কোজাগরী সংখ্যা
সুশীল হাটুই-এর কলমে অক্ষয় চরিত্র কবি রথীন দাশগুপ্ত নিয়ে কিছুকথা
রথীন দাশগুপ্ত বাঁকুড়া জেলার মন্দিরময় শহর বিষ্ণুপুরে বাংলা ৫ ই ফাল্গুন ১৩৪৩ ইং ১৭ ই ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতার নাম ( স্বর্গীয়) শ্রীদামচন্দ্র দাশগুপ্ত।শ্রীদামবাবু NATIONL AURVEDIC COLLEGE & HOSPITAL কলকাতা থেকে বাঁকুড়া জেলার
প্রথম আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে উত্তীর্ণ হন, এবং 'বৈদ্যশাস্ত্রী' উপাধি লাভ করেন।
মাতা (প্রয়াতা) হেমলতা দাশগুপ্তা।
রথীনবাবু মাড়ুইবাজার গোষ্ঠবিহারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীকালে বিষ্ণুপুর হাই স্কুল এবং বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজ থেকে শিক্ষা লাভ করেন। কৈশোর থেকেই তাঁর সাহিত্যের প্রতি প্রবল অনুরাগ দেখা যায়। তিনি প্রথমে তাঁর বসত এলাকা কবিরাজ পাড়া থেকে প্রকাশিত হাতে লেখা পত্রিকা অভিযাত্রী-তে লেখালেখি শুরু করেন।পরবর্তীকালে গণশক্তি সমন্বয় অভিযান চেতনা আলোর ফুলকি মহুয়া সংরাগ বোধিদ্রুম আড্ডা যুগদীপ অমৃতধারা এবং আরো অজস্র পত্রিকায় কবিতা গল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন।
তিনি প্রথম জীবনে অস্থায়ী চাকরি হিসাবে TEST RELIEF DEPTT-এ এবং পরে স্থায়ীভাবে K.G. ENGG. INSTT. বিষ্ণুপুর-এ যোগ দেন।
তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল ঈর্ষণীয়। তিনি বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। ভারতীয় ইতিহাস আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজদর্শন এবং বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের উপর তাঁর জ্ঞান ছিল অপরিসীম। নাটক বিষয়ে তিনি সমসাময়িক অনেকের চেয়ে বেশি জানতেন। শুধু তাই নয়তিনি নাট্ট-বিজ্ঞান নাট্ট-মঞ্চ নাটক সমালোচনা এবং নাটক পরিচালনাতেও দক্ষ ছিলেন।
রথীন দাশগুপ্ত চারটি বই লিখেছিলেন।
১. অম্বীক্ষা ২. কুয়াশা সরিয়ে ৩. বালুচরী ছড়া ও
৪. যদি প্রেম থাকে।
তাঁর কবিতার ভাষা খুবই সহজ। কিন্তু অর্থের
গভীরতা খুব বেশি। যেমন---
পণপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে গিয়ে
নিগৃহীত রমণীর দুঃখ বোধে
চোখের স্লুইসগেট খুলে কয়েক হাজার কিউসেক;
(দায়বদ্ধ) কাব্যগ্রন্থ -কুয়াশা সরিয়ে।
এমনি করেই কখন ঘুমের মাঝে
স্বপনেরা নিজেদের ঘরে ফিরে যায়।
(চিরন্তনী) কাব্যগ্রন্থ -- কুয়াশা সরিয়ে।
তোমার শস্যহীন মৃতবৎসা মাঠে
খড়ের মানুষ সেজে কাকে ভয় দেখাচ্ছো তুমি?
আসলে তুমি নিজেই খুব ভয় পেয়েছো।
(স্বগতোক্তি) কাব্যগ্রন্থ -- যদি প্রেম থাকে।
সমস্ত শরীরে তোমার লাম্পট্যের উপদংশ
যেহেতু, তোমার আসল নাম - 'মিথ্যা'।
(প্রসাধন কেড়ে নেবো)
কাব্যগ্রন্থ --- যদি প্রেম থাকে।
বালুচরী ছড়া তাঁর লেখা হাস্যরসাত্মক ছড়ার বই।
তিনি বাঁকুড়া জেলার লিটল ম্যাগাজিন সংস্কৃত টোল আয়ুর্বেদ চিকিৎসা কর্মকার সমাজ ও কামান তৈরির উপর প্রবন্ধ ছাড়াও অজস্র বিষয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন।
রথীনবাবু মার্ক্সবাদে বিশ্বাস করতেন এবং খুব সাধারণভাবে জীবনযাপন করতেন।তিনি প্রান্তিক মানুষদের আর্থিক সাহায্য করতেন।আত্মপ্রচারের প্রবণতা তাঁর কখনোই ছিল না। সহজ সরল অপরিসীম জ্ঞানের অধিকারী রথীন দাশগুপ্ত ১৮ই অক্টোবর ২০১৪ সালে পরলোকগমন করেন।
No comments:
Post a Comment