Sunday 24 May 2020

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা ২৪-০৫-২০২০

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ
আসুন সকলে ভালো থাকি। সুস্থ থাকি। সুস্থ রাখি। বদ্ধ অঙ্গিকার করি...

                                                            হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


পাখি রঙের আকাশ   ------- ৭৪

অনেকদিন আমাদের কোনো কথা নেই। কথা ফুরোয় নি। কথা আছে। অনেক অনেক কথা। আমাদের যা দেখা ছিল তা সব কথা হয়ে গেছে। নতুন করে আমাদের আর দেখা হয়ে ওঠে নি। আসলে নতুন করে দেখার জন্য যে মাটি চাই সেই মাটি এখনও আমাদের পায়ের নিচে গজায় নি। কথা বলার সময়টুকু এখন আমাদের বলে ফেলা কথাদের শরীর দেখে কাটে। হয়ত একদিন ভোরবেলা থেকে খুব বৃষ্টি শুরু হবে। আমি একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। পাশেই আর একটা গাছ। মনে হবে ওই গাছটার কথা তো তোমাকে বলা হয় নি। দারুণ বৃষ্টিদুপুরে একটা পাতা এখনও ভেজে নি। একটা দুটো ডাল হাঁটতে হাঁটতে একেবারে পুকুরের ওপারে। একটা একটা করে আমাদের আবার কথা জমা হবে। আবার আমরা আঁকাআঁকি শুরু করবো।


আফজল আলি



তোমাদের জন্য কবিতা 

বন্ধুগণ , তোমরা স্বপ্নগুলোকে হত্যা করো না 
বরং নিজেদের তৈরি করো নতুন স্বপ্নের ভোরের জন্য 
ওরা প্রতিদিন-ই তোমাদের ঈর্ষা করবে , অবজ্ঞা করবে
তবু নতুন সময়ের চারটে থাপ্পড় সযত্নে রেখো 
ওদের জন্য ওদের জন্য 
জেনে রাখো নতুন সূর্য তোমাদের হাত ধরেই উঠবে
আগেও উঠেছে বারবার 
কমলার সন্ধিগুলো ছুঁড়ে ফেলে দাও
সময় ঘুরছে , তোমাদের কোমরে অচেনা জাদুকরের হাত
অন্ধকার বড়ো দুর্গম , সে হোক 
তোমরা তো অতিক্রম করেছো যুগে যুগে 
একটি শব্দকে আমি ফিস ফ্রাই খাওয়ালাম 
বাকিটা তোমাদের হেফাজতে 
কৃষক শ্রমিক জনতা এদের উপেক্ষা করো না 
আর শব্দ নিয়ে খেলে যাও খেলে যাও যত ইচ্ছা 
একটা আকাশ তোমাদের রয়েছে 
সমস্ত কিছু মুক্ত করলাম তোমাদের-ই জন্য 
তোমরা সেই আকাশের দিকে তাকাও , উদ্বিগ্ন হয়ো না


মস্তিষ্কে জ্যামার লাগিয়ে রেখেছো কেন 

পেয়ারা গাছের গদ্যরূপ করতে গিয়ে দেখি 
আমার হাতের নোটগুলো উড়ে গেল
কী ব্যাপার , এত রাতে আওয়াজ হচ্ছে কোথায় 
রাজাদের অনুশাসন নাই , হাতিশালার চিহ্ন উধাও
একমাত্র যে রূপক কোটেশন,তাও পদ্মাপারে গেছে 
মানুষের কথা
শতাব্দীর ফুটো ব্লাডার
যে যত বেশি চোর , সেই তত ছিদ্র-সন্ধানী 
বাইরে বেপরোয়া ক্ষিদে উড়ছে 
চাঁদ নিয়ে পচা কবিতাগুলো আর সহ্য হচ্ছে না 
এবার কিছু তো করো 
মস্তিষ্কে জ্যামার লাগিয়ে রেখেছো কেন 
বুকে ধৃতরাষ্ট্রের মতো অন্ধ চোখ , ও আমার সোহাগের মরদ রে 
বাস গাড়ি বন্ধ আর উনি চাঁদ দেখছেন গাছে 
প্রতিষ্ঠানে বসে যারা চুল্লু খায় 
আর ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েদের দেখে
তাদের জন্য প্রতি রাতে ভেড়ার চিৎকার , থুতকার সহ
গাছে গাছে কত ফুল ফুটেছে নতুন , কত সুগন্ধ আসছে 
বানচোদ দেখতে পাচ্ছো না ? রবার্ট ক্লাইভ রবার্ট ক্লাইভ বলে চেঁচাচ্ছো


