Friday, 13 October 2023

উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : প্রচ্ছদ

প্রচ্ছদ : সুজয়া মাম্পি   সম্পূর্ণ অলংকরণ : দেবশ্রী দে 





উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : সম্পূর্ণ সূচি

 











উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : সম্পাদকীয় নয় কিন্তু ,অভিজিৎ দাস কর্মকার

 


সম্পাদকীয় নয় কিন্তু 
অভিজিৎ দাস কর্মকার 



প্রতি বছরই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে এই পত্রিকার শারদ সংখ্যা অনলাইন করে থাকি।এবছর মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ ৬ষ্ঠ বর্ষে পা দিলো।আপনাদের ভালোবাসায়। প্রতিবছর একই কবির লেখা রাখা সম্ভব হয় না এবং আমারও ঠিক পছন্দ নয়। তাই সব বছরই নতুন কবির লেখা আমন্ত্রণ করি। একদম নতুন তাকেও লিখতে বলি, আবার যিনি বহুবছর সাহিত্য যাপনে স্বতন্ত্র, তাঁর লেখাও আমন্ত্রিত থাকে। এবছর প্রচ্ছদ করেছেন ( অর্থমূল নেননি।আমিও দিতেও পারিনি) , চিত্রশিল্পী সুজয়া মাম্পি এবং পত্রিকার সমস্ত ইলাসট্রেশন করেছেন ( অর্থমূল্য নেননি, আমি দিতেও পারিনি) কবি দেবশ্রী দে। তাঁদের জন্য রইল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। পুরো পত্রিকাটি সম্পূর্ণ ৪৩-৪৪ জনের লেখা নিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে। সকলে পড়ুন, মতামত দিন এবং অবশ্য অবশ্যই নিজেদের লিংক শেয়ার করুন। স্ক্রিনশট দেবেন না, কারণ আপনার লিংক খুলে পড়ার ভিউটিই আমাদের পরিশ্রমের মূল্যায়ন করে থাকে।





উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : কবিতা , চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

 


যোগাযোগ
চন্দ্রদীপা সেনশর্মা



সন্ধের মুখে বৃষ্টি হল সামান্যই
ভেজা সময় ভেজা শ্যাম-কল্যাণ
যাকে ফিরিয়ে দেওয়া গেছে দান
তার আগুনে ভিজে চলেছে সরগম

গাড়ি স্টার্ট দিলে চোখ নিদ্রাতুর
জোর করে খুলে রাখা
গাড়ির কাচে বিন্দু বিন্দু জল ঘুঙুর

যে মেয়েটি সীমানা পেরিয়েছিল অন্যভাবে
তাকে আগুন দিয়েছে কোল

গাড়ি পৌঁছেছে নির্দিষ্ট সীমারেখায়
সন্ধে ডুবে গেছে রাতে
আলাপ বন্দিশে রাগ যোগ





উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : কবিতা , পল্লববরন পাল

 



 ৬০

পল্লববরন পাল

 

অভিমানতোর নাম         রাখলাম জুঁই
বিছ্নায় আয়তোকে        জাপটিয়ে শুই
কোথায় বিছ্না – ধ্যুস্‌       ঘরই নেই কোনো
বাঁধবার ইচ্ছেও                  হয়নি কখনো
 
আমার ঘরের নাম             ফুলের বাগান
পূর্বপুরুষ-নারী
স্নেহ আশ্রয়কারী               
শতশত জুঁইগাছ               যেখানে লাগান

জন্মান্তরবাদ                     মানিস কি তুই?
নইলে দুজনে দুই
হাতে নিয়ে চারা জুঁই          চল্ বগটুই 
ভস্মের কান্নাকে                 অভিমানে ছুঁই




উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : কবিতা , এলা বসু

 



দোসর 
এলা বসু


একটি অন্ধ মানুষ ও
একটি অন্ধকার ঘর
পরস্পর পরস্পরের
অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে

একটি বেদনাহত জোনাকি
জ্বালিয়ে গেলো ওদের মাঝখানে
কয়েক বিন্দু অপলক আলো
ওরা অপচয় ভেবে নষ্ট করে ফেলেছে

ঝিঁঝি পোকার ডাকের মধ্যে ডুব দিয়ে
ওরা একে অপরকে বলে ওঠে
বিপদ সীমার দুইপাশে
একদিন আমরা 
দুঃসাহসের মতন জেগেছিলাম





উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : কবিতা , পিয়াংকী

 



আরোগ্য 
পিয়াংকী 


এখন সময়, বিরোধী পক্ষের নৌকায় গাঙুর অবধি পৌঁছনোর 
চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ হয়েছে কয়েক কোদাল মাটি 
আস্তানায় রক্তের ঘাটতি ছড়িয়ে যাচ্ছে এত দ্রুত যে...
উভচর-পালক ঘুরেফিরে ফের... 
পাঁজরের সাতাশ নম্বর হাড়ে কিছুটা পানের পিক
আর বাউলের কপাল জুড়ে বৈরাগী মিছিল 

এসে পৌঁছলো গ্রহণ সমাচার। ঘরে উল্কাপাত, নির্ভুল দাবার ছক
ওয়াইনের গ্লাসে ধ্যানের দাগ 
তুমি চিনিয়েছিলে আহত বিড়ালের ঘর

ভিড় জমাতে এখানে কেউ আসে না 
ব্যস্ত আতসকাচে শুধু বৃষ্টির হিসেব। প্রায় সকলেই নক্ষত্রযাত্রী 





উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : কবিতা , কিংশুক চক্রবর্তী

 


ঘোলা জল নদী 

কিংশুক চক্রবর্তী



ঘোলা জলের নদী! 


পুণ্যস্নানে বোধ ছিল গায়ের কাপড়ের মতো। 

ফল্গুর ভাষা নিয়ে যেতে পারেনি আমাদের 

                                   বোধিবৃক্ষের নীচে


সারিতে প্রতীক্ষায় শব্দের পূজারী 

ঠেস দিয়ে মন্দিরের দেওয়ালে;  

সমীক্ষার উপকরণে ভরে যায় ডালা


বেদিতে ছড়ানো ফল;

নরম শাঁস আর খোলসে তৃপ্ত চড়ুইয়ের ঠোঁট  

খুঁটে খেলে বীজ -


                     যন্ত্রণাটুকু উঠে আসে শুধু 

আর প্রতিরোধ


স্বত্ব আমাদের, আরও গভীরের অন্ধকারে 

রেখে আসা অধিকারের 

                                         ঘোলা জল নদী!





উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : কবিতা , মধুমিতা ঘোষ

 


মনবাস
মধুমিতা ঘোষ


বহুকাল হলো মনের স্পর্শ দিয়ে সহবাস লিখি 
কিছুটা স্বপ্নে
কিছুটা বৃষ্টি পরাগে
একফালি মন ঘূর্ণি হয়ে ঘোরে নির্জন প্রান্তরে ৷
গোলাপি নাভি থেকে অনেকটা নিচে-
অসাড় স্থানাঙ্কে ভালোবাসা ছুঁয়ে থাকে পানকৌড়ি ৷
পুড়ে যায় তৃষ্ণার্ত একটা হৃদয় 
গরম নিশ্বাসে গলে যায় লুকানো অভিমান।
শূন্য সত্তাটা পূর্ণ হতে চায়-
এক বিশাল আকাশ জোড়া স্পর্শের আবেশে ৷
স্মৃতিতে ফেলে আসা কিছু তুমুল বৃষ্টি
ভিজে যায় রমনের গভীর অসুখে।
মন তখন সমুদ্রের ফেনার মতন-
মিশে যায় চুম্বনরেখার গভীরে ৷
আর শিশিরজমা স্নানঘরে-
মৌরিফুল ফুটে ওঠে পুঞ্জাক্ষি যন্ত্রনায় ৷




উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : কবিতা , কেতকী বসু

 



নিষেধের অবেলায়
কেতকী বসু


গল্প শুনি জীবনের স্তর ভেদে বৈচিত্র্য ময় রহস্যের। খোলা মাটিতে  লতানো গাছে 
 অগাধ নিতব্ধতায়,
খুঁজে চলা অসুখের জন্য একটা ওষুধ, শুধু
সেরে ওঠার তাগিদে।
তার পর কিছু থাকে না বাকি ,সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে পুষ্টির অভাব পূরণ।
থমকে দাঁড়াই কিছুক্ষণ,উত্তরের অপেক্ষায় থাকা মনও স্বীকার করে নেয় একসময়,

