঙ্কার রাতে ঘনঘোর তমসার মাঝে নীরবতার সমুদ্রে সাঁতরে চলেছে এক মধ্যবয়সী মানুষ। সবাই তাকে উদয়ন পন্ডিত নামে চেনে। গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের সামান্য শিক্ষক। ছোটো ছোটো শিশুদের হাসি কান্না তার সম্বল। আর সেই হাসি কান্নাকে অবিকল ধরে রাখতে হলে আজ রক্তনদীকে বাঁধতে হবে। এই হিংসা, এই গ্লানি, এই হানাহানি রুখে দিতে হবে যে কোনো মূল্যে। পুরাণে আছে অত্যাচারী বৃত্তাসুর বধে দধীচির হাড় দিয়ে তৈরি হয়েছিল বজ্র। কিন্তু আজ আর সে সব কোথায় পাবে উদয়ন! তবু সে বুঝেছে, দধীচি আসলে একটা মিথ। মানুষের হিতার্থে যে আত্মত্যাগ করে সেই দধীচি। আন্তরিক ত্যাগ আর নিখাদ ভালোবাসাই হল দধীচির হাড়। সাধারণ মানুষ ভালোবাসার বড় কাঙাল। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষে মানুষে ভালোবাসাই পারে সব অন্ধকার মুছে ফেলতে। ভালোবাসাকে ফিরিয়ে আনতে তাই পথে নেমেছে উদয়ন। দৈত্য নদীকে যে ঠেকাতেই হবে।

No comments:

Post a Comment