মার্জনা করবেন প্লিজ 

একটা মিথ্যের জন্য আজ কতো-ই না হামাগুড়ি দিলাম
আরে কী বলছো , দেখো পেচ্ছাবের গন্ধ আসছে
গতকাল ২৫ শে বৈশাখ গেল 
আর আজ-ই এরকম কবিতা লিখছো 
শ্রেষ্ঠ পথের অমরত্ব বুঝি শান্তি দিচ্ছে না পোঁদে
বোকাচোদা হাংরি দেখাচ্ছো , ছিনাল কোথাকার 
ওহ sorry , মাথাটা একটু গরম হয়ে গিয়েছিল 
মম চাঁদ গেছে ঘৃত অন্বেষণে
আমিও নিখোঁজ প্রেম পলান্নে 
নিখিল বিশ্ব দমকা হাওয়া
খুলে গেছে গিঁট গরম তাওয়া
প্রিয় অডিয়েন্স , মানকচু সম্পর্কে গা-জ্বালা কথাগুলো 
এমন-ই বিকলাঙ্গ যে আবহাওয়া অফিস পরিশ্রম করেই চলেছে 
আপনি আদা খাবেন , না গাঁট খাবেন তা আপ কা মর্জি 
জ্যোৎস্নায় ঘুমপাড়ানি গানের কানমুলে দিলে শুক্রানু প্রগাঢ় হবে
তখন মহেঞ্জোদাড়ো থেকে শোনা যাবে গ্রামোফোনের গান
" ও নদীরে একটা কথা শুধাই শুধু তোমারে " 
রাত ১ টা বাজছে , সিঙ্গাপুরি মডেলের ফ্লাই ওভারগুলো আলো নিভিয়ে দিয়েছে
চলো একটু মন পরিস্কার করি , 
সামনের মাসে এই পৃথিবী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কে জানে


ইহজন্মের হালচাল 

কিছু শুক্রবার এরকম স্বপ্ন দেখায় , ফুল চাষের
বৃহস্পতিবার নিয়ে কখনো শীত উপভোগ করেছি কিনা জানি না 
গোড়ালির অবসরে বাঁকা চিহ্নগুলো যেন ব্যর্থ বৈষ্ণব 
তাহলে জামা খুলে কেন চাঁদ দেখছিলাম কালো
ভীষণ কষ্টের কবিতা না লিখে আমি কষ্ট উৎপাদন করছি 
যেমন শিরীষগাছ শুধু নালিশ করে 
এবং বহু বিবাহের বৈষম্য নিয়ে গতকাল উঠোনে স্থিতাবস্থা ছিল 
আমাকে গদ্য-কবিতা লিখতে মানা করছিল যাবতীয় কবরস্থান 
কারণ আমাদের গ্রামে ইলেকট্রিক চলে এসেছে অনেকদিন 
পাড়ার মেয়েগুলো ছেলেদের চেয়ে পড়াশোনা করছে ভালো
তাই নির্বাসনের গভীরে একটু লিকার চা খেয়ে চামচে টোকা দিলাম
ইহজন্মের এমন-ই হালচাল 
নতুন কিছু বললে কোতল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি 
তা বলে কি লোকে মদ খাচ্ছে না , আলবত খাচ্ছে 
কোচবিহারের রাস্তায় বাঘ দেখা গেছে , মাধবী ছবি post করেছে 
কত কী ঘটছে এই লকডাউনে 
আচ্ছা , আমি কি টিনের চালের কথা কম বললাম কিছু 
Sorry মার্জনা করবেন প্লিজ , 45° মানে আমাদের হাড়ে ঘুণ


ধ্বনির প্রাবল্যে

এভাবে আমি ঘুমগুলোকে নিবিষ্ট করলাম 
আমার ডান হাতে আছে একটি ম্যাজিক ঘড়ি 
যা দিয়ে আমি চলে যাই 500 কিংবা 1000 বছর 
রাত ঘুরে বেড়ায় জোনাকির শহরে
অস্পষ্ট আলো পাতার দরজায় 
এখানে হয়তো খবর আছে , তবে প্রচার নাই
ওরা ডাকে 
ওরা ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ধবধবে জ্যোৎস্নায়
এখন যেকোনো দিকেই চলে যাওয়া যায় 
শোকের উঠোনে অথবা বালিহাঁসের নিশানে
প্রচন্ড শব্দ-কাতর , ধ্বনির প্রাবল্যে 
ভেঙে যাচ্ছে 
আমার হাতের মুঠোয় দীর্ঘ একটা জীবনের অন্ধকার 
এত ফাঁকা চারপাশ এত শুনশান 
হাওয়ায় ঘুম আসে না , বাঁ হাতের আঙ্গুল যেন


