Wednesday, 8 July 2020

|| সোনালী মিত্র || ৮ই জুলাই ||

|| মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা | | ২-য় বর্ষ ||












সোনালী মিত্র
পর্যটন

শৃঙ্গলীলা।মেয়েটি তার ট্রেকিংয়ের এলব্যাম দেখাচ্ছিল।
ঢেউ খেলানো পর্বত,শান্ত সাদা বরফ ,ভয়ঙ্কর গিরিখাত
তীব্র সৌন্দর্য আর বাকিটা দূর্বদ্ধতা
কি একটা যেন নদী ফাটল বেয়ে দূরে মিশে যাচ্ছে।
তার মধ্যেখানেই লাল জ্যাকেট,লাল উলের টুপি ভেদ করে ওর
কুচিকুচি কালো চুল কপাল জুড়ে উড়ছে।
কতটুকুই বা মানুষজন্ম ,আর কতখানিই বা খিদে!
অথচ শৃঙ্গলীলা হাতে ধরে
আমার প্রচন্ড খিদের পেয়ে বসছিল।আর অসম্ভব রকম জীদ।
একটা একটা করে রঙিন ছবির খোসা ছাড়াতেই
তুখোড় তুষারঝড় উঠে এল।
দেখলাম আমিও শ্রেষ্ঠ পর্বতারোহী
ঝড়কে দুমড়ে মুছিড়ে দূর্দান্ত এক স্কেটিং...ঠিক ঝড়ের মাথায় মাথায়
পতাকা হাতে চূড়ায় দাড়িয়ে নগরায়ণ  সভ্যতার
পৃথিবী খুলে দিচ্ছে আগুনের দিকে সভ্যতম ম্যাজিক
উন্মত্ত ঘর্ষণে গলে যাচ্ছে সব বরফ।
আর আমার শরীরের নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে
সুন্দর সাজানো হাড়ের সারি,রঙিন ওড়না আর পর্যটনের ছবি।


উন্মাদ বোধন

দেবীর শরীর থেকে ধুনোর গন্ধ ভেসে আসে
ত্রিনয়নে ভেসে ওঠে অযথা করুণা
জিভে যেই ভাষা পেল , বলে উঠলো- ক্ষমা , ক্ষমা
তারপর পাড়ায় নতুন এক উন্মাদিনীর জন্ম হয়
কেউ আগে দেখেনি কোথাও একে
উন্মাদিনীর পূজা হয় , ভোগ পায়
চণ্ডাল আর ব্রাহ্মণ একই মণ্ডপের ভোগ খায়
মাটির উন্মাদিনী গঙ্গার জলে ভেসে যায়
জলঘূর্ণি থেকে ক্ষমা- ক্ষমা শব্দ শোনা যায়
ডালে বসা প্যাঁচা দেখে ঈশ্বরীর ভাঙা মন্দির ফাটিয়ে
বটগাছ ডানা মেলে ...কেবল বিস্তৃত কালো আকাশ
বেসুরো হাওয়ার দলে ধেয়ে আসে
ভেঙে পড়ে মন্দির
উন্মাদিনী ভাঙা মন্দিরে বসে গাছেদের ক্ষমা শেখান