জং ধরা জানলায় বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ঘুম
ভাঙ্গে, জ্বলে ওঠা আগুনে,সৃষ্টি করে নতুন 
অসুখের বীজ, সংগ্রহ করা পুরানো কাঠ আর পাথরে,
হারিয়ে যায় সমস্ত ওষুধের নাম ,নাম হীন দোকানে।
ছেড়া রুমালে ঘাম মুছতে হাত চলে যায় কপালে,
আরো কতো সংগ্রামে বেঁচে থাকা আগামীর পরিচয়ে।



উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : মুখোমুখি, সুমিতাভ ঘোষাল ও প্রিয়াঙ্কা গুহ

 



মানুষ যত যন্ত্রনির্ভর হবে তত কবিতার দিকে ঝুঁকবে : সুমিতাভ ঘোষাল


প্রিয়াঙ্কা গুহ  : তুমি তো আটের দশকের কবি। এই সময়টার দ্বিতীয় ভাগে তোমার মূলত লেখালিখির সূত্রপাত....


সুমিতাভ ঘোষাল : হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ। আটের দশকের শেষ দিকেই আমার লেখা প্রকাশিত হতে থাকে ক্রমশ। পার্কসার্কাস থেকে অধুনালুপ্ত 'প্রমা' পত্রিকায় 'নীল নৈরাজ্য' নামে একটি কবিতা আমার ছাপা হয়। ওদের প্রকাশনা সংস্থাই নয়ের দশকে আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অরণ্যদেবের চশমা' বের করে।


প্রিয়াঙ্কা গুহ  : আচ্ছা, সাতের দশকে বিভিন্ন অস্থির সময়ের টানাপোড়েন, নকশাল আন্দোলন — এসব তখন তো অনেকটাই স্তিমিত । তো, অন্যান্য দশকের থেকে এই আটের দশক অনেকটাই ভিন্ন ও স্বতন্ত্র। এই সময়টা তোমাকে কিভাবে প্রভাবিত করেছিল?


সুমিতাভ ঘোষাল : হ্যাঁ, ঠিকই এই দশকের বাহ্যিক জীবনযাপন অনেকটাই নিস্তরঙ্গ ছিল । প্রত্যক্ষ কোনো সংঘাত বা টালমাটাল অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়নি । তবু বিচ্ছেদ, বেকারত্ব, নিঃসঙ্গতা — এইসব থেকে তো আর দূরে ছিল না আটের দশক। এদিক থেকে বর্তমান সময়ও ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং কবিতার মধ্যেও এইসব কথা উঠে আসাটাই স্বাভাবিক। এসেছেও, তবু আমি বলব এই আটের দশকে বিশেষ কোনো বৈপ্লবিক আদর্শের ঘনবদ্ধতা ছিল না, হয়ত সেটা ছিল না বলেই কবিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগটা অনেক বেশি ছিল ।

প্রিয়াঙ্কা গুহ  : তোমার কবিতা কি বিশেষ ভাবে কোনো দর্শন আশ্রিত ?


সুমিতাভ ঘোষাল : যদি শুরুর দিকটার কথা বলো, তো আমি বলব — অবশ্যই কোনো বিশেষ দর্শন বা শুদ্ধতা বা কবিতা ম্যানিফেস্টোর প্রতি আলাদা করে আমার ঝোঁক ছিল না। লেখাতেও তার প্রভাব সেভাবে এসেছে বলে আমার মনে হয় না। পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত 'ম্যাডাম আপনি', 'অত কিছু ভাববেন না', 'সাঁকো নাড়াবার আগে' এইসব কাব্যগ্রন্থে অবশ্যই ভিন্নধর্মী স্বাতন্ত্র বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। যে কারণে এরা একে অপরের থেকে আলাদা । কনটেন্ট এবং ফর্ম দুভাবেই ।
তবে যদি এককথায় বলতে বলো , তাহলে বলবো , বিশ্বাসহীনতা থেকে বিশ্বাসের দিকে , নৈরাজ্য থেকে নীলিমার দিকে গড়িয়ে যাওয়াই আমার কবিতার দর্শন ।

প্রিয়াঙ্কা গুহ : ' ম্যাডাম , আপনি ' এবং ' মন কেমনের বাঁশি ' বই দুটোর মধ্যে ভাবনা এবং শৈলীর বিস্তর তফাৎ । কিছু বল


