Friday, 14 April 2023

পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, প্রচ্ছদ

 প্রচ্ছদ : অভিজিৎ দাস কর্মকার 






                                                     ***********************

সূচি 

প্রচ্ছদ/সূচি ,  সম্পাদকীয় নয় কিন্তু,  সূচি, চন্দ্রদীপা সেনশর্মা, রিতা মিত্র, শ্রীমহাদেব, রুমা তপাদার,  মহুয়া দাস, অন্তরা দাঁ, পারমিতা ভট্টাচার্য, দেবলীনা চক্রবর্তী,  পৌলমী ভট্টাচার্য ( অণুগল্প) ,  পিয়াংকী, কেতকী বসু, সৃশর্মিষ্ঠা, লীনা সাহা, নবনীতা ভট্টাচার্য,  সোমা দাস, নীলম সামন্ত,  রুনা দত্ত, রঞ্জনা বসু (অণুগল্প), তরুণ আঁকড়ে, সোমা ঘোষ, দেবযানী ভট্টাচার্য, অনসূয়া চন্দ্র ( অণুগল্প),  রূপক চট্টোপাধ্যায়, সুদেষ্ণা ভট্টাচার্য চৌধুরী, অমিতাভ দাস, সুশান্ত সেন, শম্পা সাহা (অণুগল্প),  কৌশিক চক্রবর্তী, উৎপল দাস, বিধুরা ধর, পাপিয়া মণ্ডল


পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, সম্পাদকীয় নয় কিন্তু

 


সম্পাদকীয় নয় কিন্তু : অভিজিৎ দাস কর্মকার 

গত ছয় বছর যাবৎ একনিষ্ঠতার সাথে, একাই আপনার এবং আমার উভয়ের কাজ করেছি। এ পত্রিকা আমার একার না, আপনারও।  অনেকেই আমাকে সাহায্য করবো বলে এসে, মনকষাকষি করে চলে গ্যাছে।আবার আমার নেওয়া ব্যক্তিও ভুল বুঝে, নিজের উষ্মা প্রকাশ করে চলে গ্যাছেন। আমি কিছু বলিনি, আমি শুধু শুনেছি। কোথাও তাঁরা আমাকে নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে থেমেছেন, আবার কেউ কেউ এখনো করে চলেছেন। আমার কিছু যায় আসে না,যেমনটি আগেও ছিল না। তবে বর্তমানে আমার সহযোগী সম্পাদক দুজন মন থেকেই আছেন। হয়তো আগামীতেও থাকবেন।

এই সংখ্যা থেকে

সম্পাদক : অভিজিৎ দাস কর্মকার 
সহ-সম্পাদক : রিতা মিত্র এবং দেবলীনা চক্রবর্তী 

পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

 


মায়া : চন্দ্রদীপা সেনশর্মা


খুব যত্নে প্রতি রাতে গা থেকে খুলে রাখি আঁশ গন্ধ। একপাশ ফিরে শুয়ে থাকি। এক দুটো গল্প কবিতা বা নিছক শব্দ লেখার চেষ্টা করি। ঘুম আসে না, মধ্যরাতে পাশ ফিরতেই হয়। আঁশ গন্ধে ভরে ওঠে নিরুত্তর বিছানা। কখন যে ঘিরে ফেলে আমাকে। লোফালুফি করে। বিবসনা করে। সেতারে রাতের রাগ, তন্ত্রকারি অঙ্গে গৎ বাজতে থাকে।

ঘুমিয়ে পড়ি কখন। সকাল হয়। পাখিরা ওড়ে। কোমল রেখাবে ভোরের ভৈরব...



