Sunday, 12 July 2020

| আপনার সাথে রবিবারে ৫টি কথা | | মন্দিরা ঘোষ |

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||

আজ মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকার "আপনার সাথে রবিবারে ৫টি কথা"-য় থাকছেন কবি মন্দিরা ঘোষপ্রথম দশকের কবি মন্দিরা ঘোষ। 

নমস্কার মন্দিরা ম্যাডাম।

--- নমস্কার আবার কী! এসো। বসো। কেমন আছো?
--- ভালো আছি। 

জানেনতো, মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকার নতুন ১টা বিষয় প্রতি সপ্তাহে বের করছি " রবিবারের ৫টি কথা "। এই পর্বে আমি আপনার সাথে  কথা বলার জন্য এসেছি। আপনার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের এবং এই ই-পত্রিকাকে ও আপনার কবিতার পাঠকদের জন্য আপনার কথাগুলো বলেন।
কেমন আছেন আপনি এবং আপনারা এই সংকটের কালে? 

---- প্রথমেই আন্তরিক  ধন্যবাদ জানাই মল্ল সাহিত্য  ই-পত্রিকাকে আমাকে এই সম্মান জানানোর জন্য।অভিজিৎ  তোমাকে জানাই আমার আন্তরিক  শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা।
এই বিশ্বজুড়ে সংকটের আবহে যখন কোভিডের সংক্রমণ  বেড়েই চলেছে, তখন ভালো আছি এই কথাটা বলা যায় না  কোনো ভাবেই।তবে প্রাথমিক ভয়ের আবহ থেকে কিছুটা  মুক্ত হতে পেরেছি শুধুমাত্র ভালো থাকতে হবে এটুকু মনে রেখেই।মনে পড়ছে এই প্রসঙ্গে কবি অরুণ মিত্রর লাইনঃ
"চলো পা বাড়াও রক্তাক্ত হতে হতে পৌঁছে  যাও যেখানে
পথ চিরে গিয়েছে দুই দিকে,
বাঁচামরার সেই মোক্ষম জায়গায় একগাদা খোয়াবের মধ্যে
মুখ গুঁজড়ে পড়ো।চলো।"
ঘুম ভাঙার পর যে সকাল তাকে ভালোবাসছি এখনও ,পাশে যেসব মানুষ হেঁটে যাচ্ছে তাদের ছায়া  মাখছি,
দূরের বন্ধু পরিজনদের কুশল বিনিময়ে ভালো থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি.....

১) আপনি কবে থেকে কবিতা লিখছেন বা সাহিত্যের সাথে যুক্ত?

➤সাহিত্যের কথায় প্রথমেই একটু পারিবারিক কথা বলতেই হয়।যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠার সুবাদে জ্ঞান হওয়া থেকেই দেখেছি বাড়িতে বই আর চিঠির  পাহাড়। দাদুকে দেখেছি বইয়ের সাম্রাজ্যের ভেতর ডুবে থাকতে।রাস্তার ধারে খোলা জানালার পাশে ইজিচেয়ার পাতা, চারপাশে বইয়ের ভুবন;বেতার জগৎ,বসুমতী,আর্যশাস্ত্র,দেবযান, সোভিয়েত দেশ আরো কতো বই!কলকাতা থেকে বই আনানো হতো। আর কিছু ডাক মারফত আসত।
তখন আলাদা কোনো কবিতা  পত্রিকা চোখে দেখিনি।বেতার জগৎ, বসুমতীর মতো পত্রিকার কোনো গদ্য, উপন্যাস বা গল্প শেষে পাতাটিকে কবিতা দিয়ে পূরণ  করা হোতো।
আর সবার ছোটো  হওয়ার  কারণে দাদা দিদিদের বইয়ের কবিতাগুলি মুখস্থ  করে ফেলতাম।প্র‍্যাক্টিক্যালি সহজপাঠ পড়ারও আগে দাদা দিদিদের পড়া শুনে শুনে রবীন্দ্রনাথের কথা ও কাহিনির কবিতা মুখস্থ  করে ফেলতাম। আর তখন থেকেই   কবিতাকে ভালোবাসতে শিখি।সেখান থেকেই কোনোভাবে সাহিত্যের সাথেও একটা সম্পর্ক  তৈরি  হয়ে যায়।সম্পর্কটা ভালোবাসার। কলেজজীবনে রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও  জীবানানন্দ,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, মহাদেব সাহা,অরণি বসু  এবং আরো অনেক কবির কবিতার বই প্রভাবিত করেছে। অবশ্য সে সময় গল্প উপন্যাসের প্রতি আলাদা আকর্ষণ ছিলো।  সে অর্থে  লেখা শুরু আরো পরে।ছোট ছোট  গদ্য লিখতাম।মুক্ত গদ্যের মতো।২০১২ সালের পর লেখা নিয়ে ভাবতে শুরু করি।তারও পরে সিরিয়াস লেখালেখি ।সঠিক সময়টা লিপিবদ্ধ নেই।তবে মনের ভেতর লালন একটা ছিলোই।

২) আপনি ক্যানো কবিতা লেখেন? কখনো যদি কবিতায় না আসতেন অবসর সময় কিভাবে কাটাতেন?