                                                                        তথাগত দত্ত 


তুমি একবার হাসলেই 

আঘাতের পর আঘাত পেয়ে আমার বুকের ভিতরটা 
কীভাবে যেন পাথর হয়ে গেল ...
এখন আমার শরীর অনেক ভারী  
সহজে হাঁটতে পারি না আর আগের মতো 
তাও খুব কষ্ট করে যেটুকু হাঁটি 
আমার এই ভারী  শরীরের পায়ের আঘাতে মাটি কেঁপে ওঠে , কেঁপে ওঠে 
এখনও শহরের মতো করে সেজে উঠতে  না পারা গ্রামের 
প্রাত্যহিক অনিশ্চয়তা...
তবু আমি চন্দনের গন্ধ পাইনি কোনওদিন 
শুধু দেখেছি রক্ত চন্দনের স্রোত তোমার শিরায় শিরায় ---
                                                    আঘাতে আঘাতে ভেঙে যায় উপকূল ! 
আমার জন্ম যায় , তোমার  ও-ঠোঁটের হাসি দেখিনি কতদিন ! 
চোখে চোখ রাখো আজ , 
তুমি একবার হাসলেই 
আমার বুকের পাথর সব পালক হয়ে ঝরে যাবে ...


ক্ষত  

তারপর বাঘের ডাক ঘুমিয়ে পড়ে গাছের ছায়ায়, জলে 
অথবা মনে হয় যেন বাতাস বয়ে যাচ্ছে খুব শব্দ করে 
জল আর জলবায়ুর মধ্যে তফাৎ বোঝার মতো 
                                                              ভূগোলের জ্ঞান আমার নেই 
তবুও তো খনি মনে করে বুকের ভিতর এই খনন... 
আচ্ছা, সত্যিই কী বাঘ ডেকেছিল? 
পালে বাঘ পড়েছিল? 
নাকি পালে বাতাস লেগেছে আজ 
চেতনার এমন গতি তাই !
জড় চাহিদার জন্য পিছন ফিরে তাকানোর কোনও মানে হয় না এখন 
আসলে সমস্ত ক্ষতই ক্ষতিকারক নয়... 


পরশ পাথর 
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিবেদিত )

শুনেছি সেখানে ছয়মাস দিন 
কিন্তু তারপর ছয়মাস রাত থাকে একটানা 
আপনি যার মনের ভিতরে আছেন,  তার মনে 
রবি কখনোই অস্ত যাওয়ার নয়... 
শুধু সত্য আজ অস্তমিত, মৃত 
অস্ত্র সব অন্যায়ের হাতে 
তবু আপনার কবিতায় এই পৃথিবীকে এখনও সুন্দর মনে হয় 
আপনার কবিতায় ফুল ফোটে 
গোরস্থানে জন্মায় শ্মশানচাঁপা... 
তবুও তো সমস্ত বসন্ত গ্রীষ্মেই পুড়ে গেল 
তাই আপনার কাছে আসা 
একটা আষাঢ়ে গল্প আশার সঞ্চার করে যায় আমার ভিতর 
বাঁশির সুর ভেসে আসে 
ভেসে আসে আপনার গান 
পরশ পাথর যেন 
ছোঁয়ালেই মূল্যহীন সোনা উর্বর মাটি হয়ে যাবে... 


কত দূরে যাব? 

অবস্থা ভালো নয়, ভাই 
তাই তালপাতার সেপাইয়ের সব কথাতেও তাল দিয়ে যাচ্ছি 
তালে আর তেলে কিছু ভিন্ন নেই... 
এইবার মনে হচ্ছে পুরোনো দেওয়ালটা ভেঙে পড়বে 
দূরে গিয়ে দাঁড়ানোই ভালো 
কিন্তু কত দূরে যাব? 
কত দূরে গেলে নিজের ছায়াটিও আর নিজের কাছে  থাকবে না !
কত দূরে গেলে নিজেই পালানো যাবে  নিজের কাছ থেকে !


মৃত্যু? 

বিবর আর বিবর্তন 
চিবুক থেকে বুক 
সুখের খোঁজে তারা 
গান গেয়েছিল 
গোলায় তুলেছিল ধান 
তারপর? দেশত্যাগ নাকি 
বন্যা এলো? 
জলের গজল? 
মৃত্যু? 
জুয়ার আসরে 
যে তাস খেলে হতাশ হতে হয়... 
নষ্ট? নাকি 
বিয়োগের মধ্যে দিয়ে 
যোগের সূচনা!





No comments:

Post a Comment