Friday 29 May 2020

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ২৯-৫-২০২০

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ 
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি... 

                                      হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়                                                        


পাখি রঙের আকাশ ---- ৭৭

আজকের পাহাড়গুলো নামেই। কত সহজেই উঠে পড়া যায়। তিল তিল করে পাথর জমে তবেই না পাহাড়। রোদ পড়তে দেখলাম কোথাও কিছু নেই। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমার জানলার পাশেই পাহাড়। কখন তৈরি হল আর কারাই বা তার নাম দিল পাহাড়! এক একসময় মনে হয় এরা কি কোনোদিন পাহাড় দেখে নি! নাকি এরা পাহাড়ের নতুন সংজ্ঞা তুলে ধরতে চায়। সে যাই হোক, পাহাড় নিয়ে ছেলেখেলা করাটা আমাদের মতো সমতলবাসীদের মানায় না।


                                            প্রনব রুদ্র 


স্পর্শ

তোমার আমার মাঝে, স্পর্শ
আজ সেতু নয়; অন্তরায়

তবু, ভালোবাসা ছিল,
আছে         থাকবেও


 মনস্তত্ত্ব

  প্রেম ঢেকে যায় প্রেমে
    জল ডুবে যায় জলে
      মন মজে যায় মনে
 আজ চলে যায় কালে।


কোয়ারেন্টাইন

নড়ে নড়ে সরে যাওয়া
সরে সরে দূরে যাওয়া
দূরে দূরে বাড়ি ঘর 
ঘরে ঘরে আপন পর।


শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়


উপহার

'তা ধরুন এইট্টি থ্রি কি ফোর হবে। আমার বন্ধুর এক জামাইবাবু নেভিতে কাজ করার সুবাদে জাপান থেকে ওটা এনে দিয়েছিলেন। তখন এ জিনিস এদেশে যতটা দুষ্প্রাপ্য ছিল, আজ তো বিস্মৃতপ্রায় অতীত।'
' এমন অতীতকেই যে ধরে রাখতে চাই। দয়া করে ফেলে দেবেন না..।'
অণুকুলের কথার উত্তরে ভারী উৎসাহের সঙ্গে বললেন প্রতিবেশী কমল দা।
ভদ্রলোকের এই এক শখ! যত পুরনো, আদ্দিকালের জিনিস কোথা থেকে সংগ্রহ করে বাড়িতে স্বযত্নে সাজিয়ে রেখে দেন। একটা ছোটো মিউজিয়াম যেন ঘরখানা। সেদিন গিয়েছিল অনুকুল দেখতে।
অচল হয়ে যাওয়া,ঘরের বাঙ্কে পড়ে থাকা বহু স্মৃতিবিজরিত টেপ রেকর্ডারটা 
আর একটু হলে হয়তো বেচেই দিত কিলো দরে। শেষমেশ কমল দাই নিয়ে চলে গেলেন। সাথে খান তিনেক ফিতে জড়ানো ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেট অবশিষ্ট ছিল। তখনকার কেনা। সেগুলোও দিয়ে দিল।
দিন তিনেক বাদে কমল দা এলেন আবার, অনুকূলের বাড়ি। সাথে একগাল হাসি।' মশাই দিয়েছেন বটে একটা অ্যাসেট! গ্রামোফোন কোম্পানির নুটু মুখুজ্জে আমার বাল্যবন্ধু। সেদিন এয়েচিল আমার বাড়ি। জিনিস দেখে সে কি তারিফ! উঁহু, আপনাকেও বঞ্চিত করবো না। একটা উপহার আছে।'
ভদ্রলোক মুখে কিছু না বলে ব্যাগ থেকে তার ফিট করা একটা কি মেশিন বের করলেন।
'বুঝলেন না তো? এ হলো ক্যাসেট ডিজিটাইজ করার যন্তর। আপনার  ঐ বাকি দুটো ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেট কিছু আর করা গেল না। ফিতে জড়িয়ে অনেক আগেই পঞ্চত্ত প্রাপ্তি ঘটে গিয়েছে। যেটা পেরেছি সেটা আমি আজ আপনার জন্যেই..।'
মেশিনে ক্যাসেট সেট করা হলো। ভেসে আসছে আওয়াজ। বহুযুগ আগে হারিয়ে যাওয়া বাবা মৃগাঙ্কশেখরের স্বকন্ঠে আবৃত্তি....  কিছুটা করে গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গানের কলি...। 
সুদূর সোনালী দিগন্তরেখার ওপাড়ে দাঁড়িয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছে কে যেন! অশ্রুবাষ্পের মতো জমে থাকা থাকা রুদ্ধ আবেগকে সংযত করতে পারে না অনুকুল। 
জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে ফিরে পাওয়া দুর্মূল্য উপহারখানা হারাতে চায় না সে কিছুতেই..।


No comments:

Post a Comment