Sunday, 17 May 2020

সিদ্ধার্থ সিংহ

মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা , ২-য় বর্ষ 
 ১৩৮- তম প্রয়াস


জানালা     সিদ্ধার্থ সিংহ

ঘর বানাচ্ছ, বানাও
মনে করে দুটো জানালা বানাতে ভুলো না।
একটা জানালা দিয়ে ছেলে যাতে উড়ে যেতে পারে
রামধনুর রং মাখতে পারে সারা গায়ে
মেঘের ভেলায় চেপে ভেসে যেতে পারে যেখানে খুশি,
আর অন্য জানালা দিয়ে পা টিপে টিপে এসে
যাতে শুয়ে পড়তে পারে বিছানায়।
ঘর বানাচ্ছ, বানাও
মনে করে দুটো জানালা বানিও।
একটা জানালা দিয়ে এসে
ছেলেকে যাতে বকাঝকা করতে পারো
কষাতে পারো দু'-একটা চড়চাপড়,
আর অন্য জানালা দিয়ে এসে
ঘুমন্ত ছেলের কপালে যাতে চুমু খেতে পারো।
ঘর বানাচ্ছ, বানাও
মনে করে দুটো জানালা বানাতে ভুলো না
আর হ্যাঁ, সেই জানালায় যেন গরাদের কোনও
                                                ছায়া না থাকে...
একই

বাবার কাছে কোনও দিন সাদা শাড়ি
কোনও দিন জংলা ছাপা
আবার কোনও দিন হাওয়ায় ওড়া আঁচল আসত।
ওরা আসার আগেই আমাকে আর দিদিকে
বাবা বসিয়ে দিয়ে আসতেন গলির মুখে, একটা রকে।
বলতেন, যে-গাড়িগুলো যাবে সেগুলোর নম্বর লিখে রাখ তো দেখি।
আমরা লিখতাম।
পরে নিজেরাই মিলিয়ে মিলিয়ে দেখতাম কার ক'টা বাদ গেছে
বাদ গেলেই কানমলা
আর যে লিখত, সে পেত কখনও কাগজের উড়োজাহাজ
কখনও ঘটি চানাচুর।
আমি রোজ রোজ কানমলা খেতাম।
সতর্ক হতে হতে যখন বুঝলাম
দিদি আসলে ওগুলো পাওয়ার জন্য মিথ্যে মিথ্যে নম্বর টুকে রাখে
বাবাকে বললাম।
বাবা চালু করলেন নতুন খেলা।
বললেন, বসে বসে লোক দ্যাখ,
দেখবি, এত মানুষ, তার ওইটুকু একটা মুখ
তবু কী অদ্ভুত! কারও সঙ্গে কারও মিল নেই।
যদি কখনও একই রকম দুটো মুখ দেখতে পাস
দ্বিতীয় জনের নাম-ঠিকানা লিখে রাখিস
বকুলের দানা দিয়ে শিস-বাঁশি বানিয়ে দেব।
বাবার কাছে কোনও দিন সাদা শাড়ি
কোনও দিন জংলা ছাপা
আবার কোনও দিন হাওয়ায় ওড়া আঁচল আসত,
মা তাই চলে গিয়েছিলেন মামার বাড়ি।
আমরা একই রকমের আর একটা মুখ খুঁজতাম।
তখন মেলাতে পারিনি
এখন বুঝতে পারি, সাদা শাড়ি, জংলা ছাপা
আর হাওয়ায় ওড়া আঁচলের মুখগুলো আসলে একই
হুবহু এক। 

সতর্কীকরণ

বয়স্কদের থেকে একটু সাবধানে থাকবেন।
দেখবেন, ছেলেদের দিকে তেমন ভিড় না থাকলেও
লেডিজ সিটের সামনে মেয়েদের ঠিক পিছনে
                      কিংবা গাঁ ঘেষে দাঁড়ানোর জন্য
বাবা-জ্যাঠা-মামাদের সে কী প্রাণপণ লড়াই
কয়েক দিন খেয়াল করলেই টের পাবেন
গভীর রাতে উঠে শাশুড়ি কান পাতছেন
                                ছেলের ঘরের দরজায়
না না, ছিঃ, ও সব শোনার জন্য নয়,
কান পাতছেন, বউ তাঁর ছেলের কানে কোন মন্ত্র দিচ্ছেন,
                                            তা শোনার জন্য
বয়স হলে মানুষেরা ফুটপাতের এত ধার ঘেঁষে হাঁটেন যে, নোংরা তাঁরা পাড়াবেনই।
বয়স্কদের থেকে একটু সাবধানে থাকবেন।
এমনকী, যখন আমার বয়স হবে, তখন আমার থেকেও
অবশ্য আমার বয়স কি আর বাড়বে! 

কৃষ্ণ 

জানালায় চোখ পড়তেই দেখি খাটে শুয়ে আছেন কৃষ্ণ
এত নীল!
ছেলে তখন ক্লাস টু-য়ে
গরমের ছুটির আগের দিন ছিল ‘যেমন খুশি সাজো’
ও কৃষ্ণ সেজেছিল
জরির কাজ করা ঝলমলে পোশাক, হাতে বাঁশি
মোবাইলে তোলা সেই ছবি দেখে ওর দিদুন বলেছিলেন—
‘এই তো আমার গোপাল’
সেই ছবি এখনও দেয়ালে ঝুলছে। 
জানালায় চোখ পড়তেই দেখি খাটে শুয়ে আছেন কৃষ্ণ
তবে কি সাধু-সন্তদের পথ দেখিয়ে দেখিয়ে
এই গোয়ালে নিয়ে আসছে কোনও উজ্জ্বল তারা!
ওরা আসার আগেই আমি একটু ভাল করে দেখে নিই…
ঘরে ঢুকতেই দেখি
কৃষ্ণের মুখ বেয়ে নেমে কখন থমকে গেছে সমুদ্রের ফেনা। 

কী করে বলি

হাইকম্যান্ডকে কী করে বলি!
ও রকম দু'-চারটে খুন সবাই করতে পারে
কিন্তু এক কোপে কারও মাথা নামিয়ে
সেই মুণ্ডু নিয়ে কখনও কি ফুটবল খেলেছেন প্রকাশ্য রাস্তায়?
তবে?
ও রকম দশ-বিশটা ধর্ষণ সবাই করতে পারে
কিন্তু আপনার নাম শুনলেই
মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যাবে মেয়েদের স্কুল, পাপড়ি গুটিয়ে নেবে ফুল
সে রকম বিভীষিকা কি ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন চারিদিকে?
তবে?
আপনাকে আসতে দেখলে
আশপাশের বাজার, চৌরাস্তার মোড়
কিংবা অফিসপাড়া
খরগোশ হয়ে যেতেই পারে
কিন্তু ওদের ভিতরের বাঘটাও যে মাথা নুইয়ে কোণে গিয়ে লুকোবে
সে রকম কুচকুচে কালো মেঘে কি ঢেকে দিতে পেরেছেন গোটা আকাশ?
তবে?
হাইকম্যান্ডকে আমি কী করে বলি
এ বার অন্তত ভোটে দাঁড়ানোর জন্য আপনাকে একটা টিকিট দিক!

No comments:

Post a Comment