সুমিতাভ ঘোষাল : হ্যাঁ ঠিকই বলেছ  , এই  'মন কেমনের বাঁশি ' বইতে  শ্লেষ বিষয়টা একদমই নেই । এটা  আমার জীবনের একটি অনপনেয়  দুঃখজনিত ঘটনার পর লেখা । বিষাদ , মনখারাপ আর মৃত্যুকে সামনে থেকে মেনে নেওয়া, মৃত্যুর সঙ্গে দাবার ঘুটিতে বসা এর উপজীব্য । আর " ম্যাডাম ,আপনি "  বিষয়টাই সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র । এমন এক মহিলাকে উদ্দেশ্য করে কবিতাগুলি লেখা যিনি বয়সে , প্রতিপত্তিতে , সামাজিক গরিমায় আমার থেকে অনেক বড় । তির্যকতা এবং শ্লেষ এই কবিতাগুলির প্রাণ ভোমরা । তাছাড়া আমার সব বইতেই কবিতার ভাষা কিছুটা হলেও ভিন্ন


প্রিয়াঙ্কা গুহ : অনেকে বলেন তোমার " ম্যাডাম, আপনি " তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে লেখা । কথাটা কি ঠিক ?


সুমিতাভ ঘোষাল:  কথাটা একেবারেই ঠিক নয় । আসলে লেখাগুলি কোনো বিশেষ নারীকে নিয়ে নয় । কিন্তু ওই যে বললাম, এমন সব নারীদের নিয়ে লেখা যারা প্রতিপত্তি, বয়স এবং সামাজিক গরিমায় আমার থেকে অনেক বড় ।


প্রিয়াঙ্কা গুহ : ক্যাকটাসের গায়ক সিধু তো তোমার কবিতায় সুরারোপ  করেছে । কবিতা থেকে গান হলে কি কবিতার ক্ষতি হয় ? 


সুমিতাভ ঘোষাল :  এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে । কবীর সুমনের গান তো কবিতাই । সিধু ' সন্ত্রাস ' নামে যে গানটা করেছে সেটা সন্ত্রাসের অন্তঃসারশূন্যতা নিয়ে লেখা। ওই কবিতায় একটা লাইন আছে, --- "দিকে দিকে ব্যুহ  মৃত্যুর , তুমি কাকে নিয়ে ঘর করবে ? " আবার কলকাতা পুলিশের মাদকবিরোধী প্রচারের জন্য আমাকে একটা গান লিখতে হয়েছিল। এছাড়া আমার কথায় সুর দিয়ে আরও বেশ কয়েকজন গান করেছে । প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি , আমার গানের এবং কবিতার ভাষা কিন্তু আলাদা ।


প্রিয়াঙ্কা গুহ : এই যে তুমি সোশ্যাল মিডিয়ার কথা বললে , এই যে ফেসবুক, বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, ওয়েব ম্যাগাজিন — এসবের গুরুত্ব ও ভূমিকা দিনে দিনে কি বৃদ্ধি পাচ্ছে? বাংলা কবিতামনষ্ক পাঠকের কাছে এর মাধ্যমে কতটা মূল্যায়িত হচ্ছে কবিতা?


সুমিতাভ ঘোষাল : অবশ্যই বৃদ্ধি পাচ্ছে, লাইক বা কমেন্ট কিংবা ভিউজের পার্সেন্টেজের বিচারে কিছু বলছি না। যেটা সবচেয়ে বড় কথা, তা হলো — এমন কিছু পাঠক আছেন যাঁরা ফেসবুকেই আমার কবিতা প্রথম পড়েছেন। কিন্তু ভালো লেগেছে বলে আমার বই সংগ্রহ করে কবিতা পড়েছেন এবং আমাকে তা জানিয়েছেন। যখন কোনো মফস্বলের মেয়ে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে লিখে জানায় 'আপনার কবিতা আমার খুব ভালো লাগে'। সেটাকেও তো একটা পাওয়া বলেই মনে হয়। তাছাড়া অনেক সিরিয়াস গ্রুপ রয়েছে, যারা কবিতা বিষয়ক বহু সমৃদ্ধ আলোচনা এবং দুর্দান্ত বুক রিভিউ করছে। বহু মানুষ উৎসাহিত হয়ে সেই বিষয়ে মতামত জানায়, নতুন বই সংগ্রহ করে। আসলে ফেসবুক অনেক তাড়াতাড়ি বহু মানুষের কাছে কবিতাকে পৌঁছে দিতে পারে। অনেক অনলাইন পোর্টাল, ওয়েব ম্যাগাজিন বহুসংখ্যক পাঠকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বলতে পারো। এদের নিজেদের কিছু পাঠকগোষ্ঠীও আছে। তাছাড়া এখানে সম্পাদনার মতন একটা ব্যাপার তো আছে ।


প্রিয়াঙ্কা গুহ : কবিতা একটা ভাষা থেকে আর একটা ভাষায় কতটা অনুবাদ করা সম্ভব!