➤আসলে কবিতা যে লিখবো এটা ভাবি নি কখনো।তবে শব্দরা আসত।যে কোনো সহজ লেখাকে ইচ্ছে করতো শব্দে সাজিয়ে দিতে।তখন চিঠি লেখার খুব চল ছিলো।যাকে বা যাদের লিখতাম তা যেন অন্যরকম,সাদামাটা  চিঠি নয়,আর সে লেখার ভেতর যে কতো রং,কতো ছবি!
আর সবচেয়ে যা সত্যি সেটা হলো লেখার মধ্যে মুক্তির  স্বাদ।হয়তো  এজন্যই লিখি।আজও।লেখা 

আমার কাছে অবসর নয়, প্র‍য়োজন।
অবসরে আজও  পড়াশোনা,গিটার বাজানো,পোশাক ডিজাইন এসব করে থাকি।লেখায় না থাকলে আরো বেশি বেশি এসবই করতাম হয়তোবা।

৩) কোন কবিদের লেখা আপনার পছন্দের? বা এমনও বলতে পারেন এইসময়ে  আপনার কাছে কোন ধরনের কবিতা বেশি প্রাধান্য পায়?

➤রবীন্দ্রনাথ  প্রথম  এবং প্রধান।
জীবনানন্দের কবিতা আমার কিশোরী বয়েসের প্রেম।মনে আছে গ্রামের লাইব্রেরি থেকে বইটি পড়তে নিয়ে আর ফেরত  করা হয়নি।পরে লাইব্রেরিটিই নষ্ট হয়ে যায়।বইটি আমার সংগ্রহে এখনও।
ভালো লাগে আল মাহমুদ,প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত, শঙ্খ ঘোষ,নিত্য মালাকার,বিনয় মজুমদার,ভাস্কর চক্রবর্তী.. তালিকা দীর্ঘ।
আর এখন নতুন যাদের লেখা প্রভাবিত করে আমাকে তাদের মধ্যে শুভম চক্রবর্তী, সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়, অভিজিৎ  দাস কর্মকার,আমিনুল ইসলাম,সৌরভ বর্ধন,ভগীরথ সর্দার,শ্রীপর্ণা গঙ্গোপাধ্যায়, সুজিত মান্না,সন্দীপ মন্ডল,শুভদীপ সেনশর্মা, মৌমিতা পাল,প্রত্যুষা সরকার, সৈকত ঘোষ।এরা ছাড়াও  আরো অনেকের কবিতাই আমাকে প্রভাবিত করে।সবার নাম লিখলে দীর্ঘ  হয়ে যাবে তালিকা।নতুনদের সমকালীন ভাবনা, ভাষা,স্মার্টনেস এবং স্পষ্ট  উচ্চারণ আমাকে আকর্ষণ  করে।

৪) আপনি তো প্রিন্ট পত্রিকা এবং ওয়েবজিনেও লিখছেন। web.mag, print media আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

➤আধুনিকতাকে গ্রহণ  করতে হলে ওয়েবজিন কে দূরে সরানো যায় না কোনোভাবেই।এই ডিজিটাল  যুগে দাঁড়িয়ে  সময় আমাদের জীবনে একটা  বড় ফ্যাক্টর।যেখানে প্রতিমুহূর্তে  বদলে যাচ্ছে প্রাত্যহিকতার হিসেব,যেখানে নিজেদের আমরা আপডেট  করে চলেছি প্রতিনিয়ত, সেখানে ওয়েবজিনকে দূরে সরানোর  প্রশ্নই নেই।এতে খরচ এবং সময় দুই ই বাঁচে।খুব কম সময়ের  মধ্যেই একটা ওয়েব পত্রিকাকে সম্পূর্ণ রূপ দেওয়া যায়। অনেক নতুন প্রতিভারও স্ফূরণ  হয় যা প্রিন্ট  মিডিয়ায় সহজলভ্য  নয়।
তবে ভার্চুয়াল  আর স্পর্শসুখের একটা  ফারাক তো থাকবেই।বই ছুঁয়ে দেখার যে আনন্দ তা কখনোই  ওয়েব ম্যাগাজিনে  পাওয়া  যাবে না।দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল  বা ল্যাপটপে চোখ রাখায় আলোর একটা  প্রভাব চোখে পড়ে।তবু আমাদের নেট নির্ভর জীবনে  এই ডিজিটাল  ম্যাগাজিনকে  দূরে সরিয়ে রাখা কোনো ভাবেই সম্ভব নয় আর উচিতও নয়।আমার দিক থেকে ওয়েব য়াগাজিনকে আন্তরিক স্বাগত জানাই।

