মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
পোড়ো বাড়ি অথবা পুরোনো দেরাজের স্তব্ধতা
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
নিঃস্ব রাতের কবিতা
পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে
চাবির গোছাটা সেই লকডাউন থেকে ঝুলছে আলমারির গায়ে
অদৃশ্য চোখে আমাকে দেখছে কেউ
একটা নিথর বারান্দায় মৃতদেহ শায়িত ছিল
ভাবতেই সরু পাঁচিলের উপর দিয়ে নিঃশব্দে হেঁটে গেল বিড়ালটা
তুমি বিষ্ণুপুরের মাটির ঘোড়া চেয়েছিলে
দেওয়া হয় নি
এরকমই অনেক কথা আজ মনে পড়তেই
ইউক্যালিপ্টাস গাছের পাতা ধোয়া সুগন্ধি বাতাস
আমাকে শিউরে দিল
চাঁদের আলোয় এখনো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি
তোমার তেরছা মুখ, চিবুক
নিঃস্ব রাতে লিখে চলেছি ভালবাসার কবিতা ...
যখন ইচ্ছেরা কথা বলে
রোদে পুড়ে তামাটে রং
একমনে বসে থাকে সমুদ্রতীরে
ঝাউবনে পাতায় পাতায় কামনার কানাকানি
অনাথ হয়ে সূর্যাস্ত দেখে
ঢেউ এর ওপারে তার হাত দুটো মাঝে মাঝে দেখা যায় শূন্যে তোলা
আমার খ্রিস্ট গাছে রাতের অন্ধকারে কত ফুল ফোটে
চৈতন্যের শরীর বেয়ে স্বেদবিন্দুর ধারা
দেহতাড়িত গাছ ভরে যায় কবিতার ফুলে
আকাশ থেকে ঝরে আগুন আর শিশির ক্রমান্বয়ে
শব্দব্রহ্ম
শব্দকে অসীম তাপমাত্রায় নিয়ে গেলে
বায়ুস্তর সশব্দে ভেঙে যায়
কথা যায় ছড়িয়ে
পারদ কুড়িয়ে নেওয়ার যত্নে
শব্দকে আবার নিই তুলে
শব্দের বৃত্তে ঘিরে রাখি শব্দকে ।
এক একটা নতুন শব্দ জন্ম নেয় চক্রবৃদ্ধিহারে
শব্দ ক্রমশ ক্ষমতাবান হয়
শব্দের আগুন জ্বলে
আবার পেলব কথার মালা ছিঁড়ে
শব্দ মুক্ত হয়ে ঝরে পড়ে
শব্দের বুনোটে বাবুই হয়ে
আমি কবিতার নীড় বেঁধে চলি
শূন্যতার পিছনে কেন এতো উজ্জ্বল আকাশ
বসন্তের সকালে এক , জানলা খুলেই দেখি
আমার শহর হাসে জোয়ার জলের হাসি
খুশি কতটুকু আছে মনে ভাবি
স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্নের সরু গলি ধরে হাঁটি
ভবিষ্যতহীন এক মশারিতে লেপটে ঘুমিয়ে আছে অনিশ্চিত প্রেম
মাথার ভিতরে ঘুরঘুর করে সময়ের ঘুণপোকা
কড়া নিকোটিন গন্ধ এখানেও ভাসে
হাহাকারের পিছনে কেন এতো উজ্জ্বল আকাশ
সাত সকালে আমিও তো শূন্যতা চাই না কোনো
অযাচিত মনে পড়ে
কাল রাতে বাদামি মেয়েটার কাছে বিনীত মোমবাতি হয়ে তোমাকে ঝুঁকে পড়তে দেখেছি
অন্য বসন্তে
বসন্ত তার ফুলকারি কাজ ওড়নাখানি
সবুজ ঘাসে বিছিয়ে দিলো।
ফাগুন হাওয়ায় অমনি শুরু কানাকানি
এমন দিনে মন কে নিলো!
পলাশ বৌএর কাজল চোখে ভ্রমর পাগল
বারে বারে যায় যে খুলে দোরের আগল
অশোক শাখে কোকিল ডাকে মনের সুখে
শিমূল কাঁটায় ব্যথা জাগে গোপন দুখে।
আকাশ পটে সূর্য আঁকে বসন্তরাগ
বাউল মন আজ ব্যাকুল করে,
দখিন থেকে খবর আনে প্রেয়সী ফাগ
ফুলের বনে আবীর ঝরে ।
No comments:
Post a Comment