সুমিতাভ ঘোষাল : সত্যি কথা বলতে গেলে যেটা বলতে হয় একটা কবিতার যেটুকু অংশ বিশুদ্ধ কবিতা সেইটুকু কোনোভাবেই অনুবাদ করা যায় না। কিন্তু যিনি অনুবাদ করছেন তিনি যদি উভয় ভাষাতেই দক্ষ হন এবং তাঁর যদি কবিতাকে হৃদয়ঙ্গম করার, সেই নির্যাসটুকু মর্মের গভীর থেকে আত্মস্থ করার ক্ষমতা থাকে, সেইসঙ্গে থাকে উপযুক্ত শব্দ ব্যবহারের দক্ষ মুনশিয়ানা; তাহলে তিনি মূল কবিতার কাছাকাছি অনুবাদের মাধ্যমে আমাদের পৌঁছে দিতে পারেন। এইটুকু জায়গা গ্রহণ করা ছাড়া আমাদের আর কোনো গত্যন্তরও নেই।


প্রিয়াঙ্কা গুহ : তুমি যেহেতু 'মাসিক কবিতাপত্র' সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত, এর আগে "খোলামন " পত্রিকাতেও ছিলে। কিছুদিন 'পদ্য গদ্য সংবাদ' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছ । লেখালেখির ক্ষেত্রে লিটল ম্যাগাজিনের ভূমিকা কতখানি বলে তোমার মনে হয়?


সুমিতাভ ঘোষাল : লেখালেখির ক্ষেত্রে সবরকম ম্যাগেরই বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সে লিটল কিংবা বিগ যাই হোক না কেন। তবে লিটল ম্যাগের ক্ষেত্রে গুরুত্বটা অনেক বেশি, কারণ লিটল ম্যাগাজিন ঝুঁকি নিয়ে বহু নতুন লেখকের নিরীক্ষামূলক লেখা ছাপতে পারে। ভিন্নধর্মী বা এক্সপেরিমেন্টাল লেখার মৃগয়াক্ষেত্র অবশ্যই লিটল ম্যাগাজিন। যা বরাবরই নতুন লেখকদের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছে। তবে লিটল ম্যাগাজিনের নাম নিয়ে এমন কিছু গতরজব্দ পত্রিকা বেরোয়, যাদের পুঁজি কিংবা যোগাযোগ সবই বৃহদাকারের কিন্তু পরিচালকগোষ্ঠী মনে করেন লিটল ম্যাগাজিনের তকমা থাকলে বিশেষ গুরুত্ব পাওয়া যাবে । আসলে অসংখ্য উন্নত স্তরের ভালো ভালো লেখা নিয়মিত বহু ছোট পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও হচ্ছে, বিভিন্ন ক্রোড়পত্র ও মহার্ঘ্য সংখ্যা বিশেষ গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে । এতে লিটল ম্যাগাজিনের গুরুত্ব যে কতখানি বাড়ছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কোনও সাংস্কৃতিক বিপ্লব নয়, বড়সড়ো আন্দোলনও নয়, স্রেফ ভেতরের আলোড়ন আর উদ্দীপনায় বহু মানুষ উৎসাহিত হচ্ছেন লিটল ম্যাগাজিনের প্রতি। তবে এই মুহূর্তে লিটল আর বিগের দূরত্ব অনেক কমে এসেছে ।


প্রিয়াঙ্কা গুহ : তুমি সমাজমনস্ক কবিতা লিখেছো তবু তোমার রোমান্টিক কবিতার জনপ্রিয়তা বেশি। অস্বীকার করবে ?


সুমিতাভ ঘোষাল : প্রথমত তথাকথিত অর্থে রোমান্টিক কবিতা বলতে যা বোঝায় সেরকম কবিতা আমি লিখি না। আবার এটাও সত্যি , সেই অর্থে সমাজ-সচেতন কবিতা বলতেও যা বোঝায় সেটাও আমি লিখি না।
আমার সমাজ সচেতন কবিতার মধ্যেও মিশে থাকে রোমান্স, আর রোমান্টিক কবিতার মধ্যেও মিশে থাকে সমাজ-সচেতনতা। আমার ভিতর থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যেটুকু আসে, সেটাই আমি। তাছাড়া তথাকথিত অর্থে জনপ্রিয় কবি বলতে যা বোঝায় , সেটাও আমি নই।


প্রিয়াঙ্কা গুহ : কবিতা ছাড়াও তো মুক্তগদ্য, ফিচার ইত্যাদি বহু লিখেছো । সাক্ষাৎকার নিয়েছো , সম্পাদনা করেছো এমনকি তথ্যচিত্রও পরিচালনা করেছো জানতে পেরেছি.....


সুমিতাভ ঘোষাল : তোমার কথা অনুযায়ী মুক্তগদ্য নিয়েই প্রথমে বলি। আমার অনেকগুলি মুক্তগদ্য সংকলিত করে বইমেলায় ইতিকথা পাবলিকেশন একটা নতুন বই বের করেছে । খনিজ জীবনের প্রতিস্বর। আর সাক্ষাৎকার তো অনেকেরই নিয়েছি। অপর্ণা সেন, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, কবীর সুমন থেকে শুরু করে অনেকেরই। সুমনের প্রথম ক্যাসেট বেরোনোর পর আনন্দবাজারে ওঁর প্রথম ইন্টারভিউ আমিই নিয়েছিলাম। আর সম্পাদনার কথা তো তুমি আগের প্রশ্নেই বললে। একটা ব্যাপার জানো তো,সেই অর্থে আমি কিন্তু কবিতা কমই লিখেছি। গদ্য বা ফিচার অসংখ্য লেখা হয়েছে। আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট সব বিষয়েই লিখতে হয়েছে আমাকে। পত্র-পত্রিকা ছাড়াও দুটো বই সম্পাদনা করেছিলাম। একটা বাংলায়, একটা ইংরেজিতে।
বাংলা বইটির নাম 'তখন তসলিমা, এখন তসলিমা'। ইংরেজিটা হল 'ডেমোক্রেসি : ইন্ডিয়ান সেকুলারিজম এন্ড দ্য কেস অফ তসলিমা নাসরিন।' এটা সুনন্দন রায়চৌধুরীর সঙ্গে যুগ্মভাবে সম্পাদনা করা। এছাড়া আমি আন্দামানের পর্যটন দপ্তরের জন্য করা কয়েকটি তথ্যচিত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। নিজে দুটি তথ্যচিত্র পরিচালনা করেছি। বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে করা একটি তথ্যচিত্র, নাম 'ওয়াকিং স্টিকস্' । দ্বিতীয়টি যৌনপল্লীর বাচ্চাদের নিয়ে করা । নাম 'স্বপ্ন, সূর্যমুখী'। এই তথ্যচিত্রে মূলত যে জিনিসটা ধরতে চেয়েছিলাম তা হল কনসেপ্ট অফ মাদারহুড । ওদের জন্য কিভাবে বদলে যায় , সেটা। এই হল কবিতা ছাড়াও আমার অন্যান্য ব্যাপার-স্যাপার।


প্রিয়াঙ্কা গুহ : বাংলা কবিতায় গোষ্ঠী রাজনীতি নিয়ে তোমার কী মত ?


সুমিতাভ ঘোষাল : বাংলা কবিতায় গোষ্ঠী রাজনীতি তো আজকের নয় , বহুদিনের । অনেক শক্তিশালী কবি গোষ্ঠী বা ক্ষমতার বলে বলীয়ান কবির ব্যক্তি রাজনীতির শিকার হয়ে কালের অতলে চুপি চুপি মরে গেছেন । এখন সেটা কদর্য জায়গায় পৌঁছেছে । আগে একটা চক্ষু লজ্জার ব্যাপার ছিল । এখন আর শালীনতার সেই জায়গাটুকুও অবশিষ্ট নেই । যিনি দাক্ষিণ্য দেখাচ্ছেন তারও নেই যিনি নিচ্ছেন তারও নেই । ফলতঃ একজন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন কবি এই দলবাজির বাইরে থাকাটাই শ্রেয় মনে করছেন । তবে যার কব্জির জোর আছে তিনি সবকিছুর পরেও ফুটে বেরোবেন ।


প্রিয়াঙ্কা গুহ : প্রকাশনা সংস্থা প্রতিভাস থেকে তো আপনার শ্রেষ্ঠ কবিতা এইবছর প্রকাশিত হলো। পাঠকমহলে সাড়া কিরকম পাচ্ছেন?


