আদর্শ, আদর, আদম
তুলি নামিয়ে রেখে আদর্শ ইজেলের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে। নীলের ছায়া, ভারী নীল। লালের ছায়া, ভারী লাল। যা আনতে চাইছে আসছে না।
পশ্চিমের জানলার কাছে এবার সে। সিমেন্ট মিলের ছাই বুকে ভরে আকাশটি এইসময় বড়ো বেশি ঘোলাটে। আদর্শ জানে অল্পসময় চেয়ে থাকলেই মাইগ্রেন। আসিলা কপালে হাত বুলিয়ে দিত।
প্রফেসর দত্তগুপ্ত খুন হয়েছিলেন। মাসছয়েকের মধ্যে স্ত্রীও মারা যান। স্ত্রী অবশ্য খুন হননি, হার্টে ব্লকেজ ছিল।
প্রফেসর মুসলমানদের পক্ষ নিয়ে কথা বলতেন। বলতেন দুনিয়ায় শান্তির ধর্ম ইসলাম। এই নিয়ে নানাজনের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হত। তবে আদর্শ যেদিন আসিলাকে ঘরে নিয়ে এল, প্রফেসররা মেনে নেননি। বললেন, সিয়া হলেও ভেবে দেখা যেত। এ যে সুন্নী।
আসিলাও আদর্শকে ছেড়ে চলে গেল। আদর্শকে তার আর ভাল্লাগছিল না। আদর্শর কিছুই তার ভাল্লাগছিল না এইরকম বলে চলে গেছে সে।
আদর্শ শুধু বলেছিল, তোমরা বড়ো রিজিড।
আদর্শ তোমরা বলেছিল।
আদর্শকে আসিলা আদম বলে ডাকত, শাশুড়ির মতো কখনও আদর বলেনি।
তোমার বাবা খুন হয়েছেন, তুমি বলেছ আমার জন্যেই।
আমি এমন বলিনি। ভাবতেও পারি না।
তাহলে কেন অজানা কেউ প্রফেসরকে ঘরের সামনে গুলি করে যাবে?
তোমার জন্যে নিশ্চয় না।
তুমি বলেছ আমার জন্যেই।
আমি এমন বলিনি।
বলেছ।
বলিনি।
বলেছ।
কদিন পরে আসিলার মা একবার কল করেছিল। আদর্শ ডিক্লাইন করে দিয়েছে।
বিকেলান্তের কমলা ইজেলের ওপর এইসময়। আদর্শ দেখল ছবিটি কাঁপছে। খুব জোরে কাঁপছে। আদর্শর বাবা আর মা ছবি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
অবিশ্বাস্য। অসম্ভব। ভাবতে ভাবতেই প্রফেসরের ঠোঁট নড়ল, কি এচিভ করলে এই জীবনে?
আমি কিছুই এচিভ করতে চাইনি।
তাহলে কি চেয়েছিলে?
ছবি আঁকব, তুমি জানতে, তোমরা জানতে।
দেখো, আমরা আসতাম না, আসিলা তোমাকে ছেড়ে চলে যাবার পর তুলি হাতে নিলেই তুমি মনে মনে আমাদের ডাকছ।
জানি না।
আসিলা এখন কোথায়?
জানি না।
পেলেটে নীল রং ছিল, গাঢ় নীল ছিল, কমলা, পিংক, গাঢ় সবুজ ছিল। আদর্শ পেলেট হাতে নিয়ে সব রং ইজেলে ছুঁড়ে দিয়ে হাতের তালুতে মুখ ঢেকে কাঁদছে।
এইসময় ইজেলের ওপর চাঁপা রোদের আদর। জানলায় আসিলা কপালে আছড়ে পড়া চুলের কুচি ডান দিকের কানের পাশে সরিয়ে দিচ্ছে, মিনেকরা ঝুমকো দুলে উঠেছে। কোনটি সত্যি কোনটি বিভ্রম আদর্শ ধরতে পারছে না।
No comments:
Post a Comment