৫)  চারিদিকে কবিতার জন্য বিভিন্ন ম্যাগাজিন, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কবিদের সম্মান জানানো হচ্ছে। এই বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

➤আমার চোখে কোনো কিছুই অস্বাভাবিক নয়।দ্রুত বদলে যাচ্ছে সময়।তার সাথে মানুষের জীবনযাত্রা।মানুষ সবকিছুই তাড়াতাড়ি  এ্যাচিভ করতে  চাইছে।বদলে যাছে চাহিদার চোখ।সেখানে সব ব্যাপারেই কিছু  না কিছু বদল হবেই।সে সব সাথে নিয়েই এগোতে হবে।
তবে নিজস্বতাটুকুই  আসল,এসব সম্মাননায় কোনো কিছু প্রমাণ হয় না।প্রমাণ  তার সৃষ্টির  মধ্যেই থাকে।

সরাসরি কোনো পত্রিকার সাথে যুক্ত-- না।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ --তিনটি। জ্যোৎস্নাশরীরের ছবি,মিশুক শব্দের মলাট, অম্বালিকার কিশোরীগন্ধ।
✪✪ আপনার ২টি প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত কবিতা দিন।

মন্দিরা ঘোষ-এর কবিতা
সিরিজ থেকে নেমে (অপ্রকাশিত  লেখা)

১.

রোদের  অভ্যাসে জড়িয়ে যাচ্ছে শীত
ডানার জাড় ভাঙতে ভাঙতে
ককিয়ে উঠছে স্বর
অক্ষমতায় গড়িয়ে পড়ছে থকথকে সংকোচ
বার্তাঘরে অশুচি মেঘের ভিড়
নকল অভ্যন্তর থেকে এবার পরিত্রাণ  চাইছে  মাটি
ছুরিতে  ফলের রক্ত চেড়া মাংস
চামড়ার অনুশোচনা
দাগ ধুতে ধুতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রাত
২.

একটা চেড়া বিকেল থেকে
নেমে আসছে অনুশোচনা
সকলেই  ফেরত  ধুয়ে মুছে রাখছে
নিজের সৈকতে।

মৃত্যুরা ডানা মেলছে মৃত্যুর কাছে
যেভাবে আকাশের গায়ে আকাশ
পাখির ভেতরেই  আর একটা  পাখি উড়ছে
অনবরত।
একইরকম রয়ে গ্যাছে শুধু
রোদের গায়ে ছায়ার অভিমান
জেলেমাঝির ফিরি করা  সূর্যাস্তের রং।
আজও  ঘরে ফেরার কথায়
আকাশের রং বদলায়।
ফুরুস ফুলে ভরে ওঠে পড়শির গাছ।
থেকে থেকে কার্ণিশের  রোদ গর্ভবতী  হয়।
আজও। 

ধন্যবাদ মন্দিরা ঘোষ কে। উনি ওনার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের মাধ্যমে ওনার সময় আমাদের পত্রিকা এবং সকল পাঠকের সাথে ভাগ করে নিলেন এবং কিছু কথাও সকলের সাথে share করলেন । মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকার তরফ থেকে ওনাকে অনেক শুভকামনা, শুভেচ্ছা এবং অশেষ ভালবাসা রইলো। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন ম্যাডাম।

13 comments:

  1. চমৎকার! এগিয়ে যাক মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা

    ReplyDelete
  2. বাহ্ । কথায় কথায় এভাবেই পরিচয় হোক। ❤️

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ শীলা।থেকো এভাবেই।

      Delete
  3. সুন্দর সাক্ষাৎকার। অভিনন্দন।

    ReplyDelete
  4. প্রণিধানযোগ্য সাক্ষাত্কার। কবিতাগুলিও বেশ ভালো। কবির নিজস্ব মতামতে একই সঙ্গে ঋদ্ধ ও সহমত হলাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি পড়ে মতামত দিয়েছেন,এ আমার পরম প্রাপ্তি।ভালো থাকবেন।

      Delete
  5. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  6. পড়লাম। এরকম নব নব প্রাণের আলোয় কবিতা প্রাঙ্গন হোক আলোকিত

    ReplyDelete
  7. খুব ভাল লাগল।
    সাক্ষাৎকার ও কবিতা দুটোই।

    ReplyDelete