সুমিতাভ ঘোষাল : একটা কথা খুব প্রচলিত রয়েছে সেটা হল — কবিতার বই বাজারে কাটে কম, পোকায় কাটে বেশি। সেটা অবশ্য এই ক্ষেত্রে হয়নি। বহু পাঠক স্বতঃস্ফূর্তভাবে বইটি সংগ্রহ করেছেন এবং পড়ে জানিয়েছেন, আমার লেখা তাঁদের স্পর্শ করে গিয়েছে। খুব ভালো লেগেছে তাঁদের। এটুকুই তো পাওনা ! সবচেয়ে বড় কথা, এত তাড়াতাড়ি এইরকম সাড়া পাওয়ার বিষয়টা নিশ্চয়ই আমার কাছে আনন্দের । এর আগে শব্দহরিণ থেকে সত্যপ্রিয় মুখোপাধ্যায়, আমার 'প্রিয় ২৫' বার করেছিল। তাতেও বহু পাঠক উৎসাহিত হয়েছিলেন।


প্রিয়াঙ্কা গুহ : অসংখ্য সিরিয়াস পত্রপত্রিকায় লেখা ছাড়াও, অনেক জায়গা থেকে সম্মাননাও তো তুমি পেয়েছো । এর মধ্যে 'সুধীন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি পুরস্কার' , 'কালকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার' এসব তো আছেই। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকেও মনে হয় 'পূর্ব-পশ্চিম সাহিত্য পুরস্কার' পেলে। এছাড়া ফেসবুক মারফৎ জানতে পারলাম তুমি সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল পুরস্কার পাচ্ছো । এই প্রসঙ্গে কি বলবে?


সুমিতাভ ঘোষাল : তেমন কিছু তো বলার নেই, আবার কিছুটা বলারও আছে। সেটা হল —পত্রিকা গোষ্ঠী, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজক, সকলে মিলে যে উদ্যোগ নিচ্ছেন তা একজন কবিকে সম্মানিত করার। বাংলা সাহিত্যে এর গুরুত্ব অবশ্যই উজ্জ্বল। একজন কবিকে , সেই অর্থে স্বীকৃতি আরও ভালো লেখার দিকে নিয়ে যায় ।
এর বাইরেও এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এতজনের উৎসাহ ও প্রেরণা পেয়েছি , সেটাও অনেক । কিন্তু এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, পুরস্কারের তুলনায় তিরস্কার , বঞ্চনা এবং অবজ্ঞা বরং আমায় দিয়ে অনেক বেশি কবিতা লিখিয়ে নিয়েছে ।


প্রিয়াঙ্কা গুহ :এখন যারা নতুন লিখতে এসেছে তাদের সম্পর্কে তোমার কি বলার আছে ?


সুমিতাভ ঘোষাল : এ ব্যাপারে গতানুগতিক কথা বলা ছাড়া উপায় নেই । অনেক কবিতা লেখা হচ্ছে ।অনেকেই ভালো লিখছেন । চমকে দেওয়ার মতো লেখালেখিও করছেন কেউ কেউ । নতুন কবিদের সবাইকার জন্য শুভকামনা ।


প্রিয়াঙ্কা গুহ : মানুষ এমনিতেই কবিতা কম পড়ে। আর ক্রমশই মানুষ যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছে । আগামী দিনে আদৌ কবিতা বিষয়টি থাকবে বলে কি তুমি মনে করো ? 