নেই কাব্য

না দানে , না ধ্যানে আমি কোথাও নেই ।
না রক্তদানে , না বন্যাত্রানে । না দয়ায় , না দাক্ষিণ্যে ।
আমি ঠিক যেন কোন ভূমিকাতেই নেই
না গরিষ্ঠ নায়কে না জ্ঞান বিতরণে
না পুজো প্যান্ডের ডালের হাতায় না সংসারের ছ্যাঁচড়া চাকায়
না মঞ্চের কেন্দ্রে,  না   মঞ্চের পিছনে ।
লোকে আতেল বলে , বলে অধঃপতনে সিদ্ধ
কবিতা পাঠের শেষে হাততালি দিতে ভুলে যাই বলে
ইদানিং মহাকবিরা ডাকে না আর ,
কেরোসিনের লাইন দেখে আগুন আগুন চিৎকার করি বলে
রেশনকার্ড থেকে নাম বাদ গেছে আমার ।
প্রতিদিন দরজা বন্ধ ঘরে আত্মহত্যামূলক শব্দ দিয়ে
শরীরে পিন ফুটিয়ে প্রত্যক্ষ করি রক্ত ও শিরার ভালোবাসার গভীরতা
মৃত্যুর অভিনয়ের নাম জীবন - দুবার খাতায় লিখে কাটি
আমি জন্মে নেই , মৃত্যুতেও নেই । শোকে বা আনন্দে
শ্বাসে নেই , দীর্ঘশ্বাসে নেই , গাঁয়ে নেই শহরে
রাস্তায় হেঁটে যাই , বাচ্চারা পাথর ছোঁড়ে
আমি পাগলে নেই , প্রলাপেও নেই ।
তবু লোকে পাগল বলে ...


সুন্দরী- ব্যথা

অনেকেই দেখতে খুবই সুন্দর , অনেকেই পরীর চেয়েও সুন্দর
তাঁরা অনেকেই সুন্দর করে সাজেন
ওদের ত্বকে এসে বাসা বাঁধে নায়িকা সুন্দরী
শুধু , কোনও কোনও সুন্দরীর ঘুম আসে না রাতে
ওদের রূপ সৌন্দর্যের মধ্যে তখন ভেসে ওঠে রাধাঘাম
জেগে ওঠে  হলুদপাতায় ঝরা মরসুম
জেগে ওঠে ভক্তঅশ্রু ,  শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের মাথুরকাল
ওদের অনেকেই ব্যর্থ সৌন্দর্য নিয়ে বৃন্দাবন খুঁজে  বেড়ান
মোহনীয় চোখের পাতায় এসে বসে সমুদ্র পাখি
বাইরে থেকে দেখলে  অবিকল সুখপাখি,অবিকল বসন্তমুদ্রা
কেউ দেখতে পায় না , ওদের ডানাপোড়া রুদালী
আমি এক ছেলের মা , ভুল চোখে এইসব দেখে ফেলি
মনে মনে বলি- সুন্দরী , এই খেলার শেষ নেই
যেমন খুশি তেমন সাজো  - রাতে যেমন পারো তেমন কাঁদো


উত্তরাধিকার

গোঁগানিটা শুনতে পেলেই বুঝতে পারতাম,
বাবা,এবার ছিটকিনি তুলে বাথরুমে বোনকে শাস্তি দিচ্ছেন।
তখন মা রান্নাঘরে পেঁয়াজ কাটায় অনাবশ্যক ঝড় তুলতেন ।
অনাহুত এক ভয়ে জোরে জোরে আমি মানচিত্রে,
দেশের নাম আয়ত্ত করতে থাকি।।যতটা সম্ভব জোরে...
শাস্তিপ্রাপ্ত বোনের রক্তচাপ কমে যেতো,রক্তগতির মধ্যে ভুগতো
রোগা শরীরে।হাঁটতে পারতো না ঠিক মতো।
ভয়ঙ্কর এক জ্বরে রাতেরবেলা  কিসব বিকার বকতো।
আমি তো পুরুষপাখি,মায়ের আঁচলের নীচে চাপা পড়ে যেত
ধেয়ে আসা শাসনের প্রতিটি বিধান
দুবছর হল বাবা মারা গেছেন।
বোনটা পাড়ার বখাটে ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে বেঁচেছে।
নাকি মরেছে কে জানে!
সামান্য ভ্রান্তিতে আমিও শাস্তি দিই বাথরুমে ছিটকিনি তুলে
মায়ের গোঁগানির শব্দরা ধবধবে সফেদফ্লোরে চাপ
চাপ প্রায়শ্চিত্তর মধ্যে থমকে থাকে।

8 comments: