Tuesday, 31 May 2022

মে সংখ্যা || গল্পে রাকা মুখোপাধ্যায়

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ||  রাকা মুখোপাধ্যায় 


সিঙ্গল সিলিন্ডার

ইণ্ডাকশনে মাছটা ভাজা হয়ে গিয়েছিল, শুধু ঝোলটা বাকি। হঠাৎ করে কারেন্ট চলে গেল। এই বাড়িতে আসার পর থেকে কোনদিনই বিশেষ কারেণ্ট যায় না, কখনও সখনও বিশেষ গোলোযোগ ছাড়া। তাই ইণ্ডাকশনেই বেশ চলে যায় মঞ্জরীর একলা ঘরের রান্নাবান্না।

হঠাৎ কারেণ্ট চলে যাওয়ায় মঞ্জরীর খেয়াল হল সিঙ্গল সিলিণ্ডারের ওভেনটা আছে, সুমিত দিয়ে গিয়েছিল সেই বছর খানেক আগের সেই দিনটাতে, এই ঘরে সংসার শুরুর সেই প্রথম দিনে। নতুন ফ্ল্যাটটা কেনার পরে পরেই তখনও ইলেক্ট্রিসিটি আসেনি, দিনটা ছিল ভ্যালেন্টাইন ডে। মঞ্জরীকে চমকে দিয়ে সুমিত বলল, “চল, আজ ক্যান্ডেল লাইটে ভ্যালেন্টাইন ডে সেলিব্রেট করি আমরা নিজেদের ফ্ল্যাটে।“ মঞ্জরী একটুও আশ্চর্য হল না। রোম্যান্টিক সুমিতের পাগলামো সম্পর্কে ওর বেশ ভালই ধারণা আছে। তবু বলল, “এ বাবা! রান্না হবে কি করে?” মঞ্জরী জানে, সুমিত বাইরের কেনা খাবার একদম পছন্দ করে না। সেদ্ধ ভাত দিলেও সে সোনামুখ করে খেয়ে নেবে।

মুহূর্তে সুমিত ভেবে নিল, “আরে একটা সিঙ্গল সিলিণ্ডার কিনে নিয়ে গেলেই তো হল। সেদ্ধ ভাত রান্না হয়ে যাবে। আর দুদিন বাদে তো ইলেক্ট্রিসিটি এসে যাবে, তখন ইণ্ডাকশনে দিব্যি চলবে। এমনি তো আমরা আপাতত মঝে মাঝে এসে থাকব, এখনও তো ডেভলপ হয়নি জায়গাটা। পরে পাকাপাকি থাকলে তখন গ্যাসের কানেকশন নেওয়া যাবে।

অতএব, ভ্যালেন্টাইন ডে তে সিঙ্গল সিলিণ্ডার কিনে নতুন ফ্ল্যাটে যাওয়া হল আর সত্যি সত্যিই মোমবাতির আলোতে কত সুন্দরভাবে যে দিনটাকে রমণীয় করে তোলা যেতে পারে, মঞ্জরী ভাবতেও পারেনি। ভীষণ ভাল লেগেছিল ওর। বসন্তের হাওয়ায় দক্ষিণের বারান্দায় বসে জড়িয়ে রেখেছিল সুমিতকে আর সুমিতও সেদিন আদরে আদরে ভরে দিয়েছিল ওকে।

চার মাস পরেই সুমিতের ট্রান্সফার অর্ডার এল। ও দিল্লী চলে যাবে। মঞ্জরীকে বলল, “এ বাড়ির ভাড়া গুনে আর কি হবে? তুমি বরং তোমার নতুন ফ্ল্যাটে গিয়েই থাক। আমি যখন আসব, ওখানেই থাকব একসাথে।

মঞ্জরীর বুকটা ভারী হয়ে গেল। মেসে থাকবে বলে সুমিত মঞ্জরীকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না। অতএব, সেই থেকে মঞ্জরী এই ফ্ল্যাটে একাই থাকে, কোনরকমে নিজের জন্য এক পদ রান্না করে খায়। প্রথম প্রথম সুমিত প্রতি মাসে একবার করে আসত, তারপর দু-তিন মাস বাদে বাদে। দিনে দিনে তার আসার সময়ের ব্যবধান ক্রমশ বাড়তেই থাকছে। কারণ বোঝে না মঞ্জরী, বুঝতেও চায় না।

আজ কারেণ্ট চলে যাওয়ায় সিলিণ্ডারের বার্ণারটা জ্বালতে গিয়ে দেখে, সেটা আর জ্বলছে না।গ্যাসটা ফুরিয়ে গেছে, নাকি সুমিতের ভালবাসা? হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা আছে, তবু ইচ্ছে করল না। ভাত আগেই এক ফুট দেওয়া ছিল। মাছ ভাজা দিয়ে তাই খেয়ে শুয়ে পড়ল।

সুমিতকে শুধু মেসেজ করে দিল, “ তোমার সিলিণ্ডারের গ্যাস ফুরিয়ে গেছে। তুমি এসে না ভরালে সেটা খালিই থাকবে”।


2 comments:

  1. বাহ চমৎকার লেখা। অনেক ভালোলাগা 🍂

    ReplyDelete
  2. বাঃ। অপূর্ব 🙏

    ReplyDelete