৫ মার্চ, ২০২৩, রাত ১০.৪৪




পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, রিতা মিত্র

 


ভাবনার ডিঙি নৌকা : রিতা মিত্র


তার কোনো নির্দিষ্ট নিশানা নেই
তাই মনে কোণে নিরাশার মেঘও নেই
সে ভাবনার ডিঙি নৌকায় ভেসে বেড়ায়
তবে আশ্চর্য দ্বীপের নাম শোনেনি কখনও

যাত্রার বিবরণ শুনতে চাইলে জল টলটলে নদী সবুজ ঘাসের গালিচা নীল আকাশ পেঁজা মেঘের ভ্যালার কথা বলে

আচ্ছা তুমি সূর্যাস্ত দেখনি? 
সূর্যাস্ত! সে আবার কী? 
সূর্য পেছনের দরজা দিয়ে রাত্রি যাপনে গেছে
সকালে সদর দরজা খুললেই দাঁড়িয়ে আছে দেখতে পাবে। 





পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, শ্রীমহাদেব

 


মগ্ন নগ্নতা : শ্রীমহাদেব

পাতার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকে যে সুখ

তাকে ছুঁয়ে থাকি চলো
ঘৃণার মধ্যে যে অহংকার তাকে 
মুছে ফেলি নীলাভ কাঁচে
মগ্নতার যে নিমগ্ন ব্যাকরণ 
 তাকে ধুয়ে ফেলি লাল নীল জলে 

এসো শীত গ্রীষ্ম ভরসার সুখ 
এসো খোলা ম্যানহোল 
ঝটিকা সফরে এসে
বুড়ো হয়ে যেও না 

পৃথিবীর অসমাপ্ত আত্মজীবনী
ধড়হীন  ভেসে থাকা মুখ 
মুখোশ হীন যৌনতার সংলাপ
বন্ধু হতে কে আর চাইবে 
বান্ধবহীন  বন্ধা নগরে  

কলসপত্রী নিরাভরণ সুখ 
শত্রু হয়ে বেঁচে থাকো
গন্ধেশ্বরী জলে 
কিছু খই সুখ উড়ে যাক
আদরে অথবা কান্নায়
শুধু রাত্রির কাছে 
নগ্ন হই বাতাসের মতো।






পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, রুমা তপাদার

 

ছয়লাপ : রুমা তপাদার 

শোনো এ অপেক্ষা 
শোনো শোনো ঋণ-ই তো
চোখের সামনে তুমি 
চোখে কেন হাত পাতো?
বুঝিনি সে-খেলা  আগে
এখন বুঝেছি সব
ভেবেছ ঝামেলা হবে 
চোখে জাগে কলরব,
চারিদিক নিস্তব্ধ 
মনে মনে ছয়লাপ
গোপন কথাটি তবু
মুখে আনা মহাপাপ
সামান্য পাপই হোক
পরে ভাবা যাবে ধূর!
চিৎকারে বলি আজ
আমার সে ভাঙচুর...




পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, মহুয়া দাস

 


বিবাহগাথা : মহুয়া দাস

চার হাতে গাঁথা হয়েছে ভিত, 
তাকে প্রাণপণ চুরমার করবার 
ইঙ্গিত ছিল সুস্পষ্ট। 
বালকস্বভাব নাকি দুশমন তুমি? 
বালি জমিয়ে জমিয়ে কত যত্নে
ঘর সাজিয়ে, তীক্ষ্ণ লক্ষ্য রাখি, 
ভেঙে না দিতে আসে ঝোড়ো ঢেউ।
তারও তোমার মতো বালকপনা।
নতুন বছরের প্রথম দিনে
আলপনা পড়ে সিঁড়ির মুখে, 
ওই দিনে চার হাতে তালি দিয়ে 
বেজেছিল সোহাগসানাই নাকি রণদুন্দুভি? 
বিবাহ হয়েছিল কবুতর ও একজন অভিশপ্ত বালকের।
এখন রাতের দিকে 
জঙ্গল উজিয়ে ভেসে আসে
কুকুরের কান্না।




পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, অন্তরা দাঁ

 

চোখ দিয়ে ভেঙে দাও  :  অন্তরা দাঁ


তোমায় বোঝাতে পারছি না ঠিক 
অথচ কী ভীষণ ভেঙেচুরে যাচ্ছি রোজ 

বুকের ভেতর কী রকম যে হয় !  

আঁকড়াতে গেলে অবহ শূন্যতা অথচ 
আমি জানি তোমাকেই জড়িয়ে দিনরাত্রির আহ্নিকগতি আমার ! 

