কোজাগরী সংখ্যা
অণুগল্প~প্রনব রুদ্র
কৌশল
বছর আটের রাহুল। জানালার শিক্ ধরে ফসলের সবুজমাঠ, প্রকৃতি দেখছে। গ্রামের ধনী মাতা-পিতার একমাত্র সন্তান। অতিমারী অসুখের প্রকোপে এখনো বাড়ির বাইরে আসা বারণ। আর বিশেষ বারণ- ওদিকের মনুয়া, নিতাইদের সাথে খেলা এবং কথাও! কী এক ভাইরাসি অসুখ- কথা বললে, ছুঁলেই নাকি মারা যাবে সে!
হঠাৎ "ম্যাওও ম্যাওও"- ডাক।
তারপর "ভোওউ ভোওউ"-ও শুনে মুখ চওড়া হাসি রাহুলের।
সাথে সাথেই প্যাকেটটা জানালার বাইরে নামিয়ে দিলো।
দ্যাখে, মনুয়া নিতাই ওটা খুলে খাওয়া শুরু করেছে।
রাহুলের বন্ধু ওরা। বাবা-মা জানেনা। ফাঁকা দুপুরে আর সন্ধ্যার পর প্রতিদিনই এখন আসে, ওরমভাবে ডাকে।
বাড়িতে রান্না ঠিকমতো হয়না বলে একদিন রাহুলকে কেঁদে বলেছিলো- "তোদের বাড়ি থেকে প্রতিদিন কত সুন্দর সুন্দর গন্ধ আসে, তোরা প্রতিদিন ভাত খাস?"
রাহুল অবাক হয়ে বলছিলো- "হ্যাঁ খাই তো। আমি যা খেতে চাই করি, মা তাই রান্না করে দেয়।"
সেদিনের পর মনুয়া আর নিতাইয়ের পছন্দের রান্নাও রাহুলদের বাড়িতে হয়। তবে মা জানেনা। আজ ছিলো মনুয়ার মাংস-ভাত।
খাওয়া শেষে রাহুলের বোতলে জল খেয়ে নিচুস্বরে গল্প করতে থাকে ওরা।
স্কুলের স্যর বলেছিলেন মানুষের উপকারে আসাই মানুষের আসল ধর্ম। মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড়ো খুশি ক্ষুর্ধাতকে তৃপ্তিভরে খেতে দেখা। তোমরা এখন ছোট এসব বুঝবেনা। তবু চেষ্টা করবে
মানুষের পাশে থাকার। এখন স্কুল বন্ধ হলেও স্যরের কথা ভুলেনি। মাকে বলে এঘরে নিজের খাওয়ায় ব্যবস্থা করেছে যাতে বন্ধুদের জন্য খাবার সরাতে পারে।
সন্ধ্যাবেলা কুকুরের ডাক শুনতে পেলো রাহুল। ঘরে তখন মা। মা বল্লে- "তুমি ওই কুকুরগুলো জানালা দিয়ে খেতে দাও নাকি? ও জানোয়ার কামড়ালেই কিন্তু জলাতঙ্করোগ, নাভিতে চোদ্দটা ইনজেকশন!"
রাহুল চুপ থাকে।
"শোন, রাতে পায়েস করবো খাবে তো?"
পাশের ঝোপটা কেঁপে ওঠে। ম্যাওও ম্যাওও ডাক শোনা যায়। রাহুল জানে এটা মনুয়া বলছে, খাবে। রাহুলও মাকে হ্যাঁ বলে।
মা গজ্গজ্ করেন- "আবার একটা বেড়াল এসেছে। সবগুলোকে তাড়িয়ে জানালা বন্ধ করেদি।"
দু'পায়ের দুই জানোয়ার রাহুলদের রান্নাঘরের পাশে পায়েসের গন্ধের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষুধার কাছে এমনই দাঁড়িয়ে থাকে সব পেট। শুধু ভোগবিলাসের ধরণটা আলাদা। উদরপূর্তির কৌশল ভিন্ন ভিন্ন।
No comments:
Post a Comment