Wednesday 5 February 2020

অভিজিৎ দাসকর্মকার

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ ,৩৬-তম প্রয়াস












আমাদের সাংসারিক জীবনকে রক্কে কোরো রঘুবীর...
অভিজিৎ দাসকর্মকার 


একটি সুন্দর দৃশ্যায়ন সুরু হচ্ছে, সারাশহর জুড়ে বড়ো বড়ো হোডিং। কি দেখছি? ওইটি powered by একটি দাদের মলম... ভাবা যায়। 

    মহরৎ, তারপর ভূমিকা পর্ব। তারপরই দেখা যাচ্ছে একটি মহিলা হেব্বি। ঝিকঝাক, সেজেগুজে চলছে, ফিরছে, উঠছে, রান্না করছে, সংসার সামলাচ্ছে, ছেলে মেয়েদের home task, শ্বউর ঠাকুরের গাঁটের ব্যাথায় গরম তেল মালিস, মানে দু-হাতে ak-47 আর দশভুজার মতো সংসারকে সাজিয়ে গুজিয়ে রেখেছে। আবার বাড়িতে বিবাহিত ননদ, তার স্বামী, নিজেরাই গুজুর গুজুর,ফুসুর ফুসুর পরিকল্পনায় বাবার সম্পত্তিতে একটু বেশি অংশ যাতে পায় তাই সুন্দরী বৌমাটির নামে বাবা-মায়ের কানে আর্সেনিক ঢালছে। গঞ্জনা সহ্য করার পরও, মন খারাপ থাকার পরও স্বামীকে নো নালিশ! ভাবতে পারেন? আবার ওই সুন্দর সাজে সারাদিনের কাজের পর কোন কমতি নাই, ওই সাজটি নিয়েই শুতে যায়।রক্কে করো রঘুবীর... এরাই পারে। কারণ এদের পারতেই হয়। এদের ভগবান যে পরিচালক মহাশয়।রূপসজ্জার লোক,পিছন ছাড়ে না।   

          আরে ভুল বকছি না! দাঁড়ান বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয় টা হলো আমাদের টিভি বাবুর দৌলতে বাংলা ও হিন্দি সিরিয়াল। কি ভীষণ প্রভাব বিস্তার করেছে,ভাবায় যায় না... আর আমাদের বাড়ির মহিলা মহল।অমুকের সাথে তমুকের বিয়েটা হবে? চিন্তামণির ভর... মাছের ঝোলে এন্তার নুন। কিছু বলতে যান, একটু ভাতে মেখে খেয়ে নাও দিকি। তোমার সংসারের জোয়াল টেনেই তো এই অবস্থা, আমার তো সব গ্যালো। নিজে সারাদিন বাইরে থাকে...আমি কি নিয়ে থাকবো?...ব্লা...ব্লা... 

বাব্বা কি দাপট!...

      দ্যাখো। কিন্তু এদের বোঝানো যায় না কেনো, ভালো জিনিষ দ্যাখো। এই সিরিয়াল যে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে কালোছায়া। অশান্তির মুল কারণ। আমরা পিছিয়ে পড়ছি।বাইরের দেশের মানুষজন টিভি রাখে বাড়ি সাজানোর জন্য। আর আমাদের টিভি রাখা হয় প্রতি দেড় বছর অন্তর পিকচার টিউব বদলানোর জন্য। সারাদিন এতো টিভি চলে। 

       হাসি না! দেখবেন। এই যো ক্রাইম পেট্রোল গুলো দেখায়। সচেতনতা। বাঃ দারণ কাজ।অন্য দিকে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেওয়াও হচ্ছে। কেনো? আমাদের পরিচিতির পরিসর আমরা নিজেরাই কমিয়ে নিচ্ছি। আত্মিয়তাও সৌজন্যে বা মিডিয়ায় ভর করে বয়ে নিয়ে চলেছি। এমনকি আমরা আজকাল খুব চেনা মানুষ ছাড়া বিশ্বাস করতে পারি? পারি না।সামনে যাকে সন্দেহ করছি তাকে বছর বছর দেখার পরও বলছি কোন অভিপ্রায় তো আছেই। পরবর্তীতে ক্ষমা চাওয়া... দিজ্... দ্যাট... কিন্তু সচেতনতার জন্য কোন precaution?... ক'জন বাবা-মা ছেলে-মেয়েকে ক্যারাটে শেখান?যোগা শেখান? 

     আস্তে। যারা শেখান তারা রাগ করবেন না।ভালো করেন।  কিন্তু এসব শিখে আসার পর এত্তো ক্যালেরিওয়ালা খাবার দেবেন না।Strength কমবে।নধর হয়ে পড়বে।আপনার পরিশ্রম পণ্ডশ্রমের পথে চলবে। আমি আমার মনে হওয়াটা বলছি।ভাবুন যখন কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আমাদের ৪০জনের অধিক সৈন্য শহিদ হলো।আমরা কি নিজেরা শোক জ্ঞাপন কোরে সিরিয়াল দ্যাখা সেদিনের জন্য বন্ধ রেখেছি?...না।বাদ দিন। টিভি চ্যানেলগুলো নির্লজ্জের মতো কি করে সেদিন সিরিয়াল সম্প্রসারণ করলো? বিবেকহীন। আমাদের সুরক্ষার জন্য সারাক্ষণ যারা সীমানা আগলে থাকছে!আমাদের হাতে তাদের শোকে একটা দিন সিরিয়াল না দেখার অঙ্গিকার নেই। অথচ সব আরাম নেবার পর চায়ের ঠেকে বসে এমন লেকচার ঝাড়ি,যেন নিজেকে হোয়াইট হাউসের যোগ্য বাসিন্দা মনে হয়। ধিক্কার বাংলা আর হিন্দি সিরিয়ালের পরিচালক সহ সমস্ত পরিচালন মন্ডলিকে।

         সিরিয়াল চালান। কিন্তু শিক্ষা মুলক। যা আমাদের উত্তরসূরিদের ভবিষ্যৎ কে সুরক্ষিত করতে পারে।

        রাগ করবেন না সিরিয়াল প্রিয়রা।একটু ভাববেন। ভবিষ্যৎ কে আমরাই ক্ষাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছি নাকি?...

      ভালো থাকবেন।পারলে এসব সিরিয়ালের ভুত ছেড়ে কবিতা বা উপন্যাসের পাতায় থাকুন।নাটক দেখুন। গান শুনুন। নিজেদের অন্যভাবে খুঁজুন।কবিতাই জীবনের উৎসব... 

No comments:

Post a Comment