Friday 30 October 2020

|| কোজাগরী সংখ্যা ≈ রাজদীপ ভট্টাচার্য ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||
কোজাগরী সংখ্যা
রাজদীপ ভট্টাচার্য 



বৃক্ষবিষয়ক 

(১)
গাছকে বললাম, আমি তোমারই মতো। এই দ্যাখো, আমার বাহু। তোমার বাড়িয়ে দেওয়া শাখা-প্রশাখা। ও মুচকি হেসে বলল, কিন্তু আমার হাতে সবুজ পাতার পতাকা। আমি হাতে হাতে খাবার বানাই। সবার জন্য। রোদ্দুরে ছায়া দিই। যে আমার কাছে আসে তাকেই আড়াল করে রাখি। আমি নিজের দু'হাতের দিকে ফিরে তাকালাম। আমার দুহাত জুড়ে শহুরে কলুষ আর নাগরিক বিজ্ঞাপন। 

(২)
গাছেরা কিছুই ধরে রাখে না। পালক লাগিয়ে উড়িয়ে দেয় বীজ, জলের কাছে রেখে আসে। বহুদূর পথ পেরোবার আগে কচি বীজদেহ ছুঁয়ে থাকে, মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হাত নাড়ে। অনায়াসে মাটির কাছে পাঠ নিতে পাঠায় ছানাদের। ঘরে ফেরা না ফেরা নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করে না। তারপর আকাশের দিকে চেয়ে, আলোর দিকে চেয়ে সমর্পণী স্তব। প্রার্থনা জানায় পৃথিবীর হয়ে একাই, কারো অপেক্ষায় বয়ে যেতে দেয় না এই তিনদিনের জীবন। 

(৩)
আমি গাছকে প্রশ্ন করেছিলাম, তোমার মন নাই কুসুমের বাপ? সে তাই বসন্তে ফুল ফুটিয়েছিল আর শীতে ঝরিয়েছিল পাতা। তারপর একদিন জনান্তিকে বলেছিল, আমি দিতে পারি, নিতে পারি না। আমার ভিতরে, প্রতিটি কোশে, আমার বাকলে লেখা থাকে রোজকার কথা, তবে উচ্চস্বরে জানাতে পারি না। শুধু মুখ বুজে নিজের কাজ করি। কত কাজ! মাটি থেকে জল টেনে টেনে তুলি। পাতায় পাতায় ডেকে আনি মহাদ্যুতিম। যে আদিম লঙ্গরখানার দায়িত্ব দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে সে কাজ যে শেষ হবার নয়! আমৃত্যু এ বিশ্বমন্দিরের সেবায়েত আমরা, ওই বাতাসের সাথে সামান্য খুনসুটি আমাদের বরাদ্দ বিনোদন মাত্র।

(৪)
আগে বুঝতাম না কিছুই। ইদানিং বেশ স্পষ্ট হয়ে আসছে সকল অভিপ্রায়। দিব্যি অনুভব করি, মাটির সাথে সেলায়ের ফোঁড়ে বাঁধা আছে আকাশ। তাই তারা লেপ্টে থাকে অপরের গায়।  প্রতিটি উদ্ভিদ, প্রতিটি বৃক্ষ যেন মাটি থেকে আকাশ অবধি টানা সূচের নক্সা। গাছ কাটা হলে সেই প্রাচীন কাঁথার রূপ জীর্ণ হয়। আকাশ ও মাটির মধ্যে জমে সমূহ তিমির। ইবলিশ নেমে আসে দুজনের মাঝে। 

(৫)
গাছেরা জন্মনিয়ন্ত্রণ জানে না, এজন্য তাদের অবশ্য কোনো দুঃখ নেই। গাছেরা আত্মরক্ষায় অস্ত্র ধরতে জানে না,  এজন্যও তাদের কোনো দুঃখ নেই।  আসলে তাদের শরীরেই কোনো দুঃখগ্রন্থি নেই। থাকলে মানুষের কপালে দুঃখ ছিল!



No comments:

Post a Comment