রেশনের চালের মত মেপে মেপে দিচ্ছ সময় 
ঘটি গড়ানো সুখটুকু দিয়ে মেখে নিচ্ছি ভাতের গরস 

বারোমাস গড়িয়ে যাচ্ছে দিন 
ক্ষতমুখে ব্যান্ডেজ বেঁধেও আটকানো যাচ্ছে না রক্তপাত 

তুমি নেই আছ ভেবে আঁকড়েছি 
একা একা স্নান 
ডুবে ডুবে ঝিলমিল বেলা হয়েছে গহীন রাত 

ঘাট-আঘাটার সিঁড়ি অভিমানে পিছল 

যখনই ছুঁয়েছে এই জাগতিক বোধ 
চোখ দিয়ে ভেঙে দাও সব প্রতিরোধ। 





পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, পারমিতা ভট্টাচার্য

 

দোল : পারমিতা ভট্টাচার্য 


তুমি বা আমি যা রঙ মাখার মেখে ফেলেছি
এখন শুধু ধোয়ার পালা, যেখানে যতটুকু রঙ লেগে আছে
বিবর্ণ হওয়ার পালা, 
যতই পলাশ ফুটুক, কোকিল ডাকুক, পাড়ার সবাই আবির নিয়ে আসুক, 
আর সকলের কাছে বসন্ত রঙের ঋতু হলেও 
তোমার-আমার কাছে বসন্ত নিঃস্ব হওয়ার ঋতু,
বিচ্ছিন্ন থাকার ঋতু, অপেক্ষা ফুরিয়ে আসা ঋতু 





পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, দেবলীনা চক্রবর্তী

 

সংযমে ও উপশমে : দেবলীনা চক্রবর্তী 


 অথৈ মেঘমালা দিগ্বিদিকে ছড়িয়ে গেলে মনে করি আমাদের স্মরণীয় বলতে কিছুই নেই 
 ঘটনাক্রমের সাক্ষীবাহী 
 নেই যুগল একটি ছবিও 
 তবুও লিখি ...
পাহাড়ের গা বেয়ে বয়ে যাওয়া শীর্ণ নদীটি।
 

গাঢ় সন্ন্যাসী রঙ মেখে ধীরে এগিয়ে আসা
এমন একটা সন্ধ্যে হয়তো প্রাপ্য ছিল আমাদের,
যে আলোয় দেখতাম ঝিল চোখের হাসি
কলমে ছুঁতে চাইতাম ওই উদ্বেলিত হাত। 
হলুদ ডুমের নির্জন রেস্তোরায় 
জানতে চাইতাম মনন ও মেধার বর্ণমালা!

অথচ, এমন সব কল্পিত ছবিবাসর 
থেকে একটুও রঙ চুরি করতে পারবোনা কখনো|
আমার গোপন পান্ডুলিপি জুড়ে 
শুধুই চোরাবালির টান

তারপরেও আমি আমার 
পঞ্চবটি আঁচলে সিদ্ধি সাজিয়ে রাখবো 
আর 
উপশমের প্রলেপ পেতে লাঘব করতে চাইবো
 অসংযমে গেঁজিয়ে ওঠা
  অপ্রত্যাশিত ক্ষত।




পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, পৌলমী ভট্টাচার্য

 


অণুগল্প


বাইকালার : পৌলমী ভট্টাচার্য


শ্রেণীগত চরিত্রটা আগেই ব্যক্তিগত হয়েছিল ফণি হেমব্রমের কাছে। রাত হাঁটে; গতি নেয় চাঁদের খিদে। প্রশাসনহীন যজ্ঞকুণ্ডে ফণি ক্ষুধার্ত হয়। কালো চামড়ায় স্যাণ্ডো গেঞ্জি পরলেও লোমশ পুরুষ হোতে পারে না। শরীরের গন্ধ নেয় আদিম পুং সভ্যতা,সুক্ষ্ম উপশিরাগুলো পর্যন্ত স্ক্যানিং করে বাবু সম্প্রদায়। তৃপ্তি শেষে তারা পুতুলনাচ বাবদ টাকা পঞ্চাশেক গোঁজে অনুর্বর ভাঁজে,তবু ফণির ক্লান্ত চিৎকারে ক্লিভেজ স্পষ্ট। বাহা উৎসবে আবিষ্কারক চরিত্রটা নিজেকে পুরুষ বলেছিল সাতগুরুমের জলে। তখন নোনতা লাগেনি, এখন লাগে। চাঁদ নিভলে কান্নায় ভাসে অন্তর্বিবাহিত গোষ্ঠীর ফুলটুসি হেমব্রম।




পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, পিয়াংকী

 


ধার্য যা... : পিয়াংকী
 

খুঁড়ে রেখেছি ভিত্তিপ্রস্তর 
সামর্থ্যমত জোগাড় করেছি অনশন 
এবার তরল দশায় পৌঁছনোর দায় -- সে একান্তই নিজস্ব

তবু, পথ যেহেতু নিরাকার আলেখ্য 
যেহেতু  মায়া বিলিয়ে যায় ধান
ভিক্ষের জমা মাটি আর সামান্য লবণ...
শেষ হলেই চারদিকে হাহাকার অনিদ্রা 

চৈত্র চৈতন্য এনেছে। এনেছে মোহভঙ্গ উপাচার
বৈশাখ তাই ইষ্টদেবতার গহনা
বেদীর উপর লুটিয়ে আছে দুটো  কাগজের নৌকা 
তল্লাশির পর জানা যাবে তাদের মুক্তি কোথায়

আপাতত... 
গাজনভাঙা সম্রাটের কণ্ঠে শুধুই  পালক আহ্বান





পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, কেতকী বসু

 

দূরের আভাসে : কেতকী বসু


সবুজের সমারোহে তোমার মুখচ্ছবি,চিনে নেওয়া 
ভালোবাসা তোমাকে জড়িয়ে থাকে,
সাদা শার্টের স্ব ক্ষেত্রে স্থান করে নেওয়া স্বাচ্ছন্দ্য,
প্রমাণ রেখে যাওয়া ভালোবাসার স্বক্ষতা,
লেন্সের ওপারে বিশ্বাসী চোখ দিন গোনে  অপেক্ষার,
সারল্যের মৃদু আস্ফালনে সময়ও কাছে টানে,
স্পষ্ট কথার মুগ্ধতা ছুঁয়ে যায় দূষণ পরিবেশে।

ট্রেনের সময়ের আগে উদাসী পুরুষ তুমিও ভেসে যেও
নাম হীন পরিচয়ে অজানা ঠিকানায়।
প্রতিটি বোতাম খুলে পড়ে তোমার পায়ের কাছে,
বৃষ্টি আসে ভিজে সন্ধ্যার অনামী ফুলের পরিচয়ে,
সোঁদা গন্ধের আমেজ মিশে যাক প্রান্তরের শেষ কিনারে।

গুণের আসনে কাব্যের সূচনায়  বিজয়ী কবি
ধারাভাষ্যের সূচিতায় পূর্ন আসন ,
এক অসম সাহসে পার হোক সমস্ত নিস্তব্ধতা
অরূপ রূপের  সুন্দর প্রকাশে।





পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, সৃশর্মিষ্ঠা

 


চাঁদের পরে : সৃশর্মিষ্ঠা 


চিনচিনে অন্তর্বাসহীন পুরুষ যাঁর জিহ্বায় ট্রান্সপারেন্ট অনন্তমেয়াদী ব্রহ্ম,  দেহরেখায় মহাশূন্যের গুণগুণ, সাঁই। নিয়ন্ত্রণে রেশমপ্রবাহ মূহুর্তরা। অবাক হরিণের পাশে নির্বাক শিকারী কুকুর। বৃন্তে বৃন্তে উথলেছে দুধ, ফুল্লসৌরভে। চণ্ডালিনী চলেছে শাঁখার কারখানায়। চণ্ডালের মুখে একথালা পান্তা, বুকে মৃতরাতের উদ্ধত লবণ। রাধিকার মতো ফুরালো রাত। শেষ চৈতালী চাঁদের নির্ধারিত অস্পষ্টতা, নতমস্তক "আজ্ঞা দাও গোঁসাই, শ্রীচরণে আঁধার হই।" একইসাথে নির্বাচিত কোণারক পুরুষের অকূল প্রণাম "আদেশ দাও হে নিরাকার, নবনির্বাণ হই।" হিলহিলে বাতাসের অলকানন্দা স্রোতে তখন 
"ইহৈকস্থং জগৎ কৃৎস্নাং পশ্যাদ্য চরাচরম্..."




পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, লীনা সাহা

 


স্রোত : লীনা সাহা 


এই যে তুমি, বারবার ধেয়ে আসছো উদভ্রান্তের মতো। 

মেপে নিচ্ছো উরু, স্তন, কোমরের আশপাশ। 

আলতো করে কখনও বা পায়ের পাতা দিলে ছুঁয়ে । 

উপুড় হওয়া একটা আস্ত বদ্বীপ গিলে নিচ্ছে স্রোত ।
 ভয়ে জড়োসড়ো, সরে দাঁড়ালো মেয়েটা! 

ধরো, তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল।
খুব জোর বৃষ্টি এলো । হঠাৎ
ছোট জামা গায়ে বান্ধবীদের বাঁধ ভাঙ্গা সে কি উদ্দাম হাসি। 

এই শহরেই সতীত্ব উড়ছে ঘাট থেকে ঘাটে ! 

ভিন্ন কারও সাথে..

দূর প্রান্তদেশে আঙুল জড়িয়ে পুড়ছে জোনাকি। আর তোমার অবিরাম স্রোত.... 

যত্নে গড়া এলোমেলো তখন। বৃষ্টি ভেজা শৈশব। 

সাক্ষী থাকলো নিয়ন বাতি।  স্রোত।





পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, নবনীতা ভট্টাচার্য

 


উপত্যকা : নবনীতা ভট্টাচার্য


খনির যে দেশটা তুমি আমাকে দিতে চাও, ওটা আসলে আমার না।

আমার রক্তে রয়েছে পলিমাটির উর্বরতা, ফসলের ঘ্রাণ। 

কি করে নিজেকে ছিঁড়ে ফেলি বলো? 

ফসলের ঘ্রাণ মেঘে এলিয়ে পরা তীব্র দুপুর বটগাছের শীতল ছায়া মেখে খেলেছিল একদিন...


আজ খেলা নেই। আমি আছি আর আমার সাথে বহন করছি ফসলের তীব্রতা পলিমাটির সোঁদা গন্ধ। 

আমার রক্তের ভেতর তীব্র আঘ্রাণ, 

কালের চুম্বন। বৃষ্টির সুরায় সোঁদা মাটির গন্ধ। 

খনিজসম্পদ ঢেলে সাজালেও খনি অঞ্চলে আমি বন্ধ্যা শুকনো, 

খনিজ ফসল আমার জন্য নয়। 


আমি যে পলিমাটি তীব্র উর্বর। 

দহন শেষে একটু বৃষ্টিতেই গলে জল হয়ে যাই।




পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, সোমা দাস

 

নদী : সোমা দাস


তুমি নদী বলে ডাকো
আমি ভেসে থাকি
যখন কবিতায় নদী দেখো
আমি ডুবতে থাকি!

আমার পাড়ায় এসে
আড়ালে আড়ালে ই থাকো
মাঝে মাঝে তুমি
নদী বলে ডাকো!

যোজন দূরত্ব মেপে চলো
আমি আলোর গতিবেগ মাপি
কবিতায় নদী দেখো তুমি
আমি আঁকি নদীর ছবি।





পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, নীলম সামন্ত

 

স্টেশন মাস্টার : নীলম সামন্ত 

অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি 
বসে থাকা একটি ক্রিয়াপদ হলেও ক্যালরিবার্ন প্রায় জিরো 
অতয়েব একটি ট্রেনে চড়লাম
ক্রিয়ার পাশাপাশি প্রতিক্রিয়া বাড়ছে 
গতি বাড়ছে 
ঝাপটা বাড়ছে 
মাথায় অ্যালগরিদম ইকুয়েশন 
আমি এখনও বসেই আছি 
কানের পাশে ঘাম 
অচেনা দীর্ঘশ্বাস 
জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পা তুলে একটি মেয়ে 
আইন পড়ছে 
রাষ্ট্রের খাট কাঁধে যারা বাটারপেপারে উন্নয়ন বেক করছে 
তাদের ব্যাকআপ ভোকাল  
আমি বসে বসে দেখছি 
ট্রেন স্টেশনে 
স্টেশন নির্মাণ হয়েছিল কর্ণিয়ার পঞ্চম লেয়ারে




পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, রুনা দত্ত

 


আমাদের জলছবি : রুনা দত্ত 

ঝরা পাতার গল্পের মতো চরিত্ররা ফিরে
আসে বারে বারে

কি জানি! কিসের জন্য পলাশ ফোটে আজও..
কিসের জন্য অকাল বসন্ত

কিছুই ভাবতে পারিনা বলেই হয়তো
বিবর্ণ হলুদ বিষণ্নতার ঘিরে থাকা ..

কতদিন হয়ে গেলো কলমের কালিতে 
জীবনের শব্দরা ঠিকঠাক দানা বাঁধে না

শুধুই বিদিশার নিশার মতো 
ছায়ামেদুরতায় নিজেকে খুঁজে ফেরা

তোমার সাথেই রামধনু রঙে জলছবি
 আঁকার স্বপ্ন দেখেছিলাম

বিনে সুতোর বাঁধন হয়তো 
একজীবনের স্বপ্নকে এখনো ছুঁয়ে 
 
ধূসরতার বুক চিরে ঝিরি ঝিরি
বৃষ্টির ফোঁটায় আজ আবার ভিজে যাচ্ছে ...

তোমার আমার শহর,আমাদের জলছবি,
জীবনের ক্যানভাস

এভাবেই সবুজের ঘ্রাণে 
অকাল বসন্ত বা অকাল শ্রাবণে 
ঝরাপাতায়.. 

কোন একদিন ঠিক ফুটবে 
পলাশ কৃষ্ণচূড়া বা জুঁই হাসনুহানা

সেদিন আঁকবো তোমার আমার বা আমাদের
পূর্ণাঙ্গ জলছবি জীবনের ক্যানভাসে। 





পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, রঞ্জনা বসু

 

অণুগল্প


মার্জার : রঞ্জনা বসু



বেড়ালটি কালো রঙের ছিল না। তবুও ড্রাইভার বলে উঠলো--- "ধ্যাৎ শালা।"  যাত্রীদের মধ্যে তুলনায় বয়স্ক মানুষটি বললেন, নিরীহ মার্জার। সবই কুসংস্কার... 

আচমকা দাঁড়িয়ে গেল অটোরিক্সা। পাশের যাত্রীটি বহুক্ষণ ধরে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে, তারপর ওর শরীরে ঝুঁকে পড়ল। মেয়েটির চোখে মুখে উৎকন্ঠা। পিছতে যাবে, ঠিক সেই মুহুর্তে স্টার্ট নিল অটো। 

   মানুষটি এবারেও প্রতিবাদী হতে গিয়ে আসন থেকে হড়কে গেল, মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ার আগে চিৎকার করে উঠল। আতঙ্কের ঘামে ভেজা মেয়েটির মুখটা তখন বাইরে আসার আপ্রান চেষ্টায়, কিন্তু কিছুতেই পারছে না। 




পয়লা বৈশাখ সংখ্যা | ১৪৩০, তরুণ আঁকড়ে

 


সময় : তরুণ আঁকড়ে


সময় বড় একলা চলে সঙ্গে নেয়না কাউকেই সে

রাতের তারা খষার শব্দের মতো... নির্জন গতি
কত বসন্তের সময় শেষ হল
তবু একটি বসন্ত থমকালো তোমার এলো চুলের সন্ধ্যার গন্ধে। 
পড়ে রইল অনন্ত যৌবন পোড়া মাটির সংসার
হিসেবি জীবনের আটপৌরে ঘর কন্নারা, 
হাত ধরে কে নিয়ে চলে কপিলাবস্তু নগরে
কোন এক প্রেম অভিলাশের অভিষার যাত্রার রথ। 
এইবার সময় থমকে দাঁড়ায় হাত ধরে
চীর শান্তির দেশে সময়ের সাথে সাথে পা চলে।