সুমিতাভ ঘোষাল: মানুষ যত যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়বে ,ততই সে কবিতার কাছে আশ্রয় খুঁজবে । আরো বেশি করে কবিতাকে আঁকড়ে ধরবে । কবিতা বিষয়টি তো থাকবেই , মানুষ আরো বেশি বেশি করে কবিতা পড়বে।






উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : কবিতাগুচ্ছ , সুবীর সরকার

 


সুবীর সরকারের কবিতাগুচ্ছ

সাঁকো


আমাদের ভুলে ভরা আত্মজীবনী থেকে 
                                            বেরিয়ে আসে
বাস্তুসাপ।
নির্জন ঘোড়ার সাথে হাসিমুখের সেলফি তুলি
শীত ও সাঁকোর ভেতর সং সেজে ঢুকে
                                        পড়ি
ভুল বানানের সাইনবোর্ড ভরা এই শহর
প্রতিদিন আড়াল লিখি
পাখিদের সরে যেতে দেখি
কেউ কারো বিকল্প হতে পারে না
আমার বান্ধবীর ডাকনাম মাঘমাসের
                                              শীত
আজকাল টেবিলে নামিয়ে রাখছি
                                            গ্লাস




জার্নাল

 
দুরন্ত প্রেমিক হয়ে এই শহরে ফিরে আসি
আমাকে জড়িয়ে ধরে দিনশেষের রোদ
সাপের লেজে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আমার
                                               প্রেমিকারা
আমাদের জীবন থেকে দু'চারজন হারিয়ে যায়
আমাদের জীবন আসলে ঘুঘুপাখির জীবন
শস্যের মাঠ ও মহাসড়কের মাঝখানের এক
                                                নদীর জীবন
খুঁজে পাচ্ছি না আলপথ।
ঘনদাঁতের এক নারী বারবার ছায়া ফেলে গেলে
আমি খুব ভয়ভীতির কবিতা লিখতে শুরু
                                                 করি




সম্পর্ক
 

নৌকোর মাঝিকে একটু আগুন এগিয়ে দিতে 
                                              গিয়ে দেখি শীত
 ঢুকছে।
তারপর আনারস ভরতি নৌকোগুলি দূরে সরে
                                                        গেল
সম্পর্ক তো আসলে ছাইএর মতো।
পালটে যাওয়া মানুষের জন্য পরমায়ু প্রার্থনা
                                                    করি
পুরোন চশমা পরে দাঁড়িয়ে থাকি গির্জার
                                                        সামনে





কবি ও ধানক্ষেত
 

ধানক্ষেতে চেয়ার পেতে বসেছেন তরুণ কবি
অদূরে হেমন্তের নদী, দুধসাদা রুমাল
আর এক মাইল ছায়ার পাশে তিন মাইল
                                                       রোদ
কবিকে ঘিরে ধরছে কতগুলো চতুর বেড়াল
পর্যাপ্ত ফড়িং ওড়ে এই দেশে
কবিকে গল্প শোনাতে আসে হাতিজোতদার
সেই গল্পে চুপ করে বসে থাকে খেজুরকাঁটা
রোদ সরে যাওয়া গাছের মাথায় অপরাহ্নের
                                                    ম্যাজিক
 আমরা দেখতে পারছি দুলতে দুলতে    
                                 এগিয়ে আসা ভাদ্রমাস
আর হিল স্টেশনে দৌড়ে বেড়ানো জখম 
                                                     বাঘ



ডায়েরি


পুটিমাছের চোখের দিকে আজকাল তাকাতেই 
                                                  পারি না
মশারীর ভেতর রোদ ঢুকলে
ব্যাকুলতা থেকে আমার সরে
                                        আসা





উৎসব সংখ্যা ১৪৩০ : কবিতাগুচ্ছ , গৌতম ব্রহ্মর্ষি

 


কবিতাগুচ্ছ , গৌতম ব্রহ্মর্ষি


ছাতা


1

বৃষ্টি এলেই উড়ে আসে-----

পার্কে-পথে মাথায় ধরে 

শ্রাবণ গুঁড়ো, রোদের বেলা

কেবল ঘুরি ছায়ার জোরে


2


ভাসছে মনে টাপুর টুপুর

সারা দুপুর দাবায় গানে

জীবন গেলো বদলে কেমন

ভিক্টোরিয়ায় ছাতার টানে !


3


যে সব আলো সিকের ফাঁসে

জড়িয়েছিল নিবিড়ভাবে

রোদ-লাঠি-বল-ছায়া'র জন্য 

খুলে ফেলেছি সে সব কবে


4


তোমরা দেখো অবাক চোখে 

রঙবেরঙা চালের বাহার

হাড় ক'খানা ঝুলিয়ে রাখার

বাঁট পেয়েছি অভিজ্ঞতার !